বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ: তজুমদ্দিনে যুবদল নেতাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ
Published: 9th, April 2025 GMT
লার তজুমদ্দিনে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের পর যুবদল নেতা হাসান সাফাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার রাতে যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটি ওই নোটিশ দেয়।
যুবদলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির দপ্তর সম্পাদক নুরুল ইসলামের সই করা বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, ‘আপনি (হাসান সাফা) উপজেলা যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেও সংগঠনের নিয়মবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন বলে দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সংগঠনবিরোধী এমন কর্মকাণ্ডের জন্য আপনার বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা আগামী তিন দিনের মধ্যে উপস্থিত হয়ে লিখিতভাবে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।’
আরও পড়ুনতজুমদ্দিনে বিএনপির হাতে বিএনপি লাঞ্ছিত হচ্ছে জানিয়ে প্রতিকার চাইলেন নেতা২১ ঘণ্টা আগেএর আগে গত সোমবার বিকেলে কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলামের মিছিলে তজুমদ্দিন উপজেলা বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এক পক্ষ দাবি করে, হাসান সাফার নেতৃত্বে এ হামলায় তাঁদের পক্ষের সাতজন নেতা-কর্মী আহত হন। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে গতকাল সংবাদ সম্মেলন করে ওই পক্ষ।
নিজেকে উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক দাবি করে হাসান সাফা বলেন, ‘আমি কোনো শৃঙ্খলা ভঙ্গ করিনি। দীর্ঘদিন তজুমদ্দিন উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ছিলাম, জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলাম, অনেক দিন যাবৎ যুবদলের দায়িত্ব পালন করে আওয়ামী লীগের নির্যাতনের শিকার হয়েছি। দল ও মানুষের জন্য সব সময় নিবেদিতপ্রাণ। কিন্তু একটি পক্ষ আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে নেমেছে। এই পক্ষটি বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে কাজ করেছে। তজুমদ্দিনে এখন কোনো কিছু ঘটলেই আমার বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে।’
এদিকে তজুমদ্দিন উপজেলা যুবদলের কমিটিতে হাসান সাফার কোনো পদ নেই বলে দাবি করেছেন একই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক সাইদুর রহমান। তিনি বলেন, ‘যুবদলের আহ্বায়ক দাবি করে চাঁদাবাজি–সন্ত্রাস করে আসছেন হাসান সাফা। আমরা কেন্দ্রের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। সেই অভিযোগের সত্যতা পেয়েই কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠানো হয়েছে। পদে থাকলে তাঁকে বহিষ্কার করা হতো।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ র য বদল র উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের ১ম ধাপ ঢাকার বৈঠক
প্রায় ১৫ বছরের বিরতি শেষে ঢাকায় গত বৃহস্পতিবার বৈঠকে বসেছিলেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের দুই পররাষ্ট্রসচিব। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দারের ঢাকা সফরের ৯ দিন আগে এ বৈঠক হলো। দুই পররাষ্ট্রসচিবের আলোচনাকে দেখা হচ্ছে দেড় দশকের স্থবির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনের প্রথম ধাপ হিসেবে। কারণ, দুই পক্ষই সম্পর্ক এগিয়ে নিতে আলোচনার অন্য প্রক্রিয়াগুলো নিয়মিত রাখার ওপর জোর দিয়েছে।
বৃহস্পতিবারের বৈঠক নিয়ে দুই পক্ষই আলাদা বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেছে। দুই পক্ষ সম্পর্ক এগিয়ে নেওয়ার স্বার্থে ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি, শিক্ষা, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও পর্যটন খাতে সহযোগিতার ওপর জোর দিয়েছে। ওই বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব মো. জসীম উদ্দিন ও পাকিস্তানের পক্ষে পররাষ্ট্রসচিব আমনা বালুচ নেতৃত্ব দেন। ২৭ এপ্রিল পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের কথা রয়েছে।
সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে বাংলাদেশ পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, বোঝাপড়া ও অভিন্ন স্বার্থে জোর দিয়েছে। আর পাকিস্তান সম্পর্ক এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাগত ও কৌশলগত সহযোগিতাসহ নানা বিষয়ে বিস্তারিত মতবিনিময় হয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করেছে।
স্থবির সম্পর্ক পুনরুজ্জীবনে দুই পক্ষের একমতের বিষয়গুলো তাদের সংবাদ সম্মেলন আর বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিফলিত হলেও ব্যতিক্রমও আছে। বিশেষ করে একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীর গণহত্যার জন্য দেশটির আনুষ্ঠানিকভাবে ক্ষমা চাওয়া, আটকে পড়া পাকিস্তানিদের প্রত্যাবাসন এবং অবিভাজিত সম্পদে বাংলাদেশের ন্যায্য হিস্যা প্রদান—এই অমীমাংসিত ঐতিহাসিক তিনটি বিষয়ের সমাধানের প্রসঙ্গ ঊহ্য থেকেছে পাকিস্তানের বিজ্ঞপ্তিতে।
অথচ বৈঠক শেষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রসচিব সাংবাদিকদের বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগের মধ্য দিয়ে সম্পর্কটা যে জায়গায় এসেছে, তাতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পর্ককে শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে হলে অমীমাংসিত বিষয়গুলোর আশু সুরাহা জরুরি। পাকিস্তান এ বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একাত্তরের গণহত্যার জন্য ক্ষমাসহ তিন সমস্যার প্রসঙ্গ ঊহ্য রাখার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের একাধিক সদস্য জানান, আলোচনা হলেও পাকিস্তান বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়গুলো বাদ দেওয়ার নীতি অনুসরণ করেছে।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ১ নভেম্বর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠকের পরও একাত্তরে গণহত্যার জন্য ক্ষমাসহ তিন সমস্যার কথা পাকিস্তানের বিজ্ঞপ্তিতে এড়িয়ে যাওয়া হয়। বাংলাদেশের বিজ্ঞপ্তিতে প্রসঙ্গটি উল্লেখ ছিল। এবারের মতো ২০১০ সালেও পাকিস্তান অনিষ্পন্ন বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছিল।
এর দুই বছর পর পাকিস্তানের তখনকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার আমন্ত্রণ জানাতে ঢাকায় এসেছিলেন। ৬ ঘণ্টার সংক্ষিপ্ত সফরের সময় শেখ হাসিনার হাতে ডি-৮ শীর্ষ সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্র তুলে দেওয়ার পাশাপাশি সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন তিনি। ওই সময় হিনা রাব্বানি অতীত ভুলে সম্পর্ক সামনে এগিয়ে নেওয়ার কথা বলেছিলেন।
আরও পড়ুনপাকিস্তানের ক্ষমা চাওয়াসহ তিন বিষয়ে সুরাহা চেয়েছে বাংলাদেশ১৭ এপ্রিল ২০২৫সাবেক কূটনীতিক এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের (বিইআই) প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবীর প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঐতিহাসিক অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের বিষয়। সামনে রাজনৈতিক পর্যায়ে আলোচনা হলে বাংলাদেশ জবাব আশা করতে পারে। যেহেতু বাংলাদেশের দাবি যৌক্তিক, পাকিস্তান আজ না হোক কাল আমাদের দাবি মানবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’
এদিকে পাকিস্তানের ইংরেজি দৈনিক দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন একটি প্রতিবেদন ছেপেছে, যার শিরোনাম ‘শীর্ষ কূটনীতিক ১৫ বছর পর ঢাকায় বরফ গলিয়েছেন’। পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৫ বছর ধরে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে সম্পর্কের ‘শীতল যুদ্ধ’ বাণিজ্য, যোগাযোগ এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে অগ্রগতির পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে। দুই পররাষ্ট্রসচিব তাঁদের বৈঠকে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য অভিন্ন ভিত্তি খুঁজে পেয়েছেন।
আরও পড়ুনবিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে : প্রধান উপদেষ্টার উপ–প্রেস সচিব৫ ঘণ্টা আগে