নির্বাচন নিয়ে রোলার কোস্টার রাইড পরিস্থিতি যা বলছে
Published: 10th, April 2025 GMT
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেছিলেন, ‘আমরা দেশে একটি ফ্রি, ফেয়ার অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ইলেকশনের জন্য (সামনের দিকে) ধাবিত হচ্ছি’ (সমকাল, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫)। তখন জনপরিসরে এ বিশ্বাস জন্মায়– ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন এ বছরের ডিসেম্বরেই হচ্ছে। শুধু তাই নয়; বিশ্বাসটি বেশ প্রবল হয়ে ওঠে, যখন একই বক্তব্যে সেনাপ্রধান এও জানান, তাঁর এ অবস্থানের সঙ্গে সরকার বিশেষত প্রধান উপদেষ্টা ড.
এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি এই মুহূর্তে দেশের প্রধান দল বিএনপি মহাসচিবের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দলও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করার পর সংবাদকর্মীদের জানিয়েছিল, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হবে বলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাদের আশ্বস্ত করেছেন।
গত বছর ১৫ থেকে ৩১ অক্টোবর পরিচালিত ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং ১৯ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩ মার্চ পর্যন্ত পরিচালিত ইনোভেশন কনসাল্টিং বাংলাদেশ নামে একটি বেসরকারি গবেষণা সংস্থার পৃথক দুই জরিপও বলে, সিংহভাগ মানুষ ডিসেম্বরের মধ্যেই দেশে একটি নির্বাচিত সরকার দেখতে চায়।
এত কিছুর পরও অন্তর্বর্তী সরকার এ সময়ের মধ্যেই নির্বাচন করতে ইচ্ছুক– এমনটা হলফ করে বলা যায় না। এর কারণ হলো, প্রধান উপদেষ্টা ইদানীং নির্বাচনের সময় সংক্রান্ত বক্তব্যে তাঁর সেই পুরোনো অবস্থানে ফিরে গিয়েছেন। গত বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলো যদি নির্বাচনের আগে কম সংস্কার চায়, তাহলে জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে পারে। সংস্কার পুরো চাইলে নির্বাচন আগামী বছরের জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে। একই কথা তিনি গত ঈদুল ফিতরে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে একটু সংক্ষেপ করে বলেছেন।
কৌতূহলোদ্দীপক বিষয়, নবগঠিত জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির নেতারা এতদিন বলে এসেছেন, সরকার দেশের জনগণের নিরাপত্তা এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত করতে পারেনি, তাই এ বছর জাতীয় নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হতে পারে। ইদানীং তারা বলছেন, অর্থনীতি পুনরুদ্ধার এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে এ সরকার ভালো কাজ করেছে। তাই তাকে আরও বেশি দিন রেখে দিতে হবে। দলটির উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম তো একাধিক ফেসবুক পোস্টে এ কথাও লিখেছেন, তিনি ড. ইউনূসকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান। পাশাপাশি ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে রীতিমতো হ্যাশট্যাগ দিয়ে প্রচার চলছে– ড. ইউনূসকে অন্তত পাঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।
তদুপরি যারাই ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দাবি করছেন, তাদের বিরুদ্ধে ফেসবুক ও ইউটিউবে গালাগাল চলছে। এমনকি মির্জা ফখরুল ও মির্জা আব্বাসের মতো বিএনপির বয়োজ্যেষ্ঠ নেতারাও রেহাই পাচ্ছেন না এই গালি থেকে। দলটির আরেক নেতা ইশরাক হোসেন বলেছেন, সামাজিক মাধ্যমে নির্বাচনের কথা বললেই গালির ঝড় ধেয়ে আসছে।
এ পরিস্থিতিতে মনে হতেই পারে, ৫ আগস্ট-পূর্ববর্তী সময়ে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের দাবিটি জনপ্রিয়তায় ১ নম্বরে থাকলেও, বর্তমান বাংলাদেশে তা রোলার কোস্টার রাইডে আছে। ফেব্রুয়ারি, এমনকি মার্চের প্রথম দিকেও মনে হচ্ছিল, যে যা-ই বলুক ডিসেম্বরেই নির্বাচন করতে সরকার বদ্ধপরিকর। এখন প্রায় উল্টোই মনে হচ্ছে। লক্ষণীয়, উচ্চ দ্রব্যমূল্য, বেসামাল জননিরাপত্তার কারণে সেই সময়টায় সরকার বেশ বেকায়দায় ছিল। আবার আলু, পেঁয়াজসহ মৌসুমি শাকসবজির প্রাচুর্যের পাশাপাশি যথেষ্ট আমদানির কারণে বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দাম অন্তত গত রমজানের তুলনায় সহনশীল ছিল। এই সময়ে চুরি-ডাকাতির মতো অপরাধও একটু কমে আসে। ফলে সরকারও সোজা হয়ে বসার সুযোগ পেয়েছে।
তবে, সরকারের এ স্বস্তি কতদিন থাকবে– এ নিয়ে সংশয় প্রকাশের অবকাশ এখনও কম নেই। শুধু এটুকুই বলা হয়তো যথেষ্ট, যেসব সন্ত্রাস এ সরকারের সময়ে জননিরাপত্তার ক্ষেত্রে বড় এক আতঙ্কের নাম, তা এখনও চলছে। সোমবার ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলাকালে যেভাবে ‘বিদেশি’ প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি দেশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও ভাঙচুর চালানো হয়েছে, তা নজিরবিহীন। যদিও সরকার এ সূত্রে কিছু গ্রেপ্তার চালাচ্ছে, তাতে ‘মব’ কতটা নিয়ন্ত্রণে আসবে– নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতির মতো অপরাধ পুরো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। রপ্তানি আয় ও কর্মসংস্থানের প্রধান খাত বলে পরিচিত তৈরি পোশাকের ওপর ডোনাল্ড ট্রাম্পের অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ইতোমধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়েছে। রাজস্ব আয়ের ঘাটতির কারণে আইএমএফের চলমান ঋণের দুই কিস্তি প্রাপ্তি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। মূল্যস্ফীতি হ্রাসের নামে ব্যাংক সুদের উচ্চহার যখন বিনিয়োগকারীদের গলায় ফাঁস পরিয়েছে, তখনই ডুবন্ত কয়েকটি ব্যাংক বাঁচাতে একাধিক দফায় টাকা ছাপানোয় মূল্যস্ফীতি আরও বাড়তে পারে।
আসলে একটি অনির্বাচিত সরকারের প্রধান বা সদস্যরা যত সৎ বা জ্ঞানী-গুণী হোক, তাদের দিয়ে কখনোই জনপ্রতিনিধিদের প্রতিস্থাপন সম্ভব হয় না। জনগণের কাছে সরকারের জবাবদিহিও নিশ্চিত করা যায় না। জনহিতৈষী একনায়ক (বেনেভোলেন্ট ডিক্টেটর) ধারণা চালু আছে বটে; একাধিক রাজনৈতিক দল যেখানে সক্রিয়, সেখানে তাও সম্ভব হয় না। অর্থাৎ অতি সত্বর গণতান্ত্রিক উত্তরণই দেশে স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, নির্বাচনের সময় নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার সুযোগে সরকার ডিসেম্বরের পরও ক্ষমতায় থাকতে চায়। বিএনপি ও এনসিপির পরস্পরবিরোধী অবস্থানের কথা আগেই বলেছি। এনসিপির সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীও ঐকমত্য পোষণ করে চলেছে। এমনকি কিছুদিন আগেও বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলনকারী গণতন্ত্র মঞ্চের বেশির ভাগ দল ইনিয়ে বিনিয়ে এনসিপি-জামায়াতের সুরেই কথা বলছে। তবে প্রধান বাম দলগুলো নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোট নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট সময় দাবি করেছে।
এটি সত্য, বিএনপির জনপ্রিয়তা ও সাংগঠনিক শক্তির কাছে বাকি সব দল মিলেও টিকবে না। কিন্তু এটিও সত্য, রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণা ও বয়ানের ক্ষেত্রে বিএনপির সঙ্গে জামায়াত ও এনসিপির পার্থক্য উল্লেখযোগ্য নয়। ইদানীং বিএনপির অনেক নেতা জামায়াতের বিরোধিতায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান নিলেও আওয়ামী লীগ সক্রিয় থাকাকালে বরং প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে এতটা দৃঢ় ছিল না। সম্ভবত বিএনপি ভাবছে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বেশি আবেগ দেখালে তাদের বিশাল রক্ষণশীল সমর্থক গোষ্ঠী জামায়াতের দিকে চলে যেতে পারে। প্রসঙ্গত, বিএনপি এবং জামায়াত-এনসিপি শিবিরের ব্যবধান যত স্পষ্ট হচ্ছে ততই উভয় পক্ষ পরস্পরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসন চেষ্টার অভিযোগ তুলছে।
আমার ধারণা, কৌশলগত কারণেই বিএনপি নির্বাচন নিয়ে সরকারকে যথেষ্ট চাপ দিতে পারছে না। স্মরণ করা যেতে পারে, গত মাসেই জার্মান সংবাদমাধ্যম ডিডব্লিউকে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেছিলেন, মার্চেই তারা নির্বাচনী রোডম্যাপ চান। বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি, বরং উল্টো গালাগাল শুনতে হচ্ছে। একই নেতা অবশ্য গত ৫ এপ্রিল বলেছেন, তারা আবারও প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করে সুনির্দিষ্ট নির্বাচনী রোডম্যাপ চাইবেন। সেটাও বা কতটুকু সম্ভব হবে– একটি প্রশ্ন।
বিশেষত যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত যে দ্রুত একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন বাংলাদেশে চায়, তার একটি কার্যকারিতা অবশ্যই আছে। এ বিষয়ে উপর্যুক্ত জনপ্রত্যাশা ও সেনাপ্রধানের বক্তব্যও বহাল আছে, চাইলেই যা এড়ানো অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষেও সম্ভব নয়।
সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড স ম বর র র জন ত ক এনস প র ব এনপ র অবস থ ন সরক র র জনপ র ইউন স
এছাড়াও পড়ুন:
রেকর্ড গড়ে দানব হয়ে ফিরলেন অভিষেক, সঙ্গে হায়দরাবাদও
ব্যক্তিগত ২৮ রানে আউট হয়ে গিয়েছিলেন ইয়াশ ঠাকুরের বলে। কিন্তু ভাগ্য যে আজ অভিষেক শর্মার পক্ষে। আউট হয়েও তাই বেঁচে গেলেন নো বলের কারণে। আর ভাগ্যের দেওয়া এই সুযোগ কাজে লাগাতে একটুও ভুল করলেন না সানরাইজার্স হায়দরাবাদের এই ব্যাটসম্যান। ৪০ বলে করেছেন সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত থেমেছেন ৫৫ বলে ১৪১ রান করে।
অভিষেকের এই ইনিংসটি আইপিএলে কোনো ভারতীয় ব্যাটসম্যানের সর্বোচ্চ ইনিংস। আর এই অসাধারণ সেঞ্চুরিতেই মূলত পাঞ্জাব কিংসের দেওয়া ২৪৫ রানের পাহাড় টপকে গেছে হায়দরাবাদ। টানা চার হারের পর এই ম্যাচ দিয়ে অবশেষে জয়ে ফিরল হায়দরাবাদ।
আজ শনিবার রাতে হায়দরাবাদে আগে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২৪৫ রান করে পাঞ্জাব। তবে প্রীতি জিনতার দলের এই রানপাহাড়কেও সাদামাটা বানিয়ে ফেলে হায়দরাবাদ। অভিষেকের সেঞ্চুরির পর হায়দরাবাদ ম্যাচ জিতেছে ৮ উইকেটে। হাতে ছিল আরও ৯ বল।
আরও পড়ুনছক্কার রেকর্ডে ভারতকে জেতালেন অভিষেক শর্মা২২ জানুয়ারি ২০২৫বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরু থেকেই আগ্রাসী ছিলেন হায়দরাবাদের দুই ওপেনার ট্রাভিস হেড ও অভিষেক। দুজন মিলেন পাঞ্জাবের বোলারদের রীতিমতো কচুকাটা করেন। এই জুটিতে ৮ম ওভারেই দলীয় ১০০ রান পেরিয়ে যায় হায়দরাবাদ। একপর্যায়ে মনে হচ্ছিল দুই ওপেনারই বোধ হয় ম্যাচ শেষ করে দেবেন।
ফেরার সময় প্রতিপক্ষের বোলার আর্শদ্বীপের কাছ থেকেও সাধুবাদ পান অভিষেক