নান্দাইল উপজেলার বরুণাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠজুড়ে স্তূপ করে রাখা হয়েছে পাশের একটি সড়ক পাকাকরণের সামগ্রী। ফলে শিক্ষার্থীদের মাঠে খেলাধুলা দূরের কথা, স্বাভাবিক হাঁটাচলা করতেই বিড়ম্বনা হচ্ছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার মাঠ ব্যবহারের অনুমতি নেননি। স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার কারণে শুরুতেই কাজ বন্ধ রেখেছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চণ্ডীপাশা ইউনিয়নের সর্বদক্ষিণে বরুণাকান্দা গ্রামের উত্তরের সীমানা থেকে দক্ষিণে ৫০০ মিটার রাস্তা পাকাকরণের কাজ সম্প্রতি শুরু হয়েছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীন প্রায় ৬৫ লাখ টাকা বরাদ্দের কাজটি পেয়েছেন ‘বাপ্পী ট্রেডার্স’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সেটি কিনে কাজ করাচ্ছেন স্থানীয় আলম নামে অন্য একজন ঠিকাদার। রাস্তার মাটি গর্ত করে সুরকি ও বালু ফেলার জন্য সেসব নির্মাণসামগ্রী বরুণাকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে স্তূপ করে রাখেন। গত ঈদুল ফিতরের আগে নিম্নমানের সুরকি ও বালু ফেলার উদ্যোগ নিলে বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এর পর থেকে বন্ধ রয়েছে রাস্তা পাকাকরণ কাজ। ফলে সুরকি ও বালু বিদ্যালয়ের মাঠেই পড়ে রয়েছে।

গত সোমবার দুপুরে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠজুড়ে সুরকি ও বালুর স্তূপ। বালুর স্তূপের ওপর দৌড়াদৌড়ি করছে কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ সময় চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম ও পাপিয়া জানায়, ঈদের পর বিদ্যালয় খোলা হলে তারা এসে মাঠের এ অবস্থা দেখতে পায়।

এ সময় শিক্ষার্থী অভিভাবক আসমুদ্দিন জানান, মাঠে এসব রাখা মোটেও উচিত হয়নি। বিদ্যালয়ের পাশের বাড়ির নূরুল ইসলামের ভাষ্য, বালু ও সুরকি নিম্নমানের হওয়ায় শুরুতেই কাজে বাধা দিয়েছেন তারা। তা ছাড়া বালু ও সুরকির পরিমাণ সমান অনুপাতে দেওয়ার কথা থাকলেও ঠিকাদারের লোকজন সুরকির দ্বিগুণ বালু ব্যবহার করছিলেন। এর পর থেকেই কাজ বন্ধ রয়েছে। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রিনা বেগম জানান, ঠিকাদার বিদ্যালয়ের মাঠে এসব রাখলেও তাঁকে কিছু জানাননি। ঈদের ছুটিতে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করতে বিদ্যালয়ে এসে তিনি মাঠের এ অবস্থা দেখতে পান। প্রায় এক মাস ধরে রাস্তার নির্মাণসামগ্রী স্কুল মাঠে রাখা হলেও সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল অফিস বিষয়টি জানে না বলে জানা গেছে।

ঠিকাদার আলম বলেন, তিনি ৬৫ লাখ টাকায় কাজটি কিনে নিয়েছেন। বিদ্যালয় ছুটি থাকার সময় প্রধান শিক্ষকের স্বামীর কাছে বলে মাঠে কয়েকদিনের জন্য নির্মাণসামগ্রী রেখেছিলেন। বাধা দেওয়ার কারণে বালু ও সুরকি সড়কে ফেলা যাচ্ছে না। তবে দু-এক দিনের মধ্যে মাঠটি খালি করে দেবেন বলে জানান তিনি। নিম্নমানের সামগ্রীর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সংশ্লিষ্ট প্রকৌশল অফিস দেখে উপযুক্ত মনে করলেই তা ব্যবহার করবেন, অন্যথায় নয়।

এ বিষয়ে নান্দাইল উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী আব্দুল মালেক বিশ্বাস জানান, স্কুল মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখার বিষয়টি জানেন না তিনি। তার পরও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারকে বলে দেবেন, মাঠ থেকে দ্রুত নির্মাণসামগ্রী সরিয়ে নিতে। নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রীর পরিবর্তে নতুন করে ভালো মানের নির্মাণসামগ্রী এনে ব্যবহার করতে বলবেন। এ ছাড়া রাস্তাটি পরিদর্শন করে কোনো অনিয়ম পেলে ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ময়মনস হ ব যবহ র কর সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

রূপনগরে শিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ খেলার জায়গা উদ্বোধন

এলাকাভিত্তিক খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিশুদের জন্য রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর আবাসিক এলাকায় ভ্রাম্যমাণ খেলার জায়গা (মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড) উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে স্কুল অব লাইফ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ও হেলথ ব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার সম্মিলিত উদ্যোগে এটির উদ্বোধন করা হয়। এই আয়োজনে সহযোগিতা করেন রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা।

আয়োজকেরা জানান, প্রতি শনিবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রূপনগর আবাসিক এলাকার ১৫ নম্বর সড়কে নিয়মিত মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ডে খেলাধুলার আয়োজন করা হবে। খেলাধুলার মধ্য থাকবে দাবা, লুডু, ক্যারম, দড়ি লাফ ও ব্যাডমিন্টন। এ ছাড়াও থাকবে ছবি আঁকা, হস্তশিল্প ও সামাজিকীকরণের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মাঠ ও পার্কের অপ্রতুলতা ঢাকা শহরের একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের ৩৭টিতে কোনো খেলার মাঠ বা পার্ক নেই। শিশুদের খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এলাকাভিত্তিক মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড তৈরি একটি কার্যকর সমাধান। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে, শহর হবে প্রাণবন্ত ও বাসযোগ্য।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্কুল অব লাইফের চেয়ারম্যান চিকিৎসক অনুপম হোসেন বলেন, ঘরবন্দী জীবনে শিশুরা হাঁপিয়ে উঠেছে। করোনাকালে দীর্ঘদিন ঘরে থাকার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এলাকাভিত্তিক স্বল্প ব্যবহৃত বা অব্যবহৃত রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড তৈরি করে খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরি করা যায়। এতে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ ও সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার মানসিকতা গড়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ-পার্ক নেই। অর্থ ও স্থান সংকুলান বিবেচনায় সিটি করপোরেশনের পক্ষে দ্রুত বড় আকারের মাঠ-পার্ক তৈরি সম্ভব নয়। তবে খুব কম খরচে ও স্বল্প জায়গায় শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে এলাকাভিত্তিক খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের স্থান গড়ে তোলা সম্ভব। নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্কুল অব লাইফের সদস্যসচিব সাবরিনা নওরিন লিমু, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মকর্তা, মিরপুর সেকশন- ৭ এর রূপনগর আবাসিক এলাকার ১৫ নম্বর সড়কের এলাকাবাসী ও শিশু-কিশোরেরা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মিঠুন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ