সমবায় সমিতির নামে প্রতারণায় কিছু মানুষ বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার বিপরীতে হাজার হাজার মানুষ নিঃস্ব হচ্ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে সমবায় সমিতি অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সাড়া দেওয়ার নজির বিরল। সাধারণ মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে সমবায় সমিতি করা হলেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের অশেষ দুর্ভোগের কারণ হচ্ছে। মানুষও আস্থা হারাচ্ছে সমবায়ের ওপর।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, গত রোববার জামালপুরের মাদারগঞ্জে বিভিন্ন সমবায় সমিতিতে জমা রাখা আমানতের টাকা ফেরত পেতে বিক্ষোভ করেছেন গ্রাহকেরা। তাঁরা লাঠি ও ঝাড়ুমিছিল করে থানা চত্বরে অবস্থান নেন এবং কয়েক ঘণ্টার জন্য জামালপুর-মাদারগঞ্জ সড়ক অবরোধ করেন। এর আগে আরও তিন দফা কর্মসূচি পালন করেন। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে, রোববারের কর্মসূচিতে অংশ নিতে যাওয়ার পথে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে একজন নারী মারা গেছেন। দুটি সমিতিতে তিনি প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা রেখেছিলেন। পরিবারটির জন্য এই ক্ষতি অপূরণীয়।
দেখা যাচ্ছে যে এই উপজেলার ২৩টি সমবায় সমিতি ৩৫ হাজার সেবাগ্রহীতার প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা নিয়ে দুই বছর ধরে লাপাত্তা হয়েছে। এসব সমিতিতে শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পাশাপাশি গৃহকর্মী, ভ্যানচালক, কৃষকেরাও লাভের আশায় টাকা জমা রেখেছিলেন। এখন লাভ তো দূরে থাক, আসল টাকা পাবেন কি না, তার অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। সমবায় সমিতি আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে, সদস্য করার ক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রলোভন দেখানো যাবে না। অথচ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তুলনায় অনেক বেশি মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে টাকা সংগ্রহ করে সমিতিগুলো।
শুধু জামালপুর নয়, সমবায় সমিতির নামে এ ধরনের প্রতারণা দেশের অন্যত্রও ঘটেছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে সাধারণ মানুষ প্রয়োজনীয় ঋণসুবিধা না পাওয়ায় তাঁরা সমবায় সমিতির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। সংসার খরচের টাকা বাঁচিয়ে একটু একটু করে সঞ্চয় করেন। একবারে টাকাটা পেলে সেটা অনেক কাজেই ব্যবহার করতে পারেন।
আমরা মনে করি, সমবায় সমিতি নিবন্ধনের ক্ষেত্রে সমবায় অধিদপ্তরকে সতর্ক হতে হবে। দেশের প্রায় সব জায়গাতেই ব্যাঙের ছাতার মতো সমবায় সমিতি গড়ে উঠেছে। এসব সমবায় সমিতি যাঁরা পরিচালনা করেন, তাঁদের অনেকে রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী। ফলে তাঁরা খুব সহজেই মানুষের টাকা আত্মসাৎ করেও পার পেয়ে যান। নিবন্ধন দেওয়ার পরও কোনো সমিতি যাতে আইনের ব্যত্যয় না ঘটাতে পারে, সেটা তদারক করতে হবে। গ্রাহকের আমানতের সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব কার?
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
গুলেন ব্যারি সিনড্রোম কেন হয়, চিকিৎসা কী
গুলেন ব্যারি সিনড্রোম বা সংক্ষেপে জিবিএস নামটি একটু অপরিচিত হলেও রোগটির প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে নেহাত কম নয়। যেকোনো বয়সের মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। প্রকৃতপক্ষে জীবাণু–প্রতিরোধী ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক আচরণের ফলে এ রোগের উৎপত্তি হয়।
‘ক্যাম্পাইলো ব্যাকটর জেজুনি’ নামের জীবাণু দ্বারা আক্রান্ত ডায়রিয়ার রোগী বা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত সর্দি-জ্বরের রোগীরা ইমিউন সিস্টেমের জটিলতার কারণে পরবর্তী সময়ে এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
কীভাবে বুঝবেন
ডায়রিয়া বা ইনফ্লুয়েঞ্জা জ্বরের প্রায় দুই সপ্তাহ পর রোগী হঠাৎ দুই পায়ে দুর্বলতা বোধ করেন। এ দুর্বলতা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে এবং একপর্যায়ে ওপরের দিকে বিস্তার লাভ করে মেরুদণ্ড, দুই হাত, বুকের মাংসপেশি, এমনকি মুখের মাংসপেশিতে ছড়িয়ে পড়ে। কখনো কখনো দুবলর্তা এত বেশি হয় যে রোগী হাত–পায়ের আঙুলও সামান্য পরিমাণ নাড়াতে পারেন না।
বুকের মাংসপেশির দুবর্লতার কারণে শ্বাসকষ্ট হলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালের আইসিইউ, অর্থাৎ নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে স্থানান্তর করতে হয়। না হলে রোগীর মৃত্যুও ঘটতে পারে। জিবিএস রোগীর এত দুর্বলতা সত্ত্বেও সাধারণ অনুভূতি, স্মৃতিশক্তি, পায়খানা-প্রস্রাবের অবশ্য কোনো সমস্যা হয় না এবং রোগী কখনোই চেতনা হারান না।
চিকিৎসা কী
এ ধরনের রোগীকে অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করে চিকিৎসা দিতে হবে। নিউরোলজিস্ট বা স্নায়রোগবিশেষজ্ঞ রোগের উপসর্গ, শারীরিক পরীক্ষা, এনসিএস নামের স্নায়ুর পরীক্ষা ও মস্তিষ্কের রস বিশ্লেষণ করে রোগটি নির্ণয় করেন।
রোগীর শ্বাসপ্রশ্বাস, নাড়ির গতি, রক্তচাপ ইত্যাদি সব সময় লক্ষ্য রাখতে হয়। যদি শ্বাসকষ্ট শুরু হয়, তবে তাৎক্ষণিক রোগীকে আইসিইউতে স্থানান্তর করতে হয়। নিয়মিত হাত-পায়ের ব্যায়াম, পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, রোগীকে দ্রুত সেরে উঠতে সাহায্য করে।
এ রোগের নির্দিষ্ট চিকিৎসা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। প্লাজমাফেরোসিস বা আইভি ইমিউনো গ্লোবিন দিয়ে এ রোগের চিকিৎসা করা হয়। কোনো কোনো রোগীর পুরোপুরি আরোগ্য পেতে প্রায় এক বছর লেগে যায়। উপসর্গ শুরুর দুই সপ্তাহের মধ্যে চিকিৎসা শুরু করতে হবে। এরপর ইমিউনোগ্লোবিনের কর্যকারিতা থাকে না।
জিবিএসের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী সম্পূর্ণরূপে আরোগ্য লাভ করেন। আর ৫-১০ শতাংশ রোগীর মধ্যে কিছু না কিছু শারীরিক দুর্বলতা স্থায়ীভাবে থেকে যায়। মৃত্যুর হার ৫-৬ শতাংশ। মনে রাখবেন, সাধারণত কোনো সংক্রমণ যেমন ডায়রিয়া বা শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের দু–তিন সপ্তাহ পর জিবিএসএর লক্ষণগুলো দেখা দেয়। কখনো কখনো টিকা দেওয়ার পরও এ রোগ হতে পারে।
আরও পড়ুনমস্তিষ্কের জটিল রোগ মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস কেন হয়, উপসর্গ ও চিকিৎসা কী২৭ মার্চ ২০২৫