ঈদে সাধারণত নতুন ও বড় বাজেটের সিনেমা মুক্তি পেয়ে থাকে। এরই ধারাবাহিতায় এবার মুক্তি পেয়েছে পাঁচটি সিনেমা। সারাদেশের প্রেক্ষাগৃহে চলছে সিনেমাগুলো। ঈদ উৎসবের ডামাডোলেও খোদ রাজধানীতে চলছে কাটপিস আমলের সিনেমা! কয়েকটি সিনেমা হলে ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে।
ব্যস্ততম এলাকা ফার্মগেটের আনন্দ সিনেমা হলে চলছে ঈদের আলোচিত সিনেমা ‘বরবাদ’। মেহেদি হাসান হৃদয়ের সিনেমাটি ব্যবসা সফল সিনেমা তালিকায় চলে এসেছে। এর পাশের হল ছন্দতে চলছে বাবুল রেজা পরিচালিত সিনেমা ‘ওপেন চ্যালেঞ্জ’। এতে অভিনয় করেছেন আমিন খান, একা ও আলেকজান্ডার বো। ঈদ উৎসবেও পুরোনো সিনেমা প্রদর্শনীর বিষয়ে ছন্দ হল ম্যানেজার মো.
আনন্দ সিনেমা হলে আসন সংখ্যা ১২০০। সেখানের আজ সন্ধ্যা ৬টায় ‘বরবাদ’-এর শোতে দর্শক ছিল প্রায় ২০০। ঈদে মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে দর্শক হলেও সিঙ্গল স্ক্রিনে দর্শক পাওয়া যাচ্ছে না। দর্শক না হওয়ার কারণে হিসেবে হলের দুরবস্থাকেই দায়ী করল আনন্দ হল কর্তৃপক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ‘সিনেমা হলের ১২০০ চেয়ারের মধ্যে অর্ধেকই খারাপ। দর্শক কি খারাপ চেয়ারে বসে সিনেমা দেখবেন! পরিবেশও নোংরা। দর্শক তো ভালো পরিবেশে সিনেমা দেখতে চান। এ কারণে ক্রমেই কমছে দর্শক।’
ছন্দ হলের টিকিট বিক্রেতা কালাম বলেন, ‘দর্শক কমে যাওয়ার কারণে আয় কমে যাচ্ছে। এখন ডিসি ৭০ টাকা ও রিয়েল ৫০ টাকা করে বিক্রি করছি। নিম্ন আয়ের মানুষই পুরোনো সিনেমার দর্শক। দর্শক না হলে অনেক সময় শোই চলছে না। এ কারণে তিন মাস ধরে বিদ্যুৎ বিল দিতে পারছি না। হলের এ রকম খারাপ অবস্থা আগে কখনও দেখিনি।’
ঈদ উপলক্ষে কাঁচপুরের চাঁদমহল সিনেমা হলে চলছে শাকিব খানের সিনেমা ‘বরবাদ’। একই এলাকার লাভলী হলে চলেছে শরীফ উদ্দিন খান দীপু পরিচালিত ‘দুর্ধর্ষ খুনী’। সিনেমাটিতে অভিনয় করেছেন আমিন খান, মুনমুন ও ডিপজল।
লাভলী হলে ‘দুর্ধর্ষ খুনী’ সিনেমা দেখতে এসেছিলেন শিক্ষার্থী আবুল ফয়েজ। তিনি বলেন, ‘ঈদে নতুন সিনেমা মুক্তি পেলেও পুরোনো সিনেমা দেখতে হয়; এটাই দুর্ভাগ্য। দর্শক সবসময় ভালো সিনেমা দেখতে চান। অশ্লীল যুগের সিনেমা বাধ্য হয়ে দেখছেন দর্শক। জালকুড়ির রাজমহল সিনেমা হলে চলছে আজাদ খান পরিচালিত সিনেমা ‘ক্রসফায়ার’। এতে অভিনয় করেছেন আসিফ খান ও ময়ূরী।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
গণঅভ্যুত্থানের গ্রাফিতি মুছে দিল দুর্বৃত্তরা
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) সংলগ্ন ছাত্র আন্দোলন চত্বরে বুদ্ধিবৃত্তিক সংগঠন ‘পাটাতন’ অঙ্কিত গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি সংবলিত গ্রাফিতি রাতের কোনো এক সময় মুছে দেওয়া হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বুধবার রাতেও গ্রাফিতিগুলো রঙিন ছিল। রাতের কোনো এক সময় গ্রাফিতির ওপর কালো রঙের স্প্রে দিয়ে মুছে দেওয়া হয়েছে।
পাটাতনের সাধারণ সম্পাদক সায়েম মোহাইমিন জানান, গণহত্যার ইতিহাসকে যদি ভুলে যাওয়া হয়, তাহলে গণহত্যা বারবার হবে। তাই পাটাতন থেকে জুলাইয়ের শহীদদের স্মৃতিকে গ্রাফিতি আকারে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করেছেন তারা। বিশেষ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আন্দোলন চত্বর থেকেই এ আন্দোলনের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ তৈরি হয়েছিল, বাংলা ব্লকেড এখান থেকেই করা হয়। এখানে এমন ঘৃণ্য কাজ করা কেবল গণহত্যার দোসরদের দ্বারাই সম্ভব। এ ধরনের কাজের নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
প্রশাসনকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করেন তিনি। সেই সঙ্গে জুলাইয়ের স্মৃতিতে ক্যাম্পাসে একটি ‘স্মৃতি মিনার’ তৈরি করতে অনুরোধ জানান তিনি।
এ বিষয়ে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হান্নান রহিম বলেন, ‘গ্রাফিতি মুছে ফেলার মাধ্যমে স্বৈরাচারের দোসররা জুলাইকে মুছতে চায়, ছাত্র আন্দোলন চত্বরকে মুছতে চায়, তারা জানে না– যা কিছু রক্ত দিয়া লেখা হয়, তা মুছা যায় না। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে, পাশাপাশি জুলাইকে বাঁচিয়ে রাখতে স্থায়ী পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে বিশ্বাস রাখতে চাই।’
কুবি ছাত্রদলের সদস্য সচিব মোস্তাফিজুর রহমান শুভর ভাষ্য, গণআন্দোলনে দল-মত নির্বিশেষে যৌক্তিক দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তারা। এ আন্দোলনে অনেকে শহীদ হয়েছেন। তাদের স্মৃতিতে গ্রাফিতি অঙ্কনের জন্য ‘পাটাতন’ সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার। ছাত্রদলও এমন কিছু করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু ষড়যন্ত্র করে যারা এগুলো মুছে দিতে চাইছে, হয়তো তারা ক্যাম্পাসের ছাত্রলীগ কিংবা প্রশাসনে থাকা স্বৈরাচারের দোসর। এতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে যে, স্বৈরাচার এখনও বিদ্যমান।
কুবি ছাত্রশিবিরের সভাপতি ইউসুফ ইসলাহী বলেন, ‘পাটাতন যে গ্রাফিতি অঙ্কন করেছিল, সেগুলো যারাই মুছে দিয়েছে, তারা ফ্যাসিস্টের পদলেহী বলেই আমরা মনে করি। আমি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সবাইকে এ বিষয়ে সোচ্চার ভূমিকা রাখার আহ্বান জানাই।’
সহকারী প্রক্টর ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মুতাসিম বিল্লাহ জানান, প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ ও দাবি এলে হয়তো প্রশাসন আমলে নেবে। গণআন্দোলনে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাই এর স্মৃতি সংরক্ষণে দাবি-দাওয়া আমলে নিয়ে প্রশাসনের এগিয়ে আসা উচিত।
প্রক্টর অধ্যাপক ড. আব্দুল হাকিমের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘আমি এখনও লিখিত অভিযোগ পাইনি। আমাদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আর জুলাই স্মৃতি মিনার করার ব্যাপারে রেজিস্ট্রারের কাছে লিখিত আবেদন করলে আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করব।’