ফসলের খেতে ছোটাছুটি করছিল দেখতে ঘোড়ার মতো একটি প্রাণী। প্রাণীটির পেছনে দু-একজন ছুটতে ছুটতে শতাধিক লোক জড়ো হন। প্রায় তিন কিলোমিটার ছোটাছুটির পর ভারত সীমান্তঘেঁষা পাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেয় প্রাণীটি। পরে তাড়া করা লোকজন প্রাণীটি ধরে নদীর ধারে তোলেন। খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যদের সহায়তায় বন বিভাগের কর্মীরা উদ্ধারের পর প্রাণীটি নীলগাই বলে নিশ্চিত হন।

পরে পাঙ্গা নদী থেকে বিকেল সোয়া চারটার দিকে নীলগাইটিকে উদ্ধার করে বন বিভাগের কর্মীরা পঞ্চগড় সদর উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে নিয়ে আসেন। সেখানে চিকিৎসা দিয়ে সন্ধ্যায় বন বিভাগ কার্যালয়ে নিয়ে প্রাণীটিকে খাবার খাওয়ানো হচ্ছে।

বুধবার দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত পঞ্চগড় সদর উপজেলার চাকলাহাট ইউনিয়নের পূর্ব জয়ধরভাঙ্গা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নীলগাইটি সীমান্ত পেরিয়ে ভারত থেকে এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাঁটাতারের বেড়া পার হতে গিয়ে প্রাণীটি কানসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত পেয়েছে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

স্থানীয় লোকজন জানান, দুপুরের দিকে চাকলাহাট ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা প্রধানপাড়া এলাকায় ভুট্টাসহ বিভিন্ন ফসলের খেতে ছোটাছুটি করছিল প্রাণীটি। প্রথমে এটিকে কেউ হরিণ আবার কেউ ঘোড়া ভেবে তাড়া করা শুরু করেন। ধীরে ধীরে উৎসুক লোকজন বাড়তে থাকলে শতাধিক মানুষ প্রাণীটির পেছনে ছুটতে থাকেন। পরে প্রায় তিন কিলোমিটার দৌড়ে চাকলাহাট ইউনিয়নের পূর্ণ জয়ধরভাঙ্গা এলাকায় পাঙ্গা নদীতে ঝাঁপ দেয়। পরে সেখানে লোকজন প্রাণীটিকে ঘেরাও করে ধরে ফেলেন। এর মধ্যে বিজিবির জয়ধরভাঙ্গা বিওপির সদস্যরা সেখানে গিয়ে প্রাণীটিকে উদ্ধার করেন। খবর পেয়ে বন বিভাগের কর্মীরা সেখানে গেলে বিজিবি প্রাণীটি তাঁদের হাতে তুলে দেয়।

নদীর পানিতে প্রাণীটি ধরতে নেমেছিলেন পূর্ব জয়ধরভাঙ্গা এলাকার বছির উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘আমরা চারজন মিলে নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। এ সময় দেখি, প্রায় এক শ লোক দৌড়ে আসছে। পরে দেখি, তাদের সামনে একটা ঘোড়ার মতো প্রাণী দৌড়ে এসে নদীতে ঝাঁপ দিল। পরে আমরা চারজন ওই লোকগুলোর সঙ্গে নদীতে নেমে প্রাণীটিকে ধরে ডাঙায় তুলি। পরে একটা দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখি। এরপর বিজিবি ও বন বিভাগের লোকজন এসে জানান, এটা নীলগাই। পরে তাঁরা প্রাণীটি নিয়ে যান।’

স্থানীয় জাকির হোসেন বলেন, ‘এটা যে নীলগাই, আমরা জানি না। মনে হচ্ছে, এটা ভারত থেকে এসেছে। কাঁটাতারের বেড়া পার হওয়ার সময় হয়তো প্রাণীটার কান কেটে গেছে। কানসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে রক্ত ঝরছিল।’

পঞ্চগড় সামাজিক বনায়ন ও নার্সারি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হরিপদ দেবনাথ বলেন, নীলগাইটি ভারত থেকে সীমান্ত এলাকায় এসেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কাঁটাতারের বেড়া পার হতে গিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত হয়েছে। উপজেলা ভেটেরিনারি হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে বন বিভাগের কার্যালয়ে আনা হয়েছে। দুই দিন চিকিৎসা দিয়ে শারীরিক অবস্থা দেখে নীলগাইটিকে গাজীপুর সাফারি পার্কে পাঠানো হবে। তিনি বলেন, প্রাণীটি বিলুপ্তপ্রায় নীলগাই। দুটি দাঁত হওয়ায় বয়স দুই বছরের বেশি হতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন ব ভ গ র ক এল ক য় ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

রূপনগরে শিশুদের জন্য ভ্রাম্যমাণ খেলার জায়গা উদ্বোধন

এলাকাভিত্তিক খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির লক্ষ্যে শিশুদের জন্য রাজধানীর মিরপুরে রূপনগর আবাসিক এলাকায় ভ্রাম্যমাণ খেলার জায়গা (মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড) উদ্বোধন করা হয়েছে। শনিবার বিকেলে স্কুল অব লাইফ, ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডব্লিউবিবি) ট্রাস্ট ও হেলথ ব্রিজ ফাউন্ডেশন অব কানাডার সম্মিলিত উদ্যোগে এটির উদ্বোধন করা হয়। এই আয়োজনে সহযোগিতা করেন রূপনগর আবাসিক এলাকার বাসিন্দারা।

আয়োজকেরা জানান, প্রতি শনিবার বেলা ৩টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত রূপনগর আবাসিক এলাকার ১৫ নম্বর সড়কে নিয়মিত মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ডে খেলাধুলার আয়োজন করা হবে। খেলাধুলার মধ্য থাকবে দাবা, লুডু, ক্যারম, দড়ি লাফ ও ব্যাডমিন্টন। এ ছাড়াও থাকবে ছবি আঁকা, হস্তশিল্প ও সামাজিকীকরণের মতো বিভিন্ন কার্যক্রম।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, মাঠ ও পার্কের অপ্রতুলতা ঢাকা শহরের একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ১২৯টি ওয়ার্ডের ৩৭টিতে কোনো খেলার মাঠ বা পার্ক নেই। শিশুদের খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ সৃষ্টির জন্য এলাকাভিত্তিক মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড তৈরি একটি কার্যকর সমাধান। এতে এলাকাবাসীর মধ্যে সম্প্রীতি গড়ে উঠবে, শহর হবে প্রাণবন্ত ও বাসযোগ্য।  

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্কুল অব লাইফের চেয়ারম্যান চিকিৎসক অনুপম হোসেন বলেন, ঘরবন্দী জীবনে শিশুরা হাঁপিয়ে উঠেছে। করোনাকালে দীর্ঘদিন ঘরে থাকার ফলে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এলাকাভিত্তিক স্বল্প ব্যবহৃত বা অব্যবহৃত রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ রেখে মোবাইল প্লে-গ্রাউন্ড তৈরি করে খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের সুযোগ তৈরি করা যায়। এতে শিশুদের মানসিক ও শারীরিক বিকাশের পাশাপাশি নেতৃত্বগুণ ও সামাজিক বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার মানসিকতা গড়ে উঠবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের পরিচালক গাউস পিয়ারী। তিনি বলেন, ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ-পার্ক নেই। অর্থ ও স্থান সংকুলান বিবেচনায় সিটি করপোরেশনের পক্ষে দ্রুত বড় আকারের মাঠ-পার্ক তৈরি সম্ভব নয়। তবে খুব কম খরচে ও স্বল্প জায়গায় শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডে এলাকাভিত্তিক খেলাধুলা ও সামাজিকীকরণের স্থান গড়ে তোলা সম্ভব। নগরবাসীর শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের লক্ষ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্তৃপক্ষ এ বিষয়টি বিবেচনায় নেবেন বলে প্রত্যাশা করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্কুল অব লাইফের সদস্যসচিব সাবরিনা নওরিন লিমু, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের কর্মকর্তা, মিরপুর সেকশন- ৭ এর রূপনগর আবাসিক এলাকার ১৫ নম্বর সড়কের এলাকাবাসী ও শিশু-কিশোরেরা।

অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা মো. মিঠুন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ