ইসরায়েল দক্ষিণ লেবানন থেকে সেনা প্রত্যাহার করলে এবং আকাশপথে হামলা বন্ধ করলে অস্ত্রসমর্পণের বিষয়ে লেবাননের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় রাজি হিজবুল্লাহ। সশস্ত্র সংগঠনটির জ্যেষ্ঠ এক নেতা রয়টার্সকে এ কথা জানিয়েছেন। হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে তিনি সংগঠনটির এ অবস্থানের কথা জানান।
মাত্র দুই বছর আগে যখন হিজবুল্লাহ নিজেদের ক্ষমতার চূড়ায় অবস্থান করছিল, তখন সংগঠনটিকে নিরস্ত্র করা নিয়ে আলোচনার সম্ভাবনাই ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু ফিলিস্তিনের গাজা যুদ্ধ ঘিরে বিধ্বংসী এক সংঘাতে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলোকে ইসরায়েল রীতিমতো ধসিয়ে দেয়। এতে মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষমতার ভারসাম্যে নাটকীয় পরিবর্তন আসে। হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার এ আলোচনা সেই পরিবর্তনই তুলে ধরছে।
গত জানুয়ারিতে দায়িত্ব নেন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত লেবাননের প্রেসিডেন্ট জোসেফ আউন। ওই সময় তিনি অস্ত্রের ওপর রাষ্ট্রের একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেন। দ্রুততম সময়ের মধ্যেই হিজবুল্লাহর হাতে থাকা অস্ত্রের বিষয়ে সংগঠনটির সঙ্গে আলোচনার ইচ্ছা পোষণ করেন। লেবাননের তিনটি রাজনৈতিক সূত্র এমনটি জানিয়েছে।
হিজবুল্লাহ ২০২৪ সালের লড়াইয়ে ব্যাপকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা এবং হাজারো যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। তাঁদের রকেটের মজুতের বেশির ভাগই ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সিরিয়ায় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতন হলে আরও চাপে পড়ে হিজবুল্লাহ। ইরান থেকে অস্ত্র সরবরাহের পথ বন্ধ হয়ে যায়।
নাম না প্রকাশ করার শর্তে হিজবুল্লাহর ওই নেতা বলেন, জাতীয় প্রতিরক্ষা কৌশলের প্রেক্ষাপটে অস্ত্রের বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় প্রস্তুত সংগঠনটি। তবে বিষয়টি নির্ভর করছে দক্ষিণ লেবাননের পাঁচটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান নেওয়া ইসরায়েলি সেনাদের প্রত্যাহারের ওপর।
হিজবুল্লাহর জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, ‘পাঁচটি অবস্থান থেকে ইসরায়েল সেনা প্রত্যাহার করলে এবং লেবাননের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন বন্ধ করলে নিজেদের অস্ত্রের বিষয়ে আলোচনায় প্রস্তুত হিজবুল্লাহ।’
অস্ত্রের বিষয়ে আলোচনা নিয়ে হিজবুল্লাহর অবস্থান এর আগে প্রকাশ্যে আসেনি। রাজনৈতিক স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় নাম প্রকাশ করতে চায়নি সূত্রগুলো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করেনি হিজবুল্লাহর গণমাধ্যম দপ্তর। প্রেসিডেন্টের দপ্তরও এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।
যুদ্ধের সময় দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান চালিয়েছিল ইসরায়েল। যুদ্ধবিরতি চুক্তির অধীনে সেখান থেকে বেশির ভাগ সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তবে ফেব্রুয়ারিতে দেশটি জানায়, পাঁচটি পাহাড়ের চূড়ায় অবস্থান নেওয়া সেনারা সেখানে অবস্থান করবেন।
নভেম্বরে হওয়া যুদ্ধবিরতি চুক্তি সত্ত্বেও হিজবুল্লাহর অবস্থানে হামলা চালিয়ে আসছে ইসরায়েল। ঠিক একই সময়ে হিজবুল্লাহকে নিরস্ত্র করার দাবি জানিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। এ অবস্থায় চাপে পড়েছে সংগঠনটি। হিজবুল্লাহকে মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-সমর্থিত সবচেয়ে শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী মনে করা হয়।
গত সোমবার রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান সংঘাত এড়াতে অস্ত্রসমর্পণের বিষয়ে প্রস্তুত আছে বলে প্রথমবারের মতো জানিয়েছে ইরান-সমর্থিত কয়েকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী।
মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করল হুতিরাআল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইয়েমেনের উত্তরাঞ্চলীয় আল-জাওফ প্রদেশে যুক্তরাষ্ট্রের একটি এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে হুতিরা। হুতি-সমর্থিত আল মাসিরাহ টিভি চ্যানেল এ কথা জানিয়েছে। ১০ দিনের মধ্যে এ ধরনের তিনটি ড্রোন ভূপাতিত করা হয়েছে বলে খবরে বলা হয়।
অত্যাধুনিক এই ড্রোন ১৫ হাজার ২৪০ মিটার উঁচুতে ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত উড়তে পারে। ইয়েমেনে বছরের পর বছর যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এই ড্রোন ব্যবহার করে আসছে।
গোয়েন্দা নজরদারির পাশাপাশি রিপার ড্রোন হামলা চালাতেও সক্ষম।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স গঠনট র ল ব নন র অবস থ ন ইসর য় ল সমর থ ত হ র কর
এছাড়াও পড়ুন:
সিটি ব্যাংকের নতুন সংযোজন ‘আমেরিকান এক্সপ্রেস মেটাল কার্ড’
বাংলাদেশের প্রথম আমেরিকান এক্সপ্রেস মেটাল কার্ড নিয়ে এলো দেশের বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক লিমিটেড পিএলসি। এর নাম সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্ল্যাটিনাম রিজার্ভ ক্রেডিট কার্ড। আমন্ত্রণের মাধ্যমে প্রাপ্ত এ কার্ড ব্যক্তিগত সেবা, আন্তর্জাতিক ভ্রমণের সহায়তা, সাশ্রয় এবং আকর্ষণীয় সুবিধার সমন্বয়ে গঠিত, যা গ্রাহকের ক্রমবর্ধমান চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) ঢাকার একটি হোটেলে সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্ল্যাটিনাম রিজার্ভ ক্রেডিট কার্ড উদ্বোধন করা হয়। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্যাংকটির চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাসরুর আরেফিন, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক অরূপ হায়দার, হেড অব কার্ড তৌহিদুল আলমসহ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
এই কার্ডে মেম্বাররা তাদের জীবনধারার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ ২০ হাজার টাকা মূল্যের এক্সক্লুসিভ ওয়েলকাম গিফট ভাউচার পাবেন। দুই বছরের জন্য বিনামূল্যে ট্যাবলেট প্লাসের মেম্বারশিপ উপভোগ করবেন। যা আন্তর্জাতিক বিলাসবহুল বুটিক হোটেল এবং ব্র্যান্ডসমূহে বিশেষ সুবিধা দেবে ব্যাংকটি।
কার্ড মেম্বাররা এই কার্ডের আওতায় বিনামূল্যে প্রায়োরিটি পাস মেম্বারশিপ পাবেন এবং দুজন অতিথিসহ বিশ্বের এক হাজার ৭০০-এরও বেশি বিমানবন্দর লাউঞ্জে অবারিত প্রবেশাধিকার উপভোগ করবেন। এছাড়াও ফাস্টট্র্যাক ভিআইপি মিট অ্যান্ড গ্রিট সার্ভিসে ১০ শতাংশ ছাড়ে তাদের বিমানবন্দরের অভিজ্ঞতা আরো উন্নত হবে।
অন্যান্য সুবিধার মধ্যে রয়েছে সিক্সট রেন্ট-এ-কার লয়্যালটি প্রোগ্রামে বিনামূল্যে সদস্য পদ, যেখানে কাউন্টারে প্রাধান্য সেবা, ছাড়, ফ্রি আপগ্রেড এবং আরো অনেক সুবিধা।
এই কার্ডে প্রত্যেক কার্ড মেম্বারের জন্য থাকছে একজন নির্ধারিত রিলেশনশিপ ম্যানেজার, যিনি তাদের অ্যাকাউন্ট সংক্রান্ত সব ধরনের সহায়তা দেবেন। এছাড়া থাকছে রিয়েল-টাইম অটো-ডেবিট সুবিধা, যা নির্বিঘ্নে তাদের সব কার্ড লেনদেন নিশ্চিত করবে। আর এই কার্ডে নির্বাচিত মার্চেন্টদের কাছে কার্ড ব্যবহার করে গ্রাহকেরা ১০ গুণ পর্যন্ত মেম্বারশিপ রিওয়ার্ডস পয়েন্ট উপার্জন করতে পারবেন।
এই পয়েন্ট ব্যবহার করে বার্ষিক ফি, বকেয়া বিল পরিশোধ, এমনকি খ্যাতনামা আউটলেটে কেনাকাটা ও ডাইনিং করতে পারবেন। এই কার্ডে আরো রয়েছে এক্সক্লুসিভ ডাইনিং অভিজ্ঞতা, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন দেশের রেস্টুরেন্টে কিউরেটেড ডাইনিং এবং বাংলাদেশের শীর্ষ ফাইভ-স্টার হোটেলে ‘বাই ১ গেট ২’ ব্যুফে অফার।
ব্যাংকের চেয়ারম্যান আজিজ আল কায়সার বলেন, “সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্ল্যাটিনাম রিজার্ভ ক্রেডিট কার্ডে আমাদের গ্রাহকদের সর্বোচ্চ অভিজ্ঞতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি প্রতিফলিত হয়েছে। যা বাংলাদেশে প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতার সংজ্ঞা নতুনভাবে তৈরি করেছে এবং গ্রাহকদের জন্য ভ্রমণ ও জীবনধারার বিশেষ সুবিধা নিয়ে এসেছে। এটি ক্রেডিট কার্ড সেবায় একটি নতুন স্থাপন করবে, যা সিটি ব্যাংক ও আমেরিকান এক্সপ্রেসের সম্মিলিত উৎকর্ষকে তুলে ধরে।”
সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাসরুর আরেফিন বলেন, “মেটাল কার্ড আমার কাছে খুব একটা বড় বিষয় নয়। যেটা সত্যিকার অর্থে এটিকে আলাদা করে তোলে তা হলো আমেরিকান এক্সপ্রেসের শতবর্ষের গ্রাহক প্রতিশ্রুতির ঐতিহ্য।”
আমেরিকান এক্সপ্রেসের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও জেনারেল ম্যানেজার, গ্লোবাল নেটওয়ার্ক সার্ভিসেস, এশিয়া এবং সাউথ প্যাসিফিক গ্রোথ মার্কেটস দিব্যা জৈন বলেন, “এই উদ্বোধন আমাদের সিটি ব্যাংকের সঙ্গে অংশীদারত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। এটি বাংলাদেশের প্রথম মেটাল কার্ড। কার্ডটি শুধুমাত্র একটি পেমেন্ট সল্যুশন নয়, বরং এটা তাদের জন্য ডিজাইন করা হয়েছে যারা প্রিমিয়াম অভিজ্ঞতা এবং সুবিধাকে মূল্য দেন।”
সিটি ব্যাংক আমেরিকান এক্সপ্রেস প্লাটিনাম রিজার্ভ ক্রেডিট কার্ড মেম্বারদের ক্রমবর্ধমান প্রত্যাশাকে পূরণ করে এবং শুধু আর্থিক সুবিধাই নয়, বরং একটি সত্যিকার অসাধারণ জীবনধারা উপহার দেয়।
ঢাকা/সুমন/এসবি