আজ থেকে সারা বিশ্বে কার্যকর হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ‘পাল্টা শুল্ক’। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী নয়ই এপ্রিল এই বাড়তি শুল্ক কার্যকর হওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে চীনের শুল্কহার ৮৪ শতাংশ বাড়িয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। এতে দেশটির শুল্ক বেড়ে ১০৪ শতাংশে পৌঁছেছে। এর জবাবে মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে চীন। এভাবে শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ট্রাম্প ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধে উত্তেজনা বেড়েই চলেছে। 

বলা যায়, একটি দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের শুরু করা এই বাণিজ্যযুদ্ধে দেশটি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে দিতে পারে।

এই শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যমূল্যের যে চরম ঊর্ধ্বগতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তার মূলেও হয়তো চীনের ওপর উচ্চ শুল্কারোপ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চীন নানাভাবে সুযোগের অপব্যবহার করছে, যা রোধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্বের ওপর চীনের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেশটি একটি ‘সুপার-পাওয়ার’ হয়ে উঠেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।

বিভিন্ন দেশের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যমূল্যের যে চরম ঊর্ধ্বগতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তার মূলেও হয়তো চীনের ওপর উচ্চ শুল্কারোপ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।

চীনের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের খাঁড়া এড়াতে অনেক দেশ তার দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী হবে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু চীন সেই দলে নেই। বরং চীন বলেছে, তারা এই বাণিজ্যযুদ্ধের শেষ দেখতে প্রস্তুত।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন। দেশটির পণ্যের ওপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে ট্রাম্প দ্রুতই চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। নিজের সেই হুমকির বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে ট্রাম্পকে চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করতেই হতো। ট্রাম্পের ওই শুল্কারোপের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন।

উভয় পক্ষের ঔদ্ধত্যে বাণিজ্য উত্তেজনা চরমে

ট্রাম্প দাবি করেন, যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্য অংশীদারদের মাধ্যমে ‘ধর্ষণ’ও ‘লুটপাটের’ শিকার হচ্ছে। যদিও ট্রাম্পের এই বক্তব্য অতিরঞ্জিত। তবে আরও কয়েকজন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বেইজিংয়ের বাণিজ্য আচরণ নিয়ে ট্রাম্পের মতো করেই কথা বলেছেন।

বিশেষ করে অন্য দেশের বাজার ধ্বংস করতে কম মূল্যে পণ্য সরবরাহ, যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোকে বাজারে প্রবেশে বাধা দেওয়া, বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরি, মুদ্রার বাজারে হস্তক্ষেপ, শিল্প খাতকে গুপ্তহত্যাসহ আরও কিছু বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে হরহামেশাই উত্তেজনা দেখা যায়।

চীন যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের ওপর যে চাপ প্রয়োগ করতে চলেছে কিংবা তাদের দুর্ভোগ যেভাবে বাড়তে চলেছে, তার জন্য ট্রাম্প ও তার শীর্ষ কর্মকর্তারা প্রস্তুত আছেন কি না, তা স্পষ্ট নয়।

কিন্তু অন্য কিছুর সঙ্গে ট্রাম্পের এই আগ্রাসী আচরণকে মেলানো যাবে না। ট্রাম্পের পদ্ধতি আবেগপ্রবণ এবং নির্বিচার; এমনকি এ বিষয়ে তাঁর কোনো স্পষ্ট কৌশলও নেই।

সেই সঙ্গে ট্রাম্প চীনের মর্যাদা ও ক্ষমতার প্রতি খুব সামান্য শ্রদ্ধাই দেখিয়েছেন। অন্যান্য দেশের সঙ্গেও তিনি একই আচরণ করেছেন।

যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য দুর্ভোগ আসছে

যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ পণ্য সরবরাহকারী দেশ চীন। ইউএসটিআরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের মোট আমদানি পণ্যের ১৬ শতাংশ এসেছে চীন থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের স্মার্টফোন, কম্পিউটার ও খেলনার বাজারে চীনের আধিপত্য রয়েছে। নতুন শুল্কের বাস্তবায়ন শুরু হলে এসব পণ্যের দাম আকাশছোঁয়া হয়ে যাবে এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাবে।

ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে চীনা পণ্য আমদানিতে যে শুল্ক আরোপ করেছিলেন, জো বাইডেন প্রশাসন এসে তা আরও বাড়িয়েছেন। এবার ট্রাম্প বর্তমান শুল্কের ওপর বাড়তি আরও শুল্ক আরোপ করেছেন। চীনের পণ্য এখন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রবেশ করতে হলে গড়ে ১২৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে।

পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে চীন শুধু শুল্ক আরোপ করেই ক্ষান্ত না–ও হতে পারে; বরং বেইজিংয়ের হাতে যুক্তরাষ্ট্রকে শাস্তি দিতে আরও অস্ত্র আছে। যেমন: চীন মার্কিন প্রযুক্তি শিল্পের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ‘রেয়ার আর্থ’ খনিজ রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে।

এ কারণেই হয়তো ট্রাম্প মরিয়া হয়ে ইউক্রেন ও গ্রিনল্যান্ড থেকে এই খনিজ পাওয়ার বিকল্প পথ খুঁজছেন।

চীনের হাতে আরও বেশ কয়েকটি অস্ত্র আছে। যেমন: চীন সরকার সে দেশে যুক্তরাষ্ট্রের আইন ও বাণিজ্যিক ফার্মগুলোর পরিচালনার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে পারে।

এ ছাড়া বেইজিং সয়াবিন এবং জোয়ার আমদানি সীমিত করে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি খাতের মূলে আঘাত হানতে সক্ষম।

এসব পদক্ষেপের সব কটিতেই যুক্তরাষ্ট্র যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তেমনি চীনও ক্ষতি এড়াতে পারবে না। কিন্তু এ সবই সি-র প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা প্রদর্শন করবে। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধে অন্য ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। যেমন: অ্যাপেলের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিকে চীনের বাইরে কারখানা খুলতে হবে।

চীন থেকে আসা পণ্য এবং কাঁচামালের ওপর নির্ভরশীল মার্কিন পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্যাপকভাবে ঝুঁকির মুখে পড়বে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র শ ল ক আর প র ন র ওপর কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

গামছা কীভাবে বাঙালি সংস্কৃতির অনুষঙ্গ হয়ে উঠল

সুমন ইউসুফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ