সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি পেল ১৩৩ প্রতিষ্ঠান, মানতে হবে ৯ শর্ত
Published: 10th, April 2025 GMT
দেশের ১৩৩টি প্রতিষ্ঠানকে সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। অনুমতি দেওয়ার এ তথ্য জানিয়ে মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার প্রধান আমদানি–রপ্তানি নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা অনুযায়ী এবার ১০০, ১৫০, ২০০, ৩০০, ৪০০ ও ৫০০ টন করে চাল রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তাতে মোট রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১৮ হাজার ১৫০ টন। অনুমতির মেয়াদ কার্যকর থাকবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে সরকার চাইলে যেকোনো সময় অনুমতি বাতিলও করতে পারবে।
যোগাযোগ করলে বাণিজ্যসচিব মাহবুবুর রহমান গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘যেসব শর্তে সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে, সেগুলো মেনেই রপ্তানিকারকেরা চাল রপ্তানি করবেন বলে আশা করছি। সুগন্ধি চাল রপ্তানি হলে দেশে কিছু বৈদেশিক মুদ্রা আসবে।’
চিঠিতে শর্ত হিসেবে বলা হয়েছে, প্রতি কেজি চালের রপ্তানি মূল্য হতে হবে কমপক্ষে ১ দশমিক ৬০ মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে হিসাব করলে বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি কেজি চালের দাম পড়বে ১৯৫ টাকা।
অন্য শর্তগুলোর মধ্যে রয়েছে অনুমোদিত পরিমাণের চেয়ে বেশি চাল কেউ রপ্তানি করতে পারবে না। আর প্রতিটি চালান জাহাজীকরণ শেষে রপ্তানিসংক্রান্ত সব কাগজপত্র বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিতে হবে। অনুমোদনপত্র কোনোভাবেই হস্তান্তরযোগ্য নয়। অর্থাৎ অনুমোদিত রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান নিজে রপ্তানি না করে অন্যের মাধ্যমে রপ্তানি করতে পারবে না অর্থাৎ সাব-কন্ট্রাক্ট দেওয়া যাবে না।
রপ্তানিনীতি আদেশ অনুযায়ী, বাংলাদেশ থেকে সব সময়ই চাল রপ্তানি নিষিদ্ধ। তবে সরকারের অনুমতি নিয়ে সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগ রয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুগন্ধি চাল রপ্তানির মাধ্যমে দেশে ২৮ লাখ ৮০ হাজার ডলার এসেছিল। পরবর্তী ২০২০-২১ অর্থবছরে তা কমে হয় ২০ লাখ ৬০ হাজার ডলার। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে এই আয় আরও কমে ১০ লাখ ৭০ হাজার ডলারে নেমে আসে। এরপর ২০২২-২৩ অর্থবছরে সরকার সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি স্থগিত রাখে। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরে গত জানুয়ারিতে সরকার আবার রপ্তানি অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেয়। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, অনুমতি নিলেও অনেকে রপ্তানি করতে পারে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রগুলো জানায়, ২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ সুগন্ধি চাল রপ্তানি শুরু করে। প্রথম বছর ৬৬৩ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়। পরের বছরগুলোতে রপ্তানি বাড়তে থাকে, যা ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১০ হাজার ৮৭৯ টনে উন্নীত হয়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, দেশে বছরে সুগন্ধি চাল উৎপাদিত হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টন। প্রতিবছর রপ্তানি হয় ১০ হাজার টন। বিভিন্ন করপোরেট প্রতিষ্ঠান যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই), মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনেই, দক্ষিণ কোরিয়াসহ বিশ্বের ১৩০টির বেশি দেশে এ চাল রপ্তানি করে আসছে।
অনুমতি দেওয়ার আগে খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সম্মতি নিতে হয়, এবারও তাই হয়েছে। রপ্তানিকারকেরা বলছেন, সুগন্ধি চাল রপ্তানির সঙ্গে খাদ্য, কৃষি ও বাণিজ্য—এ তিন মন্ত্রণালয় জড়িত। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অনুমতি দিলেও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যদি ফাইটোস্যানিটারি সনদ না দেয়, তাহলে কেউ রপ্তানি করতে পারে না। মাঝেমধ্যেই তিন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা দেখা দেয়।
দেড় বছর আগে বড় ধরনের জটিলতা হয়েছিল বলে স্মরণ করেন কয়েকজন রপ্তানিকারক। যেমন বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের জুলাইয়ে সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেয়। এরপর সেপ্টেম্বরে খাদ্য মন্ত্রণালয় তা বন্ধের সিদ্ধান্ত জানায়। আর অক্টোবরে এসে কৃষি মন্ত্রণালয়ও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতের কথা বলে সুগন্ধি চাল রপ্তানি বন্ধের পক্ষে অবস্থান নেয়। তখন বিপাকে পড়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, এসিআই ফুডস, প্রমি অ্যাগ্রো ফুডস, স্কয়ার ফুড অ্যান্ড বেভারেজসহ ৩৩টি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান।
এ নিয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরেই দাবি জানিয়ে আসছিলাম। শেষ পর্যন্ত সরকার অনুমতি দেওয়ায় আমরা উৎসাহ বোধ করছি। আমাদের ৫০০ টন সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে। তবে আগে আমরা ১ হাজার টনের বেশি রপ্তানি করেছি।’
কামরুজ্জামান কামাল আরও বলেন, সুগন্ধি চাল রপ্তানির সুযোগের একটি বড় বিষয় হচ্ছে, এর সঙ্গে শর্ষে, চানাচুর, বিস্কুটসহ অন্যান্য পণ্যও রপ্তানি করা যায়।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে রপ্তানিযোগ্য সুগন্ধি চালের একটি তালিকা রয়েছে। তাতে কালিজিরা, কালিজিরা টিপিএল-৬২, চিনিগুঁড়া, চিনি আতপ, চিনি কানাই, বাদশাভোগ, কাটারিভোগ, মদনভোগ, রাঁধুনিপাগল, বাঁশফুল, জটাবাঁশফুল, বিন্নাফুল, তুলসী মালা, তুলসী আতপ, তুলসী মণি, মধুমালা, খোরমা, সাককুর খোরমা, নুনিয়া, পশুশাইল ও দুলাভোগ ইত্যাদি চালের নাম রয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন য য় অন ম দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমানো নিয়ে দরকষাকষি
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের শেষ তিন মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আহরণ করতে হবে। একই সঙ্গে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সংস্থাটির অতিরিক্ত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ দুই লক্ষ্যমাত্রার কোনোটিই অর্জন সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা কমানোর অনুরোধ জানিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা।
গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে সংস্থাটির চেয়ারম্যানসহ কাস্টমস, আয়কর ও ভ্যাট অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এসব বৈঠকে কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের শর্তের কথা মাথায় রেখে কিছু ক্ষেত্রে করহার বাড়ানো, কর অব্যাহতি তুলে দেওয়াসহ নীতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে আশা করা হচ্ছে, রাজস্ব আহরণ বেশ বাড়বে। তবে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তা সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মত নয়। তাই এ লক্ষ্যমাত্রা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার অনুরোধ করেন তারা। এ বিষয়ে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বেশ ইতিবাচক বলেও বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
বৈঠকের বিষয়ে এনবিআরের কর্মকর্তারা সমকালকে বলেন, গত জুন শেষে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এটি চলতি অর্থবছর শেষে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। এর জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের মার্চ মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের পরবর্তী তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার বাকি রাজস্ব আদায় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তারা আরও বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। এসব বাড়তি রাজস্ব কীভাবে আদায় হবে তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি অসম্ভব। তাই লক্ষ্যমাত্রা কমানোর অনুরোধ করা হয়েছে।
কর্মকর্তারা আরও বলেন, দেশের রাজস্ব খাত সংস্কারে উদ্যোগী মনোভাবের কথাও তাদের জানানো হয়েছে। আইএমএফ প্রতিনিধি দল বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে। সামনে আরও বৈঠক হবে। আশা করা হচ্ছে, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনবে আইএমএফ।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশ কতটা শর্ত পূরণ করেছে, তা পর্যালোচনায় ঢাকা সফর করছে প্রতিনিধি দলটি। এ দুই কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কর রাজস্বের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার চেয়ে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফ গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি গত রোববার থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। মিশনটি আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে।