নাসার নেতৃত্বাধীন আর্টেমিস অ্যাকর্ডস কী, চুক্তিটি করায় কী সুফল পাবে বাংলাদেশ
Published: 10th, April 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নেতৃত্বাধীন একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ ‘আর্টেমিস অ্যাকর্ডস’। বৈশ্বিক এই উদ্যোগে সবশেষ দেশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ।
গত মঙ্গলবার ‘আর্টেমিস’ চুক্তি সই করে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন ও বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের উপস্থিতিতে প্রতিরক্ষাসচিব মো.
সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি সম্মানজনক আন্তর্জাতিক মহাকাশ জোটের অংশ হলো। বাংলাদেশ নিজেকে বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণা, মহাকাশ ঐতিহ্য সংরক্ষণ ও মহাকাশ সম্পদের দায়িত্বশীল ব্যবহারে সম্পৃক্ত করল। এই চুক্তি বাংলাদেশের জন্য মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রকে আরও বেগবান করবে।
এখন দেখে নেওয়া যাক, এই অ্যাকর্ডস কী, আর এই চুক্তি করায় কী সুফল বা সুযোগ পাবে বাংলাদেশ।
আর্টেমিস অ্যাকর্ডস কী২০২০ সালের অক্টোবরে আর্টেমিস অ্যাকর্ডস প্রতিষ্ঠিত হয়। আর্টেমিস অ্যাকর্ডস প্রতিষ্ঠায় যুক্তরাষ্ট্রসহ আটটি দেশের জাতীয় মহাকাশ সংস্থার প্রতিনিধিরা চুক্তি সই করেন। চুক্তিতে প্রথম স্বাক্ষরকারী অপর সাত দেশ হলো যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, ইতালি, লুক্সেমবার্গ ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
২০২৫ সালের ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত আর্টেমিস অ্যাকর্ডসে বিভিন্ন মহাদেশের ৫৩টি দেশ স্বাক্ষর করে। আর ৮ এপ্রিল আর্টেমিস অ্যাকর্ডসের ৫৪তম স্বাক্ষরকারী দেশ হলো বাংলাদেশ। প্রতিবেশী ভারত ২০২৩ সালের জুনে এই চুক্তিতে সই করে।
নাসার ওয়েবসাইটে আর্টেমিস অ্যাকর্ডসকে শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে চাঁদ, মঙ্গলগ্রহ, ধূমকেতু, গ্রহাণুর বেসামরিক অনুসন্ধান ও ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহযোগিতার নীতিমালা হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
আর্টেমিস অ্যাকর্ডস মূলত আউটার স্পেস ট্রিটি, রেজিস্ট্রেশন কনভেনশন, রেসকিউ অ্যাগ্রিমেন্টের নীতি অনুসরণ করে তৈরি একটি নির্দেশিকা।
আর্টেমিস অ্যাকর্ডস চুক্তিগুলো অ-বন্ধনযোগ্য বহুপক্ষীয় ব্যবস্থার একটি সিরিজ, যার লক্ষ্য মহাকাশ অনুসন্ধানে শান্তিপূর্ণ, স্বচ্ছ ও টেকসই সহযোগিতা। এই চুক্তির নীতি প্রতিটি স্বাক্ষরকারী দেশের বেসামরিক মহাকাশ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
বৈশ্বিক এই জোটের মূলনীতিগুলো সদস্যদেশগুলোকে মেনে চলতে হয়। যেমন আন্তর্জাতিক আইন মেনে শুধু শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যেই কার্যক্রম পরিচালনা। স্বচ্ছতা বজায় রাখা। দায়িত্বশীলতার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা। তথ্য–অভিজ্ঞতার মতো বিষয় বিনিময়। জরুরি প্রয়োজনে সহায়তা।
কী সুফল পাবে বাংলাদেশবাংলাদেশ সরকারের আশা, এই চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ তার মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে পারবে। বাংলাদেশ মহাকাশ গবেষণা ও দূর অনুধাবন প্রতিষ্ঠান (স্পারসো) এবং নাসার মধ্যে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের মহাকাশ কার্যক্রম জোরদার হবে।
চুক্তি সইয়ের দিন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেছিলেন, এটি চুক্তি স্বাক্ষরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মহাকাশ গবেষণায় নতুন অধ্যায়ের সূচনা হলো। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ তার মহাকাশ গবেষণা কার্যক্রমকে আরও বেগবান করতে পারবে।
অন্যদিকে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষাসচিব আশরাফ উদ্দিন বলেন, নাসা ও অন্যান্য মহাকাশ সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করলে বাংলাদেশ উন্নত স্যাটেলাইট প্রযুক্তিসহ বৈজ্ঞানিক গবেষণায় প্রবেশাধিকার পাবে। যা বাংলাদেশের নিজস্ব স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম ও ভবিষ্যৎ মহাকাশ উদ্যোগকে এগিয়ে নিতে সহায়ক হবে।
এই চুক্তি প্রযুক্তি স্থানান্তর, অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার নতুন দরজা খুলে দেবে বলে মন্তব্য করেন আশরাফ উদ্দিন। তিনি বলেন, এর মাধ্যমে নাসা ও স্পারসোর মধ্যে সহযোগিতার সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের মহাকাশ কার্যক্রম জোরদার হবে।
আরও পড়ুননাসার সঙ্গে আর্টেমিস চুক্তি স্বাক্ষর করল বাংলাদেশ০৮ এপ্রিল ২০২৫প্রতিরক্ষাসচিব আরও উল্লেখ করেন, এই চুক্তির মাধ্যমে স্পারসোর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো পৃথিবী পর্যবেক্ষণ ও জলবায়ু মনিটরিং স্যাটেলাইট তৈরি করতে প্রযুক্তিগত সহায়তা পেতে পারে। যা বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সহায়ক হবে। বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও বিজ্ঞানীরা বৈশ্বিক মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যৌথ গবেষণায় অংশ নিতে পারবেন। শিক্ষার্থীরা নাসার প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম, বৃত্তি ও এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম থেকে উপকৃত হতে পারবেন।
বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ খলিলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, মহাকাশ নিয়ে বাংলাদেশ এখনো শেখা ও গবেষণা পর্যায়ে আছে। আর এ বিষয়ের গবেষণা বেশ ব্যয়বহুল। সে ক্ষেত্রে আর্টেমিস অ্যাকর্ডসের মতো চুক্তিতে যুক্ত হওয়া বাংলাদেশের জন্য ভালো সুযোগ। মহাকাশ নিয়ে কাজ করতে গেলে এখন প্রচুর ডেটার প্রয়োজন হয়। মহাকাশ সম্পৃক্ত আবহাওয়া, নদী, সমুদ্র, পরিবেশ ছাড়াও রাজনৈতিক বিষয়ের অনেক তথ্যের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশের জন্য এখন সেসব তথ্য পাওয়ার দ্বার উন্মোচিত হলো।
সরকারের স্পারসোর পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য যাঁরা মহাকাশ নিয়ে কাজ করেন, তাঁদের জন্যও সুযোগ তৈরি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন খলিলুর রহমান। তিনি বলেন, মহাকাশ সবার জন্য উন্মুক্ত হলেও তার দখল কিন্তু বিশ্বের বড় দেশগুলোর হাতেই। তাই সেখানে স্যাটেলাইট পাঠানো বা কোনো ব্যবসার কাজ করতে গেলে এই চুক্তি বাংলাদেশকে সুবিধা দেবে। নাসার সঙ্গে সংযোগসহ বিভিন্ন মহাকাশ–সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক সেমিনার, কর্মশালাতেও বাংলাদেশ অংশ নিতে পারবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স য ট ল ইট এই চ ক ত র সহয গ ত র জন য স প রস সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
মেক্সিকোর আকাশে গভীর রাতে আলোর ঝলকানি
মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটির আকাশ আলোকিত করল একটি উজ্জ্বল বস্তু, যাকে প্রথমে উল্কাপিণ্ড বলে মনে হয়েছিল। বুধবার রাত তিনটার দিকে নগরের ওপর দিয়ে এটিকে যেতে দেখা যায়।
লাতিন আমেরিকার দেশটিতে ফায়ারবলের (আলোক বল) ছুটে চলা এবং মেক্সিকো সিটির আকাশ আলোর ঝলকানিতে ভরে ওঠার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার করার পর অনেকের মনে বিস্ময় জাগিয়েছে।
দ্রুতই এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিমের উপাদানে পরিণত হয়। ফায়ারবলের ছবির সঙ্গে কার্টুন ও নানা রাজনৈতিক কৌতুক মিলে ইন্টারনেটে রসিকতার বন্যা বয়ে যায়।
মেক্সিকোর বিজ্ঞানীরা জানিয়ে দেন, আকাশের বুকে ছুটে চলা বস্তুটি উল্কাপিণ্ড নয়, এটি ছিল আসলে একটি বলাইড (উজ্জ্বল আলোক গোলক)।
নাসার সংজ্ঞা অনুযায়ী, বলাইড একধরনের ফায়ারবল, যেগুলো অত্যন্ত উজ্জ্বল উল্কা। এগুলো এতটাই চোখধাঁধানো যে অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাজুড়ে তাদের দেখা যায়।
ন্যাশনাল অটোনমাস ইউনিভার্সিটি অব মেক্সিকোর মহাকাশবিজ্ঞানের গবেষক মারিও রদ্রিগেজ বলেন, এটাকে উল্কা বা উল্কার খণ্ডিত অংশ হিসেবে বর্ণনা করা যায়।
পৃথিবীতে ধেয়ে আসার সময়েই মেক্সিকোর আকাশে ছুটে চলা উজ্জ্বল উল্কাপিণ্ডগুলোয় আগুন ধরে যায়।
মেক্সিকোর বহু মানুষকে চমকে দেওয়া ভিডিওটি নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানীদের একজন রদ্রিগেজ। তিনি আরও বলেন, ছুটে চলা বস্তুটির ওপর প্রচণ্ড চাপ থাকার কারণে এতে আলোর ঝলকানি শুরু হয়, একসময় প্রসারিত লেজ বের হয় এবং আলো বিকীর্ণ হয়।
রদ্রিগেজ বলেন, এই বিশেষ উল্কাখণ্ডটি দেড় মিটার দীর্ঘ। এতে জনসাধারণের জন্য কোনো ধরনের হুমকি ছিল না।