প্রায় ১০ বছর আগে রাজধানীতে কামরুল ইসলাম নামের একজন ব্যবসায়ীকে হত্যার দায়ে এক দম্পতিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। ঢাকার তৃতীয় অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ শেখ ছামিদুল ইসলাম আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।

দণ্ডিত ব্যক্তিরা হলেন রোমানা আক্তার (২৮) ও তাঁর স্বামী সোহেল রানা (৩০)। রায়ের পর তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আবুল কালাম আজাদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, টাকাপয়সা নিয়ে বিরোধের জেরে ২০১৫ সালের ১২ সেপ্টেম্বর কামরুল ইসলামকে পরিকল্পিতভাবে ঢাকার পল্টন এলাকা থেকে সাভারের বাসায় নিয়ে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যা করেন রোমানা আক্তার ও তাঁর স্বামী সোহেল রানা। কামরুল ঘটনার দিন সদরঘাটের নিজ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদে তাঁর মামার সঙ্গে দেখা করতে রওনা হয়েছিলেন। পরে সেখান থেকে তাঁকে সাভারে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ ঘটনায় নিহত কামরুলের খালা রেহেনা পারভীন বাদী হয়ে মামলা করেন।

পিপি আবুল কালাম আজাদ আরও বলেন, কামরুল ইসলামের সঙ্গে আসামি রোমানার পূর্বপরিচয় ছিল। তাঁদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিভিন্ন প্রয়োজনে কামরুলের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা নেন তিনি। কিন্তু রোমানা সেই টাকা পরিশোধ করেননি। এ নিয়ে বিরোধের জেরে কামরুলকে হত্যা করা হয়।

এ মামলায় রোমানা ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক। পরের বছর ২০১৮ সালের ৫ জুন দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ল ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

পদ্মায় আবাস সংকটে মাছ

রাজশাহীর পদ্মা নদীজুড়ে দেখা যায় শুধু ধু-ধু বালু চর। আবাসস্থল হারিয়ে বিলুপ্তির পথে দেশীয় প্রজাতির মাছ ও জলজ প্রাণী। কিছু জায়গায় গভীর পানি থাকলেও কারেন্ট জাল ও বড়শি ফেলে নির্বিচারে চলছে মাছ নিধনযজ্ঞ। তাই শুষ্ক মৌসুমে পদ্মা নদীর কিছু অংশে জলজ প্রাণীর অভয়ারণ্য ঘোষণার পরামর্শ নদী গবেষকদের। 

১৯৮০ থেকে ১৯৮৫ সালের দিকে পদ্মার গড় গভীরতা ছিল ১২ দশমিক ৮ মিটার। ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের মধ্যে গড় গভীরতা নেমে আসে ১১ দশমিক ১ মিটারে। পদ্মার গভীরতা কমায় আবাস সংকটে পড়ছে মাছ ও জলজ প্রাণী। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান স্প্রিঙ্গার উদ্যোগে কাজ করেছেন রাজশাহীসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষক। রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে চারঘাটের সারদা পর্যন্ত পদ্মার ৭০ কিলোমিটার অংশ নিয়ে গবেষণাটি পরিচালিত হয়। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান সাময়িকী বায়োডাইভারসিটি অ্যান্ড কনজারভেশনের গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়।

সরেজমিন চারঘাট উপজেলার রাওথা, বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ ও গোদাগাড়ীর হরিশংকরপুর এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা যে দেশের বৃহত্তম নদী তা চেনার উপায় নেই। চারদিকে ধু-ধু বালু চর। মাঝেমধ্যে কিছু জায়গায় পানি দেখা যাচ্ছে। সে সামান্য পানিতে কেউ বড়শি আবার কেউ কারেন্ট জাল ফেলে মাছ শিকার করছেন। ধরা পড়ছে বিশাল সাইজের বাঘাইড়, পাঙাশ, রুই, কাতলা, চিতল, আইড়সহ বিভিন্ন প্রজাতির মা মাছ। 

বাঘার মীরগঞ্জ এলাকার রফিকুল ইসলাম বলেন, বড়শি ও কারেন্ট জাল দিয়ে মাছ নির্বিচারে ধরা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে অন্তত ২৫টি কাতলা ও চিতল মাছ ধরা পড়েছে। যেগুলোর ওজন ১২-১৮ কেজি। কারেন্ট জালে একটা শুশুকও ধরা পড়েছিল। দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন মাছ শিকারে আসছে।

গোদাগাড়ীর হরিশংকরপুর এলাকার জেলে আব্দুল মান্নান বলেন, পদ্মা নদী চেনার উপায় নেই। নদীতে এত কম পানি আর কখনও দেখিনি। মৌসুমি জেলেরা বড়শি ও কারেন্ট জাল দিয়ে নির্বিচারে মাছ শিকার করছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামী মৌসুমে পদ্মায় মাছ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে। 

মৎস্য অধিদপ্তর রাজশাহী জেলার তথ্যমতে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে রাজশাহীর পদ্মা নদী থেকে মাছ আহরণ হয়েছে ১ হাজার ৮৫০ টন। ২০২২-২৩ অর্থবছরে ছিল ২ হাজার ৪০ টন, ২০২১-২২ এ হয়েছিল ২ হাজার ১৫২ টন, ২০২০-২১ এ ২ হাজার ২২১ টন এবং ২০১৯-২০ এ আহরণ হয়েছিল ২ হাজার ২৮৩ টন। প্রতিবছরই মাছ আহরণের পরিমাণ কমছে। গত পাঁচ বছরে মাছ আহরণ কমেছে ৪৩৩ টন।

গবেষকরা বলছেন, পদ্মা নদী থেকে হারিয়ে যাওয়া মৎস্য প্রজাতির ৬০ শতাংশ বিলুপ্তির হুমকিতে রয়েছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্তির অন্যতম কারণ নির্বিচারে শিকার ও আবাস হারানো। ১৯৮০ সালে পদ্মায় যেখানে ৭১ জেলে মাছ শিকার করতেন, ২০১৯ সালে সে সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬১৬। প্রায় চার দশকে মাছ শিকারি বেড়েছে প্রায় ৩৮ গুণ। অপেক্ষাকৃত সহজ হওয়ায় প্রতিবছর একটি বড় অংশের জনগোষ্ঠী যোগ হচ্ছে এ পেশায়। অনেকে আবার নিষিদ্ধ কারেন্ট জালে মাছ শিকার করছে। এতে নির্বিচারে শিকার হচ্ছে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। এসব কারণে পদ্মার সার্বিক জীববৈচিত্র্যে এসেছে পরিবর্তন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিশারিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শামস মুহা. গালিব বলেন, ১৯৮২ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত পদ্মার হাইড্রোলজিক্যাল, জলবায়ু ও নৃতাত্ত্বিক পরিবর্তনের সঙ্গে মৎস্য প্রজাতির সম্পর্কের প্রক্রিয়া অনুসন্ধান করা হয়। পদ্মার মাছ ও জলজ প্রাণীর আশ্রয়ও কমছে। তিনি বলেন, অধিকাংশ দেশীয় প্রজাতির মাছ বর্ষাকালে বংশ বৃদ্ধি করে। এ সময়ে মাছ শিকার সীমিত করাসহ শুষ্ক মৌসুমে পদ্মায় মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলারও তাগিদ দেন তিনি।

জ্যেষ্ঠ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. ওয়ালি উল্লাহ মোল্লাহ বলেন, ‘পদ্মায় পানির গভীরতা কমেছে, পানির ফিল্টারেশন কমে গেছে। এতে বড় সাইজের রুই, কাতলা, চিতল ধরা পড়ছে। মা মাছ ধরার ব্যাপারে জেলেদের আমরা সতর্ক করছি। শুধু শুষ্ক মৌসুমের জন্য গভীর পানির কিছু অংশকে অভয়ারণ্য ঘোষণার চেষ্টা চলছে। নয়তো পদ্মা থেকে দেশীয় প্রজাতির এসব মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।’

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান বলেন, পদ্মা নদী বড়াল নদের মাধ্যমে সরাসরি চলনবিলের সঙ্গে জড়িত। পদ্মা নদীতে পানি না থাকায় চলনবিলেও পানি নেই। এর প্রভাব পড়েছে পদ্মার সঙ্গে সংযুক্ত পুরো জীববৈচিত্র্যের ওপর।

দেশীয় মাছের বৃহত্তম আশ্রয়স্থল চলনবিল ও পদ্মা নদীর মাছ ও জলজ প্রাণী হুমকির মুখে পড়েছে। সরকারি উদ্যোগে খুব দ্রুত পানিপ্রবাহ বাড়ানোর পাশাপাশি গভীর পানির জায়গাগুলো অভয়ারণ্য ঘোষণার দাবি জানান তিনি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ