অকালে ঝরে গেলেন পরিবারে সচ্ছলতা ফেরাতে চাওয়া রিয়া
Published: 9th, April 2025 GMT
ক্যানসারে ভুগে গত বছরের ২৭ অক্টোবর বড় বোনের স্বামী মারা যান। ভাই নেই। দুই বোন আর মা–বাবার সংসার। সংসারের হাল ধরতে রিয়া মজুমদার (২৪) জানুয়ারি মাসে গোল্ডস্যান্ডস নামের একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানে চাকরি নেন। পাশাপাশি চলছিল স্নাতকোত্তরের লেখাপড়া। মা–বাবার মুখে হাসি ফোটাতে চাওয়া রিয়া ঝরে গেলেন অকালেই।
লালখান বাজার এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার রাতে রিয়া মারা যান। খুলশীর অফিস থেকে বের হওয়ার আগে মা মমতা মজুমদারকে ফোন করেছিলেন তিনি। জানতে চেয়েছিলেন মায়ের দাঁতের ব্যথা কমেছে কি না। মায়ের জন্য ওষুধ নিয়ে জামালখানের বাসায় ফেরার কথা ছিল তাঁর। তবে সড়কেই থেমে যায় রিয়ার জীবন।
আজ বুধবার সকালে নগরের বলুয়ার দীঘি মহাশ্মশানে রিয়ার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। মা মমতা ও বাবা সুনীল মজুমদার কেঁদে বুক ভাসাচ্ছেন। তাঁরা বারবার বলছিলেন, ‘আমাদের একটু সুখে রাখার জন্য মেয়ে চাকরি নিয়েছিল। কিন্তু সেই সুখ আর রইল না।’
রিয়ার জ্যাঠা ও বাবা-কাকারা একসঙ্গে চট্টগ্রামের জামালখান এলাকায় থাকেন। জ্যাঠা সুশীল কুমার মজুমদার বলেন, ‘মেয়েটি পড়ালেখার পাশাপাশি চাকরি করে সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে চেয়েছিল। ছাত্রী হিসেবেও খুব ভালো ছিল। তাঁর মা–বাবা এখন কাঁদতে কাঁদতে শয্যাশায়ী।’ তিনি আরও বলেন, ‘অফিস থেকে বের হওয়ার আগে মায়ের সঙ্গে রিয়ার কথা হয়। দাঁতব্যথার ওষুধ নিয়ে আসার কথা ছিল মায়ের জন্য। কিন্তু লালখান বাজারে বাসের চাপায় সে মারা যায়।’
খুলশী থেকে ৭ নম্বর রুটের একটি বাসে রিয়া ইস্পাহানি মোড়ে নামেন। তখন পেছন থেকে অপর একটি বাস তাঁকে চাপা দেয়। ঘটনাস্থলে তাঁর মৃত্যু হয়। রিয়ার গলায় ঝুলছিল অফিসের পরিচয়পত্র। সেটিও রক্তে মাখামাখি ছিল। অফিসের মাধ্যমে রিয়ার মৃত্যুর সংবাদটি জানেন স্বজনেরা।
রিয়ার জ্যাঠা সুশীল মজুমদার বলেন, ‘তাঁর মাথার ওপর দিয়ে বাস চলে যায়। খুবই মর্মান্তিক মৃত্যু। তাঁর বড় বোন জয়ার বরও কয়েক মাস আগে ক্যানসারে মারা গেছে। এখন মেয়েটিও চলে গেল। এত শোক কীভাবে আমরা সইব।’
দুর্ঘটনার পর পুলিশ বাসটি জব্দ করেছে, তবে চালক পালিয়ে গেছেন। কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবদুল করিম বলেন, লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়া সৎকার করা হয়েছে। চালককে আটকের চেষ্টা চলছে।
রিয়া মজুমদারের কর্মস্থল গোল্ডস্যান্ডস রিয়েল এস্টেটের এজিএম একারামুল আজিম চৌধুরী বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খুলশীর অফিস থেকে বের হন রিয়া। দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। জানুয়ারিতে তিনি চাকরিতে যোগদান করেন। সুশীল কুমার মজুমদার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মেয়েটির বিয়ের চিন্তাভাবনাও করছিলাম আমরা। কিন্তু সে সময়ও দিল না। শেষ হয়ে গেল সব।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র একট
এছাড়াও পড়ুন:
স্ত্রী-ছেলেসহ তিন খুনের দায় স্বীকার, ১০ দিনের রিমান্ড
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জে তিন খুনের ঘটনায় গ্রেপ্তার মো. ইয়াসিন পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে দায় স্বীকার করেছে। শনিবার বিকেলে তাকে তোলা হয় জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম বেলায়েত হোসেনের আদালতে। সেখানে ১০ দিনের রিমান্ডের জন্য আবেদন করে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশ। শুনানি শেষে ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের বিষয়টি নিশ্চিত করেন আদালত পুলিশের পরিদর্শক কাইউম খান।
শুক্রবার দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি পশ্চিমপাড়া এলাকায় ময়লার স্তূপ খুঁড়ে ইয়াসিনের স্ত্রী লামিয়া আক্তার (২২), চার বছরের ছেলে আব্দুল্লাহ ওরফে রাফসান লাবিব ও লামিয়ার বড় বোন স্বপ্না আক্তারের বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ঘটনাস্থল থেকেই এলাকাবাসী ইয়াসিনকে (২৪) ধরে পুলিশে দেন। সে মিজমিজি দক্ষিণপাড়ার মো. দুলালের ছেলে। আগে ইয়াসিন ব্যাটারিচালিত রিকশা চালাত। পুলিশ জানিয়েছে, ছিঁচকে চোর ও মাদকাসক্ত হিসেবেও পরিচিত সে।
শুক্রবার রাতেই লামিয়ার মেজো বোন মুনমুন আক্তার বাদী হয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় হত্যা মামলা করেন। এতে ইয়াসিন ছাড়াও তার বাবা মো. দুলাল (৫০) ও বোন মোসা. শিমুকে (২৭) আসামি করা হয়েছে। মুনমুন জানিয়েছেন, লামিয়া সিদ্ধিরগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় চাকরি করতেন। ৫ বছর আগে ইয়াসিনের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বড় বোন স্বপ্নাও লামিয়ার সঙ্গে পশ্চিমপাড়ার ভাড়া বাসায় থাকতেন। ৭ এপ্রিল দুপুরে ওই বাসায় বোনদের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ কথা হয়। এর পর থেকে তাদের মুঠোফোনটি বন্ধ ছিল।
মামলায় মুনমুন উল্লেখ করেছেন, মাদকাসক্ত ইয়াসিন কোনো কাজ করত না। প্রায় সময় টাকার জন্য লামিয়াকে মারধর করত ও হত্যার হুমকি দিত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, গ্রেপ্তার ইয়াসিন হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করেছে। আদালত ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।