ভারত সে দেশের বিমানবন্দর ও বন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহার করেছে। একই সঙ্গে দেশটি স্পষ্ট করেছে যে এই পদক্ষেপের কারণে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে না।

বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিলের কথা উল্লেখ করে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ বুধবার একটি বিবৃতি দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, ‘একটি বড় সময় ধরে বাংলাদেশকে দেওয়া ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধার কারণে আমাদের বিমানবন্দর ও বন্দরগুলোতে উল্লেখযোগ্য জট দেখা দিয়েছে। লজিস্টিক্যাল (পরিবহন সরঞ্জাম ও অন্যান্য সুবিধা) সেবায় বিলম্ব এবং উচ্চ ব্যয়ের কারণে আমাদের নিজেদের রপ্তানি বিঘ্নিত হচ্ছে এবং ব্যাকলগ (পণ্যের জট) তৈরি হচ্ছে। সেই কারণে এই সুবিধা প্রত্যাহার করা হয়েছে, যা ৮ এপ্রিল ২০২৫ থেকে কার্যকর হচ্ছে। এখানে স্পষ্ট করা হচ্ছে যে এসব পদক্ষেপে ভারতের সীমান্ত দিয়ে পরিবহন করে নেপাল ও ভুটানে বাংলাদেশের পণ্য রপ্তানির ওপর প্রভাব পড়বে না।’

পরে এক ব্রিফিংয়ে এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল। তিনি বলেন, ২০২০ সাল থেকে পাঁচ বছর ধরে বাংলাদেশকে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য এই ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দেওয়া হচ্ছিল। এর ফলে ভারতের বিমানবন্দরগুলোতে ‘উল্লেখযোগ্য জট’ তৈরি হয়ে পণ্যের জট দেখা দেয়, যাতে ভারতের রপ্তানিকারকদের পণ্য রপ্তানিতে বিলম্ব ঘটে এবং তাদের লজিস্টিক সেবার ব্যয় বেড়ে যায়। এ কারণে বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের ভারতের বিমানবন্দর ও বন্দরগুলো ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে পণ্য পরিবহনের ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বাতিল করা হয়েছে। তবে এতে নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশে বাণিজ্যের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

গুলেন ব্যারি সিনড্রোম কেন হয়, চিকিৎসা কী

গুলেন ব্যারি সিনড্রোম বা সংক্ষেপে জিবিএস নামটি একটু অপরিচিত হলেও রোগটির প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে নেহাত কম নয়। যেকোনো বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে জীবাণু–প্রতিরোধী ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক আচরণের ফলে এ রোগের উৎপত্তি হয়।

‘ক্যাম্পাইলো ব্যাকটর জেজুনি’ নামের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত ডায়রিয়ার রোগী বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত সর্দি-জ্বরের রোগীরা ইমিউন সিস্টেমের জটিলতার কারণে পরবর্তী সময়ে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

কীভাবে বুঝবেন

ডায়রিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের প্রায় দুই সপ্তাহ পর রোগী হঠাৎ দুই পায়ে দুর্বলতা বোধ করেন। এ দুর্বলতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে ওপরের দিকে বিস্তার লাভ করে মেরুদণ্ড, দুই হাত, বুকের মাংসপেশি, এমনকি মুখের মাংসপেশিতে ছড়িয়ে পড়ে। কখনো কখনো দুবলর্তা এত বেশি হয় যে রোগী হাত–পায়ের আঙুলও সামান্য পরিমাণ নাড়াতে পারেন না।

বুকের মাংসপেশির দুবর্লতার কারণে শ্বাসকষ্ট হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালের আইসিইউ, অর্থাৎ নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে স্থানান্তর করতে হয়। না হলে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। জিবিএস রোগীর এত দুর্বলতা সত্ত্বেও সাধারণ অনুভূতি, স্মৃতিশক্তি, পায়খানা-প্রস্রাবের অবশ্য কোনো সমস্যা হয় না এবং রোগী কখনোই চেতনা হারান না।

চিকিৎসা কী

এ ধরনের রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে। নিউরোলজিস্ট বা স্নায়রোগবিশেষজ্ঞ রোগের উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা, এনসিএস নামের স্নায়ুর পরীক্ষা ও মস্তিষ্কের রস বিশ্লেষণ করে রোগটি নির্ণয় করেন।

রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস, নাড়ির গতি, রক্তচাপ ইত্যাদি সব সময় লক্ষ্য রাখতে হয়। যদি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তবে তাৎক্ষণিক রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করতে হয়। নিয়মিত হাত-পায়ের ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, রোগীকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।

এ রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্লাজমাফেরোসিস বা আইভি ইমিউনো গ্লোবিন দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। কোনো কোনো রোগীর পুরোপুরি আরোগ্য পেতে প্রায় এক বছর লেগে যায়। উপসর্গ শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এরপর ইমিউনোগ্লোবিনের কর্যকারিতা থাকে না।

জিবিএসের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করেন। আর ৫-১০ শতাংশ রোগীর মধ্যে কিছু না কিছু শারীরিক দুর্বলতা স্থায়ীভাবে থেকে যায়। মৃত্যুর হার ৫-৬ শতাংশ। মনে রাখবেন, সাধারণত কোনো সংক্রমণ যেমন ডায়রিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের দু–তিন সপ্তাহ পর জিবিএসএর লক্ষণগুলো দেখা দেয়। কখনো কখনো টিকা দেওয়ার পরও এ রোগ হতে পারে।

আরও পড়ুনমস্তিষ্কের জটিল রোগ মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস কেন হয়, উপসর্গ ও চিকিৎসা কী২৭ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ