একটি দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধ শুরু করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্পের শুরু করা এই বাণিজ্যযুদ্ধে দেশটি হয়তো যুক্তরাষ্ট্রকে হারিয়ে দিতে পারে।

শুল্ক আরোপের মাধ্যমে ট্রাম্প চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধে উত্তেজনা শুধু বাড়িয়েই চলেছেন। দেশটি থেকে এখন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য প্রবেশ করতে অন্তত ১০৪ শতাংশ শুল্ক দিতে হবে। ট্রাম্প শুল্ক আরোপের মাধ্যমে সারা বিশ্বে যে আক্রমণ শুরু করেছেন, এটা এখন পর্যন্ত তার মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর।

এই শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যমূল্যের যে চরম ঊর্ধ্বগতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তার মূলেও হয়তো চীনের ওপর উচ্চ শুল্কারোপ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে চীন নানাভাবে সুযোগের অপব্যবহার করছে, যা রোধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্বের ওপর চীনের প্রভাব দিন দিন বাড়ছে। বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেশটি একটি ‘সুপার-পাওয়ার’ হয়ে উঠেছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে।

অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে যুক্তরাষ্ট্র চীনের এই উত্থান সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সনের ঐতিহাসিক চীন সফরের সময় থেকে এর শুরু হয়েছে।

১৯৭২ সালে চীন সফরে গিয়ে মাও সে–তুংয়ের সঙ্গে দেখা করেন নিক্সন। একটি বিচ্ছিন্ন ও দারিদ্র্যপীড়িত জাতিকে ‘বিশ্বদরবারে তুলে আনতে’ নিক্সনের ওই সফর—এমনটা বলা হলেও চীনের কমিউনিস্ট নেতাদের সোভিয়েত ইউনিয়নের কমিউনিস্ট ভাইদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলাও নিক্সনের সফরের লক্ষ্য ছিল।

বিভিন্ন দেশের ওপর ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে পণ্যমূল্যের যে চরম ঊর্ধ্বগতি দেখা দেওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে, তার মূলেও হয়তো চীনের ওপর উচ্চ শুল্কারোপ সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।

প্রায় ২৫ বছর আগে চীনের বিষয়ে আরও একটি বড় পদক্ষেপ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি চীনকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় নিয়ে আসে। ২০০১ সালের ডিসেম্বরে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যোগ দেয় চীন।

চীনকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় যুক্ত করে যুক্তরাষ্ট্র দেশটিতে গণতান্ত্রিক পরিবর্তন আনতে চেয়েছিল। সেই সঙ্গে সেখানে নিয়মভিত্তিক পশ্চিমা ধাঁচের একটি অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চালু করতে চেয়েছিল।

চীনের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির সম্ভাবনা ক্ষীণ

যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কের খাঁড়া এড়াতে অনেক দেশ তার দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী হবে বলে দাবি করেছেন ট্রাম্প। কিন্তু চীন সেই দলে নেই। বরং চীন বলেছে, তারা এই বাণিজ্যযুদ্ধের শেষ দেখতে প্রস্তুত।

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ চীন। দেশটির পণ্যের ওপর বড় ধরনের শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়ে ট্রাম্প দ্রুতই চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। নিজের সেই হুমকির বিশ্বাসযোগ্যতা ধরে রাখতে ট্রাম্পকে চীনের ওপর শুল্ক আরোপ করতেই হতো। ট্রাম্পের ওই শুল্কারোপের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে চীন।

আপনি মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) সংকোচন দেখতে চলেছেন, যা শ্রমবাজার হ্রাস করবে। আপনাকে মুদ্রাস্ফীতির চাপে পড়তে হবে। আরেকটি উদ্বেগের বিষয় হলো, এ কৌশলের বিষয়ে কোনো যুক্তিসংগত চিন্তাভাবনা বা দিকনির্দেশনা নেইঅ্যালেক্স জ্যাকেজ, জো বাইডেন প্রশাসনের ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্ট্র্যাটেজির বিশেষ সহকারী

গতকাল মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলাইন লেভিট বলেছেন, ‘চীনের মতো দেশ যারা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা বেছে নিয়েছে এবং আমেরিকার কর্মীদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার দ্বিগুণ করার চেষ্টা করছে, তারা ভুল করছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মেরুদণ্ড ইস্পাত কঠিন এবং তিনি ভাঙবেন না, তাঁর নেতৃত্বে আমেরিকা ভেঙে পড়বে না।’

গত ২ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউসের রোজ গার্ডেনে বসে সর্বশেষ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ট্রাম্প। তার পর থেকে সি চিং পিংয়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এখন ট্রাম্পকে তাঁর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক সক্ষমতার একটি বড় অংশ বিনিয়োগ করতে হচ্ছে।

কয়েক বছর ধরে চীন এই যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছে এবং এ লড়াইয়ে ট্রাম্পকে ছাপিয়ে যাওয়ার সব লক্ষণ দেশটি প্রকাশ করতে শুরু করেছে।

১৯৭২ সালে চীন সফরে গিয়ে মাও সে–তুংয়ের সঙ্গে দেখা করেন সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

ভাইয়ের সামনে যুবলীগ নেতাকে পিটিয়ে হত্যা

নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় আবদুল কাদের মিলন (৩৬) নামে যুবলীগের এক নেতাকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। গত শুক্রবার রাতে উপজেলার চরপার্বতী ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত মিলন চরহাজারী ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মো. ইসমাঈলের ছেলে। তিনি ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। স্বজন জানান, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর মিলন বাড়ি থেকে চলে যান। এর পর তিনি সৌদি আরবে ওমরাহ পালন করেন। চার দিন আগে তিনি দেশে ফেরেন।

মিলনের ছোট ভাই আবদুর রহিম বলেন, ‘আমি অটোরিকশাচালক। রাতে অটোরিকশায় বড় ভাইকে ফেনীর দাগনভূঞা থেকে নিয়ে গ্রামে ফিরছিলাম। পথে রাত ৯টার দিকে কোম্পানীগঞ্জের চরপার্বতী ইউনিয়নের চৌধুরীরহাট এলাকায় একটি মোটরসাইকেল আমাদের পিছু নেয়। একই ইউনিয়নের পোলের গোড়া এলাকায় পৌঁছলে মোটরসাইকেল আরোহীরা পথরোধ করে। পরে আমার ভাইকে অটোরিকশা থেকে টেনেহিঁচড়ে নামায় তারা। সেখান থেকে মারতে মারতে পার্শ্ববর্তী এতিমখানার সামনে নিয়ে যায়। সেখানে আরও কয়েকজন মিলে তাঁকে পেটাতে থাকে। প্রত্যেকের হাতে লাঠি ও ধারালো অস্ত্র ছিল। এ সময় ভাইকে উদ্ধার করতে গেলে আমাকেও মারধর করে তারা।’

আবদুর রহিম জানান, পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত ৩টার দিকে মিলনের মৃত্যু হয়।
মিলনের স্ত্রী জুলেখা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামীর সঙ্গে এলাকার মেম্বার যুবদল নেতা সুমন ও মাঈন উদ্দিনের যোগাযোগ ছিল। তারা এলাকায় ফেরার আশ্বাস দেওয়ায় তিনি বাড়িতে আসেন। তাঁকে জামায়াত-শিবির ও বিএনপির লোক হত্যা করেছে।’

উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির বেলায়েত হোসেনের দাবি, এ ঘটনায় জামায়াত কিংবা ছাত্রশিবিরের কেউ জড়িত নয়। অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মাহমুদুর রহমান রিপন বলেন, এলাকার লোক মিলনকে হত্যা করেছে। কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি গাজী মুহাম্মদ ফৌজুল আজিম জানান, এ ঘটনায় মামলা হলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বাচল উপশহরের ১ নম্বর সেক্টর থেকে গতকাল দেলোয়ার হোসেন নয়ন নামে একজনের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এদিন উপজেলার খৈসাইর এলাকায় এক নবজাতকের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি জানান, লক্ষ্মীপুর সদরের পূর্ব চৌপল্লী এলাকায় সন্ত্রাসীর গুলিতে রুবেল হোসেন নামের এক যুবক আহত হয়েছেন। শুক্রবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। রুবেল সদর উপজেলার আবদুল কুদ্দুসের ছেলে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ