দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ওপার বাংলায়ও জনপ্রিয়তা পেয়েছেন নন্দিত অভিনেতা মোশাররফ করিম। বাংলা নববর্ষে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে যাচ্ছে তার অভিনীত ‘বিলডাকিনি’ সিনেমা। এতে তার বিপরীতে অভিনয় করেছেন কলকাতার অভিনেত্রী পার্নো মিত্র। সিনেমাটির নির্মাতা ফজলুল কবীর তুহিন মুক্তির তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গত বছরের ১৭ জানুয়ারি সেন্সর ছাড়পত্র পায়া সিনেমাটি। এরপর বেশ কয়েকবার মুক্তির সিদ্ধান্ত নিলেও নানা জটিলতায় মুক্তি দেওয়া হয়নি। মুক্তি প্রসঙ্গে নির্মাতা ফজলুল কবীর তুহিন বলেন, “দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে গত জানুয়ারিতে মুক্তির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছিলাম। আমাদের এখানে প্রতি ঈদের সময় হলে দর্শকের সমাগম দেখা যায়। বন্ধ থাকা হলগুলোও খোলা হয়। সেই রেশ থাকতেই বৈশাখ উপলক্ষে দর্শকের সামনে ‘বিলডাকিনি’ নিয়ে আসতে চাই।”

‘বিলডাকিনি’ সিনেমায় মোশাররফ করিম অভিনয় করেছেন মানিক মাঝি চরিত্রে। গল্পে একজন বাউলের সন্তান তিনি। অন্যদিকে পার্নোর চরিত্রের নাম হনুফা। গ্রামীণ নারী হনুফার গল্পেই আবর্তিত হয় ‘বিলডাকিনি’ চলচ্চিত্রের কাহিনি।

আরো পড়ুন:

লোকগুলো অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করছিল: জিৎ

চুমু তো একা খাওয়া যায় না, কৌশানীর সঙ্গে চুম্বন দৃশ্য নিয়ে পরমব্রত

২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকারি অনুদান পায় ‘বিলডাকিনি’। ‘বিলডাকিনি’র অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন শাহাজাহান সম্রাট, লুৎফর রহমান জর্জ, শিল্পী সরকার অপু, রশীদ হারুন, হাবিব মাসুদ, আইনুন নাহার পুতুল, ইউসুফ হাসান অর্ক, মাহবুবুর রহমান, তিথি, মেহেদী হাসান সোমেন প্রমুখ।

কথাসাহিত্যিক নুরুদ্দিন জাহাঙ্গীরের ব্যতিক্রমধর্মী কাহিনি অবলম্বনে এটি নির্মাণ করা হয়েছে। সিনেমার শুটিং হয়েছে নওগাঁর পতিসর, নাটোর এবং বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কারাগারে।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

রমনা বটমূলে বোমা হামলা: ২৪ বছরেও হয়নি বিস্ফোরক মামলার রায় 

রাজধানীর রমনা বটমূলে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলার পর দুই যুগ পার হয়েছে। এ ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলার বিচার এখনো শেষ হয়নি। কবে রায় হবে, নির্দিষ্ট করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।

২০০১ সালে রমনা বটমূলে বোমা হামলা হয়। এতে ১০ জন প্রাণ হারান। ওই ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলার বিচার শেষ হয়েছে ১৩ বছর আগে। তবে, ২৪ বছরেও শেষ হয়নি বিস্ফোরক মামলার বিচারকাজ।

তিন বছর আগে মামলাটি ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-১ এ যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের পর্যায়ে ছিল। ২০২২ সালের ২৮ জুলাই মামলাটি বদলি করে ঢাকা মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এ পাঠানো হয়। সেখান থেকে ২০২৩ সালের ৩ জানুয়ারি পাঠানো হয় মহানগর বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১৫ তে।

মামলাটি এখন আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির পর্যায়ে আছে। সর্বশেষ গত ২৪ ফেব্রুয়ারি আসামিদের আত্মপক্ষ শুনানির তারিখ ধার্য ছিল। কিন্তু, মামলার তিন আসামি সিলেটের এক মামলায় সেখানে থাকায় তাদের আদালতে হাজির করা হয়নি। এদিকে, এক আসামির পক্ষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে পুনরায় জেরার আবেদন করা হয়েছে। বিচারক সাইফুর রহমান মজুমদার আগামী ২০ এপ্রিল শুনানির তারিখ ধার্য করেছেন।

সংশ্লিষ্ট আদালতের অ্যাডিশনাল পাবলিক প্রসিকিউটর মাহফুজ হাসান বলেছেন, “গত অক্টোবরে আমরা নিয়োগ পেয়েছি। ডিসেম্বরে ছিল শীতকালীন অবকাশ। আমরা খুব বেশি সুযোগ পাইনি। রাষ্ট্রীয় দিকনির্দেশনার দিকে তাকিয়ে আছি। আমাদের পিপি স্যার আছেন। তাকে সব সময় ইনফর্ম করি। পিপি স্যার যে দিকনির্দেশনা দেবেন, সে অনুযায়ী কাজ করব। আসামিরা অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হওয়ায় তাদের এ মামলায় হাজির করা যাচ্ছে না। এজন্য একটু সময় লাগছে।”

ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “এ মামলা সম্পর্কে আমার জানা নাই। খোঁজ নিয়ে দেখব।”

বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দায়ের করা মামলার আসামিরা হলেন—আরিফ হাসান ওরফে সুমন ওরফে আবদুর রাজ্জাক, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলাল উদ্দিন, শাহাদাতউল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, মাওলানা সাব্বির ওরফে আবদুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আব্দুল হাই। তাদের মধ্যে মাওলানা মো. তাজউদ্দিন, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর ও মুফতি আব্দুল হাই পলাতক এবং অপর আট আসামি কারাগারে আছেন।

আসামি আরিফ হাসানের আইনজীবী মিজানুর রহমান বলেছেন, আগের সরকার ইচ্ছে করে এ মামলার বিচার শেষ করেনি। আসামিদের আটকে রেখে দিয়েছে। কারণ, তারা জানত, আসামিরা রমনায় বোমা হামলা ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করেনি। উচ্চ আদালতে তারা খালাস পাবেন। এ কারণে মামলা শেষ না করে ঝুলিয়ে রেখে আসামিদের আটকে রেখেছে। আমরা চাই, মামলার বিচার শেষ হোক। রমনা বটমূলে ঘটনা ঘটেছে, মানুষও মারা গেছে। দোষীদের বিচার আমরাও চাই। মামলার বিচার শেষ হলর কেউ দোষী হলে সাজা পাবে আর দোষ না করলে খালাস পাবে।

২০০১ সালের পহেলা বৈশাখ ভোরে রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানস্থলে দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। সকাল ৮টা ৫ মিনিটে একটি এবং এর পরপরই আরেকটি বোমা বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে ঘটনাস্থলেই সাত ব্যক্তি প্রাণ হারান এবং ২০-২৫ জন আহত হন। পরে আহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিন জন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ওই ঘটনায় নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সার্জেন্ট অমল চন্দ্র চন্দ ওই দিনই রমনা থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা করেন। এতে ১৪ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক আবু হেনা মো. ইউসুফ।

দুটি মামলার মধ্যে প্রায় ১৩ বছর পর হত্যা মামলার রায় হয় ২০১৪ সালের ২৩ জুন। রায়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ বাংলাদেশের শীর্ষ নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ আট জনকে মৃত্যুদণ্ড ও ছয় জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী ওরফে আবুল কালাম ওরফে আব্দুল মান্নান, আরিফ হাসান সুমন, মাওলানা আকবর হোসাইন ওরফে হেলালউদ্দিন, মো. তাজউদ্দিন, আলহাজ মাওলানা হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম হাওলাদার, মুফতি শফিকুর রহমান ও মুফতি আব্দুল হাই।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন—শাহাদত উল্লাহ ওরফে জুয়েল, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা আব্দুর রউফ, মাওলানা সাব্বির ওরফে আব্দুল হান্নান সাব্বির, মাওলানা শওকত ওসমান ওরফে শেখ ফরিদ ও হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া।

তাদের মধ্যে মাওলানা তাজউদ্দিনসহ তিন আসামি এখনো পলাতক। শীর্ষ জঙ্গি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নান মুন্সী ওরফে আবুল কালাম ওরফে আব্দুল মান্নানের অপর এক মামলায় ফাঁসি কার্যকর হয়েছে। এজন্য বিস্ফোরক মামলা থেকে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি হত্যা মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিলের ওপর আসামিপক্ষ ও রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ হয়। শুনানি শেষে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি নাসরিন আক্তারের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। 

এর আগে ২০১৭ সালের ৮ জানুয়ারি বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি সহিদুল করিমের হাইকোর্ট বেঞ্চে মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের শুনানি শুরু হয়। এরপর ওই বছরের ১৪ মার্চ চূড়ান্ত যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের তারিখ ঠিক করা হয়। পরে আদালত মামলাটি কার্যতালিকা থেকে বাদ দেন। এরপর মামলাটি যায় বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি এ এসএম আব্দুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চে। সেখানে দীর্ঘদিন থাকার পরও মামলাটির শুনানি হয়নি।  

হত্যা মামলা সম্পর্কে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুলতানা আক্তার রুবি বলেছেন, ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিলের ওপর শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানিতে আমরা বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজার যৌক্তিকতা তুলে ধরেছি। প্রত্যাশা করছি, সর্বোচ্চ সাজা রায়ে বহাল থাকবে।

ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান বোমা হামলায় নিহতরা হলেন—চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপ থানার দুবলা গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের ছেলে আবুল কালাম আজাদ (৩৫), বরগুনা জেলার বামনা থানার বাইজোরা গ্রামের আবুল হোসেন ওরফে এনায়েত হোসেনের ছেলে জসিম (২৩), কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার বিরামকান্দি গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে এমরান (৩২), পটুয়াখালীর সদর থানার ছোট বিমাই গ্রামের মৃত অনবী ভূষণ সরকারের ছেলে অসীম চন্দ্র সরকার (২৫), পটুয়াখালী জেলার বাউফল থানার কাজীপাড়া গ্রামের আবুল কাশেম গাজীর ছেলে মামুন (২৫), একই গ্রামের সামছুল হক কাজীর ছেলে রিয়াজ (২৫), একই এলাকার আবুল হাশেম গাজীর মেয়ে শিল্পী (২০), নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ থানার রথি রুহিত রামপুর গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ইসমাইল হোসেন স্বপন (২৭), ঢাকার দোহার থানার চরনটসোলা গ্রামের মৃত আয়নাল খাঁর ছেলে আফসার (৩৫) ও অপর এক জন অজ্ঞাত পুরুষ।

ঢাকা/মামুন/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ