Samakal:
2025-04-18@07:06:11 GMT

গোদের উপর বিষফোড়া

Published: 10th, April 2025 GMT

গোদের উপর বিষফোড়া

এক যুগেরও অধিক সময় পূর্বে হালদা নদীর ফটিকছড়িতে ‘রাবার ড্যাম’ স্থাপনের ক্ষেত্রে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির কথা হইলেও উহাই এখন কৃষকের গলার কাঁটায় পরিণত হইয়াছে। কেবল তাহাই নহে, বুধবার প্রকাশিত সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, উক্ত স্থাপনার কারণে খোদ নদীটিই শুষ্ক হইয়া মৃতবৎ।

শুষ্ক মৌসুমে পানি না থাকায় মিঠাপানির মৎস্যের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রজননক্ষেত্র ক্ষতিগ্রস্ত হইতেছে। তদুপরি পানি সংকটে দীর্ঘ এলাকাব্যাপী সেচও ব্যাহত হইতেছে। অর্থাৎ রাবার ড্যামের নেতিবাচক প্রভাব উহার উজান ও ভাটি উভয় এলাকায় ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান। 

আমরা জানি, পার্বত্য চট্টগ্রামের বদনাতলী পর্বত হইতে উৎপন্ন হইয়া হালদা নদী ফটিকছড়ির মধ্য দিয়া চট্টগ্রামে প্রবেশ করিয়াছে। এশিয়ার অন্যতম মিঠাপানির এই মৎস্য প্রজননক্ষেত্রের ফটিকছড়ি অংশ পানিশূন্য হইবার কারণে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়িয়াছে। উহার দুই তীরের বাসিন্দাদের চাষাবাদ ও পানি সংকটও চরমে উঠিয়াছে। ফটিকছড়িতে হালদা নদীর পানিশূন্যতার জন্য রাবার ড্যামকে দায়ী করিয়াছেন বিশেষজ্ঞরা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হালদা রিসার্চ ল্যাবরেটরির সমন্বয়ক অধ্যাপক ড.

মঞ্জুরুল কিবরিয়ার ভাষ্য অনুযায়ী, রাবার ড্যামের কারণে ভূগর্ভস্থ পানির স্তরও নামিয়া যাইতেছে। বাঁধটি অপসারণের সুপারিশ করা হইলেও কিছু শিল্প গ্রুপের কারণে তাহা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় নাই। আমরা বিস্মিত, ৩১ মার্চ বাঁধটি খুলিয়া দেওয়ার সিদ্ধান্ত হইলেও উহা মান্য করা হয় নাই। 

হালদা নদীর এই সংকটের কারণে মাতৃমৎস্য ডিম্ব না ছাড়িবার আশঙ্কা রহিয়াছে। আমরা দেখিয়াছি, গত বৎসর একই কারণে রুই জাতীয় মৎস্যের প্রত্যাশিত ডিম্ব মিলে নাই। হালদার প্রজননকাল এপ্রিল, মে ও জুন মাসে নদীর এহেন দুরবস্থা অশনিসংকেত। যথায় দেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ হালদার সুরক্ষা জরুরি অগ্রাধিকার পাওয়া ন্যায্য ছিল, তথায় নদীটি লইয়া প্রশাসনের উদাসীনতা হতাশাব্যঞ্জক। দেশের অর্থনীতিতেও হালদা নদীর অবদান অনস্বীকার্য। এই নদী হইতে প্রতি বৎসর যেই পরিমাণ নিষিক্ত ডিম্ব সংগ্রহ করা হয়, উহা জাতীয় অর্থনীতিতে কয়েকশ কোটি টাকার অবদান রাখে।

পানি ও কৃষি সম্পদের মূল্য বিবেচনায় লইলে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে হালদার অবদান কয়েক সহস্র কোটি টাকা অতিক্রম করিবে। বস্তুত জীববৈচিত্র্য সুরক্ষায় হালদা নদীর যেই গুরুত্বপূর্ণ অবদান, উহা নিছক অর্থের অঙ্কে পরিমাপ করা যাইবে না। হালদা নদীতে এখনও বিদ্যমান গাঙ্গেয় শুশুকের বিরল প্রজাতিও নদীটিতে বিবিধি সংকটের কারণে বিপন্নপ্রায়।

রাবার ড্যামের কারণে হালদা নদী যদ্রূপ সংকটে পতিত, তদ্রূপ আরও বিবিধ কারণে হালদার জীববৈচিত্র্য অস্তিত্বের ঝুঁকিতে পড়িয়াছে। মাত্রাতিরিক্ত যন্ত্রচালিত নৌযান, নিষিদ্ধ জাল ও খননযন্ত্র লইয়া উদ্বেগ থাকিলেও সেইগুলি বন্ধ হয় নাই। নদীটিতে দূষণের উৎসও নেহাত কম নহে। আমরা মনে করি, গুরুত্ব বিবেচনায় নদীটির সুরক্ষা অগ্রাধিকার হিসাবে লইতে হইবে। হালদাকে বিপর্যয় হইতে রক্ষা করিতে হইলে প্রশাসন, স্থানীয় নাগরিক, বেসরকারি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে হালদা কর্তৃপক্ষ গঠন এবং এই কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে নদী রক্ষায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি।

তবে সর্বাগ্রে হালদার উপর রাবার ড্যামের যেই বিষফোড়া রহিয়াছে, উহার অপসারণ অগ্রাধিকাররূপে গ্রহণ করিতে হইবে। আমরা প্রত্যাশা করি, প্রশাসনকে এই ক্ষেত্রে কঠোর হইবার বিকল্প নাই। যেই রাবার ড্যাম হালদার ন্যায় নদী ধ্বংসের উৎস, যেই বাঁধ কৃষকের ক্ষতির কারণ, উহাকে আর কোনো যুক্তিতে বহাল রাখিবার অবকাশ নাই। সুতরাং হালদার জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় লইয়া ফটিকছড়ির রাবার ড্যাম এখনই অপসারণ করিবার ব্যবস্থা লওয়া হউক।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবদ ন মৎস য

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রের উদ্বোধন

রাজশাহীতে আজ মঙ্গলবার সকালে ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রের উদ্বোধন করা হয়েছে। এটি দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্র। নতুন এই প্রজননকেন্দ্রে গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে নিয়ে আসা হয়েছে নতুন ঘড়িয়াল জুটিকে। এই জুটির এখনো নাম দেওয়া হয়নি।

বন বিভাগের পবা নার্সারির রেসকিউ সেন্টারে ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রটি করা হয়েছে। এটির অবস্থান জিয়া শিশুপার্ক রোডে। আজ সকালে কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বন বিভাগের প্রকল্প পরিচালক ও উপপ্রধান বন সংরক্ষক গোবিন্দ রায়, বন বিভাগের ঢাকা অঞ্চলের বন্য প্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বন সংরক্ষক মো. ছানাউল্ল্যা পাটওয়ারী, বগুড়া সামাজিক বন অঞ্চলের বন সংরক্ষক মো. সুবেদার ইসলাম, রাজশাহী সামাজিক বন বিভাগ ও বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রফিকুজ্জামান শাহ্, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক কামরুল হাসান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এ এম সালেহ রেজা, আইইউসিএন বাংলাদেশের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর এ বি এম সরোয়ার আলম।

এদিকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানে থাকা গড়াইকে গাজীপুর সাফারি পার্কে ও পদ্মাকে নতুন প্রজননকেন্দ্রে অবমুক্ত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। এই ‘পদ্মা’ ও ‘গড়াই’ মিঠাপানির বিরল প্রজাতির কুমির-ঘড়িয়াল। এই কুমির এখন বিলুপ্তির পথে। তাই রাজশাহীতে কেন্দ্রীয় উদ্যান ও চিড়িয়াখানায় আবদ্ধ জায়গায় প্রজননের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল।

এর আগে রাজশাহী কেন্দ্রীয় উদ্যানের পুকুরে ঘড়িয়াল ছিল দুটি। দুটিই ছিল মেয়ে। ২০১৭ সালের ১৩ আগস্ট তাদের সঙ্গী পাল্টে দেওয়া হয়। তখন মেয়েটির নাম রাখা হয় পদ্মা আর গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে আনা ছেলে ঘড়িয়ালটির নাম দেওয়া হয় গড়াই।

রাজশাহী চিড়িয়াখানার কিউরেটর ও ইনচার্জ ফরহাদ উদ্দিন বলেন, প্রায় ৮ বছর ধরে বারবার এরা পানিতে ডিম দিয়েছে। ডিম নষ্ট হয়ে গেছে। এ জন্য প্রজনন ব্যর্থ হয়েছে। তাই তাঁরা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন মেয়ে ঘড়িয়াল পদ্মাকে নতুন প্রজননকেন্দ্রে দেবেন আর ছেলেটিকে গাজীপুরে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

আইইউসিএনের মুখ্য গবেষক এ বি এম সারোয়ার আলম বলেন, দেশে এর আগে কোথাও ঘড়িয়ালের ‘ক্যাপটিভ ব্রিডিং’ হয়নি। রাজশাহীতে যদি সফল হয়, তাহলে এটা হবে বিরল ঘটনা।

উপমহাদেশীয় এই কুমির সাধারণত মাছ খেয়ে বেঁচে থাকে। এর মূল আবাসভূমি গঙ্গা (পদ্মা) নদী বলে এর বৈজ্ঞানিক নামকরণও (Gavialis gangeticus) হয়েছে গঙ্গার নামে। তবে গঙ্গা ছাড়াও উপমহাদেশের অন্যান্য বড় নদীতেও আগে ঘড়িয়াল দেখা যেত। বাংলাদেশে পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও সেগুলোর শাখায় একসময় প্রচুর ঘড়িয়াল দেখা যেত। কিন্তু আবাসস্থল ধ্বংস হওয়ার কারণে বাংলাদেশে প্রজননক্ষম ঘড়িয়াল বিলুপ্তির পথে। বাংলাদেশে ঘড়িয়াল বর্তমানে মহাবিপন্ন বন্য প্রাণী, যা বন্য প্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন, ২০১২ দ্বারা সংরক্ষিত।

নতুন প্রজননকেন্দ্রটির সামনে একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে ঘড়িয়াল সম্পর্কে যাবতীয় তথ্য লেখা রয়েছে। পাশাপাশি কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে, সে বিষয়েও প্রয়োজনীয় তথ্য দেওয়া হয়েছে। যেমন রোদ পোহানোর সময় বা অন্য কোনো সময় ঘড়িয়ালকে বিরক্ত করা যাবে না, ডিম সংগ্রহ বা নষ্ট করা যাবে না, পুকুরে পলিথিন বা প্লাস্টিক ছুঁড়ে ফেলা যাবে না এবং পুকুরে কাপড় কাচা, মাছ ধরা ও গোসল করা যাবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হালদা নদী থেকে বালু তোলায় দুজনকে এক লাখ টাকা জরিমানা
  • রাজশাহীতে দেশের প্রথম ঘড়িয়াল প্রজননকেন্দ্রের উদ্বোধন