চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে আবারও বন্য হাতির মৃত্যু হয়েছে। আজ বুধবার বিকেলে উপজেলার জলদী রেঞ্জের পাইরাং বিটের আওতাভুক্ত মনুমার ঝিরি এলাকা থেকে ওই হাতির মরদেহ উদ্ধার করে বন বিভাগ। বয়সের ভারে দুর্বল হয়ে হাতিটির মৃত্যু হয়েছে বলে ধারণা বন বিভাগের।

এ নিয়ে গত ১০ বছরে বাঁশখালীতে ১৬টি হাতির মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার কালীপুর রেঞ্জে ১১টি এবং জলদী রেঞ্জে ৫টি হাতির মৃত্যু হয়। বিদ্যুতের ফাঁদ, খাদ্যে বিষক্রিয়া, অসুস্থতাসহ নানা কারণে এসব হাতির মৃত্যু হয়েছে বলে বন বিভাগের তদন্তে উঠে এসেছে।

স্থানীয় সূত্রের বরাত দিয়ে বন বিভাগ জানায়, গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে স্থানীয় লোকজন মনুমার ঝিরি এলাকায় একটি মৃত হাতি দেখেন। তাঁদের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর বন বিভাগের লোকজন আজ বিকেলে ঘটনাস্থলে গিয়ে হাতিটির মরদেহ থেকে ময়নাতদন্তের জন্য নমুনা সংগ্রহ করেন।

বন বিভাগ জানায়, মৃত হাতির শরীরে আঘাতের চিহ্ন নেই। ধারণা করা হচ্ছে, হাতিটির বয়স বেশি হওয়ার কারণে দুর্বল হয়ে মারা যায়।

জলদী রেঞ্জের বিট কর্মকর্তা শাহ আলম বলেন, ‘পুরুষ হাতিটির বয়স ১০০ বছরের কাছাকাছি। আমরা তথ্য নিয়েছি এবং তদন্ত করছি। পাশাপাশি থানায় জিডিসহ আইনগত ব্যবস্থা নিচ্ছি। পরে হাতিটি নিয়ম অনুসারে পুঁতে ফেলা হবে।’

জলদী বন্য প্রাণী অভয়ারণ্যের রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ

এছাড়াও পড়ুন:

মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা

মুরাদনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর এই কাজের কদর না থাকলেও বৈশাখ রাঙাতে এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো চাহিদা নেই মৃৎশিল্পের। এই পেশায় নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাই প্রায় সারাবছরই অধিকাংশ নারী মৃৎশিল্পীকে অবসর সময় কাটাতে হয়। পুরুষ মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে নববর্ষের আগে সব কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন পুরোনো এই পেশায়। মৃৎশিল্প থেকে সারা বছর কারিগররা আয়ের মুখ না দেখলেও বৈশাখী মেলা ঘিরে থাকে বাড়তি উপার্জনের সম্ভাবনা। এবারও মাসজুড়ে প্রতিটি কুমারপাড়ায় ছিল ব্যস্ততা।

কামাল্লা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের পালপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুটছেন, কেউ সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কেউবা খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাতিল, মাটির চুলা, শিলপাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ। এ ছাড়া রয়েছে মাটির তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র।

কামাল্লা গ্রামের সন্ধ্যা রানী পাল ও শিখা রানী পাল জানান, এখন মাটির জিনিসের তেমন কদর না থাকায় সারাবছর টানাপোড়েনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। পূর্বপুরুষের পেশা হওয়ায় ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারছেন না। সারাবছর অবসর সময় পার করলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের চাহিদা থাকায় এই সময়ে ব্যস্ততা থাকে তাদের।
কথা হয় মৃৎশিল্পী হরি ভূষণ পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বছরের এই একটি উৎসব ঘিরে তাদের অনেক আশা থাকে। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির খেলনা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় কিছু আয় হয়। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পী কানন বালা জানান, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলা থেকে শখের বসে অনেকে মাটির সামগ্রী, বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনেন। তাই এই সময়ে কর্মব্যস্ততা বাড়ে তাদের।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের খুশি পাল বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের পর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন নেই। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের ভাষ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যে হারিয়ে গেছে, বিষয়টি তা নয়। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মাটির তৈজসপত্রর চাহিদা এখন প্রচুর। মুরাদনগরে যদি বেসরকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এই শিল্প থেকে ভালো সুফল পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিআরডিবি ও সমবায় কার্যালয় থেকে যেন সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মুরাদনগরে কোনো মৃৎশিল্পের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, তাই মৃৎশিল্পীদের এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজে সরকারি সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ