অভিযানকালে যুবদল নেতার নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা, গ্রেপ্তার ৩
Published: 9th, April 2025 GMT
বগুড়ায় এক অপহৃত ট্রাকচালককে উদ্ধার অভিযানে পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে শহরের নারলী পুলিশ ফাঁড়ি–সংলগ্ন ধাওয়াপাড়া এলাকায় যুবদলের নেতার নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়। এ ঘটনায় পুলিশ যুবদল নেতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
এদিকে হামলার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে রাতেই তাদের বিরুদ্ধে সদর থানায় মামলা করেছে।
গ্রেপ্তার হওয়ারা হলেন- শহরের ২০নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুর আলম সুইট, তার অনুসারী নারুলী এলাকার জুয়েল হোসেন ও রাব্বী হাসান। আজ বুধবার ভোরে সোনাতলা উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম চর থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। নুর আলমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হামলায় আহত পুলিশ সদস্যরা হলেন- শহরের নারুলী পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই ফিরোজ আহম্মেদ ও কনস্টেবল মাহবুব হোসেন। তারা গুরুতর আহত হয়েছেন। তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নারুলী পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শক নাজমুল হক বলেন, সারিয়াকান্দি থেকে শহরে বালু নিয়ে আসা একটি ট্রাক থামিয়ে চালক জাকির হোসেনকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করেন নুর আলম ও তার সহযোগীরা। পরে তিন লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এছাড়া ট্রাকটি ধাওয়াপাড়া এলাকায় আটকে রেখে বালু নামিয়ে নেওয়া হয়। পরে ট্রাকটি একটি স’মিলের পাশে রাখা হয়। অভিযোগ পেয়ে রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ট্রাকটি উদ্ধার করে। তখন অপহরণকারী দলের সদস্যরা ট্রাকের চাবি ও চালককে নিয়ে সটকে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ ধাওয়া করলে নুর আলমের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তাদের ছোড়া ইট-পাটকেলের আঘাতে এটিএসআই ফিরোজ ও কনস্টেবল মাহবুব গুরুতর আহত হন। এ ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে ২টি মামলা হয়েছে বগুড়া সদর থানায়।
বগুড়া জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসান বলেন, শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে নুর আলমকে এরই মধ্যে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: য বদল ন র আলম য বদল
এছাড়াও পড়ুন:
মধ্যরাতে বাড়ি থেকে অপহরণ, ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার লাউর ফতেহপুর গ্রাম থেকে অপহৃত রিফাত মিয়াকে উদ্ধার ও ৯ জনকে আটক করা হয়েছে। ডিজিএফআই পরিচয় দিয়ে গত সোমবার মধ্যরাতে দুর্বৃত্তরা ব্যবসায়ী শহিদুল ইসলাম মালুর ছেলে রিফাতকে বাড়ি থেকে অপহরণ করে। পরে ৩ কোটি টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়।
যৌথ বাহিনী অভিযান চালিয়ে মঙ্গলবার রাতে কসবা উপজেলা থেকে তাঁকে উদ্ধার এবং রেজাউল করিম নামে একজনকে আটক করেছে। অন্য আটজনকে বুধবার খুলনা থেকে আটক করা হয়।
ক্যাপ্টেন পরিচয় দেওয়া রেজাকে নবীনগর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, একটি মাইক্রোবাসের নম্বর ও চালকের ফোন নম্বরের সূত্র ধরে আটজনকে আটক করা হয়। কসবা পৌর এলাকার রেজা জানায়, সে বিমানবাহিনীতে চাকরি করত। অপহরণে চালকসহ ১২ জন জড়িত।
আটক অন্যরা হলো– ডুমুরিয়ার সাহাপুর গ্রামের জাহিদুর রহমান, খরসংগ গ্রামের আশরাফুল কবির, মাসুম বিশ্বাস, মধুরাম সাহাপুর গ্রামের রাজন কুম্ভ, আন্দুলিয়া গ্রামের মো. নয়ন আকোঞ্জী, খরসংগ গ্রামের মো. আলমগীর মোল্লা, কেশবপুরের ভরতভাইনা গ্রামের আব্দুল গফুর সরদার, ডুমুরিয়ার শাহাপুর গ্রামের মোহাম্মদ তৈবুর রহমান।
রিফাতের (১৯) বাবা মালু মিয়া সৌদি আরবে ব্যবসা করতেন। তিনি অভিযোগ করেন, পুলিশের উপস্থিতিতে সোমবার রাতে দুর্বৃত্তরা নিজেদের ডিজিএফআই সদস্য পরিচয় দিয়ে রিফাতকে ধরে নিয়ে যায়। এর চার ঘণ্টা পর রাত ৩টার দিকে মোবাইল ফোনে মুক্তিপণ হিসেবে নগদ ৩ কোটি টাকা দাবি করা হয়। তিনি আরও বলেন, ফোন দিয়ে পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে নবীনগর থানার ওসির সহযোগিতা চেয়েছিলেন। ওসি তখন বলেন, তিনি ছুটিতে আছেন, তবে পুলিশ পাঠাচ্ছেন। এর আধা ঘণ্টার মধ্যেই থানা থেকে দুই এসআই আবদুল মন্নাফ ও রাম কানাই সরকারের নেতৃত্বে সাত-আট পুলিশ তাদের বাড়িতে আসে। কিন্তু পুলিশ এসে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের বদলে তাদের সঙ্গে অনেকক্ষণ ধরে শলাপরামর্শ করে। এ সময় সামান্য দূরে থাকা এসআই মন্নাফকে কমপক্ষে ২০ বার ফোন করেন। কিন্তু তিনি ফোন না ধরে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে আলাপ করে যাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে পুলিশের উপস্থিতিতেই সন্ত্রাসীরা নগদ টাকা, স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয় এবং রিফাতকে নিয়ে নির্বিঘ্নে বাড়ি থেকে চলে যায়। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশও চলে যায়। তিনি মঙ্গলবার নবীনগর থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এজাহারে তিনজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫ জনকে আসামি করা হয়। নাম উল্লেখ বরা তিনজন হলেন– লাউর ফতেপুর গ্রামের কামাল মিয়া ও কামাল খন্দকার এবং বাড়িখলা গ্রামের আবু কালাম আজাদ।
উদ্ধার হওয়া রিফাত বলেন, ‘মঙ্গলবার দিনভর কসবা রেললাইনের পাশে সীমান্তের কাছাকাছি মাইক্রোবাসে আমাকে বসিয়ে রাখা হয়। তাদের সঙ্গে চুক্তি করি, আমাকে ছেড়ে দিলে ৩ কোটি টাকা এনে দেব। চুক্তি অনুযায়ী, দুই ধাপে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হয়, তারা বাকি টাকা পাওয়ার প্রতিশ্রুতি পেয়ে একটি অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে আমাকে ছেড়ে দেয়। ওই অ্যাকাউন্ট নম্বর আমার পরিবারের কাছে পাঠালে এর সূত্র ধরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাকে উদ্ধার ও রেজাকে আটক করে।’
এসআই মোন্নাফ ও এসআই রামকানাইয়ের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কথা বলবেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার পুলিশ সুপার এহতেশামুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ‘অপহরণ হওয়া যুবক রিফাতকে উদ্ধার করা হয়েছে। এটি একটি ভুল বোঝাবুঝি ছিল। পুলিশ প্রথমে ভেবেছিল ওদের কথা সত্যি, পরে যখন রিফাতকে নিয়ে যায়, তখন টের পাওয়া গেছে তারা প্রতারক চক্র। এতে পুলিশের কোনো গাফিলতি থাকলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’