সারা দেশে একযোগে চলতি বছরের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছে।এবারের পরীক্ষা হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ সিলেবাসে, সব বিষয়ে পূর্ণ নম্বর ও সময়ে। ১১টি শিক্ষাবোর্ডের ১৯ লাখ ২৮ হাজার শিক্ষার্থী এ পরীক্ষা অংশ নিচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হয়। চলবে দুপুর ১টা পর্যন্ত। বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে শুরু হলো এসএসসির তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হবে ১৩ মে।
তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষে ১৫ মে থেকে ২২ মে পর্যন্ত এসএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষা চলবে।
দাখিল পরীক্ষা শুরু হলো কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ পরীক্ষা দিয়ে। ১৩ মে পর্যন্ত দাখিলের তত্ত্বীয় পরীক্ষা চলবে। আর ১৪ থেকে ১৮ মের মধ্যে ব্যবহারিক পরীক্ষা হবে।
বৃহস্পতিবার এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের শিক্ষার্থীরা দিচ্ছে বাংলা-২ বিষয়ের পরীক্ষা। ১৩ মে ইংরেজি-২ পরীক্ষা দিয়ে তাদের তত্ত্বীয় পরীক্ষা শেষ হবে।
১৩ থেকে ২২ মে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের ব্যবহারিক পরীক্ষা এবং ২৩ মে থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত বাস্তব প্রশিক্ষণ চলবে।
এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ৭ লাখ ১ হাজার ৫৩৮ জন ছাত্র এবং ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন ছাত্রী। ১৮০৮৪টি স্কুলের এসব পরীক্ষার্থী ২ হাজার ২৯১ কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় বসেছে ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ জন ছাত্র এবং ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন ছাত্রী। ৯ হাজার ৬৩টি মাদ্রাসার এসব পরীক্ষার্থী ৭২৫টি কেন্দ্রে তারা পরীক্ষা দিচ্ছে।
বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় বসেছে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ জন এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯২৮জন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পরীক্ষার চলার তিন ঘণ্টা পরীক্ষা কেন্দ্রের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি থাকবে। পরীক্ষা চলার সময় কেন্দ্রের আশপাশে ২০০ গজের মধ্যে পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট নন এমন কোন ব্যক্তি চলাচল করতে পারবেন না।
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার সময় ১০ এপ্রিল থেকে ১৩ মে পর্যন্ত ৩৪ দিন সব ধরনের কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
ঢাকা/হাসান/ইভা
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জন ছ ত র পর ক ষ র
এছাড়াও পড়ুন:
রাগ-ক্ষোভ ভুলে পড়াশোনায় ফিরেছেন, ৫১ বছর বয়সে দিচ্ছেন এসএসসি পরীক্ষা
রাগে-অভিমানে প্রায় ৩৫ বছর আগে পড়াশোনা ছেড়ে দিয়েছিলেন দেলোয়ার হোসেন। দীর্ঘ সময় পর তাঁর সেই ভুল ভেঙেছে। আবার পড়ালেখায় ফিরেছেন, অংশ নিচ্ছেন চলতি বছরের এসএসসি (দাখিল) পরীক্ষায়। ৫১ বছর বয়সী এই ব্যক্তি জানান, ছোটবেলা থেকেই উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন। অতীত ভুলে এবার সেই স্বপ্ন পূরণের পথেই হাঁটছেন তিনি।
দোলোয়ার হোসেন নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার জামনগর ইউনিয়নের করমদোশী গ্রামের বাসিন্দা। তিনি ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য। গতকাল দেশে একযোগে শুরু হওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় তিনি উমরগাড়ি দারুল খায়ের সুন্নাহ দ্বিমুখী মাদ্রাসা কেন্দ্রে অংশ নেন।
এলাকার কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তি জানান, দেলোয়ার ছোটবেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন। পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষায় তিনি মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হন। পরে ভর্তি হন জামনগর দ্বিমুখী উচ্চবিদ্যালয়ে। সেখান থেকে অষ্টম শ্রেণিতেও তিনি সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পান। ১৯৯০ সালে একই বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে পরীক্ষা চলার সময় অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনার জেরে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়। এতে তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। রাগে–ক্ষোভে তিনি পড়ালেখা ছেড়ে দেন।
এ প্রসঙ্গে দোলোয়ার বলেন, ‘উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন আমার ছোটবেলা থেকেই। পড়ালেখাতেও ভালো ছিলাম। নবম শ্রেণি পর্যন্ত ক্লাসে প্রথম বা দ্বিতীয় হতাম। এসএসসি পরীক্ষা দিতে গিয়ে পাশের এক পরীক্ষার্থীর ষড়যন্ত্রে আমাকে বহিষ্কার করা হয়। আমি এই ঘটনা মেনে নিতে পারিনি। রাগে-ক্ষোভে আমি পড়ালেখা ছেড়ে দিই। কিন্তু আমার মেয়েদের পড়ালেখা করাতে গিয়ে এবং ইউনিয়ন পরিষদের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে উচ্চশিক্ষিত হওয়ার স্বপ্ন আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। তাই আবার পরীক্ষায় অংশ নিয়েছি। প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো; সবার দোয়া চাই।’
দেলোয়ার হোসেনের সংসারে স্ত্রী ও তিনি। মেয়েদের সবাইকে তিনি পড়াশোনায় ব্যস্ত রেখেছেন। ২০২১ সালে জামনগর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ ৩ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। এর কিছুদিন পর শিক্ষিত হওয়ার সুপ্ত বাসনা আবার তাঁর মধ্যে মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। সবার অগোচরে রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার উমরগাড়ি দারুল খায়ের সুন্নাহ দ্বিমুখী মাদ্রাসায় নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন। ক্লাস করতে না পারলেও শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন এবং বাড়িতে বসেই পড়ালেখা করেছেন।