বিনা খরচে আরও কর্মী নেবে জাপান, সমঝোতা স্মারক সই
Published: 10th, April 2025 GMT
বিদেশে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অন্যান্য দেশের তুলনায় জাপানে আয়ের সুযোগ বেশি। জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিনা খরচে দেশটিতে যাওয়ার সুযোগ আছে। জাপানে ২০১৭ সাল থেকে কারিগরি শিক্ষানবিশ হিসেবে কর্মী যাচ্ছেন। নতুন করে বিনা খরচে আরও কর্মী পাঠাতে দেশটির বেসরকারি একটি কোম্পানির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করেছে সরকার।
আজ বৃহস্পতিবার প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমঝোতা স্মারক সই হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশি কর্মীরা বিনা মূল্যে জাপানি ভাষা ও কারিগরি বিষয়ে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন। প্রশিক্ষিত কর্মীরা বিনা অভিবাসন ব্যয়ে জাপানে কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন। জাপানে বেশি হারে কর্মী পাঠানোর সুযোগ তৈরি হবে।
কেয়ারগিভার, ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্যাকেজিং, প্লাস্টিক মোল্ডিং, রড বাইন্ডিং, স্ক্যাফোল্ডিং, কার পেইন্টিং, ওয়েল্ডিং ও অটোমোবাইল মেকানিক খাতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পাবেন কর্মীরা। চুক্তি শেষে জাপান থেকে ফিরে আসা কর্মীরা দেশীয় শিল্প খাতে তাঁদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রয়োগ করতে পারবেন।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, গত সাত বছরে ৬৯৫ জন টেকনিক্যাল ইন্টার্ন জাপানে গেছেন। নতুন এ সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে আরও বেশি কর্মীর জাপানে যাওয়ার সুযোগ হবে। নতুন এ সমঝোতা স্মারকের মধ্য দিয়ে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো।
সমঝোতা স্মারকে সই করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া ও জাপানের বেসরকারি কোম্পানি ওনোডেরা ইউজার রান ইনকরপোরেশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট তাকাশি সুগেনো।
বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থানে এই সমঝোতা স্মারককে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক আখ্যায়িত করে নেয়ামত উল্যা ভূঁইয়া বলেন, উন্নত দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ জনবল তৈরি ও নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করতে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় নিরলসভাবে কাজ করছে।
এর আগে ২০১৭ সালে ইন্টারন্যাশনাল ম্যানপাওয়ার ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (আইএম) জাপানের সঙ্গে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের স্বাক্ষরিত একটি সমঝোতা স্মারকের আওতায় সরকারিভাবে বর্তমানে দক্ষ শ্রমিক পাঠানো হচ্ছে দেশটিতে। দেশের বিভিন্ন জেলায় কারিগরি প্রশিক্ষণকেন্দ্রে জাপানি ভাষার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি)।
আরও পড়ুন৮ মাস প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপানে চাকরির সুযোগ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫চার মাস মেয়াদি জাপানি ভাষা শেখার এসব প্রশিক্ষণের পর পরীক্ষায় বসেন কর্মীরা। উত্তীর্ণ হলে আইএম জাপানের ব্যবস্থাপনায় আরও চার মাসের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এরপর শিক্ষানবিশ হিসেবে তাঁদের জাপানে নিয়ে যাওয়া হয়। জাপানে বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ২৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৭০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পান কর্মীরা।
জাপানের গড় আয়ু ৮৪ বছর। এসব বয়স্ক মানুষের সেবার জন্য দক্ষ জনবল দরকার। নির্মাণশিল্প, প্রযুক্তি, নার্সিং, কৃষি ও হোটেল ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড ট্যুরিজম খাতে কাজের সুযোগ আছে সেখানে। তবে বিদেশি শ্রমিক নেওয়ার ব্যাপারে জাপান বরাবরই রক্ষণশীল। জাপানি ভাষা শিক্ষা ছাড়া দেশটিতে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
আরও পড়ুনবিনা খরচায় জাপান যেতে যা লাগবে০৬ জানুয়ারি ২০২০.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভাসানচর হাতিয়ার নাকি সন্দ্বীপের, কেন এই দ্বীপ নিয়ে বিরোধ
মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ‘ভাসানচর’ দ্বীপের নাম মানুষ জানতে পারে মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে আসা রোহিঙ্গাদের স্থানান্তরের সরকারি সিদ্ধান্তের পর। তবে সম্প্রতি দ্বীপের মালিকানা নিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়া ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপবাসীর বিরোধের কারণে আবারও আলোচনায় এসেছে ভাসানচর। সন্দ্বীপবাসীর দাবি, দ্বীপটি ওই উপজেলার অংশ। অপর দিকে হাতিয়াবাসী দাবি করছে, দ্বীপ জেগে ওঠার পর থেকে বনায়ন থেকে শুরু করে দ্বীপের উন্নয়ন নোয়াখালী থেকেই হয়েছে। সে কারণে দ্বীপটি প্রশাসনিকভাবে নোয়াখালীর সঙ্গে যুক্ত।
সন্দ্বীপের দক্ষিণ উপকূলের কাছাকাছি গত শতকের নব্বইয়ের দশকে ভাসানচর জেগে উঠতে শুরু করে বলে বন বিভাগের তথ্য সূত্রে জানা গেছে। এরপর কয়েক দশক দ্বীপের ভূমির পরিমাণ বাড়তে থাকে। ২০১৭ সালের দিকে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের আলোচনার মধ্যেই সেটির নামকরণ হয় ভাসানচর। একই বছর দিয়ারা জরিপের মাধ্যমে সেটিকে নোয়াখালীর অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হলে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সেখানে ‘ভাসানচর থানা’ গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেই প্রজ্ঞাপনেও ভাসানচরকে হাতিয়া ও নোয়াখালীর অংশ বলে উল্লেখ করা হলে সন্দ্বীপের ছাত্র, পেশাজীবীসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ তখন বিক্ষোভ করেন।
সম্প্রতি সন্দ্বীপের বিভিন্ন স্তরের মানুষের দাবির মুখে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সীমানা জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে। ‘চট্টগ্রাম-নোয়াখালী জেলার সীমানা জটিলতা নিরসন কমিটি’ নামের এই কমিটিতে সন্দ্বীপ ও হাতিয়ার নির্বাহী কর্মকর্তার পাশাপাশি পেশাজীবীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ৯ মার্চ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সভায় সিদ্ধান্তের আলোকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা ভাসানচরকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার অন্তর্গত দেখিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়।
ভাসানচরের সীমানা বিরোধ নিরসনের প্রক্রিয়ার মধ্যেই এ নিয়ে নোয়াখালীর হাতিয়া ও চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মানুষজন নানা কর্মসূচি পালন করেছেন। ৭ এপ্রিল এ নিয়ে নাগরিক কমিটির নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে ভাসানচরকে হাতিয়ার দাবি করে একটি পোস্ট দেন। গত বুধবার ভাসানচরকে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করার ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলে ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে হাতিয়া দ্বীপ সমিতির উদ্যোগে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন করা হয়। একই দিন চট্টগ্রামেও হাতিয়াবাসীর পক্ষ থেকে মানববন্ধন করা হয়।
যা বলছে নোয়াখালী বন বিভাগ
ভাসানচরে প্রথম বনায়ন শুরু করে নোয়াখালী বন বিভাগ। নথিপত্র অনুযায়ী ২০০০ সাল থেকে জালিয়ারচরে বনায়ন শুরু করে নোয়াখালী উপকূলীয় বন বিভাগ। প্রথম দিকে চরের আয়তন ছিল কম। পরে ধীরে ধীরে দ্বীপের আয়তন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ে বনায়নের আয়তনও। ২০১৫ সাল পর্যন্ত দ্বীপটিতে বন বিভাগের বনায়নের পরিমাণ ৬ হাজার ৫২০ হেক্টর।
বন বিভাগের নথি অনুযায়ী, ১৯৯০ সালের দিকে জেগে ওঠা এই দ্বীপের নাম ছিল জালিয়ারচর। ১৯৯৮ সাল থেকে সেখানে সরকারিভাবে বনায়নও শুরু হয়। হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে জালিয়ারচরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। চরের অবস্থান হাতিয়ার মূল ভূখণ্ডের উত্তর-পূর্ব দিকে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের সময় দ্বীপের নাম বদলে রাখা হয় ভাসানচর।
ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর উপলক্ষে ভূমি উন্নয়ন, বাঁধ ও ভবন নির্মাণের সব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়েছিল নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে। ২০২০ সালের ৪ ডিসেম্বর ভাসানচরে প্রথমবারের মতো পা রাখে রোহিঙ্গারা। এ পর্যন্ত ২২ দফায় কক্সবাজারের বিভিন্ন আশ্রয়শিবির থেকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে ৩২ হাজার রোহিঙ্গাকে।
ভাসানচরকে হাতিয়ার দাবি করে মানববন্ধন করে হাতিয়া যুব কল্যাণ সোসাইটি। গত বুধবার বিকেল ৪টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে