স্প্যানিশ লা লিগায় ভ্যালেন্সিয়ার কাছে হারের ক্ষত এখনো তাজা। তার ওপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগে আর্সেনালের কাছে ৩-০ ব্যবধানে বিধ্বস্ত হয়ে আরও একবার কাঁপলো রিয়াল মাদ্রিদের আত্মবিশ্বাস। তবে এই ধাক্কাতেও হাল ছাড়ছেন না লুকাস ভাসকেজরা—দ্বিতীয় লেগে সর্বস্ব দিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া তারা।

মঙ্গলবার রাতে এমিরেটস স্টেডিয়ামে কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে দুর্দান্ত খেলেছে আর্সেনাল। বিশেষ করে ইংলিশ মিডফিল্ডার ডেকলান রাইস ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। ক্যারিয়ারে কখনও ফ্রি-কিকে গোল না করা রাইস এদিন ঠিক সেই কাজটাই করলেন দুইবার। আর তাতেই ইউরোপ সেরার মঞ্চে একপাশে পড়ে থাকল রিয়াল।

প্রথমার্ধে দুই দলই লড়াই করেছে সমানে সমান। কিন্তু বিরতির পর যেন খেই হারিয়ে ফেলে কার্লো আনচেলত্তির দল। ৫৮ থেকে ৭৫ মিনিটের মধ্যে তিনটি গোল হজম করে রিয়াল, আর সেখানেই কফিনে ঠুকে যায় শেষ পেরেক।

ম্যাচ শেষে নিজের হতাশা লুকাননি রিয়াল ডিফেন্ডার লুকাস ভাসকেজ। মুভিস্টারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমরা ভালো খেলিনি। আর্সেনাল আমাদের ওপর দারুণ প্রেস করেছে। তারা জানত কীভাবে আমাদের চাপ দিতে হবে, আর আমরা আমাদের খেলা খেলতে পারিনি।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘দ্বিতীয়ার্ধে আমরা এক ধাপও এগোতে পারিনি। আমাদের খেলার ধারাবাহিকতা ছিল না। শেষ পর্যন্ত আমরা মোটেও ভালো পারফরম্যান্স করতে পারিনি।’

লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টানা দুই হারের পর রিয়ালের জন্য সময়টা বেশ কঠিন। তবে ভাসকেজ মনে করেন, এখনই ভেঙে পড়ার সময় নয়। বরং সামনে তাকিয়ে লড়াইয়ের মানসিকতা নিয়ে নামতে হবে। ‘আমরা পরপর দুটি পরাজয়ে অভ্যস্ত নই। আমাদের এখন কাজ করতে হবে, নিজেদের ওপর আরও বেশি বিশ্বাস রাখতে হবে। এই দল আত্মবিশ্বাসের যোগ্য, আর আমরা দ্বিতীয় লেগে ঘুরে দাঁড়াতে সবকিছু উজাড় করে দেব।’

এদিকে আর্সেনালের কাছে বিধ্বস্ত হয়ে দায়টা নিজের কাঁধে নিচ্ছেন কোর্তোয়া। মুভিস্টারকে কোর্তোয়া বললেন, ‘আমার মনে হচ্ছিল দেওয়ালের সামনে ভালোভাবে অবস্থান নিতে পেরেছি। সাধারণত অতিরিক্ত একজন মানুষ সেখানে রাখি। তার জন্য আমি দায় নিচ্ছি। আমি বুঝতে পারিনি রাইস সেভাবে বলটা বাঁক খাওয়াতে পারবে। আর দ্বিতীয় গোলটা অসাধারণ ছিল।’

তবে ম্যাচ হেরে যাওয়ায় সতীর্থদের খেলার ধরন নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। ম্যাচে ৯টি ফাউল করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। দলটির মিডফিল্ডার এদুয়ার্দো কামাভিঙ্গা দুইবার হলুদ কার্ড দেখে পেয়েছেন লাল কার্ড। ম্যাচ শেষে কোর্তোয়া বললেন, ‘যখন কোনো বিপদই ছিল না, তখন অপ্রয়োজনীয় ফাউল হয়েছে। আমরা সেই ফাউলগুলো না করলেও পারতাম।’

ঘুরে দাঁড়াতে হলে চেষ্টা করা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছেন না কোচ আনচেলত্তিও। এমনকি ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে আর্সেনালেরও প্রশংসা করেছেন আনচেলত্তি। রিয়াল কোচ বলেন, ‘আমাদের চেষ্টা করতে হবে। ভালো খেলার সুযোগ আছে। দেখি আমরা সেটা করতে পারি কি না। আজ (গত রাতে) আর্সেনাল আমাদের চেয়ে অনেক ভালো মানের ফুটবল খেলেছে।’

১৭ এপ্রিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে কোয়ার্টার ফাইনালের দ্বিতীয় লেগে মুখোমুখি হবে রিয়াল মাদ্রিদ-আর্সেনাল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আর স ন ল আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

গুলেন ব্যারি সিনড্রোম কেন হয়, চিকিৎসা কী

গুলেন ব্যারি সিনড্রোম বা সংক্ষেপে জিবিএস নামটি একটু অপরিচিত হলেও রোগটির প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে নেহাত কম নয়। যেকোনো বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে জীবাণু–প্রতিরোধী ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক আচরণের ফলে এ রোগের উৎপত্তি হয়।

‘ক্যাম্পাইলো ব্যাকটর জেজুনি’ নামের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত ডায়রিয়ার রোগী বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত সর্দি-জ্বরের রোগীরা ইমিউন সিস্টেমের জটিলতার কারণে পরবর্তী সময়ে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।

কীভাবে বুঝবেন

ডায়রিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের প্রায় দুই সপ্তাহ পর রোগী হঠাৎ দুই পায়ে দুর্বলতা বোধ করেন। এ দুর্বলতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে ওপরের দিকে বিস্তার লাভ করে মেরুদণ্ড, দুই হাত, বুকের মাংসপেশি, এমনকি মুখের মাংসপেশিতে ছড়িয়ে পড়ে। কখনো কখনো দুবলর্তা এত বেশি হয় যে রোগী হাত–পায়ের আঙুলও সামান্য পরিমাণ নাড়াতে পারেন না।

বুকের মাংসপেশির দুবর্লতার কারণে শ্বাসকষ্ট হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালের আইসিইউ, অর্থাৎ নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে স্থানান্তর করতে হয়। না হলে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। জিবিএস রোগীর এত দুর্বলতা সত্ত্বেও সাধারণ অনুভূতি, স্মৃতিশক্তি, পায়খানা-প্রস্রাবের অবশ্য কোনো সমস্যা হয় না এবং রোগী কখনোই চেতনা হারান না।

চিকিৎসা কী

এ ধরনের রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে। নিউরোলজিস্ট বা স্নায়রোগবিশেষজ্ঞ রোগের উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা, এনসিএস নামের স্নায়ুর পরীক্ষা ও মস্তিষ্কের রস বিশ্লেষণ করে রোগটি নির্ণয় করেন।

রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস, নাড়ির গতি, রক্তচাপ ইত্যাদি সব সময় লক্ষ্য রাখতে হয়। যদি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তবে তাৎক্ষণিক রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করতে হয়। নিয়মিত হাত-পায়ের ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, রোগীকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।

এ রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্লাজমাফেরোসিস বা আইভি ইমিউনো গ্লোবিন দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। কোনো কোনো রোগীর পুরোপুরি আরোগ্য পেতে প্রায় এক বছর লেগে যায়। উপসর্গ শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এরপর ইমিউনোগ্লোবিনের কর্যকারিতা থাকে না।

জিবিএসের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করেন। আর ৫-১০ শতাংশ রোগীর মধ্যে কিছু না কিছু শারীরিক দুর্বলতা স্থায়ীভাবে থেকে যায়। মৃত্যুর হার ৫-৬ শতাংশ। মনে রাখবেন, সাধারণত কোনো সংক্রমণ যেমন ডায়রিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের দু–তিন সপ্তাহ পর জিবিএসএর লক্ষণগুলো দেখা দেয়। কখনো কখনো টিকা দেওয়ার পরও এ রোগ হতে পারে।

আরও পড়ুনমস্তিষ্কের জটিল রোগ মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস কেন হয়, উপসর্গ ও চিকিৎসা কী২৭ মার্চ ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ