মধ্যরাতে বাড়ি থেকে অপহরণ, ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি
Published: 10th, April 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর গ্রাম থেকে অপহৃত রিফাত মিয়াকে উদ্ধার ও ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। ডিজিএফআই পরিচয় দিয়ে গত সোমবার মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম মালুর ছেলে রিফাতকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে। পরে ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে কসবা উপজেলা থেকে তাঁকে উদ্ধার এবং রেজাউল করিম নামে একজনকে আটক করেছে। অন্য আটজনকে বুধবার খুলনা থেকে আটক করা হয়।
ক্যাপ্টেন পরিচয় দেওয়া রেজাকে নবীনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি মাইক্রোবাসের নম্বর ও চালকের ফোন নম্বরের সূত্র ধরে আটজনকে আটক করা হয়। কসবা পৌর এলাকার রেজা জানায়, সে বিমানবাহিনীতে চাকরি করত। অপহরণে চালকসহ ১২ জন জড়িত।
আটক অন্যরা হলো– ডুমুরিয়ার সাহাপুর গ্রামের জাহিদুর রহমান, খরসংগ গ্রামের আশরাফুল কবির, মাসুম বিশ্বাস, মধুরাম সাহাপুর গ্রামের রাজন কুম্ভ, আন্দুলিয়া গ্রামের মো.
রিফাতের (১৯) বাবা মালু মিয়া সৌদি আরবে ব্যবসা করতেন। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের উপস্থিতিতে সোমবার রাতে দুর্বৃত্তরা নিজেদের ডিজিএফআই সদস্য পরিচয় দিয়ে রিফাতকে ধরে নিয়ে যায়। এর চার ঘণ্টা পর রাত ৩টার দিকে মোবাইল ফোনে মুক্তিপণ হিসেবে নগদ ৩ কোটি টাকা দাবি করা হয়। তিনি আরও বলেন, ফোন দিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নবীনগর থানার ওসির সহযোগিতা চেয়েছিলেন। ওসি তখন বলেন, তিনি ছুটিতে আছেন, তবে পুলিশ পাঠাচ্ছেন। এর আধা ঘণ্টার মধ্যেই থানা থেকে দুই এসআই আবদুল মন্নাফ ও রাম কানাই সরকারের নেতৃত্বে সাত-আট পুলিশ তাদের বাড়িতে আসে। কিন্তু পুলিশ এসে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের বদলে তাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে শলাপরামর্শ করে। এ সময় সামান্য দূরে থাকা এসআই মন্নাফকে কমপক্ষে ২০ বার ফোন করেন। কিন্তু তিনি ফোন না ধরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলাপ করে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই সন্ত্রাসীরা নগদ টাকা, স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয় এবং রিফাতকে নিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি থেকে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও চলে যায়। তিনি মঙ্গলবার নবীনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এজাহারে তিনজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়। নাম উল্লেখ বরা তিনজন হলেন– লাউর ফতেপুর গ্রামের কামাল মিয়া ও কামাল খন্দকার এবং বাড়িখলা গ্রামের আবু কালাম আজাদ।
উদ্ধার হওয়া রিফাত বলেন, ‘মঙ্গলবার দিনভর কসবা রেললাইনের পাশে সীমান্তের কাছাকাছি মাইক্রোবাসে আমাকে বসিয়ে রাখা হয়। তাদের সঙ্গে চুক্তি করি, আমাকে ছেড়ে দিলে ৩ কোটি টাকা এনে দেব। চুক্তি অনুযায়ী, দুই ধাপে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়, তারা বাকি টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। ওই অ্যাকাউন্ট নম্বর আমার পরিবারের কাছে পাঠালে এর সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে উদ্ধার ও রেজাকে আটক করে।’
এসআই মোন্নাফ ও এসআই রামকানাইয়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কথা বলবেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপহরণ হওয়া যুবক রিফাতকে উদ্ধার করা হয়েছে। এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি ছিল। পুলিশ প্রথমে ভেবেছিল ওদের কথা সত্যি, পরে যখন রিফাতকে নিয়ে যায়, তখন টের পাওয়া গেছে তারা প্রতারক চক্র। এতে পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপহরণ
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি নেতা পরিচয়ে হামলা, লুটপাট ও নির্যাতনের অভিযোগ
সিদ্ধিরগঞ্জে বিএনপি পরিচয়ে নেতা জমির মালিকানা দাবি করে জোরপূর্বক জমি দখল, হামলা, লুটপাট ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার সকাল ১০টার সময়, সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন কদমতলী ক্যানেলপাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এ সময় থানায় এসে অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী আকলিমা আক্তার ডলি। অভিযোগের ভিত্তিতে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার এসআই মাহবুব তাৎক্ষণিক সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সকাল ১০টার দিকে, সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন মিজমিজি পাগলাবাড়ি এলাকার কথিত বিএনপি নেতা ইলিয়াস ও জয়নালের নেতৃত্বে ৭০-৮০ জনের একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র, লোহার রড, রামদা ও চাপাতি নিয়ে, জমির মালিকানা দাবি করে বিভিন্ন বাড়িঘরে হামলা করে, এক ভুক্তভোগীর জমির সীমানা প্রাচীন ভাঙচুর করে এবং দখল করার উদ্দেশ্যে কয়েকটি সাইনবোর্ড সাঁটিয়ে দেয়।
এসময় বাড়িওয়ালারা তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা ভুক্তভোগীদের উপর হামলা, নারীদের শ্লীলতাহানি, স্বর্ণালংকার লুট ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এসময় ঘটনাস্থলের সামনে স্থাপিত আল জাকির মাদ্রাসার সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙ্গচুর করা হয়। যেখানে ধরা পরেছিল অভিযুক্তদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কিছু চিত্র।
এদিকে এবিষয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে হামলা, লুটপাট ও নারী নির্যাতনের অভিযোগ তোলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একাধিক অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগীরা।
অভিযোগকারী খাদিজা ও আসমা আক্তার জানান, তাদের সম্পদের ক্ষতি সাধন কালে তারা বাঁধা দিতে গেলে, ১৫-২০ জন যুবক তাদের উপর হামলা করে এবং তাদের গলাচিপে ধরে তাদের সঙ্গে থাকা মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। এসময় তাদের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।
অপর এক ভুক্তভোগী সাবেক পুলিশ সদস্য হাফিজ উদ্দিন আক্ষেপ নিয়ে বলেন, আমি ৯৯৯ এ ফোন দিয়ে আমাদের উপর হামলার বিষয়ে জানিয়ে সাহায্য চাইলেও আমাদের সাহায্যে এখন পর্যন্ত কোন পুলিশ সদস্য আসেনি। তাই বাধ্য হয়ে এখন থানায় এসে অভিযোগ দিলাম।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঘটনার আংশিক সত্যতা স্বীকার করে জানান, এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে ভুক্তভোগী বাড়িওয়ালাদের বাকবিতন্ডা হয়েছে এবং অভিযোগকারীর একটি দোকানের তালা খুলেছিল বসার জন্য, পরে এসআই মাহবুবের নেতৃত্বেই সেই তালা পুনরায় ঝুলিয়ে দেয়া হয়।
এছাড়া নারী নির্যাতন, স্বর্ণালংকার লুট, ও সিসিটিভি ক্যামেরা ভাঙ্গচুরের অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর আলম বলেন, অভিযোগ পেয়েছি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।