কৃষি ও কৃষকেরাই দেশটাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন মন্তব্য করে কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘এ জন্য কৃষকদের সব সময় ধন্যবাদ দিতে হবে। কৃষকের ধানের ন্যায্য দাম নিশ্চিত করা হবে। সরকার ধান কিনবে। ধান কেনায় কোনো সিন্ডিকেট হলে সেটি আমরা সোজা করে দেব।’

সুনামগঞ্জের হাওরে বোরো ধান কাটার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের কৃষি উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সদর উপজেলার দেখার হাওরের গোবিন্দপুর এলাকায় কম্বাইন হারভেস্টার দিয়ে একজন কৃষকের ধান কাটেন কৃষি উপদেষ্টা। এর মাধ্যমেই হাওরে বোরো ধান কাটার উদ্বোধন করেন তিনি। এরপর কৃষকদের সঙ্গে ফসল, হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধ, ধানের দামসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।

কৃষি উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সরকার ধান ও চাল ক্রয়ের জন্য দাম নির্ধারণ করেছে। সেই অনুযায়ী যথাসময়ে ধান-চাল কেনা শুরু হবে। কৃষকেরাই আমাদের ভরসা। তাঁরা নানাভাবে বঞ্চিত হন। কৃষকেরা যাতে ধানের ন্যায্য দাম পান, সে জন্য সরকারিভাবে আমরা ধান ক্রয় করব।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, দেশে এবার ভালো ধান হয়েছে। খাদ্যসংকটের কোনো আশঙ্কা নেই। প্রচুর খাদ্য মজুত আছে।

কৃষকেরা উপদেষ্টার কাছে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের দুর্বলতা, হাওরে রাবার ড্যামের সমস্যার কথা তুলে ধরেন। উপদেষ্টা তখন রাবার ড্যামের বিষয়ে কথা বলতে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.

আনোয়ার হোসেনের খোঁজ করেন। কিন্তু তিনি সেখানে না থাকায় উপদেষ্টা নিজেই তাঁকে ফোন করে এ বিষয়ে জানতে চান। এ সময় উপদেষ্টাকে বলতে শোনা যায়, ‘সাত দিনের মধ্যে ড্যাম রিপেয়ার করবেন, না হলে আপনাকে কিন্তু রিপেয়ার করে দেব। পয়সা খাইবেন, পকেটে ঢুকাইবেন, কাম করবেন না। সাত দিনের মধ্যে এটা করবেন...।’ হাওরের বাঁধ নিয়ে কোনো ঝামেলা হলে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ঝামেলায় পড়বেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় উপদেষ্টার সঙ্গে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো. জাকির হোসেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সাইফুল ইসলাম, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মো. রেজা উন নবী, পুলিশের সিলেট রেঞ্জের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মো. মুশফিকুর রহমান, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া, পুলিশ সুপার মো. তোফায়েল আহাম্মেদ, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

সুনামগঞ্জে এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৫০২ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। ধানের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ১৩ লাখ ৭০ হাজার মেট্রিক টন।

কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দুপুরে সুনামগঞ্জে আসার পথে জেলার শান্তিগঞ্জ থানা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের কাছে তিনি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে এবং আরও হবে বলে মন্তব্য করেন। উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমাদের নিজস্ব কিছু হাতিয়ারও আমরা হারিয়েছি। সবগুলো উদ্ধার হয়নি। সেগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। সেগুলো উদ্ধার হলে পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।’ তিনি প্রশ্ন রাখেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি আগের চেয়ে ভালো হয়নি?

সম্প্রতি দেশের দুটি বিভাগীয় শহরে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিক্ষোভকালে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, লুটপাটের ঘটনা প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘ঘটনা কিছু ঘটবে। আমরা প্রতিকার নিয়েছি কি না, সেটা দেখার বিষয়। যেসব জায়গায় ঘটনা ঘটছে, যারা এই অপকর্ম করেছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হয়েছে। ভবিষ্যতেও কেউ যদি এ রকম অপরাধ করতে যায়, আমরা আইনের আওতায় নিয়ে আসব।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ন মগঞ জ উপদ ষ ট হ ওর র

এছাড়াও পড়ুন:

স্ত্রী-ছেলেসহ তিন খুনের দায় স্বীকার, ১০ দিনের রিমান্ড

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জে তিন খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. ইয়াসিন পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দায় স্বীকার করেছে। শনিবার বিকেলে তাকে তোলা হয় জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বেলায়েত হোসেনের আদালতে। সেখানে ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান।

শুক্রবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া এলাকায় ময়লার স্তূপ খুঁড়ে ইয়াসিনের স্ত্রী লামিয়া আক্তার (২২), চার বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ ওরফে রাফসান লাবিব ও লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না আক্তারের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকেই এলাকাবাসী ইয়াসিনকে (২৪) ধরে পুলিশে দেন। সে মিজমিজি দক্ষিণপাড়ার মো. দুলালের ছেলে। আগে ইয়াসিন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাত। পুলিশ জানিয়েছে, ছিঁচকে চোর ও মাদকাসক্ত হিসেবেও পরিচিত সে।
শুক্রবার রাতেই লামিয়ার মেজো বোন মুনমুন আক্তার বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে ইয়াসিন ছাড়াও তার বাবা মো. দুলাল (৫০) ও বোন মোসা. শিমুকে (২৭) আসামি করা হয়েছে। মুনমুন জানিয়েছেন, লামিয়া সিদ্ধিরগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ৫ বছর আগে ইয়াসিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বড় বোন স্বপ্নাও লামিয়ার সঙ্গে পশ্চিমপাড়ার ভাড়া বাসায় থাকতেন। ৭ এপ্রিল দুপুরে ওই বাসায় বোনদের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ কথা হয়। এর পর থেকে তাদের মুঠোফোনটি বন্ধ ছিল।

মামলায় মুনমুন উল্লেখ করেছেন, মাদকাসক্ত ইয়াসিন কোনো কাজ করত না। প্রায় সময় টাকার জন্য লামিয়াকে মারধর করত ও হত্যার হুমকি দিত।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার ইয়াসিন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ