থানায় লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়ায় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ক্ষোভ
Published: 10th, April 2025 GMT
একদিনের সফরে সিলেটে এসেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে সিলেট বিমানবন্দর থানা পরিদর্শনে আসেন তিনি। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে লাল গালিচা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
সিলেট মেট্রোপলিটন কমিশনারের কাছে ক্ষুব্ধ স্বরে জানতে চান, ‘‘থানায় এই ব্যবস্থা কেন? না করছি যেটা সেটা কেন রাখছ। এখন উঠাও। কাম না করে খালি আকাম করো।’’
এ সময় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা লাল গালিচা উঠানোর ব্যবস্থা করেন। থানা পরিদর্শন শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
আরো পড়ুন:
‘ক্রিম আপা’র বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা
থানা থেকে ছাত্রদল নেতাকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় ওসিসহ ৪ পুলিশ সদস্য প্রত্যাহার
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘আগের চেয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অনেক উন্নতি হয়েছে। তবে, এখনো পুলিশকে পুনর্গঠন করা যায়নি। ৫ আগস্টের সময় অনেক গাড়ি, থানা পুড়েছে। এখনো তাদের একটি গাড়িও কিনে দেওয়া যায়নি। অর্থ বরাদ্দ পেলে এই ব্যবস্থার আরো উন্নয়ন হবে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘থানা থেকে লুট হওয়া সব অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। অস্ত্র উদ্ধারে চেষ্টা চলছে। লুট হওয়া অস্ত্র বাহিরে থাকলে নিরাপত্তার হুমকি থাকবে।’’
ঢাকা/নূর/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
সবাই ভয়ে পালিয়েছে, ভারতের নন্দনগরে এক মুসলিম পরিবারের টিকে থাকার লড়াই
নন্দাকিনী নদীর তীরে রোজ সকাল আটটায় নিজের ড্রাই ক্লিনিংয়ের দোকানের বাদামি শাটার খুলে কাজ শুরু করেন আহমেদ হাসান। উত্তর ভারতের হিমালয় অঞ্চলের উত্তরাখন্ড রাজ্যের নন্দনগরে বংশপরম্পরায় বসবাস করে আসছেন তিনি।
সকালে দোকান খুলে নিত্যদিনের কাজ শুরু করেন হাসান। শুকনো পদ্ধতিতে পরিষ্কার (ড্রাই ক্লিনড) করা কাপড় নিজের দোকানের গোলাপি দেয়ালের প্লাস্টিক কভারে সুচারুভাবে ঝুলিয়ে রাখেন। এরপর ৪৯ বছর বয়সী এই ব্যক্তি গ্রাহকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন।
২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মধ্যাহ্নভোজের আগে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ জন গ্রাহক হাসানের কাছে আসতেন। শেরওয়ানি, স্যুট, কোট, প্যান্ট এবং শীতকালীন পোশাক তাঁর কাছে পরিষ্কার করতে দিতেন। কোনো কোনো গ্রাহক তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিতেন। চা খেতে খেতে রাজনীতি নিয়ে আলাপ ও মজা করতেন, হাসি–আনন্দ ও সুখ-দুঃখ বিনিময় করতেন। গ্রাহকদের বেশির ভাগ ছিলেন হিন্দু, অল্প কিছু ছিলেন মুসলিম।
কিন্তু ১২ এপ্রিল দুপুর পর্যন্ত পাঁচজনেরও কম হিন্দু গ্রাহক হাসানের দোকানে এসেছেন। তিনি জানান, কোনো মুসলিম গ্রাহকের আশায় থাকা বৃথা। এ সম্ভাবনা শেষ হয়ে গেছে।
নন্দনগরে এখন হাসানই একমাত্র মুসলিম পুরুষ। অথচ এই শহরে কয়েক মাস আগেও ১৫টি মুসলিম পরিবার ছিল, যারা বংশপরম্পরায় এখানে বসবাস করে আসছিল। হাসানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা এখানেই। প্রতিবেশী হিন্দুদের সঙ্গে তাঁর পরিবারের সুসম্পর্ক ছিল। পূজা-পার্বণে হিন্দুরা তাঁদের নিমন্ত্রণ করতেন। আর ঈদের সময় হিন্দু প্রতিবেশীদের তাঁরা দাওয়াত দিতেন। প্রতিবেশী হিন্দু মারা গেলে শবদাহের জন্য তিনি কাঠ সংগ্রহ করতেন, হিন্দু বন্ধুদের মরদেহ কাঁধে বহন করে শ্মশানে নিয়ে গেছেন।
কিন্তু গত সেপ্টেম্বরে এই এলাকায় মুসলিমবিরোধী সহিংসতা শুরুর পর এ সবকিছু রাতারাতি বদলে গেছে। এক হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে এ সহিংসতা শুরু হয়েছিল। তবে নন্দনগরে সংখ্যালঘু মুসলিমদের বিরুদ্ধে মন–মানসিকতায় আরও আগে থেকেই বড় পরিবর্তন সূচনা হয়েছিল, যা করোনাকাল থেকে খেয়াল করে আসছিলেন হাসান।
গত সেপ্টেম্বরে মুসলিমদের বিরুদ্ধে শারীরিক হামলার আগে তাঁদের বিরুদ্ধে নানা ধরনের ঘৃণামূলক স্লোগান দেওয়া হতো। মুসলিমবিরোধী কিছু বিক্ষোভও হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় হিন্দু মেয়েকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। দোকানপাট ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এ পরিস্থিতিতে প্রাণভয়ে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মানুষেরা রাতের আঁধারে নন্দনগর ছেড়ে পালিয়ে যান।
হাসানও পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পর তিনি স্ত্রী, দুই মেয়ে ও দুই ছেলেকে নিয়ে ফিরে আসেন। ভারতের প্রত্যন্ত অঞ্চলের এই ছোট্ট শহর আবার মুসলিমদের বসবাসের উপযোগী করার ব্যাপারে তিনি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। কারণ, এটাই তাঁদের জন্মভূমি। কিন্তু হাসানের পরিবারকে সেখানে এখনো ভয়ে ভয়েই থাকতে হচ্ছে।
হিন্দু প্রতিবেশীরা এখন হাসানের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন না। আগে তিনি সন্ধ্যায় নিয়মিত নন্দাকিনী নদীর তীরে হাঁটতে গেলেও এখন যান না। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে তিনি নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের কারও সঙ্গে দেখা করতে দেন না। তাঁর আশঙ্কা, আবারও সহিংসতা দেখা দিতে পারে।
হাসান বলেন, ‘আমি সোজা দোকানে যাই, দোকান থেকে বাসায় আসি। সারাটি জীবন এই শহরে কাটালেও নিজেকে আমার এখন ভূত বলে মনে হয়। আমি যেন সম্পূর্ণ অদৃশ্য। এমনকি কেউ আমার সঙ্গে কথা পর্যন্ত বলছেন না।’
‘মুসলিমদের জুতা দিয়ে পেটাও’
রাজধানী নয়াদিল্লি থেকে গাড়িতে করে নন্দনগর যেতে সময় লাগে প্রায় ১০ ঘণ্টা। ভারত-চীন সীমান্তের কাছাকাছি স্থানের এই শহরটি নন্দাকিনীর কয়েকটি উপনদীর সংগমস্থলে অবস্থিত। গঙ্গার ছয়টি উপনদীর একটি হলো নন্দাকিনী, যাকে হিন্দুরা পবিত্র বলে বিশ্বাস করেন। শহরটি জনসংখ্যা প্রায় দুই হাজার।
হাসানের দাদা পার্শ্ববর্তী উত্তর প্রদেশ রাজ্যের বিজনৌর জেলার নাজিবাবাদ শহর থেকে ১৯৭৫ সালে নন্দনগরে এসেছিলেন। তাঁদের পরিবার সেখানেই বসতি গড়ে। পরের বছর হাসানের জন্ম হয়।
এক মুসলমান নরসুন্দরের যৌন হয়রানির অভিযোগের বিরুদ্ধে অনুষ্ঠিত প্রতিবাদ মিছিলে হাসান ও নন্দনগরের অন্য মুসলমানরাও অংশ নিয়েছিলেন