সুখের সংসারই ছিল মুক্তার হোসেনের। গত বছর ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি। এর পরই অন্ধকার নেমে আসে তাঁর জীবনে। চিকিৎসা খরচ জোগাতে নিজের উপার্জনের ভ্যান ও অটোরিকশা বিক্রি করে এখন তিনি নিঃস্ব। পাননি সরকারি কোনো সহযোগিতা।
মুন্সীগঞ্জ শহরের মানিকপুর এলাকার বাসিন্দা মুক্তার (৪৪) একজন ভ্যানচালক। মা-বাবা, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে তাঁর সংসার। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের আট মাস পেরিয়ে গেলেও শরীরে বুলেটের ক্ষতচিহ্ন বয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি। ফিরতে পারছেন না স্বাভাবিক জীবনে। আর কাজে যেতেও পারেন না। সংসারে তাই নিত্য টানাপোড়ন। স্ত্রী বিলকিস বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে চালাচ্ছেন সংসারের খরচ। জীবনের এমন কঠিন সময়ে স্ত্রী-সন্তানের ভবিষ্যৎ ভাবনায় দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন মুক্তার।
২০২৪ সালের ৪ আগস্টের সকাল। মুন্সীগঞ্জ শহরের থানারপুল এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধে শামিল হন মুক্তার। এক পর্যায়ে পুলিশের রাবার বুলেটে ঝাঁজরা হয় তাঁর শরীর। এ সময় অস্ত্রধারী এক ছাত্রলীগ নেতাকে জাপটে ধরে ফেললে সেই নেতা মুক্তারের পায়ে গুলি করে। এতে সড়কে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে ছাত্র-জনতা তাঁকে উদ্ধার করে। ইতোমধ্যে চিকিৎসা দিয়ে তাঁর শরীর থেকে ৬৫টি রাবার বুলেট ও একটি শর্টগানের গুলি বের করা হয়েছে। পায়ের গুলির ক্ষতচিহ্ন এখনও রয়ে গেছে। একই সঙ্গে শরীরের নিচে রয়ে গেছে বুলেট। সেই ব্যথা নিয়ে কাতরান মুক্তার। সাহায্যের আশায় মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘোরেন। অণ্ডকোষের পাশে গুলি আটকে থাকায় স্বাভাবিক চলাফেরাও ব্যাহত হচ্ছে তাঁর।
মুক্তার হোসেন জানান, শহরের থানারপুল এলাকার একটি ইলেকট্রনিক প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন। ওই প্রতিষ্ঠানের বিক্রি হওয়া পণ্য তাঁর ভ্যানে করে ক্রেতার বাড়িতে পৌঁছে দিতেন। এ থেকে দিনে হাজার দেড়েক টাকা রোজগার হতো। পাশাপাশি কিস্তিতে একটি অটোরিকশা কিনে ভাড়া দিয়েছিলেন। ভাড়া পেতেন দৈনিক ৩০০ টাকা। এ দিয়েই সংসার চলত। কিন্তু চিকিৎসার খরচ মেটাতে ভ্যান ও অটোরিকশা বিক্রি করে দিয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানে আহতের গেজেটেড তালিকায় নাম এলেও এখনও কোনো অর্থ সহায়তা পাননি। এ ছাড়া জেলা প্রশাসন ও সিভিল সার্জন কার্যালয়ে চিকিৎসা সহায়তার আবেদন জানালেও সাড়া মেলেনি। বিএনপি নেতাকর্মী ও সমন্বয়কদের কাছে গিয়েও ফিরেছেন খালি হাতে।
মুক্তার আক্ষেপ করে বলেন, ‘এখন আফসোস লাগে, কাগো জন্য কী করলাম। আমার জন্য কেউ আগাইয়া আসলো না।’
সিভিল সার্জন ডা.
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থান কখনোই আইন মেনে চলে না, বরং আইন ভাঙার মাধ্যমেই শুরু হয়: ফরহাদ মজহার
কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার বলেছেন, গণঅভ্যুত্থান কখনোই আইন মেনে চলে না। বরং আইন ভাঙার মাধ্যমেই শুরু হয়। কিন্তু আমরা উল্টো পথে হাঁটলাম, আমরা জীবন দিলাম, আবার সেই পুরনো ফ্যাসিস্ট কাঠামোয় ফিরে গেলাম। যে সংবিধান শেখ হাসিনা রেখে গেছেন, তা-ই এখনও রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নিয়ামক।
গতকাল বুধবার বিকেলে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলা সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘প্রবন্ধ আলোচনা, বৈষম্যবিরোধী কবিতা ও গণসংগীত’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ফরহাদ মজহার বলেন, শেখ হাসিনার ভূত এখনও দেশে আছে। এই ভূতের নাম সংবিধান। যে ফ্যাসিস্ট সংবিধান তিনি লিখে গেছেন, পুরো রাষ্ট্র এখনও সেটাই মেনে চলে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা সাহিত্য সংসদের সভাপতি ডা. মো. সালাহ উদ্দিন শরীফ। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক কবি গাজী গিয়াস উদ্দিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মো. আলাউদ্দিন, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের সহযোগী অধ্যাপক কবি জসিম উদ্দিন মুহাম্মদ, লক্ষ্মীপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর খন্দকার ইউসুফ হোসেন, রায়পুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম তপন ও চাঁদপুর সাহিত্য মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাইনুল ইসলাম মানিক। অনুষ্ঠান শেষে কবিতা আবৃত্তি ও গণসংগীত পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।