রাজশাহীতে চিকিৎসায় অবহেলা, রোগী মৃত্যুর অভিযোগ
Published: 9th, April 2025 GMT
রাজশাহী মহানগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকার মুঞ্জু হাসপাতালে চিকিৎসা অবহেজলায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। চিকিৎসক-নার্স না থাকায় অক্সিজেনের অভাবে বেনু বেগম (৭০) নামে অপারেশন করা ওই নারীর মৃত্যু হয়।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সকাল সাতটার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মারা যাওয়া বেনু বেগমের বাড়ি মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার সুজানগর মিতালী ক্লাব এলাকায়। তিনি ওই এলাকার মৃত মতিনের কন্যা এবং মৃত বশির আহম্মেদের স্ত্রী।
বেনু বেগমের স্বজনরা জানান, পায়ের হাড় ভেঙ্গে গেলে গত ৬ এপ্রিল তাকে মঞ্জু হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার পায়ের হাড়ের অপারেশন করেন ডা.
এদিকে অবহেলায় বেনু বেগমের মৃত্যুর ঘটনায় রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল ঘেরাও করে ভাঙচুর করার জন্য তৎপর হন। এসময় হাসপাতালের পরিচালক মিঠুন কুমারসহ অন্যান্য স্টাফরা পালিয়ে যান। পরে সেখানে ছুটে যান পুলিশ সদস্য ও স্থানীয় বিএনপি নেতারা। এরপর বিএনপি নেতারা ক্লিনিক মালিক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমঝোতা করে দেন।
নিহত বেনু বেগমের ছেলে সনি বলেন, “অপারেশনের পর আমার মা সুস্থ ছিলেন। শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ার পর চিকিৎসক এবং নার্স ছিলেন না। সময়মত সঠিক চিকিৎসা পেলে আমার মা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তেন না। চিকিৎসা অবহেলায় আামার মায়ের মৃত্যু হয়েছে।”
চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করে হাসপাতালের পরিচালক মিঠুন কুমার বলেন, “রোগীর স্বজনরা যেসব অভিযোগ করছেন, সেগুলো সঠিক না। আমরা যথাসাধ্য চিকিৎসাসেবা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। তারপরেও রোগী মারা গেছেন। মৃত্যুর উপরে কারও হাত নেই।”
এ ব্যাপারে রাজশাহীর ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মাহাবুবা খাতুন বলেন, “এ বিষয়ে আমি জানি না। যদি রোগীর স্বজনেরা সিভিল সার্জন বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দেন তবে আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। চিকিৎসা অবহেলায় রোগীর মৃত্যু হলে বিষয়টি খুবই দুঃখজনক।”
মহানগরীর রাজপাড়া থানার ওসি আশরাফুল ইসলাম বলেন, “আমি ঘটনাটি জানার পর তাৎক্ষণিক সেখানে পুলিশের একটি টিম পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। তবে রোগীর স্বজনেরা এখনো কোনো অভিযোগ দেননি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ঢাকা/কেয়া/এস
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর র স বজনর ব গম র অবহ ল
এছাড়াও পড়ুন:
বাবাকে হাত-পা বেঁধে মাথায় গরম পানি ঢেলে নির্যাতনের অভিযোগ সন্তানদের বিরুদ্ধে
লাকসামে বাবার সম্পত্তি সন্তানদের নামে লিখে না দেওয়ার জন্য বাবাকে হাত-পা বেঁধে গরম পানি মাথায় ঢেলে দিয়ে নির্যাতন করার অভিযোগ উঠেছে সন্তানদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার দুপুরে লাকসাম পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের গোপালপুর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার এ ঘটনার ১ মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওতে দেখা যায়, গোপালপুর গ্রামের বাড়ির উঠানে বৃদ্ধ বাবার হাত ধরে করছে টানাহেঁচড়া করছেন তার সন্তানরা। এসময় তারা বাবার গায়ের গেঞ্জিটাও টানতে টানতে ছিঁড়ে ফেলেন। বাবাকে টেনেহিঁচড়ে জবরদস্তি করে তাকে হাত পা বাঁধা হয়, এরপর গরম পানি বাবার মাথা ও মুখে ঢালেন তারই সন্তানেরা। এসময় ওই বৃদ্ধ বাবার আত্নচিৎকার করে বলেন ‘ও আল্লাহ রে, ও আল্লাহ, ও মা গো মা, ও ভাইরে ভাই, ও জসিমের মারে..., জসিমের মা আমারে বাঁচান, কে কোথায় আছেন- আমাকে বাঁচান, আমাকে মাইরা ফেলছে তারা...’। ওই নির্যাতন দেখে স্থানীয় বাসিন্দারা বৃদ্ধকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
জানা গেছে, নির্যাতনের শিকার ওই বাবার নাম আবদুল জলিল (৬০)। আর নির্যাতনকারীরা তার ছেলে, মেয়ে ও তার স্ত্রী। তারা হলেন- ছেলে শান্ত (২৮), নোমান (২০), রকি (১৬), মেয়ে নাজমিন (২৬), নুপুর (১৩) ও জলিলের স্ত্রী রিনা আক্তার (৪৫)।
এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার ভুক্তভোগী আবদুল জলিল বাদী হয়ে সন্তান ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন।
স্থানীয় লোকজন জানান, গোপালপুর গ্রামের মৃত হাজী ওয়ালীউল্লার ছেলে আবদুল জলিলের নামে বসতবাড়ি ও মাঠে ১২০ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে। জলিলের স্ত্রীসহ তিন ছেলে ২ মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে শান্ত প্রবাসে থাকেন, সে প্রবাস থেকে ওই সম্পত্তি তার নামে লিখে দেওয়ার জন্য বিভিন্ন সময় আবদুল জলিলকে হুমকি দেয় এবং বাড়িতে থাকা জলিলের অন্য সন্তানরা তাকে মারধর করেন। এছাড়া বাবাকে ভরণপোষণও দিচ্ছিলেন না তারা। এ নিয়েই সন্তান ও স্ত্রী সঙ্গে জলিলের দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় অনেক বার সামজিকভাবে শালিসও হয়েছে।
প্রতিবেশিরা বলছেন, বৃহস্পতিবার জলিলের সঙ্গে তার স্ত্রী-সন্তানদের কথা-কাটাকাটি হয়। এসময় জলিল ঘরের দরজা জানালা ভাঙচুরের চেষ্টা চালাতে গেলে তার ছেলে মেয়েরা বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে এ কাণ্ড চালায়।
নির্যাতনের শিকার আবদুল জলিল জানান, অনেক দিন ধরে আমার সন্তানরা সম্পত্তি নেওয়ার জন্য আমাকে বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিচ্ছে। আমার স্ত্রী রিনা আক্তার এর প্রতিবাদও করে না। আমাকে তারা ভরণপোষণও দেয় না। ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে ঝামেলা করে। ওই দিন আমার সন্তানরা বাড়ির উঠানের মধ্যে আমাকে হাত-পা বেঁধে অনেক মেরেছে। হাত-পায়ে শরীরে এখনও দাগ আছে।
লাকসাম থানার ওসি নাজনীন সুলতানা শুক্রবার রাতে সমকালকে বলেন, নির্যাতনের ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। পারিবারিক কলহ থেকে এ ঘটনা। এ ঘটনায় নির্যাতিত আবদুল জলিল থানায় স্ত্রী-সন্তানদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। তবে পারিবারিক শান্তি বজায় রাখতে অভিযোগটি আবার প্রত্যাহার করেছেন।
ওসি বলেন, এলাকায় বিষয়টি সামাজিকভাবে বিরোধ নিরসন ছাড়াও পরিবার নিয়ে থানায় এসেছেন। স্ত্রী ও সন্তানরাও বিষয়টি নিয়ে অনুতপ্ত।