ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগের (ডিপিএল) ফিক্সিং সন্দেহ জোরদার হয়েছে একটি ম্যাচে। গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ও শাইনপুকুরের ম্যাচকে ঘিরে ওঠা সেই সন্দেহ এবার গড়িয়েছে তদন্তে। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) দুর্নীতি দমন ইউনিট (এসি‌ইউ) ও লিগ কমিটি মিলে তদন্তের কাজ শুরু করেছে।

ঘটনা বুধবারের (০৯ এপ্রিল)। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল গুলশান ক্রিকেট ক্লাব ও শাইনপুকুর ক্রিকেট ক্লাব। ম্যাচে শাইনপুকুরের দুটি আউট জন্ম দিয়েছে সন্দেহের। এর মধ্যে রহিম আহমেদের স্টাম্পড আউট জন্ম দিয়েছে আলোচনার।

দুটি আউটের জের ধরেই সন্দেহের ভিত্তিতে বিসিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নিজেদের স্বচ্ছ অবস্থান জানিয়েছে। দেশের ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভাষ্য, ‘‘খেলাধুলার স্বচ্ছতা ও শুদ্ধতার প্রতি বিসিবি অঙ্গীকারাবদ্ধ। যেকোনো ধরনের দুর্নীতি কিংবা আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে বোর্ড জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে।’’

আরো পড়ুন:

জয়ে ফিরে সুপার লিগে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্স

দলকে জিতিয়েও সোহানের ৩ রানের আক্ষেপ

আজই তদন্তের অংশ হিসেবে মিরপুরে ডাকা হয়েছিল শাইনপুকুরের দুই ক্রিকেটার রহিম আহমেদ ও মিনহাজুল আবেদীন সাব্বিরকে। এই দুজন স্টেডিয়ামের একাডেমি মাঠে উপস্থিত হয়ে বিসিবি কর্মকর্তাদের সামনে বিতর্কিত স্টাম্পিংয়ের সেই ঘটনা পুনরায় মঞ্চায়ন করে দেখান। দুই পাশে দুটি ক্যামেরায় সেই দৃশ্য ধারণ করা হয়।

উল্লেখ্য, দুটি আউটের মধ্যে প্রথমটি ছিলেন রহিম আহমেদ। ফার্স্ট স্লিপ থেকে ব্যাট নামিয়ে লেগ সাইডে খেলতে চাইলেন এই ব্যাটার। তবে নিহাদুজ্জামানের বলটা টার্ন করে বেরিয়ে গেল। অবস্থা দেখে মনে হলো, বলটা কিপারের গ্লাভসে যেতে দিতেই যেন ডাউন দ্য উইকেটে উঠে এলেন রহিম

দ্বিতীয় আউটটি ঘিরেই যত সন্দেহের ডালপালা। নাঈম ইসলামের বলটা এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে মিস করেন মিনহাজুল। কিপার বল ধরতে দেরি করে ফেলেন। ব্যাটারের সামনে মোক্ষম সুযোগ অনায়াসে পপিং ক্রিজ ছুঁয়ে ফেলার। সেটা করতেও গিয়েছিলেন। পরক্ষণেই কি ভেবে যেন আবার ব্যাট সরিয়ে নিলেন! ডালভাতের মতো সুযোগ পেয়ে স্টাম্পের বেলস দুটো উড়িয়ে দিলেন কিপার।

ঢাকা/রিয়াদ/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর শ ইনপ ক র তদন ত

এছাড়াও পড়ুন:

গণহত্যার প্রতিবাদ জানাতে রাজধানীতে জনতার ঢল

ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে রাজধানীতে ‘মার্চ ফর গাজা’ কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন লাখো জনতা। শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত এ কর্মসূচির কারণে শাহবাগ, দোয়েল চত্বর, নীলক্ষেত, টিএসসি, পলাশীসহ আশপাশের এলাকার রাস্তা লোকারণ্য হয়ে পড়ে।

কর্মসূচিতে সব রাজনৈতিক দল এবং ওলামায়ে কেরামের সর্বসম্মতিক্রমে তৈরি মার্চ ফর গাজা ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ঘোষণাপত্রে ইসরায়েলের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার, গণহত্যা বন্ধে কার্যক্রর পদক্ষেপ, ইসরায়েলি পণ্য বয়কট এবং ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে মুসলিম বিশ্বের নেতাদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।

এর আগে ফেসবুকে ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে একটি ইভেন্ট পেজ তৈরি করে প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ নামে একটি সংগঠন। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন সংগঠন, ইসলামী বক্তা ও নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ এই কর্মসূচিতে যোগ দেন।

কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যেতে শুরু করেন। এতে শাহবাগ ও আশপাশে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের দিকে মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাংলামটর, শাহবাগ, যাত্রাবাড়ী, রামপুরা এলাকা হয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে আসতে থাকে। পিকআপ ভ্যানে করে নারী শিশুরাও স্লোগান দিতে দিতে কর্মসূচিতে যোগ দেন।

বেলা সোয়া ৩টায় পবিত্র কোরআন তিলাওয়াতের মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়ে ৪টার দিকে ঘোষণাপত্র পাঠের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। অনুষ্ঠানে ‘আমার ভাই শহীদ কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’, ‘গাজায় গণহত্যা কেন, জাতিসংঘ জবাব চাই’, ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন, ফ্রি ফ্রি আল আকসা’, ‘ওয়ান টু থ্রি ফোর– জেনোসাইড নো মোর’ ইত্যাদি স্লোগান দেওয়া হয়। 

ঘোষণাপত্রের প্রথম অংশে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি দ্বিতীয় অংশে মুসলিম বিশ্বের সরকার ও উম্মাহের প্রতি এবং তৃতীয় অংশে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আলাদা দাবি জানানো হয়। 

জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি উদ্দেশ করে ঘোষণাপত্রে বলা হয়, পশ্চিমা শক্তিবলয়ের অনেক রাষ্ট্র সরাসরি দখলদারকে অস্ত্র, অর্থ ও কূটনৈতিক সহায়তা দিয়ে এই গণহত্যাকে দীর্ঘস্থায়ী করেছে। এই বিশ্ব ব্যবস্থা দখলদার ইসরায়েলকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে বরং রক্ষা করার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। আমরা জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি বলছি, জায়নবাদী ইসরায়েলের গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতে নিশ্চিত করতে হবে; যুদ্ধবিরতি নয়, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে; ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করতে হবে; পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দিতে হবে; ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করতে হবে।

দ্বিতীয় দাবিগুলো মুসলিম উম্মাহর নেতাদের প্রতি জানানো হয়। এতে বলা হয়, যেহেতু আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিন শুধু একটি ভূখণ্ড নয়, এটি মুসলিম উম্মাহর আত্মপরিচয়ের অংশ; গাজা এখন শুধু একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয়, এটি আমাদের সম্মিলিত ব্যর্থতার বেদনাদায়ক প্রতিচ্ছবি; ভারতের হিন্দুত্ববাদ আজ এই অঞ্চলে জায়নবাদী প্রকল্পের প্রতিনিধিতে পরিণত হয়েছে। মুসলমানদের বিরুদ্ধে সুপরিকল্পিত দমন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে; ভারতে সম্প্রতি ওয়াক্ফ সম্পত্তি আইনে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে মুসলিমদের ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক অধিকার হরণ করা হয়েছে, যা উম্মাহর জন্য একটি স্পষ্ট সতর্কবার্তা। 

এতে তারা মুসলিম বিশ্বের সরকার ও ওআইসিসহ মুসলিম উম্মাহর প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠনগুলোর কাছে দৃঢ়ভাবে আহ্বান জানান। এতে বলা হয়, ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে; জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে; গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন, প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে; আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে এক ঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে।

তৃতীয় অংশে আমরা বাংলাদেশের সরকারের প্রতি ছয়টি দাবি জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘এক্সেপ্ট ইসরায়েল’ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে; সরকারের ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে; রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে; সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে; পাঠ্যবই ও শিক্ষানীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন এবং মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

অনুষ্ঠানস্থলে যা হলো
অনুষ্ঠান শুরুর আগে মঞ্চ থেকে দেওয়া হয় বিভিন্ন স্লোগান, পরিবেশন করা হয় ইসলামী গান। কর্মসূচি শুরুর পর মঞ্চে রাজনৈতিক দল এবং ওলামা কেরাম মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড়ান। শুরুতে ফিলিস্তিন নিয়ে স্লোগান দেন মিজানুর রহমান আজহারী, এর পর ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মাহমুদুর রহমান। শেষে মোনাজাত করেন বায়তুল মোকাররমের খতিব মুফতি আবদুল মালেক। পরে ফিলিস্তিনের মুক্তি চেয়ে ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ বলে স্লোগান তোলেন মাওলানা মামুনুল হক এবং জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন শায়খ আহমদুল্লাহ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এবং যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, আবদুস সালাম, জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন রাজী ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর; ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির সৈয়দ ফয়জুল করীম এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ইলিয়াস কাঞ্চন, অ্যাক্টিভিস্ট সাইমুম সাদি প্রমুখ।

মিজানুর রহমান আজহারী বলেন, ভৌগোলিকভাবে আমরা ফিলিস্তিন থেকে অনেক দূরে হতে পারি; কিন্তু আজকের জনসমাবেশ প্রমাণ করে বাংলাদেশের একেকজনের মনের ভেতরে বাস করে এক একটা ফিলিস্তিন।

সকাল থেকে জনস্রোত
প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট বাংলাদেশ আয়োজিত এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে জনতার ঢল নামে রাজধানীর শাহবাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট মোড়, আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড, বুয়েট ক্যাম্পাস, চানখাঁরপুল, গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররমের চারপাশ, পল্টন, দৈনিক বাংলা মোড়, ফকিরাপুল, নয়াপল্টন, শান্তিনগর, মালিবাগ, মৌচাক, মগবাজার, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, বাংলামটর, সায়েন্স ল্যাব, কাঁটাবন, মৎস্য ভবন, শিক্ষাভবন চত্বর, হাইকোর্ট চত্বর এলাকায়। এ সময় এ সড়কগুলোতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। চারদিকে ফিলিস্তিনের পতাকা হাতে মানুষের স্লোগানে প্রকম্পিত ছিল রাজপথ।

সকাল থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের আশপাশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি, রমনা মন্দির গেট, শাহবাগসংলগ্ন ছবির হাট গেট, মৎস্য ভবন এলাকা থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশন গেট দিয়ে উদ্যানে প্রবেশ করতে থাকে জনতা। 

উদ্যানের লেকের পাশে স্থাপন করা হয় প্রধান মঞ্চ। উদ্যানের চারপাশে কয়েকটি পয়েন্টে মেডিকেল ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। মোড়ে মোড়ে স্বেচ্ছাসেবকরা শৃঙ্খলার দায়িত্বে ছিলেন। পথে পথে নানা সংগঠনের পক্ষ থেকে পানি ও শুকনা খাবার বিতরণ করতে দেখা যায়।

এদিকে সারাদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ যোগ দেয় কর্মসূচিতে। পিরোজপুর থেকে আসা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা তামান্না ইয়াসমিন রাজু ভাস্কর্যে পতাকা নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি বলেন, ইসরায়েল গণহত্যা চালাচ্ছে। ফিলিস্তিনের মতো পবিত্র স্থানকে তারা ধ্বংস করে দিতে চায়, এর প্রতিবাদে আমরা রাজপথে নেমেছি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ