ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে গুমের ঢেউ, বেড়েছে রহস্যজনক মৃত্যু
Published: 9th, April 2025 GMT
শওকত আহমেদের মৃতদেহ যখন পাওয়া গেল, তখন তাঁর চোখ দুটি ছিল রক্তাক্ত। তাঁর চুল খসে পড়ছে। ১৮ বছর বয়সী এ যুবকের হাত-পায়ের চামড়া উঠে যাচ্ছিল। তাঁর বাবা মোহাম্মদ সাদিক এসব তথ্য জানান। ঘটনাটি গত ১৬ মার্চের। এর তিন দিন পরই সাদিক জানতে পারেন তাঁর বড় ছেলে রিয়াজও (২৫) মারা গেছেন। তারা দু’জনই এক মাস আগে নিখোঁজ হয়েছিলেন।
ভারত শাসিত কাশ্মীরের গুজ্জার সম্প্রদায়ের মানুষ তারা। স্থানীয় আইন প্রয়োগ সংস্থার কর্মকর্তারা জানান, শওকত ও রিয়াজ কাশ্মীরের কুলগাম অঞ্চলের একটি নালায় ডুবে গিয়েছিলেন, যা তাদের বাড়ি থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে। তাদের ময়নাতদন্ত রিপোর্টে ‘সম্ভাব্য আত্মহত্যা’ বলে উল্লেখ করা হয়।
কিন্তু সাদিক ও গুজ্জার সম্প্রদায়ের অধিকাংশ মানুষ ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এ বয়ান মানতে নারাজ। সাদিক জানেন না তাঁর দুই ছেলের গুম হওয়া ও পরে মারা যাওয়ার আসল কারণ কী; এটি নিরাপত্তা বাহিনী করেছে, নাকি সশস্ত্র বিদ্রোহীরা। আলজাজিরাকে তিনি বলেন, তাদের নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে।
সরকারি বাহিনী এ হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করছে। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বয়ানের ওপর গভীর অবিশ্বাস রয়েছে ওই অঞ্চলের মানুষের, যেখানে সম্প্রতি ব্যাপক হারে বেড়েছে গুম। এসব গুমের কিছুদিন পরই মিলছে মৃতদেহ। মুখতার আহমদ আওয়ান নামে ২৪ বছরের আরেক যুবক নিখোঁজ রয়েছেন, যার খোঁজ এখনও মেলেনি। তারা বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে বের হয়ে আর ফেরেননি।
সরকারের ওপর অনাস্থা কাশ্মীরের ইতিহাসের সঙ্গে সংযুক্ত। অ্যাসোসিয়েশন অব প্যারেন্টস অব ডিসঅ্যাপিয়ার্ড পারসন্সের (এপিডিপি) তথ্য অনুযায়ী, ১৯৮৯ সালে ভারত শাসিত এলাকাটিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু হলে এ পর্যন্ত ৮ থেকে ১০ হাজার কাশ্মীরি নিখোঁজ হয়েছেন।
কেবল এ তিনজনই নয়, কাশ্মীরে যেন গুমের ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। গত ৫ মার্চ কুলগামের পাশের কাঠুয়া জেলা থেকে যুগেশ সিং (৩২), দর্শন সিং (৪০) ও ১৫ বছরের বরুণ সিং নিখোঁজ হন। তারা বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে ফিরছিলেন। তিন দিন পর তাদের মরদেহ পাওয়া যায়। কয়েকদিন পর কাঠুয়া থেকেই মোহাম্মদ দিন ও রহমান আলি নামে আরও দুই কিশোর গুম হয়। এক মাস পার হলেও এখনও তাদের খোঁজ মেলেনি।
২০২০ সালে ভারতের এক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রাজৌরি জেলায় গুজ্জার সম্প্রদায়ের তিন তরুণকে অপহরণ ও হত্যার অভিযোগ ওঠে। পরে পুলিশ এ ঘটনায় ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে চার্জশিট গঠন করে। এতে সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বন্দুকযুদ্ধের নাটক সাজানোর অভিযোগ আনা হয়। কোর্ট মার্শালে ওই কর্মকর্তা দোষী সাব্যস্ত ও সাজাপ্রাপ্ত হন। তবে পরে তিনি জামিন পেয়ে যান।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: কর মকর ত র দ ন পর
এছাড়াও পড়ুন:
রূপগঞ্জে শ্রমিক অসন্তোষ, সড়ক অবরোধ, সংঘর্ষ
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে বুধবার রবিনটেক্স নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা টানা ৪ ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ আহত হন শতাধিক শ্রমিক।
জানা গেছে, বিনা কারণে শ্রমিক ছাঁটাই, ইফতার বিল, বোনাস ও বকেয়া বেতনের দাবিতে গতকাল দিনব্যাপী আউখাবো এলাকার রবিনটেক্স পোশাক কারখানার সামনে এ ঘটনা ঘটে। এর ফলে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
শ্রমিক ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঈদুল ফিতরের ছুটির একদিন আগে বিনা নোটিশে ৬৫ জন শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়। এ ছাড়া মালিক পক্ষ শ্রমিকদের ৬৫% বোনাসের স্থলে ৫০% এবং এক মাসের বেতনের জায়গায় ২০ দিনের বেতন দিয়েই কারখানা বন্ধ ঘোষণা করে।
গত মঙ্গলবার কারখানা খুললে শ্রমিকরা এসব বিষয়ে অভিযোগ করেন। গতকাল সকালে শ্রমিকরা তাদের দাবি নিয়ে কারখানার ভেতরে অবস্থান করছিলেন। এ সময় জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে ঘটনাস্থলে আসেন শিল্প পুলিশ, রূপগঞ্জ থানা পুলিশ ও সেনা সদস্যরা। তারা কাজে যোগ দেওয়ার কথা বললে শ্রমিকরা তাদের লক্ষ্য করে পানির বোতল ছোড়ে। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের লাঠিচার্জ করে সরিয়ে দেন।
এর পর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে বিদ্যুতের খুঁটি ফেলে অবরোধ করেন শ্রমিকরা। তাদের সরিয়ে দিতে গেলে সংঘর্ষ বাধে। এ সময় তাদের ছোড়া ইটের আঘাতে সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট মুবীন, সৈনিক বাঁধন, সোহরাব, মেহেদীসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য ও লাঠিচার্জে শতাধিক শ্রমিক আহত হয়েছেন রূপগঞ্জের ইউএনও সাইফুল ইসলাম জানান, বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে।