৯ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর গত বছর: অ্যামনেস্টি
Published: 9th, April 2025 GMT
বিশ্বজুড়ে প্রায় এক দশকের মধ্যে গত বছর সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যে ইরান, ইরাক এবং সৌদি আরবে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা ছিল সর্বোচ্চ। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা বাড়াতে প্রধান ভূমিকা রেখেছে এ তিন দেশ। মঙ্গলবার অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
মানবাধিকার সংস্থাটি মৃত্যুদণ্ডবিষয়ক বার্ষিক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী মোট ১ হাজার ৫১৮ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে, যা ২০১৫ সালের পর থেকে সর্বোচ্চ এবং ২০২৩ সালের তুলনায় ৩২ শতাংশ বেশি। মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার দিক থেকে বিশ্বের শীর্ষ দেশ চীন। দেশটির পাশাপাশি উত্তর কোরিয়া ও ভিয়েতনামে কার্যকর হওয়া হাজার হাজার মৃত্যুদণ্ড এ প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
অ্যামনেস্টির মহাসচিব অ্যাগনেস ক্যালামার্ড বলেছেন, মৃত্যুদণ্ড একটি জঘন্য অপরাধ। আজকের বিশ্বে এটির কোনো স্থান নেই। মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা বাড়লেও কার্যকরকারী দেশের সংখ্যা টানা দ্বিতীয় বছরের মতো কমে রেকর্ড সর্বনিম্ন পর্যায় ১৫টিতে নেমেছে।
গত বছর কেবল ইরানে ৬৪ শতাংশ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ওই বছর কমপক্ষে ৯৭২ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে দেশটি, যা আগের বছরের তুলনায় ১০০ জনের বেশি। খবর বিবিসির।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
অবিরাম কাজ করেও যারা কোনো নাম-দাম পান না
সুখী ও সুন্দর পরিবার গড়তে নারী-পুরুষ উভয়ের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। আগে ধরে নেওয়া হতো নারী করবেন শুধু ঘরের কাজ। সে সময় এখন বদলেছে। গ্রাম হোক কিংবা শহর, নারী এখন অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের চালিকাশক্তি। পরিতাপের বিষয় হলো– যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে পরিবার টিকে থাকে, সমাজ এগিয়ে যায়; তারা বরাবরই পরিবার, কর্মক্ষেত্র, সমাজ– সর্বত্র অবহেলার শিকার। ভোরের কুয়াশা জড়িয়ে শহর যখন থাকে গভীর ঘুমে, ঠিক তখন থেকে শুরু হয় কর্মজীবী নারীর জীবন-সংগ্রাম। সবার জন্য খাবার তৈরি, সন্তানের যত্ন নেওয়া, নিজের কাজের জন্য তৈরি হওয়া– সব সামলে ঠিক সময়ে কর্মক্ষেত্রে পৌঁছানো। অফিসের চাপে ক্লান্ত মা। ঘরে ফিরেও তাঁর শান্তি নেই। সন্তানের পড়াশোনা, সংসারের খুঁটিনাটি, সবার যত্নআত্তি তাঁকেই করতে হয়। এ যেন এক চক্রাকার দায়িত্বের অমোঘ নিয়ম। ক্লান্ত হলেও মায়ের মুখে কোনো অভিযোগ নেই। সন্তান ও পরিবারে হাসিই যেন তার একমাত্র প্রাপ্তি। এখনও লিঙ্গবৈষম্য পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে বিরাজমান। কর্মজীবী নারীর শারীরবৃত্তীয় চাহিদা বা অসুবিধাগুলো নিয়ে এখনও বেশির ভাগ জায়গায় কোনো মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নেই। ঋতুকালীন, মাতৃত্বকালীন বা মাতৃত্ব-পরবর্তী সময়ে তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা অপ্রতুল। বেতনবৈষম্যও প্রবল।
এ তো গেল শহুরে কর্মজীবী নারীর গল্প। গ্রামীণ বা নিম্নবিত্ত পরিবারের নারীর সংগ্রাম আরও তীব্র। দিনমজুরের কাজ, গৃহস্থালি, সন্তান লালনপালন– সবকিছু একাই সামলে নিতে হয় তাদের। অন্যদিকে, যারা কর্মজীবী নন, তাদের জীবন-সংগ্রাম আরও বেশি জটিল। কর্মজীবী নারীর যেমন কাজের ক্ষেত্র ধরে একটা পরিচয় থাকে, গৃহিণী নারীর ক্ষেত্রে তেমন থাকে না এবং তাদের কাজের কোনো নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টাও নেই, নেই কোনো ছুটি। অথচ গৃহস্থালি কাজের বিনিময়ে কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না বলে এগুলোকে মূল্যহীন বা অদৃশ্য কাজ হিসেবে গণ্য করা হয় সমাজে। অথচ তাদের অমূল্য শ্রমের বিনিময়ে যুগ যুগ ধরে টিকে রয়েছে পরিবার বা সামাজিক কাঠামো। নারীর গৃহস্থালি কাজের আর্থিক মূল্যায়ন না হলেও কিছু গবেষণায় এটি জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে বলে প্রমাণিত হয়েছে।
ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের (২০১৩) এক গবেষণায় দেখা গেছে, গৃহিণী নারী বিনা মূল্যে যেসব গৃহস্থালি কাজ করেন, সেগুলোর আনুমানিক মূল্য বছরে ২২৭.৯৩ থেকে ২৫৮.৮২ বিলিয়ন ডলার হতে পারে। এ অবদান জাতীয় আয়ের সঙ্গে যোগ করলে নারীর অবদান ২৫ শতাংশ থেকে ৪১ শতাংশে উন্নীত হয়।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যে উঠে এসেছে, কর্মজীবী নারী ঘরের কাজসহ পুরুষের তুলনায় তিনগুণ বেশি পরিশ্রম করেন। এ কাজের বেশির ভাগই থেকে যায় অদৃশ্য। এই গৃহস্থালি শ্রমের কোনো আর্থিক মূল্যায়ন নেই, নেই সামাজিক স্বীকৃতি। সামাজিক রীতিনীতি, পরিবারের শর্ত, কর্মক্ষেত্রের চ্যালেঞ্জ– সবকিছুর মাঝে তাকে টিকে থাকতে হয়। তবু নারীরা কাজ থামান না। কারণ তাদের কাজ বন্ধ হয়ে গেলে থমকে যাবে ঘরের, এমনকি সমাজেরও চাকা। এই সময়ে এসে যেহেতু আমরা একটি সুন্দর ও বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন দেখছি; তাই নারীর সমতা, মর্যাদা এবং অধিকার নিশ্চিত করা এখন সময়ের অপরিহার্য দাবি। নারীর প্রকৃত অংশগ্রহণ এবং ক্ষমতায়ন ত্বরান্বিত করতে হলে তাঁকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে। সর্বোপরি ব্যক্তিগত সচেতনতা ও রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করে একটি সুষম ও মানবিক সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। v