মধ্যপ্রাচ্যে ব্যবসা বাড়াচ্ছে শপআপ, বড় বিনিয়োগ
Published: 9th, April 2025 GMT
বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী স্টার্টআপ কোম্পানি শপআপ মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সৌদি আরবভিত্তিক প্রযুক্তিনির্ভর সরবরাহকারী কোম্পানি ‘সারি’-এর সঙ্গে একীভূত হয়ে নতুন কোম্পানি গঠন করেছে। নতুন সেই কোম্পানির নামকরণ করা হয়েছে ‘সিল্ক’ গ্রুপ। নতুন গ্রুপ গঠনের পরপরই ১১ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ডলারের বর্তমান বিনিময় হার ১২২ টাকা হিসাবে দেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১ হাজার ৩৪২ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, মূলত সৌদিভিত্তিক কোম্পানি সারির সঙ্গে শপআপ শেয়ার সোয়াপ বা অদলবদলের মাধ্যমে একে অপরের সঙ্গে একীভূত হয়ে নতুন কোম্পানি গঠন করেছে। দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এ–সংক্রান্ত চুক্তিও হয়ে গেছে। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে সে ঘোষণা এখনো দেওয়া হয়নি। চার দিনব্যাপী বিনিয়োগ সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আজ বুধবার শপআপের একীভূত হওয়া ও বড় বিনিয়োগের ঘোষণাটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারের কথা রয়েছে।
সৌদি আরবে ৩০ লাখের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। এসব প্রবাসী বাংলাদেশি যাতে সহজে বাংলাদেশের পণ্য পেতে পারেন, সে লক্ষ্যে সারির সঙ্গে শপআপকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আফিফ জামান, সহপ্রতিষ্ঠাতা, শপআপসূত্র জানায়, বাংলাদেশের শপআপ ও সৌদি আরবের সারি একে অপরের সঙ্গে একীভূত হলেও কোম্পানি দুটি স্ব স্ব নামে নিজ নিজ ব্যবসা ক্ষেত্রে ব্যবসা চালিয়ে যাবে। তবে এই দুই কোম্পানির মালিকানায় থাকবে নতুন কোম্পানি সিল্ক গ্রুপ। বাংলাদেশি শপআপ ও সৌদি সারির মিলে গঠিত সিল্ক গ্রুপ বড় ধরনের বিনিয়োগও পেয়ে গেছে এরই মধ্যে। সৌদি সরকারের বিনিয়োগ তহবিল পিআইএফের সানাবিল ইনভেস্টমেন্ট, পেপ্যালের সহপ্রতিষ্ঠাতা পিটার থিয়েলের ভেঞ্চার ক্যাপিটাল তহবিল, ই-বের প্রতিষ্ঠাতা পিয়ের ওমিডিয়ার, কুয়েত সরকারের ওয়াফ্রা, কাতার ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন তহবিল থেকে এ বিনিয়োগ পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছে শপআপের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে শপআপের সহপ্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আফিফ জামান প্রথম আলোকে বলেন, সৌদি আরবে ৩০ লাখের বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ১০ শতাংশের বেশি। এসব প্রবাসী বাংলাদেশি যাতে সৌদি আরবে বসে যেন সহজে বাংলাদেশের পণ্য পেতে পারেন, লক্ষ্যে সৌদি প্রতিষ্ঠান সারির সঙ্গে শপআপকে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে সৌদি আরবে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি হলেও তা পরিমাণে খুবই কম ও হাতে না কয়েকটি কোম্পানির। আমরা রপ্তানির এ পরিসর বড় করতে চাই। দেশের ছোট উদ্যোক্তারাও যাতে দেশটিতে তাঁদের উৎপাদিত পণ্য রপ্তানির সুযোগ পান, সেই পথ তৈরি করতেই এ উদ্যোগ।’
সারি ও শপআপ একে অপরের সঙ্গে একীভূত হয়ে সিল্ক নামে যে কোম্পানি গঠন করেছে, সেটির কার্যক্রম সৌদি আরবের পাশাপাশি মধ্যপ্রাচ্যের আরও কিছু দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান আফিফ জামান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা শুরু শপআপ একটি হোলসেল মার্কেট প্ল্যাটফর্ম। এটি দেশের শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলে পর্যন্ত নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থা নিয়ে কাজ করে। অর্থাৎ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান থেকে পণ্য সংগ্রহ করে সেই পণ্য গুদামজাত, পরিবেশক ও ছোট ছোট মুদির দোকানে সরবরাহ করে থাকে। এ জন্য দেশজুড়ে রয়েছে তাদের নেটওয়ার্ক। প্রতিষ্ঠানটি নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে অবকাঠামো ও আর্থিক সেবাও দিয়ে থাকে। বর্তমানে দেশজুড়ে পণ্য সরবরাহব্যবস্থা নিশ্চিত করতে শপআপের ২০০টির বেশি পরিবেশক কেন্দ্র বা হাব রয়েছে। এসব কেন্দ্র থেকে শপআপ দেশের প্রায় পাঁচ লাখ মুদির দোকানে পণ্য সরবরাহ করে। প্রতিষ্ঠানটিতে পাঁচ হাজারের বেশি কর্মী কাজ করেন।
অন্যদিকে সৌদি প্রতিষ্ঠান সারিও একটি প্রযুক্তিনির্ভর হোলসেল মার্কেট প্ল্যাটফর্ম বা বিটুবি মার্কেট প্ল্যাটফর্ম। যাদের কাজ হচ্ছে উৎপাদকের কাছ থেকে পণ্য সংগ্রহ করে দ্রুত তা ভোক্তার দোরগোরায় পৌঁছে দিতে খুচরা বিক্রেতাদের কাছে সরবরাহ করা। কোম্পানিটির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে প্রায় দুই হাজার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে তারা। কোম্পানিটি ৩০ হাজারের বেশি পণ্য সরবরাহ করে তাদের গ্রাহকদের কাছে।
শপআপের কর্মকর্তারা জানান, ১১ কোটি ডলারের নতুন বিনিয়োগসহ ৩১ কোটি ১০ লাখ ডলারের বিনিয়োগ পেয়েছে। এর আগে বিভিন্ন ধাপে যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কোম্পানিটি নানা ধরনের বিনিয়োগ পেয়েছিল, তার মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পিটার থিয়েল ভালার ভেঞ্চার, ই-বে প্রতিষ্ঠাতার ফ্লারিশ ভেঞ্চারস, টেনসেন্টের বিনিয়োগকারী প্রসুস, অস্ট্রিয়ার স্পিডইনভেস্ট, সেকোইয়া ক্যাপিটাল ও নিউইয়র্কের টাইগার গ্লোবাল।
বিশ্ববিখ্যাত মার্কিন সাময়িকী ফাস্ট কোম্পানি ২০২৩ সালে এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সেরা উদ্ভাবনী প্রতিষ্ঠানের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে স্থান পেয়েছিল বাংলাদেশের শপআপ। ‘দ্য ১০ মোস্ট ইনোভেটিভ এশিয়া-প্যাসিফিক কোম্পানিজ অব ২০২৩’ শিরোনামের এ তালিকার তৃতীয় স্থানে ছিল স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানশপআপ। তালিকায় প্রথম ও দ্বিতীয় স্থানে ছিল বৈদ্যুতিক গাড়ির ব্যাটারি তৈরি করা চীনা প্রতিষ্ঠান বিওয়াইডি ও ইন্দোনেশিয়ার স্ট্রিমিং প্রতিষ্ঠান ভিডিও।
শপআপ কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সর্বশেষ নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, কোম্পানিটির রাজস্ব আয় বা রেভিনিউ ছিল ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক অর্থবছরে কোম্পানিটি প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করেছে। গত অর্থবছরে তাদের ব্যবসা আগের অর্থবছরের চেয়ে আড়াই গুণ বেড়েছে। খাদ্য, নিত্যপণ্য ও ডিজিটাল পণ্য বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত দেশের বড় বড় সব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করে শপআপ। কোম্পানির মূল ব্যবসা এখন লাভজনক বলে জানিয়েছে তারা।
সারি ও শপআপের যৌথ উদ্যোগে গঠিত সিল্ক গ্রুপ নতুন যে বিনিয়োগ পেয়েছে, তা কোথায় ব্যবহার করা হবে—জানতে চাইলে শপআপের সহপ্রতিষ্ঠাতা আফিফ জামান বলেন, এ বিনিয়োগের মধ্যে একটি অংশ মূলধনি বা ইক্যুইটি বিনিয়োগ। আর একটি অংশ সিল্ক ফাইন্যান্সিয়ালের জন্য অর্থায়ন সুবিধা হিসেবে কাজে লাগানো হবে। এ বিনিয়োগ ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের ব্যবসা বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রব স ক জ কর এক ভ ত ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বিপর্যস্ত
ইসরায়েলের অবরোধে সরবরাহ বন্ধ থাকায় প্রয়োজনীয় চিকিৎসা উপকরণের অভাবে গাজায় আহত ও রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। শিশুরা নানা রোগে আক্রান্ত হলেও পাচ্ছে না ওষুধ। ইসরায়েল বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখায় বিভিন্ন হাসপাতালে কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পোলিওসহ নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। খাদ্য, পানি ও চিকিৎসার অভাবে গাজার মানুষ ‘ধীর-মৃত্যু’র দিকে এগিয়ে চলেছেন। সেখানে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ধ্বংস হয়ে গেছে।
কথাগুলো বলছিলেন বিশ্বব্যাপী কাজ করা চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস উইদাউট বর্ডার্সের (এমএসএফ) জরুরি বিভাগের সমন্বয়ক মিরিয়াম লারৌসি। গাজার খান ইউনিসের আল মাওয়াসি থেকে আলজাজিরাকে তিনি বলেন, প্রতিদিনই জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুতির নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। এতে লোকজন স্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছেন, যা তাদের সমস্যাকে আরও জটিল করে তুলছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ঠিকঠাক করতে যুদ্ধবিরতির কোনো বিকল্প নেই।
গাজার অন্তত ১০ হাজার মানুষকে জরুরি
ভিত্তিতে অন্যত্র নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) গতকাল শুক্রবার জানায়, গাজায় জরুরি ওষুধের মজুত একেবারেই কম। এতে বিভিন্ন হাসপাতালে সাধারণ অস্ত্রোপচার করাও কঠিন হয়ে পড়েছে। ডব্লিউএইচওর কর্মকর্তা রিক পিপারকর্ন বলেন, ‘আমাদের প্রধান তিন জরুরি উপাত্ত– অ্যান্টিবায়োটিক, আইভি ফ্লুইড ও ব্যাগের রক্ত নেই। গত ২ মার্চ ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।
এ অবস্থায় গাজায় অব্যাহতভাবে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। শুক্রবার দক্ষিণ গাজায় অন্তত ১০ জন নিহত হন। তাদের মধ্যে সাত শিশু রয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি হামলা হচ্ছে গাজার উত্তরাংশ। সেখানে গাজা সিটি থেকে সব ফিলিস্তিনিকে সরে যেতে বলেছে ইসরায়েল।
৩৬ হামলায় কেবল নারী-শিশুর মৃত্যু : জাতিসংঘ
গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলের চলমান হামলার নিন্দা জানিয়ে জাতিসংঘ বলছে, এসব হামলায় নিহতদের একটি বড় অংশ নারী ও শিশু। যুদ্ধবিরতি ভেঙে গত ১৮ মার্চ নতুন করে হামলা শুরু করে ইসরায়েল। জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস বলছে, ৯ এপ্রিল পর্যন্ত নতুন করে গাজার আবাসিক ভবন ও বাস্তুচ্যুতদের তাঁবুতে ২২৪টি হামলা চালানো হয়। এর মধ্যে ৩৬টিতে প্রাণ গেছে কেবল নারী ও শিশুর।
ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীতে গৃহদাহ
মিডলইস্ট মনিটর শুক্রবার জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে একটি চিঠিতে সই করে রোষানলে পড়েছেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কমান্ডার ও প্রায় ১ হাজার রিজার্ভ সেনা। স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার তাদের বরখাস্ত করেন ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ ইয়াল জামির। সপ্তাহের শুরুতে গাজায় সামরিক অভিযানের সমালোচনা করে ইসরায়েলের বিমানবাহিনীর (আইএএফ) সেনারা কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি লেখেন। চিফ অব স্টাফ জামির বলেন, সেনাসদস্যরা এ ধরনের কোনো চিঠিতে সই করে আবার চাকরিতে ফিরতে পারেন না। বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বরখাস্তের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন।