বাড়িতে বাবার লাশ রেখে দাখিল পরীক্ষা দিল ছেলে
Published: 10th, April 2025 GMT
সকালে দাখিল পরীক্ষা ছিল আশিকের। পরিবারজুড়ে ছেলের পরীক্ষা উপলক্ষে তোড়জোড়, প্রস্তুতি। তবে শেষ মুহূর্তে পরিবারজুড়ে নেমে এলো বিষাদের ছায়া। হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন আশিকের বাবা মাসুদুর রহমান মাসুদ। শেষ আশা, ছেলেকে নিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্রে যাবেন- সেই আশা আর পূরণ হলো না। ছেলেসহ পুরো পরিবারকে রেখে চলে গেলেন না ফেরার দেশে। বাবাকে হারানোর পাহাড় সমান বেদনা বুকে চেপে ছেলে একাই গেল পরীক্ষার হলে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ভোরে যশোর সদরের কাশিমপুর ইউনিয়নের দৌলতদিহি গ্রামে এই হৃদয় বিদারক ঘটনাটি ঘটে।
পরীক্ষা শেষ করে এসেই বাবার জানাযায় অংশ নেয় আশিক। এমন হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি উপস্থিত এলাকাবাসী।
আশিক চুড়ামনকাঠির ছাতিয়ানতলা কেআই আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রে আল কোরআন বিষয়ে পরীক্ষা দিচ্ছে। মৃত মাসুদ যশোর সদর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়নের দৌলতদিহি গ্রামের মৃত আব্দুস সাত্তারের ছেলে।
মৃতের স্বজনরা জানিয়েছেন, আশিক কাশিমপুরের মিরাপুর ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র। ছেলের পরীক্ষা তাই তাকে সাথে নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে যাবেন বাবা এমন কথা রাতে বলে ঘুমাতে যান মাসুদ। কিন্তু ভোরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে নিজ বাড়িতে মারা যান মাসুদ। তিনি চুড়ামনকাটি বাজারে লিবার্টি সু-এর ব্যবসা করতেন।
একদিকে বাবার লাশ বাড়িতে অন্যদিকে পরীক্ষা। বাবাকে হারানোর কঠিন শোক নিয়েই বাড়িতে বাবার লাশ রেখে সকালে পরীক্ষা দিতে যায় আশিক। দুপুর ১টায় পরীক্ষা শেষে বাড়িতে ফিরে জানাযায় অংশ নেয় আশিক। নামাজ শেষে মাসুদের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
আশিকের প্রাইভেট শিক্ষক রাব্বি হাসান জিহাদ জানান, আশিক একজন মেধাবী ছাত্র। তার বাবার মৃত্যুর খবরে তিনি সকালে তাদের বাড়িতে যান। বাবার মৃত্যুতে আশিক মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার পর সাথে করে কেন্দ্রে নিয়ে যান।
ছাতিয়ানতলা কেআই আলিম মাদ্রাসা কেন্দ্রের সচিব মোহাম্মদ হাফিজুর রহমান জানান, বাড়িতে বাবার লাশ রেখে পরীক্ষা দিয়েছে আশিক। পরীক্ষা চলাকালে তার মনটা খারাপ ছিল। ঘটনাটি কষ্টদায়ক হলেও তাকে মনোযোগ সহকারেই পরীক্ষা দিতে বলা হয়। শিক্ষকরা তার দিকে আলাদাভাবে খেয়ালও রেখেছিলেন।
ঢাকা/রিটন/এস
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
রূপনগরে শিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ খেলার জায়গা উদ্বোধন
এলাকাভিত্তিক খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিশুদের জন্য রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর আবাসিক এলাকায় ভ্রাম্যমাণ খেলার জায়গা (মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড) উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে স্কুল অব লাইফ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ও হেলথ ব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার সম্মিলিত উদ্যোগে এটির উদ্বোধন করা হয়। এই আয়োজনে সহযোগিতা করেন রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা।
আয়োজকেরা জানান, প্রতি শনিবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রূপনগর আবাসিক এলাকার ১৫ নম্বর সড়কে নিয়মিত মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ডে খেলাধুলার আয়োজন করা হবে। খেলাধুলার মধ্য থাকবে দাবা, লুডু, ক্যারম, দড়ি লাফ ও ব্যাডমিন্টন। এ ছাড়াও থাকবে ছবি আঁকা, হস্তশিল্প ও সামাজিকীকরণের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মাঠ ও পার্কের অপ্রতুলতা ঢাকা শহরের একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের ৩৭টিতে কোনো খেলার মাঠ বা পার্ক নেই। শিশুদের খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এলাকাভিত্তিক মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড তৈরি একটি কার্যকর সমাধান। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে, শহর হবে প্রাণবন্ত ও বাসযোগ্য।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্কুল অব লাইফের চেয়ারম্যান চিকিৎসক অনুপম হোসেন বলেন, ঘরবন্দী জীবনে শিশুরা হাঁপিয়ে উঠেছে। করোনাকালে দীর্ঘদিন ঘরে থাকার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এলাকাভিত্তিক স্বল্প ব্যবহৃত বা অব্যবহৃত রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড তৈরি করে খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরি করা যায়। এতে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ ও সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার মানসিকতা গড়ে উঠবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ-পার্ক নেই। অর্থ ও স্থান সংকুলান বিবেচনায় সিটি করপোরেশনের পক্ষে দ্রুত বড় আকারের মাঠ-পার্ক তৈরি সম্ভব নয়। তবে খুব কম খরচে ও স্বল্প জায়গায় শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে এলাকাভিত্তিক খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের স্থান গড়ে তোলা সম্ভব। নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্কুল অব লাইফের সদস্যসচিব সাবরিনা নওরিন লিমু, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মকর্তা, মিরপুর সেকশন- ৭ এর রূপনগর আবাসিক এলাকার ১৫ নম্বর সড়কের এলাকাবাসী ও শিশু-কিশোরেরা।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মিঠুন।