গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে আবারও মূল্যবান পশুপাখি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এর আগে ম্যাকাও পাখি চুরি হয়েছিল। এবার চুরি হয়েছে তিনটি লেমুর। দেশে এ তিনটিই লেমুর ছিল। এটা প্রতীয়মান হয় যে সাফারি পার্কের নিরাপত্তা একেবারেই বেহাল। সে সুযোগে এসব চুরির ঘটনা ঘটছে। তা ছাড়া শুধু বিদেশি মূল্যবান প্রাণীই কেন চুরি হচ্ছে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। তার মানে এখানে কোনো চক্র সক্রিয় হয়েছে, যারা এসব মূল্যবান প্রাণীর বেচাবিক্রি ও পাচার সম্পর্কে ভালোভাবে অবগত।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, গত ২৪ মার্চ সকালে লেমুরের খাঁচা খালি দেখতে পান সাফারি পার্কের কর্মীরা। ধারণা করা হচ্ছে, আগের দিন রাতের কোনো এক সময় খাঁচার জাল কেটে প্রাণী তিনটি চুরি করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২৪ মার্চ শ্রীপুর থানায় একটি মামলা করেছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। এখন পর্যন্ত লেমুরগুলোর সন্ধান পাওয়া যায়নি।
লেমুর চুরির ঘটনার পর পার্কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে সীমানাপ্রাচীরের অন্তত পাঁচ অংশে ভাঙা দেখতে পান প্রথম আলোর প্রতিনিধি। কিছু স্থানে দেয়াল একেবারে নিচু করে তৈরি করা, যা সহজেই টপকানো যায়। কিছু স্থানে ভাঙা দেয়াল বাঁশ দিয়ে আটকানো। বহিরাগতরা সহজেই ঢুকতে পারছেন পার্কে। কম উচ্চতার দেয়াল টপকে গত ১৬ জানুয়ারি একটি পুরুষ নীলগাই পালিয়ে যায়। এখনো সেটিকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তা ছাড়া গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র–জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের সময় ভাঙচুর ও লুটপাটের শিকার হয় সাফারি পার্কটিও। সিসি ক্যামেরাগুলোও তখন থেকে নষ্ট। আবার রাতে পাহারা দেওয়ার মতো যথেষ্ট জনবলও নেই। পালা করে রাত–দিন পার্কের কিছু অংশ পাহারা দিয়ে থাকেন কর্মচারীরা।
লেমুর চুরির ঘটনার পর পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বুধবার সাফারি পার্ক পরিদর্শন করেছেন। শুধু বিদেশি মূল্যবান প্রাণী চুরি হওয়ায় এখানে কোনো চক্র যুক্ত থাকতে পারে বলে তিনি ধারণা করছেন। এ ছাড়া গত আট মাসেও কেন সিসি ক্যামেরা সচল করা যায়নি, এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে তিনি প্রশ্ন তোলেন। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে তিনি জানান।
এর আগে গত নভেম্বরের পাখিশালা থেকে দুটি ম্যাকাও পাখি চুরি হয়। পরে একটিকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। চুরিতে জড়িত থাকায় পার্কের এক কর্মীকে আইনের আওতায় আনা হয়। ফলে লেমুর চুরির ঘটনায়ও পার্কের কেউ যুক্ত আছে কি না, তদন্ত করে দেখা হোক। আশা করি, স্থানীয় পুলিশ এ ব্যাপারে তৎপর হবে। তবে সাফারি পার্কে চুরি ঠেকাতে নিরাপত্তা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ র র ঘটন
এছাড়াও পড়ুন:
লক্ষ্মীপুর বেড়িবাঁধে আশ্রিতরা উচ্ছেদ আতঙ্কে, পুনর্বাসনের দাবি
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার মজুচৌধুরীর হাটের দক্ষিণে বুড়ির ঘাট পর্যন্ত যে বেড়িবাঁধটি রয়েছে, তার দুইপাশে অন্তত ৫ শতাধিক বসতঘর রয়েছে। বসবাসকৃত বাসিন্দাদের সংখ্যা কয়েক হাজার। নদীর ভাঙার কবলে পড়ে ভোলার জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের ভূমিহীন লোকজন এখানে এসে বসতি গড়েছেন। বাসিন্দাদের বেশিরভাগই নিম্নআয়ের। নদীতে মাছ শিকার এবং অন্যের জমিতে কৃষিকাজ কিংবা দিনমজুরি দিয়ে চলে তাদের সংসার। ফলে নিজস্ব জমি কেনার মতো সাধ্য নেই এসব পরিবারের।
বাঁধের সংস্কার কাজ চলায় এসব আশ্রিত পরিবার এখন উচ্ছেদ আতঙ্কে ভূগছে। পুনর্বাসনের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছে বেড়িবাঁধের পাশে বসবাসরত এই ভূমিহীন বাসিন্দারা।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করে তারা। পরে জেলা প্রশাসকের কাছে একটি স্মারকলিপি দেয়।
বেড়িবাঁধের মজুচৌধুরীর হাটের উত্তর অংশে কাজ চলমান রয়েছে, কিন্তু দক্ষিণ অংশের বাসিন্দারা উচ্ছেদ আতঙ্কে বাঁধের সংস্কার কাজে আপত্তি জানিয়েছেন। সংস্কারের আগে তারা পুনর্বাসনের দাবি জানিয়ে আসছেন।
মানববন্ধনকারীরা জানান, তাদের নিজস্ব কোন জায়গা নেই। কবরের জায়গা পর্যন্ত নেই। বেড়িবাঁধের পাশে ঘর করে তারা বসবাস করছেন। নদীতে মাছ শিকার আর অন্যের জমিতে কৃষিকাজ করে সংসার চালাচ্ছেন।
তাদের দাবি, বাঁধ সংস্কারের কারণে তাদের উচ্ছেদ করে দিলে তাদের আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। তাই পুনর্বাসনের আগে তারা বাঁধের কাজ শুরু করতে দেবে না।
মানববন্ধনে আসা ভূমিহীন বৃদ্ধ এবং বিধবা আফিয়া খাতুন জানান, মজুচৌধুরীর হাটের দক্ষিণে নিমতলা নামক এলাকায় দুটি বসতঘর রয়েছে। ৮ সদস্য নিয়ে তারা ওই দুইঘরে বসবাস করেন। বাঁধ সংস্কারের কারণে তাদের দুটি বসতঘরও উচ্ছেদের মধ্যে পড়বে। কিন্তু কোথায় যাবেন তিনি, সে দুঃচিন্তা ভর করছে তার উপর।
আফিয়া খাতুন আরও জানান, তাদের আদি নিবাস ভোলা জেলাতে। অর্ধশত বছর আগে মেঘনা নদীর ভাঙনের পর পরিবারের সাথে চলে আসেন লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট এলাকায়। প্রায় ৩০ বছর আগে মজুচৌধুরীর হাটের দক্ষিণে বেড়িবাঁধে ঢালে অস্থায়ী ঘর তৈরি করে পরিবার নিয়ে বসবাস শুরু করেন। পূর্বে তার বাবা-মার সাথে ছিলেন, এখানেই তার বিয়ে হয়েছে। স্বামী-সন্তানদের নিয়ে থাকতেন। স্বামী মারা গেছে, এখন সন্তান এবং নাতি-নাতনীদের নিয়ে বসবাস করছেন। নিম্ন আয়ের পরিবার হওয়ায় এতো বছরেরও নিজস্ব জমি কেনার সাধ্য হয়নি।
মানববন্ধনে আসা রহিমা বেগম বলেন, “আমার বসবাস ওই বেড়িবাঁধের পাশেই। ভোলাতে আমাদের বসতি ছিল, সাতবার ভাঙার কবলে পড়ে। জন্মের পর থেকে এখানেই আছি। আমাদের পরিবারের মোট পাঁচটি ঘর। বাঁধ সংস্কার হলে তাদের ঘরগুলো সরিয়ে নিতে হবে।”
৬০ বছরের বৃদ্ধ তৈয়বা বেগম জানান, তার পরিবারের ৫ সদস্য। ঘরে বিবাহ উপযুক্ত মেয়ে রয়েছে। তাকে নিয়ে রয়েছেন বেকাদায়। এরই মধ্যে ঘর ভেঙে চলে যেতে হবে। তিনিও এখন চোখেমুখে অন্ধকার দেখছেন।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক রাজীব কুমার সরকার বলেন, “পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাথে কথা বলে ভূমিহীনদের বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”
ঢাকা/লিটন/টিপু