ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের হুরিয়ৎ নেতা মীরওয়াইজ ওমর ফারুকের উদ্যোগে ধর্মীয় নেতাদের বৈঠকে বাধা দিল জম্মু–কাশ্মীর পুলিশ। গতকাল বুধবার শ্রীনগরে মীরওয়াইজ ওমর ফারুকের বাড়িতে ওই বৈঠকে ওয়াক্ফ আইনের খুঁটিনাটি নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। সেই বৈঠকে যোগ দিতে জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখের ধর্মীয় নেতারা শ্রীনগর এসেছিলেন বলে জানিয়েছেন ওমর ফারুক। তাঁর উদ্যোগে ওই বৈঠকের আয়োজন করেছিল বিভিন্ন ধর্মীয় নেতাদের নিয়ে গঠিত সংগঠন মুত্তাহিদা মজলিস উলেমা (এমএমইউ)।
পুলিশি আচরণের নিন্দা করে ওমর ফারুক সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ধর্মীয় নেতারা একত্র হয়ে ওয়াক্ফ আইন নিয়ে আলোচনা করতে চেয়েছিলেন। শান্তিপূর্ণভাবে। এটা প্রত্যেকের গণতান্ত্রিক অধিকার। অথচ সেই বৈঠকও পুলিশ হতে দিল না। তাঁর বাড়ি ঘিরে রাখা হলো। অথচ এই আইন প্রণয়নের আগে সংসদের উভয় কক্ষে বিলটি আলোচিত হয়েছে। সবাই তাদের মতামত জানিয়েছেন। সেই আলোচনার অধিকার তাঁদেরও রয়েছে।
ওমর ফারুক বলেন, এই আইনের বিরোধিতায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড যে ভূমিকা নিয়েছে তাঁরা তাকে পূর্ণ সমর্থন জানাচ্ছেন।
মীরওয়াইজ ওমর ফারুক বলেছেন, এই আইনের বিরোধিতায় তাঁরা একটি প্রস্তাব গ্রহণ করবেন। আগামীকাল শুক্রবার নামাজের পর প্রতিটি মসজিদ থেকে সেই প্রস্তাবের সিদ্ধান্ত প্রচার করা হবে।
গত সোমবার জম্মু–কাশ্মীর বিধানসভায় ওয়াক্ফ আইন নিয়ে আলোচনার অনুমতি স্পিকার দেননি। সে নিয়ে রাজনৈতিক চর্চা অব্যাহত। ওমর ফারুক ওই বিষয়ে স্পিকার আবদুল রহিম রাথেরের সমালোচনা করেছেন।
জম্মু–কাশ্মীরের শাসক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ও বিরোধী দল পিডিপি ঠিক করেছে, ওয়াক্ফ আইনের বিরোধিতায় আলাদা আলাদাভাবে সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করবে। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই ১৫টি মামলা রুজু হয়েছে। ১৬ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টে এই মামলার শুনানি শুরু।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
বান্দরবানে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মাধ্যমে সাংগ্রাই শুরু
বান্দরবান পার্বত্য জেলায় বসবাসরত ১১টি জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে অন্যতম প্রাণবন্ত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যে ভরপুর ‘সাংগ্রাই’ উৎসব শুরু হয়েছে।
রবিবার (১৩ এপ্রিল) সকাল ৮ টার দিকে বান্দরবানের রাজার মাঠ থেকে শোভাযাত্রাটি আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়।
উৎসব উদ্বোধন করেন বান্দরবানের জেলা প্রশাসক শামীম আরা রিনি। তিনি শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে শুভ সূচনা করেন।
বান্দরবানে বসবাসরত চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা, তঞ্চঙ্গ্যা, চাক, ম্রো, খিয়াং, খুমি, বমসহ ১১টি জাতিগোষ্ঠী এই বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রায় অংশ নেয়। শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মানুষ তাদের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে সারিবদ্ধভাবে হাতে ফেস্টুন, প্ল্যাকার্ড নিয়ে, গানের সুর ও তালের সঙ্গে আনন্দঘন পরিবেশে শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে শোভাযাত্রাটি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক ইনস্টিটিউটে এসে শেষ হয়।
এই উৎসবটি প্রতিটি জাতিগোষ্ঠী নিজ নিজ নামে উদযাপন করে থাকে। মারমারা একে বলে সাংগ্রাই, চাকমারা বিজু, ত্রিপুরারা বৈসু, তঞ্চঙ্গ্যারা বিষু, আর অন্যান্যরা চাংক্রান নামে অভিহিত করে। বান্দরবানের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও সম্প্রীতির অনন্য প্রতীক এই উৎসব পার্বত্য এলাকার মানুষের জীবনে এনে দেয় নতুন আনন্দ, মিলন ও আশাবাদের বার্তা।
বান্দরবান জেলা উৎসব উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে এ সাংগ্রাই উৎসব ১৩ এপ্রিল থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সাপ্তাহব্যাপী নানা কর্মসূচী রয়েছে। সাংগ্রাই বর্ণাঢ্য র্যালি, বয়োজ্যেষ্ঠ পূজা, বুদ্ধস্নান, পাড়া ভিত্তিক পিঠা উৎসব, ঐতিহ্যবাহী বলী খেলা, তৈলাক্ত বাঁশে আরোহণ, সর্বশেষ টানা তিনদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মৈত্রীয় পানি বর্ষণ বা জলকেলি উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
উৎসব উদযাপন পরিষদের কমিটির সভাপতি চনুংমং মার্মা বলেন, বর্ষবরণ ও বর্ষবিদায় উৎসব সাংগ্রাই। আজ শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে। সাংগ্রাই উৎসব উপলক্ষে আজ থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে। এসব অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সুপ্রদীপ চাকমা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক থানজামা লুসাইসহ অনেকেই উপস্থিত থাকবেন বলে জানিয়েছেন।
ঢাকা/চাই মং/টিপু