দাম নেই, রাখার জায়গা নেই, ফেলে দিয়ে–গরুকে খাইয়েও রক্ষা নেই আলুচাষিদের
Published: 9th, April 2025 GMT
বাঁশঝাড়ের পাশে রাখা আলুর স্তূপের পাশে বসে আলু কাটছিলেন রোকেয়া বেগম (৪৫)। কেটেকুটে আলুর ভালো অংশটুকু নিচ্ছিলেন, সেদ্ধ করে গরুকে খাওয়াবেন। এর জন্য আলুচাষিকে কোনো পয়সা দিতে হবে না।
কলেজছাত্র নাহিদ ও ফয়সাল বেছে বেছে লাল বস্তায় আলু ভরছিলেন। সেই আলুর দাম কেজিপ্রতি দুই টাকা।
পাশে রাস্তার ওপর রাখা ট্রাকে বোঝাই করা হচ্ছে যে আলু, তার দাম সাড়ে ১২ টাকা কেজি।
শনিবার বিকেলে রাজশাহীর তানোরের রাইতান বড়শো গ্রামে আলু বেচাকেনার এসব দৃশ্য দেখা গেল। হিমাগারে আলু রাখার জায়গা না পেয়ে চাষিরা এভাবেই আলুর গতি করার চেষ্টা করছেন।
রাজশাহী কৃষি বিপণন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আলুর কেজিপ্রতি উৎপাদন খরচ পড়েছে ২২ থেকে ২৫ টাকা। সেই আলু নিয়ে বিপদে পড়েছেন চাষিরা। তাঁরা এখন যে দামে আলু বিক্রি করছেন, তাতে উৎপাদন খরচের অর্ধেকও উঠছে না। কেউ কেউ অগ্রিম বুকিং দিয়ে হিমাগারে আলু রাখতে পেরেছেন; কিন্তু প্রান্তিক চাষিরা তা পারেননি। ফলে আলু নিয়ে তাঁদের বিপদের শেষ নেই।
প্রান্তিক চাষিরা বস্তায় ভরে বাসায় বাসায় আলু মজুদ করে রেখেছিলেন। কেউ কেউ রাস্তার পাশে আমবাগান ও বাঁশঝাড়ের ভেতরে আলু স্তূপ করে রেখেছেন। যাঁরা বস্তায় ভরে রেখেছেন তাঁদের আলু অনেকটাই নষ্ট হয়ে গেছে। এখন সব আলু ঢেলে বাছাই করে ভালোগুলো সাড়ে ১২ টাকা কেজিতে বিক্রি করছেন। আর কিছুটা নষ্ট আলু দুই টাকা কেজিতে বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে। নষ্টগুলো পুরোটাই ফেলে দিতে হচ্ছে। গ্রামের মানুষ গরুকে খাওয়ানোর জন্য আলু কুড়িয়ে নিচ্ছেন। কোথাও কোথাও রাস্তার পাশে ফেলে দেওয়া পচা আলু থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এবার জেলায় ৩৮ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। বাস্তবে আরও সাড়ে তিন হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আলু চাষ করা হয়েছে। উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে ১০ লাখ ৩০ হাজার টন। গত বছর আলুর উৎপাদন হয়েছিল ৯ লাখ ৪০ হাজার টন। সেই হিসাবে এবার ৯০ হাজার টন আলু উৎপাদন বেশি হওয়ার আশা করা হচ্ছে।
তানোরের রাইতান বড়শো গ্রামের চাষি নওশাদ আলী (৫০) এবার ৭২ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছিলেন। আলু তোলার পর ২ হাজার ৫০০ বস্তা আলু হিমাগারে রাখতে পেরেছেন। হিমাগারে জায়গা না হওয়ার কারণে বাকি ৯০০ বস্তা আলু রাখার ব্যবস্থা করতে পারেননি। দাম বাড়ার আশায় সেই আলু বাড়ির পাশে বস্তায় ভরে রেখেছিলেন। কিন্তু দিন দিন আলুর বাজার পড়ে যাচ্ছে। ১৪ টাকা কেজি থেকে দাম সাড়ে ১২ টাকায় নেমে এসেছে। সর্বশেষ তাঁর ৩৫০ বস্তা আলু অবিক্রীত ছিল। বিক্রি করার জন্য বস্তা থেকে বের করতে গিয়ে ২১৬ বস্তা আলু ভালো পেয়েছেন। বাকি ১৩৪ বস্তা আলু নষ্ট হয়ে গেছে।
শনিবার সন্ধ্যার আগে নওশাদের বাড়ির পাশে গিয়ে দেখা যায়, বাঁশবাগানের ভেতরে তিনি শ্রমিকদের নিয়ে বসে পচা আলু বাছাই করছেন। সেখান থেকে তানোর কলেজের ছাত্র নাহিদ ও ফয়সাল দুই টাকা কেজি দরে অপেক্ষাকৃত ভালো আলু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। কথা হয় নাহিদের সঙ্গে। তিনি বলেন, গোখাদ্য হিসেবে তাঁরা এই আলু নিয়ে গিয়ে বাজারে বিক্রি করবেন। বিক্রি করার পর আলুর মালিককে টাকা দিতে হবে। ঈদের মধ্যে কলেজ ছুটি থাকার কারণে তাঁরা বাড়তি আয়ের জন্য এই কাজ করছেন।
মালিক নওশাদ আলী নিজের শ্রমিক দিয়ে বাছাই করে যেগুলো ফেলে দিচ্ছেন, তার ভেতর থেকে আলু বাছাই করে নিয়ে যাচ্ছেন রোকেয়া বেগমের মতো নারীরা। তিনি বলেন, কষ্ট করে কেটেকুটে পচা আলুর ভেতর থেকে যেটুকু ভালো পাচ্ছেন, তা সেদ্ধ করে গরুকে খাওয়াবেন।
রাজশাহীর পবা উপজেলার বায়া এলাকার ব্যবসায়ী শামীম হোসেন সাড়ে ১২ টাকা কেজি দরে আলু কিনছেন। তানোর উপজেলার আলোকছত্র গ্রামে তাঁর সঙ্গে সন্ধ্যায় দেখা হয়। তিনি শনিবার ১৫ টন আলু কিনেছেন। এক দিন আগে কিনেছিলেন ১৪ টন। তিনি এই আলু ঢাকার বাইপাইল এলাকায় খাউতি বাজারে বিক্রি করবেন বলে জানান। তিনি শনিবার পাঁচ–ছয়জন কৃষকের আলু কিনেছেন। তিনি বলেন, কেজিপ্রতি এখানেই দুই টাকা খরচ হবে। গাড়িভাড়া পড়বে ১ টাকা ৪ আনা। ঢাকায় ১৫ থেকে সাড়ে ১৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব ছ ই কর র জন য ১২ ট ক করছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
যেভাবে ঘোরাবেন টাকার চাকা
জীবনের চলতি পথে প্রতি ধাপে টাকার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। টাকা সুখ এনে দিতে পারে না। প্রয়োজনের সময়ে টাকার অভাব মানুষের জীবনকে কতটা দুর্বিষহ ও বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে সে কথা বোধ করি কম-বেশি সবারই জানা।
ভেবে-চিন্তে খরচ
টাকা আপনার হাতে আছে। তাই বলে অকারণে কিংবা মামুলি বিনোদনের জন্য তা খরচ করবেন না। খরচ যদি করতে হয়, ভেবে-চিন্তে করুন। ঠিক যতটুকু করা প্রয়োজন, ততটুকুর মধ্যে সামলে রাখুন নিজের টাকা খরচের লোভ।
অপেক্ষা বিপদের
রক্ত পানি করা টাকা খরচ করে বাবা-মা আপনাকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠিয়েছেন মূলত পড়াশোনা করানোর উদ্দেশ্যেই। এ ব্যাপারটি যত দ্রুত আপনি উপলব্ধি করবেন, ততই মঙ্গল। এর পাশাপাশি এ উপলব্ধি করতে পারাও ভালো যে, পড়াশোনার ক্ষতি না করে টিউশনি বা লেখালেখি বা অন্যান্য কর্মকাণ্ডে নিজেকে নিয়োজিত করে সামান্য পরিমাণে হলেও অর্থ উপার্জন করা যায় কিনা। এতে ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ারের জন্য নিজেকে যেমন ঝালাই করে নিতে পারবেন, তেমনি পেয়ে যাবেন স্বাবলম্বী হওয়ার প্রাথমিক পাঠ। না হয় সামনে বিপদের অপেক্ষায় থাকুন!
খরচের লাগাম
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসা-যাওয়া ও হালকা হাত-খরচের জন্য সব শিক্ষার্থীকে বাসা থেকে কম-বেশি টাকা দেওয়া হয়। আপনি যদি বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ হয়ে থাকেন, চেষ্টা করুন মুহূর্তের আনন্দের জন্য সেই টাকা দেদার উড়িয়ে না দিয়ে, বরং সেখান থেকে প্রতিদিন সামান্য করে হলেও জমানোর। ভালো হয় যদি স্কুলজীবন থেকে এ অভ্যাসটি গড়ে তুলতে পারেন।
ভাবুন তো, যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ শেষ হয়ে যাবে, তখন নিশ্চয়ই জাদুর মতো করে এক লহমায় সবার কপালে চাকরি জুটবে না। বিশ্বাস করুন, বেকারত্বের দিনগুলো ভয়াবহ রকমের মানসিক বিষাদের। এ সময়ে এতদিনের হাত-খরচ থেকে জমানো টাকাগুলো আপনার দারুণ উপকারে আসবে। নাহয় এর কষ্ট আপনাকে ভোগ করতে হবে।
সঙ্গী বাছাই
বন্ধু-বান্ধব কিংবা একান্ত মনের মানুষ– এ সময়ে সঙ্গী বাছাইয়ে ভুল করে ফেলেন অনেকে। সেই ভুলের মাশুল তো কাউকে কাউকে জীবন দিয়েও দিতে হয়। u