কুষ্টিয়ায় চালকল নেতার বাড়িতে গুলির ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলা, গ্রেপ্তার ১
Published: 10th, April 2025 GMT
কুষ্টিয়ার চালকলমালিক ও ব্যবসায়ী আবদুর রশিদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করার ঘটনায় হত্যাচেষ্টার মামলা করা হয়েছে। গতকাল বুধবার গভীর রাতে আবদুর রশিদ বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় এজাহার জমা দেন।
আজ বৃহস্পতিবার সকাল সোয়া আটটার দিকে মামলাটি রুজু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ঘটনায় জড়িত মোটরসাইকেলচালক কাজী আবদুস সাকিরকে (৪২) গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার বেলা পৌনে দুইটার দিকে শহরের গোশালা সড়কে রশিদের বাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করে দুর্বৃত্তরা। গুলিতে তাঁর বাড়ির তৃতীয় তলার একটি কাচ ভেঙে যায়। তবে কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। ঘটনার সময় রশিদ খাজানগর এলাকায় নিজের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ছিলেন। তিনি বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি। সদর উপজেলার খাজানগর এলাকায় তাঁর বড় কয়েকটি চালকল রয়েছে।
একটি পশুহাটের ইজারা পাওয়াকে কেন্দ্র করে সদর উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব জাহিদুল ইসলাম (বিপ্লব) চরমপন্থী সংগঠনের নেতাদের দিয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন আবদুর রশিদ। তবে বিএনপি নেতা জাহিদুল ইসলাম সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
আরও পড়ুনকুষ্টিয়ায় দিনদুপুরে চালকল মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি রশিদের বাড়িতে গুলি০৯ এপ্রিল ২০২৫কুষ্টিয়া মডেল থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, গভীর রাতে আবদুর রশিদ বাদী হয়ে একটি এজাহার জমা দেন। বৃহস্পতিবার সকালে সেটি মামলা হিসেবে রুজু করা হয়। মামলায় তাঁকেসহ তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি ছোড়া হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে রাত থেকেই সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে অভিযানে নামে পুলিশ। মোটরসাইকেল নম্বর বিশ্লেষণ ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে আবদুস সাকিরকে তাঁর শ্বশুরবাড়ি রাজবাড়ীর খানখানাপুর এলাকা থেকে সকালে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গুলিবর্ষণের সময় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলও জব্দ করা হয়েছে। এরপর তাঁকে কুষ্টিয়া মডেল থানায় আনা হয়। সাকির শহরের আমলাপাড়া এলাকার কাজী আবদুস সামাদের ছেলে।
ওসি মোশাররফ হোসেন বলেন, থানায় আবদুস সাকিরকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে গুলি ছোড়ার ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য মিলেছে। আরও তথ্যের জন্য বিকেলে মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কুষ্টিয়া আদালতে নেওয়া হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে। জড়িত বাকিদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনকুষ্টিয়ায় চালকলমালিক নেতার বাড়িতে গুলি: অভিযোগের তির বিএনপি নেতার দিকে, নেপথ্যে হাটের ইজারা২১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আবদ স স ঘটন য় র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
চালকলমালিকদের সুবিধা দিতেই ধান সংগ্রহের পরিমাণ কমাচ্ছে সরকার
খাদ্য মন্ত্রণালয় এবারের বোরো মৌসুমে সাড়ে তিন লাখ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, যা গত বছর ছিল ছয় লাখ টন। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে শুক্রবার বিবৃতি দিয়েছেন দেশের ৪৩ বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা বলছেন, কৃষককে বঞ্চিত করে মিলারদের সুবিধা দিতে সরকার ধান সংগ্রহের পরিমাণ কমিয়েছে।
বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, সাবেক কৃষিসচিব আনোয়ার ফারুক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোশাহিদা সুলতানা, লেখক ও গবেষক আলতাফ পারভেজ, লেখক ও গবেষক কল্লোল মোস্তফা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক মাহা মীর্জা, লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন প্রমুখ।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে শুধু ধান ও চাল ছাড়া অন্য কোনো শস্য সরকারিভাবে কেনা হয় না। আবার কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহের সময় দাম নির্ধারণে অস্বচ্ছ ও অদক্ষ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়। ফলে কৃষক বছরের পর বছর প্রতারণার শিকার হন।
ধান-চাল কেনায় সরকারি উদ্যোগ অতি সামান্য হওয়ায় ধানের বাজারে তা খুব বেশি প্রভাব বিস্তার করতে পারে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, এ প্রবণতার কারণে প্রতিবছর চালকলমালিকদের (মিলার) একচ্ছত্রভাবে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা গেছে।
এই সিন্ডিকেট ভাঙার একমাত্র উপায় হিসেবে কৃষকের কাছ থেকে সরকারি ক্রয়কেন্দ্রের মাধ্যমে অধিক পরিমাণে ধান কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে।
সরকার চালকলমালিকদের কাছ থেকে চাল কিনলে কৃষকের লাভ হয় না উল্লেখ করে বিবৃতি অভিযোগ করা হয়েছে, এই প্রক্রিয়ায় লাভের একটা বড় অংশ মিলারদের পকেটে চলে যায়। কিন্তু কৃষকের থেকে সরাসরি ধান কেনা হলে বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ে।
এবার ধানের দাম প্রতি কেজিতে চার টাকা বাড়ানো হয়েছে, যা সাধুবাদযোগ্য বলে অভিমত দিয়েছেন বিবৃতিদাতারা।
খাদ্য অধিদপ্তরের শীর্ষ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এবার তাঁরা প্রতি কেজি ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৩৬ টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় চার টাকা বেশি। ফলে কৃষকেরা লাভবান হবেন। অন্যদিকে চাল কেনা হবে প্রতি কেজি ৪৯ টাকায়।
৩ লাখ টন ধানের পাশাপাশি এবার সাড়ে ১৪ লাখ টন চাল (সেদ্ধ) সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করেছে সরকার।
ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা কমেছে কেন জানতে চাইলে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, দেশে চাল আমদানি হয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণে। ধান কিনলে সেটা ভাঙানো ও মজুদের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে খাদ্য অধিদপ্তরের। সে জন্য চাইলেও তাঁরা এই মুহূর্তে বেশি ধান সংগ্রহ করতে পারছেন না।
বিবৃতিতে ৪৩ নাগরিকের পক্ষ থেকে চারটি দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। সেগুলো হলো ধান সংগ্রহ লক্ষ্যমাত্রা এখনই পরিবর্তন করে ১৭ লাখ টনে উন্নীত করা, চাল কেনার লক্ষ্যমাত্রা ৫ লাখ টনে নামিয়ে আনা, চলতি বোরো মৌসুমেই কৃষকের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে ধান কেনার পরিমাণ ৫০ লাখ টনে উন্নীত করা এবং আগামী অর্থবছরের মধ্যেই সরকারি গুদামের সক্ষমতা ২১ লাখ টন থেকে ৫০ লাখ টনে উন্নীত করা।
কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনার জন্য প্রাথমিকভাবে গুদামসক্ষমতা খুব বেশি বাড়ানোর প্রয়োজন পড়বে না বলে দাবি করা হয়েছে বিবৃতিতে। বলা হয়েছে, খাদ্য অধিদপ্তরের সঙ্গে দেশের অধিকাংশ চালকলের একটি বার্ষিক চুক্তি হয়ে থাকে। সেই চুক্তিতে শুধু চাল সরবরাহের শর্ত থাকে।
চুক্তিতে আরেকটি শর্ত যুক্ত করার পরামর্শ দিয়ে বিবৃতিদাতারা বলেছেন, সরকার কৃষকের কাছ থেকে যে ধান কিনবে তা মাড়াই করবে বেসরকারি চালকলগুলো। চালকল থেকে মাড়াই করা চাল সরাসরি সরকারের গুদামে চলে যাবে। এর ফলে বর্তমান গুদামসক্ষমতা দিয়েই অধিক পরিমাণে ধান কেনা সম্ভব হবে।
সরকারের সংগ্রহ কার্যক্রমে আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে গ্রামভিত্তিক ও ইউনিয়নভিত্তিক শস্য সংরক্ষণাগার করারও দাবি জানিয়েছেন বিবৃতিদাতারা। তাঁরা বলেছেন, শুধু সমতলের কৃষি নয়, পাহাড়ি এলাকার জুমে উৎপাদিত ধান ও ফসল ন্যায্যমূল্য দিয়ে কিনতে হবে। কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের স্থানীয় মূল্য নির্ধারণ কমিটিতে নারী-পুরুষ কৃষক ও জুমিয়া প্রতিনিধি রাখার দাবি জানান তাঁরা।