মার্টিনেজের ভিলাকে হারিয়ে সেমির পথে পিএসজি
Published: 10th, April 2025 GMT
চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনাল প্রথম লেগে প্যারিস সেন্ত জার্মেইর (পিএসজি) আক্রমণাত্মক ফুটবলের কাছে হার মানতে হলো অ্যাস্টন ভিলাকে। বুধবার (০৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে পার্ক দেস প্রিন্সে ফরাসি জায়ান্টদের কাছে ৩-১ গোলে হার মানে ইংলিশ ক্লাবটি।
অবশ্য ম্যাচের আগে বেশ আলোচনায় ছিলেন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপজয়ী গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। অবশ্য শুরু থেকেই তাকে লক্ষ্য করে পিএসজি সমর্থকদের দুয়ো দিচ্ছিলেন। যদিও দুর্দান্ত কিছু সেভ করে নিজের দক্ষতার প্রমাণ দেন তিনি। কিন্তু দলকে হার থেকে বাঁচাতে পারেননি।
প্রথমার্ধে আক্রমণে এগিয়ে থাকলেও গোল খেয়ে পিছিয়ে পড়ে পিএসজি। ৩৫ মিনিটে জন ম্যাকগিনের বুদ্ধিদীপ্ত পাস থেকে পাল্টা আক্রমণে উঠে গোল করেন অ্যাস্টন ভিলার মর্গান রজার্স। তবে তাদের লিড বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ৩৯ মিনিটে কর্নার থেকে দারুণ শটে গোল করে ম্যাচে সমতা ফেরান পিএসজির দেজিরে দুয়ে।
দ্বিতীয়ার্ধে শুরু থেকেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেয় পিএসজি। ৪৯ মিনিটে খভিচা খভারাতস্কেলিয়া একক প্রচেষ্টায় মার্টিনেজকে পরাস্ত করে ব্যবধান বাড়িয়ে ২-১ করেন। এরপর অফসাইডের ফাঁদে পড়ে হাকিমির একটি গোল বাতিল হয়। কিন্তু যোগ করা সময়ে (৯০+২) নুনো মেন্ডেসের নিখুঁত শটে ৩-১ ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করে পিএসজি।
এই হারে অ্যাস্টন ভিলার সামনে সেমিফাইনালে যাওয়ার সমীকরণ কঠিন হয়ে গেল। আগামী ১৫ এপ্রিল ঘরের মাঠে ফিরতি লেগে অন্তত দুই গোলের ব্যবধানে জয় না পেলে ৪২ বছর পর কোয়ার্টার ফাইনালে এসে আবারও বিদায় নিতে হবে ইউরোপীয় সেরা মঞ্চ থেকে।
ঢাকা/আমিনুল
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির ৩১ দফা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের পথরেখা
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল- বিএনপি সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ৩১ দফা রূপরেখা ঘোষণা দিয়েছে। প্রথম দফায় জিঘাংসার রাজনীতি পরিহার করে অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও সমাজ গঠনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। অন্যান্য দফায় অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা, দৃঢ়চিত্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে কার্যকর নির্বাচন কমিশন গঠন, প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকে ভারসাম্যপূর্ণ করা, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইনসভা গঠন, দলীয়করণ রোধ করা এবং সরকার পরিচালনায় স্বচ্ছতা, জবাবদিহি ও বিশ্বাসযোগ্যতা পুনঃপ্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ব্যক্ত করা হয়েছে। তা ছাড়া বিচার বিভাগকে স্বাধীন করার লক্ষ্যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কমিশন গঠন ও বিচারপতি নিয়োগের আইন প্রণয়নসহ জাতীয় জীবনের নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে বিদ্যমান অসংগতি দূরীকরণের লক্ষ্যে অভিপ্রায় সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যাকে একটি উদার, মধ্যপন্থি ও গণতান্ত্রিক দলের কর্মসূচি বিবেচনা করা যায় এবং তা অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে গঠিত কমিশনগুলোর সুপারিশের সঙ্গে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঐক্যের জায়গায় পৌঁছাতে পেরেছে বলে অনুমিত হয়।
অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনে ব্যর্থতার কারণে যখন শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলো, তেমন বাস্তবতায় আমার মনে হয়, একই ভুল আর বিএনপি করতে চায় না; যা সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণও প্রত্যাশা করে না। জনমতকে অবজ্ঞা করে বৃহত্তম বিরোধী রাজনৈতিক শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা করলে সুদীর্ঘকাল ক্ষমতা টেকসই হয় না। স্বল্পকালের বিষয় হলেও তা দীর্ঘকালের নয়। আবার আমাদের ভূরাজনীতি এবং ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ দলটির প্রতি প্রতিবেশী বৃহৎ রাষ্ট্রের সমর্থন ও দুর্বলতাকে অগ্রাহ্য করলে চলে না। সেটা হতে পারে একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের অবিবেচনা ও অবিচক্ষণতা।
আজ ড. আকবর আলি খানের কথা খুব বেশি মনে পড়ে। ‘দুটি বড় দল কেউ কাউকে নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না, এক দলকে বাইরে রেখে দিয়ে আরেক দল শাসন দণ্ড পরিচালনা করতে সক্ষম হবে না।’ তার বক্তব্যে ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের আকুতি। আজ তাঁর কথা কাঙালের কথার মতো বাসি হলেও ফলেছে। আবার যদি ভুল করেছে বলেই আরেকটি বড় দলকে নিশ্চিহ্ন করার চেষ্টা চলে, তাকে রাজনীতির বলয়ের বাইরে রাখার অপচেষ্টা হয় স্বল্পকালে, তার ফলাফল সুখকর হলেও দীর্ঘকালের তার ফলাফল অশুভ হতে পারে। তাতে করে মনে হয় আবারও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতি ও সমাজ গঠনের পথ রুদ্ধ হয়। সেই নির্জলা সত্য ও বাস্তবতাকে উপলব্ধি করেই হয়তো বিএনপি দলটির ওই সুস্পষ্ট অবস্থান। তবে ক্ষমতাচ্যুত সরকার ও তার দুর্নীতিবাজ সহযোগীদের বিচার হোক, বিচারের কারণে তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণে অযোগ্য হতে পারে– তা নিয়ে কোনো কথা নেই।
ছাত্র-জনতার উপলব্ধি আমাদের রাজনৈতিক বন্দোবস্ত ত্রুটিপূর্ণ, তার মধ্য দিয়ে শীর্ষ নেতা-নেত্রী হয়ে ওঠেন স্বৈরাচারী। তাই বন্দোবস্ত পরিবর্তনের সংস্কার জরুরি। সে কারণেও আওয়ামী লীগের বিচার হওয়া অনিবার্য। তবে বিচারের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি হতে পারে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধ সম্পদের মালিকানা। তাদের যথার্থ বিচার হোক, আবার অচোরা যেন বন্দি না হয়, সেদিকে নজর দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ। ক্ষমতাচ্যুত দলটির নিরপরাধ নেতাকর্মীর রাজনীতি করার পথ উন্মুক্ত হলে জাতিকে ঐক্যের বন্ধনে বাঁধা সহজ হতে পারে।
সংস্কার কমিশনগুলোর রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের উপলব্ধি তার অধিকাংশের সঙ্গেই রয়েছে ৩১ দফার সংগতি। আমাদের রাজনীতির অঙ্গনে ছাত্র-জনতার নতুন দলের আবির্ভাব, জামায়াতে ইসলামী ও সরকার এই তিন শক্তির প্রাবল্য দেখে আমার মনের জানালায় কবির অমিয় বাণী উঁকি দেয়, ‘ত্রয়ী শক্তি ত্রিস্বরূপে প্রপঞ্চে প্রকট’। ওই তিন শক্তির প্রাবল্যকে গুরুত্ব দিয়ে নির্বাচন ও সংস্কার প্রশ্নে তাদের সঙ্গে বিএনপি যদি সুকৌশলে সমঝোতা করতে পারে, ধৈর্যের সঙ্গে ঐক্য গড়তে পারে তাহলে তার অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ গঠনের পথ মসৃণ হতে পারে। সেটা করতে পারলে মধ্যপন্থি উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে তার ঘরে সোনালি ফসল তোলার সম্ভাবনা উজ্জ্বল হতে পারে। তবে দলটির বিজয় অর্জনের পথের কাঁটা হলো, তার চাঁদাবাজ দখলদার নেতাকর্মী। তাদের শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করার সক্ষমতাই বয়ে আনতে পারে সফলতা। সে ক্ষেত্রে ব্যর্থতা হতে পারে চালকের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনা কবলিত হওয়া। তাই মনে হয়, দলটির সামনে রয়েছে অমিত সম্ভাবনা আবার অগ্নিপরীক্ষা।
ড. মো. মোস্তাফিজার রহমান: সাবেক অধ্যক্ষ, নওগাঁ সরকারি কলেজ