মীমাংসা বাণিজ্যের মাস্টার আ’লীগ নেতা বাবুল
Published: 10th, April 2025 GMT
ময়মনসিংহ শহরে বহুতল ভবন হচ্ছে। লোক পাঠিয়ে প্রথমে ঝামেলা করেন। পরে ত্রাতা সেজে বিরোধ মিটিয়ে বাগিয়ে নেন ফ্ল্যাট। জমির মালিকানা নিয়ে বিরোধ, ছল করে দু’পক্ষকেই জমিছাড়া করে দখল নেন। তিনি মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। মীমাংসা বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা কামিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন।
খোদ আওয়ামী লীগের নেতারাও জানিয়েছেন, বিগত সাড়ে ১৫ বছর আইন পেশার আড়ালে বাবুল ছিলেন ময়মনসিংহের অলিখিত বিচারক। পারিবারিক, জমিজমা, ব্যবসা থেকে যে কোনো বিরোধের বিচার বসাতেন ব্যক্তিগত চেম্বারে। সেখানে টাকা খেয়ে এক পক্ষকে সুবিধা দিতেন। আওয়ামী লীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে স্থানীয় প্রশাসনকে জিম্মি করতেন।
জেলার একাধিক আইনজীবী জানান, তাদের সমিতি ভবনের পাশে সরকারি জায়গায় একতলা ভবন করে চেম্বার দেন বাবুল। সেখানে জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা আড্ডা দিতেন। বাবুল নিজস্ব বিচার কার্যক্রম চালাতেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বাবুল পলাতক। মানুষের ক্ষোভের আগুনে ছাই হয়ে গেছে এ ভবন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশ জুটমিল করপোরেশনের আড়াই একর জমি আওয়ামী লীগের শাসনামলে দখল করেন বাবুল। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে চুরখাই এলাকায় প্রায় ৩ কোটি টাকা মূল্যের তিন একর জমি কবজায় নিয়েছেন।
ময়মনসিংহ নগরীর অভিজাতপাড়াখ্যাত গুলকিবাড়িতে ৫৭ শতাংশ জমিতে ১৯ তলা ভবন নির্মাণে ডেভেলপার কোম্পানি নূরজাহান গার্ডেনের সঙ্গে চুক্তি হয় মালিকপক্ষের। ওয়ারিশ সূত্রে পরিবারের মধ্যে ঝামেলা থাকায় বাবুল মধ্যস্থতার নামে কোটি টাকা হাতান বলে একটি পক্ষের দাবি।
নগরীর ব্রিজ মোড়ে রয়েল মিডিয়া কলেজের নিজস্ব জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বকে কাজে লাগিয়ে বাবুল প্রভাব খাটিয়ে কলেজে মালিকানা শেয়ার লিখে নিয়েছেন। নগরীর প্রাণকেন্দ্র আঠারো বাড়ি বিল্ডিং এলাকায় গড়েন বহুতল ভবন। প্রায় ৫ কোটি টাকা মূল্যের এ ভবনের জমির মালিকানা নিয়ে প্রশাসনের কাছে বিচার দিয়েও সমাধান পায়নি একটি পক্ষ। তাদের ভাষ্য, বাবুলের দাপটে তারা জমি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন।
গফরগাঁওয়ের পাগলা থানায় নিজের সাধুয়া গ্রামেও দাপট দেখিয়ে একরের পর এক জমি দখল করেছেন বাবুল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, অর্থের লোভে দলের প্রার্থীদের বিপক্ষে ভোট করেছেন বাবুল। গত বছরের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি নৌকার ডামি প্রার্থীর পক্ষে ছিলেন। ময়মনসিংহ জেলার ১১টি সংসদীয় আসনে বাবুল প্রত্যক্ষ সমর্থন দিয়ে পাঁচটিতে ট্রাক প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ী করান। পরাজিতদের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকা ও গাড়িবাড়ি নিয়েছেন বাবুল। নির্বাচনের পর বিষয়টি নিয়ে তিনি কেন্দ্রীয় ও জেলা পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতাদের তোপের মুখেও পড়েছিলেন।
বাবুল ময়মনসিংহে ছাত্র আন্দোলনে নিহত রেদুয়ান হাসান সাগর হত্যা মামলার আসামি। ইতোমধ্যে বিক্ষুব্ধ জনতা তাঁর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আগুন দিয়েছে। জমি ও ফ্ল্যাটের অনেক মালিক তাদের সম্পদ পুনর্দখল করেছেন বলে জানা গেছে।
ময়মনসিংহ জেলার আইনজীবী হান্নান খান বলেন, আইনজীবী হয়ে বাবুল ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। নিম্ন আদালত থেকে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত প্রভাব বিস্তার করেছেন। চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাবুল অবৈধ সম্পদ গড়েছেন। দুদক খোঁজ নিলেই সত্যতা মিলবে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সহসাংগঠনিক সম্পাদক (ময়মনসিংহ বিভাগ) আবু ওয়াহাব আকন্দ সমকালকে বলেন, ‘পুলিশ বাবুলদের মতো রাঘববোয়াল না ধরে চুনোপুঁটি শিকার করে ক্লান্ত।’
জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলম বলেন, মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল পলাতক। তাঁকেসহ সব আসামি গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। জমি দখল নিয়ে অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ময়মনস হ কর ছ ন আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসির প্রথম দিনে অনুপস্থিত ২৭ হাজার, বহিষ্কার ২২
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার প্রথম দিনে দেশজুড়ে ২২ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে; আর অনুপস্থিত ছিলেন ২৬ হাজার ৯২৮ জন। এ বছরের প্রথম পরীক্ষা শেষে বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে এসব তথ্য দিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।
এদিন এসএসসিতে বাংলা প্রথম পত্র, দাখিলে কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ পরীক্ষা এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালে বাংলা-২ বিষয়ের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এদিন এসএসসি, দাখিল এবং এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় ১৭ লাখ ২৭ হাজার ৭৭৮ জন পরীক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও অংশ নেন ১৭ লাখ ৮৫০ জন। বাকি ২৬ হাজার ৯২৮ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন। দেশজুড়ে ৩ হাজার ৭১৫টি পরীক্ষা কেন্দ্রের মধ্যে ৩ হাজার ৭০৬টির তথ্য দিয়েছে কমিটি।
আরো পড়ুন:
সংস্কার প্রস্তাবনার ওপর মতামত জানাল ইসলামী আন্দোলন
মানুষ বলছে, আপনাদেরকে আরো ৫ বছর দেখতে চাই: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
বাংলা প্রথম পত্রে বহিষ্কার ১০
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নয়টি সাধারণ ধারার শিক্ষা বোর্ডের অধীনে অনুষ্ঠিত এসএসসির বাংলা প্রথম পত্র পরীক্ষা হয় ২ হাজার ২৯১টি কেন্দ্রে। এরমধ্যে ২ হাজার ২৮২টি কেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি বলেছে, এ পরীক্ষায় ১০ জন পরীক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তাদের মধ্যে ময়মনসিংহ বোর্ডে ৩ জন, ঢাকা ও বরিশাল বোর্ডে ২ জন করে এবং কুমিল্লা, যশোর ও সিলেট বোর্ডে ১ জন করে বহিষ্কার হয়েছেন।
নয়টি সাধারণ বোর্ডের বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষায় ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ৬৩০ জন পরীক্ষার্থীর অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও অংশ নেন ১৩ লাখ ১৯ হাজার ৮৯২ জন। অনুপস্থিত ছিলেন ১৪ হাজার ৭৩৮ জন।
এর মধ্যে ঢাকা বোর্ডের ৪৩৮টি কেন্দ্রে ৩ হাজার ৪৯৬ জন, রাজশাহী বোর্ডের ২৬৯টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৬২২ জন, কুমিল্লা বোর্ডের ২৭৩টি কেন্দ্রে ২ হাজার ৫৫৩ জন, যশোর বোর্ডের ২৯৯টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৮০০ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডের ২১৯টি কেন্দ্রে ১ হাজার ১৭৩ জন, সিলেট বোর্ডের ১৫৪টি কেন্দ্রে ৮৭৮ জন, বরিশাল বোর্ডের ১৯৪টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৩৩ জন, দিনাজপুর বোর্ডের ২৮০টি কেন্দ্রে ১ হাজার ৩৪১ জন এবং ময়মনসিংহ বোর্ডের ১৫৬টি কেন্দ্রে ৮৪২ জন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিলেন।
কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ পরীক্ষায় বহিষ্কার ১০
মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিলের কুরআন মাজিদ ও তাজভিদ পরীক্ষায় ১০ জন বহিষ্কৃত হওয়ার খবর দিয়েছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৭২৫টি কেন্দ্রে ২ লাখ ৬১ হাজার ৯১২ জনের এ পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও অংশ নেন ২ লাখ ৫২ হাজার ২৮৯ জন। ৯ হাজার ৬২৩ জন অনুপস্থিত ছিলেন।
ভোকেশনালে অনুপস্থিত ২ হাজার ৫৬৭ জন
এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনালের প্রথম দিনে কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ৬৯৯টি কেন্দ্রে বাংলা-২ বিষয়ে ১ লাখ ৩১ হাজার ২৩৬ জনের পরীক্ষা দেওয়ার কথা থাকলেও বসেছেন ১ লাখ ২৮ হাজার ৬৬৯ জন। ২ হাজার ৫৬৭ জন অনুপস্থিত ছিলেন এবং ২ জন পরীক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়েছেন।
চলতি বছর নিয়মিত-অনিয়মিতসহ এসএসসি ও সমমান পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা আছে মোট ১৯ লাখ ২৮ হাজার পরীক্ষার্থীর।
নয়টি সাধারণ ধারার শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি পরীক্ষায় ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন পরীক্ষার্থী রয়েছেন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় বসার কথা ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জনের এবং কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এসএসসি ও দাখিল ভোকেশনাল পরীক্ষায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেছিলেন।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ