বেপরোয়া নিরীক্ষা, ট্রাম্প বৈশ্বিক বিভাজনকারী
Published: 10th, April 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত কয়েক সপ্তাহে ওয়াশিংটনজুড়ে যে বিপ্লবের বিস্তৃতি ছড়িয়ে দিয়েছেন, তার সবচেয়ে স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য হলো– এটা প্রথমে পুড়িয়ে ফেলবে, পরে বেপরোয়া আচরণের পরিণতি খুঁজে বের করবে। তাঁর এ ধরনের আচরণের মূল্য এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে।
গতকাল বুধবার দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানিতে শুল্ক আরোপের প্রভাব নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রশাসনের কর্মকর্তারা জানতেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প যখন তাঁর দীর্ঘ প্রতিশ্রুতিলব্ধ আনুপাতিক পাল্টা শুল্ক বা রিসিপ্রক্যাল ট্যারিফ ঘোষণা করলেন, তখন বিভিন্ন দেশের বাজার ডুবে যাবে; পাশাপাশি অন্য দেশগুলোও প্রতিশোধ নিতে মাঠে নামবে। কিন্তু চাপের মুখে বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা স্বীকার করেছেন, তারা অর্থনৈতিক ভূমিকম্পের দ্বিতীয়-ক্রমের প্রভাব কেমন হতে পারে, তা যাচাইয়ের জন্য মাত্র কয়েক দিন সময় পেয়েছিলেন। অর্থাৎ, এ নিয়ে তারা গভীরভাবে চিন্তা করা বা বুঝে ওঠার সুযোগ পাননি।
ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা এখনও যুক্তরাষ্ট্রের প্রাথমিক ধাক্কা কেটে যাওয়ার পর অভূতপূর্ব জটিলতার একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা পরিচালনার কৌশল বাতলাতে পারেননি। এ অবস্থায় বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির নেতা ট্রাম্প কেবল অন্য সবাইকে হুমকি-ধমকি আর আলোচনাই চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও সামরিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রকে চ্যালেঞ্জ জানাতে সক্ষম একমাত্র পরাশক্তি চীনের সঙ্গে আপাতদৃষ্টিতে অব্যবস্থাপিত উত্তেজনার কথাই ধরুন। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বর্ণনা অনুযায়ী, বাণিজ্যযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে ট্রাম্প ও চীনের শীর্ষ নেতা শি জিনপিংয়ের মধ্যে কোনো বাস্তব কথোপকথন বা তাদের ঊর্ধ্বতন সহযোগীদের মধ্যে কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না।
গত বুধবার ট্রাম্পের তাড়াহুড়া করে তৈরি করা দেশভিত্তিক শুল্ক নির্ধারণের সূত্রে চীনের সব পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ কর আরোপ করা হয়েছিল। গাড়ির যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে আইফোন, ওয়ালমার্ট ও অ্যামাজনের অ্যাপে যা আছে তার বেশির ভাগই এসেছে এর আওতায়। যখন জিনপিং পাল্টা পদক্ষেপ নেন, তখন ট্রাম্প তাঁকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আলটিমেটাম দেন। এমন একজন নেতার সামনে তিনি লাল পতাকা তুলে ধরেন, যিনি কখনও ওয়াশিংটনের সামনে নতজানু বা পিছু হটতে চান না। গতকাল বুধবার উত্তেজনা হ্রাসের জন্য কোনো দৃশ্যমান কৌশল ছাড়াই শুল্ক ১০৪ শতাংশে পৌঁছে যায়।
বিশ্লেষকরা জানান, ট্রাম্প প্রশাসনের এ শুল্ক আরোপের জেরে চীনে থাকা মার্কিন কোম্পানিগুলোকে মূল্য দিতে হবে। চীন এখনও মার্কিন শুল্কের প্রতিক্রিয়া পুরোপুরি স্পষ্ট করেনি। তবে তাদের হাতে কেবল একের পর এক শুল্ক আরোপ করার চেয়েও বেশি কিছু রয়েছে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের নিক মারোর মতে, উদাহরণস্বরূপ বেইজিং চীনে কর্মরত মার্কিন কোম্পানিগুলোর জীবনকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে।
মারো আলজাজিরাকে বলেন, বেইজিংয়ের কর্মকর্তারা এখনও বিশ্বাস করেন, মার্কিন করপোরেট খাত এ উত্তেজনা কমাতে ভূমিকা রাখতে পারে। আমি মনে করি, বাস্তবে মার্কিন কোম্পানিগুলোর প্রভাব আগের তুলনায় অনেক কম এবং বেইজিং তাদের যে কৃতিত্ব দেয়, তার চেয়ে অনেক কম।
তিনি বলেন, এর অর্থ হলো, চীন যদি মনে করে মার্কিন ব্যবসায়িক খাত এ উত্তেজনা কমানোর জন্য যথেষ্ট চেষ্টা করছে না, তাহলে তারা আরও বেশি উগ্র প্রতিক্রিয়া ও কোম্পানিগুলোকে শাস্তি দেওয়ার জন্য আরও কঠোর প্রতিক্রিয়ার কথা ভাবতে পারে। মারো জানান, ট্রাম্পের প্রথম বাণিজ্যযুদ্ধের সময় বেইজিং একই ধরনের কৌশল নিয়েছিল। কিন্তু এর প্রভাব সম্পূর্ণরূপে পরিমাপ করা কঠিন ছিল। কারণ, তখন অনেক মার্কিন কোম্পানি নীরব ছিল; তারা চীনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে আলোচনা করে কিছু বিষয় সঠিক জায়গায় রেখেছিলেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থান কখনোই আইন মেনে চলে না, বরং আইন ভাঙার মাধ্যমেই শুরু হয়: ফরহাদ মজহার
কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার বলেছেন, গণঅভ্যুত্থান কখনোই আইন মেনে চলে না। বরং আইন ভাঙার মাধ্যমেই শুরু হয়। কিন্তু আমরা উল্টো পথে হাঁটলাম, আমরা জীবন দিলাম, আবার সেই পুরনো ফ্যাসিস্ট কাঠামোয় ফিরে গেলাম। যে সংবিধান শেখ হাসিনা রেখে গেছেন, তা-ই এখনও রাষ্ট্র পরিচালনার মূল নিয়ামক।
গতকাল বুধবার বিকেলে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে জেলা সাহিত্য সংসদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘প্রবন্ধ আলোচনা, বৈষম্যবিরোধী কবিতা ও গণসংগীত’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ফরহাদ মজহার বলেন, শেখ হাসিনার ভূত এখনও দেশে আছে। এই ভূতের নাম সংবিধান। যে ফ্যাসিস্ট সংবিধান তিনি লিখে গেছেন, পুরো রাষ্ট্র এখনও সেটাই মেনে চলে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জেলা সাহিত্য সংসদের সভাপতি ডা. মো. সালাহ উদ্দিন শরীফ। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাধারণ সম্পাদক কবি গাজী গিয়াস উদ্দিন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মো. আলাউদ্দিন, ময়মনসিংহের আনন্দ মোহন কলেজের সহযোগী অধ্যাপক কবি জসিম উদ্দিন মুহাম্মদ, লক্ষ্মীপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর খন্দকার ইউসুফ হোসেন, রায়পুর সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ সাইফুল ইসলাম তপন ও চাঁদপুর সাহিত্য মঞ্চের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মাইনুল ইসলাম মানিক। অনুষ্ঠান শেষে কবিতা আবৃত্তি ও গণসংগীত পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা।