শুল্ক আরোপ নিয়ে কি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে মাস্কের
Published: 9th, April 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আগ্রাসী শুল্কনীতির জন্য হোয়াইট হাউসের এক শীর্ষ উপদেষ্টার সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কয়েকটি পোস্ট দিয়েছেন ইলন মাস্ক। তিনি ওই উপদেষ্টাকে ডিঙিয়ে সরাসরি ট্রাম্পের কাছে তাঁর ব্যক্তিগত আবেদন তুলে ধরেন।
বিষয়টি সম্পর্কে জানেন এমন দুই ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঘটনাটি নিশ্চিত করেছেন। যদিও এ প্রচেষ্টা এখনো সফল হয়নি। ট্রাম্প গতকাল মঙ্গলবার চীনা পণ্যের ওপর নতুন করে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন। যদিও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে শুল্কনীতির কিছু দিক নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি রাজি আছেন।
এরই মধ্যে ইলন মাস্ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে তিনি প্রয়াত রক্ষণশীল অর্থনীতিবিদ মিল্টন ফ্রিডম্যানের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সহযোগিতার ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরেছেন। তিনি ব্যাখ্যা করেন যে ব্যক্তিগত সম্পর্ক নয়, বরং পণ্যের দামের ওপর ভিত্তি করে বাজার ব্যবস্থা পরিচালিত হয়। এমনকি একটি সাধারণ কাঠের পেনসিলের উপকরণগুলোও সারা বিশ্ব থেকে সংগ্রহ করতে হয়।
মার্কিন প্রশাসনের প্রধান অগ্রাধিকার নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে মাস্কের যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে, তাকে এযাবৎকালে প্রেসিডেন্ট ও তাঁর শীর্ষ কোনো উপদেষ্টার সঙ্গে সবচেয়ে বড় বিরোধ হিসেবে দেখা হচ্ছে। ইলন মাস্ক গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্প ও অন্য রিপাবলিকানদের সমর্থনে প্রায় ২৯ কোটি ডলার ঢেলেছিলেন।
গত শনিবার ইলন মাস্ক হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোকে একহাত নিয়েছেন। ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা তৈরির মূল চাবিকাঠি ছিলেন মার্কিন এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মাস্ক।ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মাস্ক মার্কিন সরকারি দক্ষতা বিভাগের (ডিওজিই) প্রধান হিসেবে ব্যয় সংকোচন প্রচেষ্টার নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। দক্ষ অভিবাসীদের জন্য এইচ ওয়ান-বি ভিসা এবং সরকারি ব্যয় নিয়ে ডিওজিইর দৃষ্টিভঙ্গির মতো বিষয়গুলো নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের অন্যান্য সদস্যের সঙ্গেও দ্বিমত পোষণ করেছেন মাস্ক।
গত শনিবার ইলন মাস্ক হোয়াইট হাউসের বাণিজ্য উপদেষ্টা পিটার নাভারোকে একহাত নিয়েছেন। ট্রাম্পের শুল্ক পরিকল্পনা তৈরির মূল চাবিকাঠি ছিলেন মার্কিন এই প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তাঁর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মাস্ক। এক্সে তিনি তাচ্ছিল্য করে লিখেছেন, ‘হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নেওয়া একটি বাজে বিষয়, কোনো ভালো বিষয় নয়।’
এ বিষয়ে মন্তব্য করার অনুরোধ করা হলেও সাড়া দেননি নাভারো।
হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলিন লিভিট এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট অত্যন্ত প্রতিভাবান ও অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের একটি অসাধারণ দল গঠন করেছেন, যাঁরা আলোচনার টেবিলে বিভিন্ন ধারণা নিয়ে আসেন। তবে তাঁরা এটাও জানেন যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ট্রাম্পই নেবেন। যখন তিনি কোনো সিদ্ধান্ত নেন, তখন সবাই সেটি বাস্তবায়নে একই পথে হাঁটেন। এ কারণেই পূর্ববর্তী প্রশাসন চার বছরে যা করেছে, বর্তমান প্রশাসন দুই মাসে তার চেয়ে বেশি কাজ করেছে।
ইতালির উপপ্রধানমন্ত্রী মাতেও সালভিনি সপ্তাহান্তে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মাস্ক বলেছেন, তিনি ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে একটি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল দেখতে চান।
মাস্কের মতে, ‘দিন শেষে, আমার মনে হয় সবাই এ বিষয়ে একমত যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের আদর্শগতভাবে একই পথে হাঁটা উচিত। আর আমার দৃষ্টিতে তা হলো একটি শুল্কমুক্ত অবস্থার দিকে এগিয়ে যাওয়া।’
মাস্ক আরও বলেন, মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের এক দেশ থেকে অন্য দেশে চলাচলের ক্ষেত্রে আরও বেশি স্বাধীনতা চান তিনি। পাশাপাশি তাঁরা চাইলে যাতে পছন্দসই দেশে কাজ করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে এটা ছিল প্রেসিডেন্টের প্রতি আমার পরামর্শ।’
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যেসব কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয় দেশকে উৎপাদন ও ভোক্তার কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করে, সেসব কোম্পানির ব্যবসায়িক লক্ষ্যের জন্য শুল্ককে ক্ষতিকর বলে মনে করে আসছেন বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান টেসলার প্রধান নির্বাহী মাস্ক। যদিও নতুন শুল্কের ফলে অন্য গাড়ি নির্মাতারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
কিন্তু মাস্ক অন্তত ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদ থেকেই শুল্কের বিরোধিতা করে আসছেন। সে সময় চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে টেসলার আমদানির ওপর কর বাতিল চেয়ে একটি মামলাও করেছিল মাস্কের প্রতিষ্ঠান।
২০২০ সালে টেসলার শীর্ষ নির্বাহীরা চেয়েছিলেন, চীনের ওপর শুল্ক আরোপের জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে কোম্পানিটি মামলা করুক। মাস্ক প্রথমে এতে একমত হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে ট্রাম্পের শুল্কনীতির কিছু অংশ গাড়ি প্রস্তুতকারকদের প্রতি অন্যায্য। কিন্তু ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে টেসলা মামলা করার পর, মাস্ক এই সিদ্ধান্তের প্রতি ‘অতি নেতিবাচক’ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিলেন। এমনকি মামলা করতে পরামর্শ দেওয়ায় কয়েকজনকে তিরস্কার করেছিলেন। এর কারণ সম্পর্কে বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত এক ব্যক্তি বলেন, টুইটারে ডানপন্থী অ্যাকাউন্টগুলো বলেছিল, মাস্ক চীনাদের অনুগ্রহ লাভের চেষ্টা করছেন এবং ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ এজেন্ডার বিরুদ্ধে যাচ্ছেন।
সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র বলেছে, গত বছর প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হিসেবে ট্রাম্পকে সমর্থনকারী অনেক ব্যবসায়ী ও প্রযুক্তিনেতা তাঁর এই উচ্চ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে অবাক হয়েছেন। একইভাবে হতাশ হয়েছেন এই ভেবে যে তাঁরা এই নীতির ওপর আরও বাড়তি প্রভাব রাখতে পারেননি।
গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ট্রাম্পের প্রচারণায় প্রায় ২৯ কোটি ডলার ঢেলেছিলেন ইলন মাস্ক.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প ইলন ম স ক উপদ ষ ট কর ছ ন র জন য র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা
মুরাদনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর এই কাজের কদর না থাকলেও বৈশাখ রাঙাতে এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো চাহিদা নেই মৃৎশিল্পের। এই পেশায় নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাই প্রায় সারাবছরই অধিকাংশ নারী মৃৎশিল্পীকে অবসর সময় কাটাতে হয়। পুরুষ মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে নববর্ষের আগে সব কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন পুরোনো এই পেশায়। মৃৎশিল্প থেকে সারা বছর কারিগররা আয়ের মুখ না দেখলেও বৈশাখী মেলা ঘিরে থাকে বাড়তি উপার্জনের সম্ভাবনা। এবারও মাসজুড়ে প্রতিটি কুমারপাড়ায় ছিল ব্যস্ততা।
কামাল্লা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের পালপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুটছেন, কেউ সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কেউবা খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাতিল, মাটির চুলা, শিলপাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ। এ ছাড়া রয়েছে মাটির তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র।
কামাল্লা গ্রামের সন্ধ্যা রানী পাল ও শিখা রানী পাল জানান, এখন মাটির জিনিসের তেমন কদর না থাকায় সারাবছর টানাপোড়েনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। পূর্বপুরুষের পেশা হওয়ায় ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারছেন না। সারাবছর অবসর সময় পার করলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের চাহিদা থাকায় এই সময়ে ব্যস্ততা থাকে তাদের।
কথা হয় মৃৎশিল্পী হরি ভূষণ পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বছরের এই একটি উৎসব ঘিরে তাদের অনেক আশা থাকে। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির খেলনা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় কিছু আয় হয়। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পী কানন বালা জানান, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলা থেকে শখের বসে অনেকে মাটির সামগ্রী, বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনেন। তাই এই সময়ে কর্মব্যস্ততা বাড়ে তাদের।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের খুশি পাল বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের পর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন নেই। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের ভাষ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যে হারিয়ে গেছে, বিষয়টি তা নয়। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মাটির তৈজসপত্রর চাহিদা এখন প্রচুর। মুরাদনগরে যদি বেসরকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এই শিল্প থেকে ভালো সুফল পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিআরডিবি ও সমবায় কার্যালয় থেকে যেন সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মুরাদনগরে কোনো মৃৎশিল্পের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, তাই মৃৎশিল্পীদের এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজে সরকারি সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।