বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক কার্যকর, এশিয়ার শেয়ারবাজারে আবারও পতন
Published: 9th, April 2025 GMT
বিশ্বের বিভ্ন্নি দেশের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে রপ্তানিতে দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে নতুন শুল্ক আরোপ করেছেন তা কার্যকর হয়েছে আজ বুধবার থেকে। বিশ্বের প্রায় সব দেশের ওপর এই শুল্ক কার্যকর হয়েছে। মঙ্গলবার চীনের শুল্কহার বাড়িয়েছেন ট্রাম্প। ফলে চীনের শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০৪ শতাংশ। এটিসহ সব শুল্ক এরই মধ্যে কার্যকর হয়ে গেছে।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে তা উল্লেখ করে, এর প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র সেসব দেশে পাল্টা কত শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে সেই তালিকা তুলে ধরেন। পাল্টা এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ এবং ভারতের পণ্যের ওপর ২৬ শতাংশ, পাকিস্তানের পণ্যের ওপর ২৯ শতাংশ এবং চীনের পণ্যের ওপর ৩৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।ওয়াশিংটনে হোয়াইট হাউসে সংবাদ সম্মেলনে উচ্চ মাত্রার এই শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এতদিন যুক্তরাষ্ট্রে আমদানিতে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল। নতুন এই শুল্ক আরোপে বাংলাদেশের রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রতি বছর ৮৪০ কোটি ডলারের মতো পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি হয়ে থাকে যার বেশিরভাগ তৈরি পোশাক। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল ৭৩৪ কোটি ডলার।
চার বছরে সর্বনিম্ন তেলের দাম: ডোনাল্ড ট্রাম্পের পাল্টা শুল্ক কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে বুধবার সকালে এশিয়ার শেয়ারবাজারে আবারও পতন হয়েছে। মূলত ট্রাম্প চীনের প্রতিশোধমূলক শুল্কের জবাবে চীনের পণ্যে অতিরিক্ত, অর্থাৎ মোট ১০৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছেন- এই ঘটনার জেরে আজ বুধবার সকালেই এশিয়ার শেয়ারবাজারে পতন হয়েছে। প্রভাব পড়েছে অন্যান্য বাজারেও।
এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ, ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ৪৬ শতাংশ, শ্রীলঙ্কার পণ্যে ৪৪ শতাংশ, তাইওয়ানের পণ্যে ৩২ শতাংশ, জাপানের পণ্যে ২৪ শতাংশ, দক্ষিণ কোরিয়ার পণ্যে ২৫ শতাংশ, থাইল্যান্ডের পণ্যে ৩৬ শতাংশ, সুইজারল্যান্ডের পণ্যে ৩১ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার পণ্যে ৩২ শতাংশ, মালয়েশিয়ার পণ্যে ২৪ শতাংশ, কম্বোডিয়ার পণ্যে ৪৯ শতাংশ, যুক্তরাজ্যের পণ্যে ১০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার পণ্যে ৩০ শতাংশ, ব্রাজিলের পণ্যে ১০ শতাংশ, সিঙ্গাপুরের পণ্যে ১০ শতাংশ, ইসরায়েলের পণ্যে ১৭ শতাংশ, ফিলিপাইনের পণ্যে ১৭ শতাংশ, চিলির পণ্যে ১০ শতাংশ, অস্ট্রেলিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, তুরস্কের পণ্যে ১০ শতাংশ, কলম্বিয়ার পণ্যে ১০ শতাংশ, মিয়ানমারের পণ্যে ৪৪ শতাংশ, লাওসের পণ্যে ৪৮ শতাংশ এবং মাদাগাস্কারের পণ্যের ওপর ৪৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প এই শ ল ক ক র যকর
এছাড়াও পড়ুন:
বন্ধ হউক সংস্কৃতির উপর খবরদারি
প্রতি বৎসরের ন্যায় এইবারও রাজধানীতে বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হইতে যাইতেছে। উপরন্তু, অন্তর্বর্তী সরকার রাজধানীতে এইবারের শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করিয়া এক ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ আয়োজনের প্রস্তুতি লইতেছে। বিশেষত ইহাতে বাঙালির পাশাপাশি পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের বিশেষ উপস্থিতি ঘটাইবার চেষ্টা চলিতেছে। স্বাভাবিকভাবেই সর্বমহল উক্ত সরকারি প্রয়াসের প্রশংসা করিতেছে। তবে দুঃখজনকভাবে, এইবারের বাংলা বর্ষবরণও যেন বিতর্ক এড়াইতে পারিতেছে না। বিতর্কের সূত্রপাত ঘটিয়াছে পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আয়োজিত শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন ঘিরিয়া। শনিবার প্রকাশিত সমকালের সংবাদ অনুযায়ী, শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত অনুষদের ডিনের ঘোষণা অনুসারে মঙ্গল শোভাযাত্রার নূতন নাম হইতেছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হইতে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান– সর্বত্র ইহা লইয়া চলিতেছে আলোচনা-সমালোচনা। শুধু উহা নহে, প্রতিবেদন অনুসারে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি হিসাবে নানা আকারের মুখোশ, মাটির সরায় রঙের আঁচড় বসাইতে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী বরাবরের ন্যায় ব্যস্ত থাকিলেও বিগত বৎসরসমূহের তুলনায় এইবারের শোভাযাত্রার প্রস্তুতির রং যেন কিছুটা মলিন; কারণ চারুকলা প্রাঙ্গণে নাই সেই চিরচেনা জমজমাট কর্মযজ্ঞ ও প্রাণের উচ্ছ্বাস। একই চিত্র যদি বর্ষবরণের শোভাযাত্রায়ও দেখা যায়, তাহা হইলে ইহা হইবে অতীব হতাশাজনক।
আমরা জানি, মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয় ১৯৮৫ সালের পহেলা বৈশাখে যশোরে। তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসনবিরোধী সংগ্রামের অংশ হিসাবে অশুভের বিরুদ্ধে শুভশক্তির জয় কামনাই ছিল উক্ত আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। উহাতে লোকজ সংস্কৃতির নানা মোটিফ ব্যবহৃত হয় মানুষের মধ্যে মাতৃভূমির প্রতি প্রেম জাগাইবার জন্য। একই উদ্দেশ্যে ১৯৮৯ সালে বাংলা বর্ষবরণের অংশ হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ হইতে অনুরূপ শোভাযাত্রা বাহির হয়, যদিও তখন ইহার নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে দেশ স্বৈরশাসকমুক্ত হইলে নূতন প্রেক্ষাপটে এবং শোভাযাত্রার মূল লক্ষ্যের সহিত সংগতি বিধানে ইহার নাম হইয়া যায় মঙ্গল শোভাযাত্রা। তখনও দেশে দৃশ্যমান অশুভ শক্তি ছিল, যাহারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী তো বটেই, ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়াইয়া জনগণকে বিভাজিত করিবার চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। সরকার বা কোনো করপোরেট সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতা ব্যতিরেকে সাধারণ মানুষের দান-অনুদানে এবং অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রস্তুতকৃত নানা মোটিফ, বাঁশি, ঢোল ইত্যাদি সরঞ্জাম বিক্রয়লব্ধ অর্থের উপর ভিত্তি করিয়া চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীই এতদিন ইহার সকল কাজ সম্পন্ন করিয়া আসিয়াছেন। অর্থাৎ সম্পূর্ণ জনসাধারণনির্ভর এই আয়োজন স্বতঃস্ফূর্ত উৎসবের অনন্য এক নিদর্শন হইয়া দাঁড়ায়। এই কারণে উক্ত শোভাযাত্রা লইয়া বিশেষত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতি সক্রিয়তাকে নাগরিক মহল একটা সম্পূর্ণ নাগরিক উদ্যোগে সরকারি হস্তক্ষেপ হিসাবে দেখিতেছে। শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করিলেও ইহার অবতারণা কিন্তু সংস্কৃত মন্ত্রণালয় করিয়াছে, যাহা তাহাদের এখতিয়ারবহির্ভূত। ‘মঙ্গল’ শব্দটি লইয়া আপত্তির ভিত্তিও খুব দুর্বল। আর মঙ্গলের স্থলে আনন্দ শব্দটি কোন আলাদা ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে? উভয়েই তো সংস্কৃতজাত এবং বাঙালির জীবনে নিবিড়ভাবে জড়িত, কোনো অজুহাতেই ইহাদের বর্জনের সুযোগ নাই। হ্যাঁ, মঙ্গল শব্দটি বলিলে অমঙ্গলেরও একটা ধারণা শ্রোতার মনে জাগে। আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় অমঙ্গলের প্রতীক বলিয়া কোন অপশক্তিকে চিহ্নিত করা হইত, তাহার কথা তো পূর্বেই বলা হইয়াছে। সম্ভবত শব্দটির ব্যাপারে আপত্তি সেই কারণে।
অন্ধ হইলে যদ্রূপ প্রলয় বন্ধ হয় না, তদ্রূপ মঙ্গল শব্দটি নিষিদ্ধ করিলেও সমাজ হইতে অমঙ্গলের শক্তি উধাও হইয়া যাইবে না। স্মরণে রাখিতে হইবে, বর্তমানে মঙ্গল শোভাযাত্রা সমগ্র দেশে তো বটেই, দেশের বাহিরেও পহেলা বৈশাখের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক আয়োজনে পরিণত হইয়াছে– যাহা আক্ষরিক অর্থেই বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। এই কারণে ইউনেস্কো ২০১৬ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করিয়াছে। সংস্কৃতির উপর খবরদারি কোনো দিন কাহারও জন্যই ভালো কিছু বহিয়া আনে নাই। সংশ্লিষ্ট সকলে বিষয়টি দ্রুত অনুধাবন করিবেন, ইহাই প্রত্যাশা আমাদের।