বাড়ির বয়স্ক সদস্য খেতে না চাইলে কী করবেন
Published: 9th, April 2025 GMT
শারীরিক অসুস্থতা
বয়স বাড়লে পাকস্থলী ও অন্ত্রের বিভিন্ন রকম জটিলতা শুরু হয়। অ্যাসিডিটি, কোষ্ঠকাঠিন্য, বদহজম ও পেট ফাঁপার মতো সমস্যাগুলো অহরহই হয়। আর পেটের সমস্যা হলে তো একদম খেতেই ইচ্ছা করে না।
ডায়াবেটিস, ক্রনিক কিডনির রোগ, লিভারের অসুখ, ক্যানসার, আর্থ্রাইটিস বা যেকোনো ব্যথা ও দীর্ঘমেয়াদি রোগে খাওয়ার রুচি কমে যায়।
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণকারী হরমোন কমতে থাকে। আবার বয়স বেড়ে গেলে শরীরে মেটাবলিজম কমে যায়, ফলে খাবারের আগ্রহ কমে।
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে শরীরে বিভিন্ন রোগ বাসা বাঁধে আর অনেক রকমের ওষুধ খেতে হয়। এর মধ্যে অনেক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে।
বেশির ভাগ মানুষের বয়স হয়ে গেলে দাঁতে বিভিন্ন রকম সমস্যা দেখা দেয়। দাঁত পড়ে যাওয়া, মাড়ি ফুলে যাওয়া, দাঁতব্যথা অন্যতম। এমন সমস্যায় খাবার চিবানো ও খেতে অসুবিধা হয়।
বয়স হয়ে গেলে খাবারের স্বাদ ও গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে খাবারের আগ্রহ কমে।
নিউরোলজিক্যাল সমস্যা, যেমন স্ট্রোক, পারকিনসনস ডিজিজ ও ডিমেনশিয়ায় খাওয়ার রুচি কমে যায়।
আরও পড়ুনবয়স্কদের পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি কমাতে কী করবেন০১ জানুয়ারি ২০২৫মানসিক কারণএকাকিত্ব, ডিপ্রেশন ও অতিরিক্ত মানসিক চাপের কারণে ক্ষুধামান্দ্য হতে পারে। আবার মানসিক রোগের ওষুধের কারণেও খাবারে অরুচি হয়।
ডিমেনশিয়া বা আলঝেইমারস ডিজিজের কারণে বয়স্ক মানুষেরা অনেক সময় না খেয়েও মনে করেন খেয়েছেন বা খাওয়ার কথা ভুলে যান।
সামাজিক কারণবয়স্কদের খাবারে আগ্রহ কমে যাওয়ার একটা বড় কারণ জীবনসঙ্গী হারানো বা একাকিত্ব। আবার এখন একক পরিবার হওয়ার কারণে পরিবারের সবার সঙ্গে না খেতে পারার কারণেও অনেক বয়স্ক মানুষের খেতে ইচ্ছা করে না। খাবারে বৈচিত্র্য আনতে না পারলেও এই সমস্যা দেখা দেয়। একই খাবার খেতে খেতে বয়স্ক মানুষেরা বিরক্ত হয়ে যান।
অর্থনৈতিক কারণে পুষ্টিকর ও সুস্বাদু খাবার কিনতে না পারাটাও একটা কারণ।
সমাধান কীপ্রথমেই দেখতে হবে খাবারে অরুচি কোনো রোগের কারণে হচ্ছে কি না। অরুচির সঙ্গে যদি ওজন কমে যায়, তাহলে অবশ্যই চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।
একবারে অনেক খাবার না দিয়ে বারবার অল্প অল্প করে খাবার দিতে হবে।
পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে খেতে পারলে বয়স্করা সবার সঙ্গে গল্প করতে করতেই খাবেন। মাঝেমধ্যে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনেরা মিলে খাবারের আয়োজন করা যেতে পারে।
একই খাবার না দিয়ে খাবারে বৈচিত্র্য আনুন। চেষ্টা করুন বয়স্কদের নতুন কোনো পদ বানিয়ে খাওয়াতে।
চিকিত্সকের পরামর্শে মাল্টিভিটামিন বা পুষ্টিকর সাপ্লিমেন্ট দেওয়া যেতে পারে।
সম্ভব হলে প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটির অভ্যাস করাতে হবে।
ডা.
আফলাতুন আকতার জাহান, জুনিয়র কনসালট্যান্ট, ইন্টারনাল মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল লিমিটেড, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গুলেন ব্যারি সিনড্রোম কেন হয়, চিকিৎসা কী
গুলেন ব্যারি সিনড্রোম বা সংক্ষেপে জিবিএস নামটি একটু অপরিচিত হলেও রোগটির প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে নেহাত কম নয়। যেকোনো বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে জীবাণু–প্রতিরোধী ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক আচরণের ফলে এ রোগের উৎপত্তি হয়।
‘ক্যাম্পাইলো ব্যাকটর জেজুনি’ নামের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত ডায়রিয়ার রোগী বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত সর্দি-জ্বরের রোগীরা ইমিউন সিস্টেমের জটিলতার কারণে পরবর্তী সময়ে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
কীভাবে বুঝবেন
ডায়রিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের প্রায় দুই সপ্তাহ পর রোগী হঠাৎ দুই পায়ে দুর্বলতা বোধ করেন। এ দুর্বলতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে ওপরের দিকে বিস্তার লাভ করে মেরুদণ্ড, দুই হাত, বুকের মাংসপেশি, এমনকি মুখের মাংসপেশিতে ছড়িয়ে পড়ে। কখনো কখনো দুবলর্তা এত বেশি হয় যে রোগী হাত–পায়ের আঙুলও সামান্য পরিমাণ নাড়াতে পারেন না।
বুকের মাংসপেশির দুবর্লতার কারণে শ্বাসকষ্ট হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালের আইসিইউ, অর্থাৎ নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে স্থানান্তর করতে হয়। না হলে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। জিবিএস রোগীর এত দুর্বলতা সত্ত্বেও সাধারণ অনুভূতি, স্মৃতিশক্তি, পায়খানা-প্রস্রাবের অবশ্য কোনো সমস্যা হয় না এবং রোগী কখনোই চেতনা হারান না।
চিকিৎসা কী
এ ধরনের রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে। নিউরোলজিস্ট বা স্নায়রোগবিশেষজ্ঞ রোগের উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা, এনসিএস নামের স্নায়ুর পরীক্ষা ও মস্তিষ্কের রস বিশ্লেষণ করে রোগটি নির্ণয় করেন।
রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস, নাড়ির গতি, রক্তচাপ ইত্যাদি সব সময় লক্ষ্য রাখতে হয়। যদি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তবে তাৎক্ষণিক রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করতে হয়। নিয়মিত হাত-পায়ের ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, রোগীকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।
এ রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্লাজমাফেরোসিস বা আইভি ইমিউনো গ্লোবিন দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। কোনো কোনো রোগীর পুরোপুরি আরোগ্য পেতে প্রায় এক বছর লেগে যায়। উপসর্গ শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এরপর ইমিউনোগ্লোবিনের কর্যকারিতা থাকে না।
জিবিএসের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করেন। আর ৫-১০ শতাংশ রোগীর মধ্যে কিছু না কিছু শারীরিক দুর্বলতা স্থায়ীভাবে থেকে যায়। মৃত্যুর হার ৫-৬ শতাংশ। মনে রাখবেন, সাধারণত কোনো সংক্রমণ যেমন ডায়রিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের দু–তিন সপ্তাহ পর জিবিএসএর লক্ষণগুলো দেখা দেয়। কখনো কখনো টিকা দেওয়ার পরও এ রোগ হতে পারে।
আরও পড়ুনমস্তিষ্কের জটিল রোগ মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস কেন হয়, উপসর্গ ও চিকিৎসা কী২৭ মার্চ ২০২৫