ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থী ফাইরুজ সাদাফ অবন্তিকার মৃত বাবাকে কলেজের অধ্যক্ষ পদে পদায়ন দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এরই মধ্যে বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। অবন্তিকা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আইন বিভাগের স্নাতকের শিক্ষার্থী ছিলেন। 

মঙ্গলবার বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের ১৩৫ জন অধ্যাপককে বিভিন্ন কলেজে পদায়ন করা হয়। পদায়নকৃতদের মধ্যে অবন্তিকার বাবা মোহাম্মদ জামাল উদ্দীনকে কুড়িগ্রামের মীর ইসমাইল হোসেন কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম।

তিনটি তালিকা শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭ জনের তালিকায় ১৩ নম্বরে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পদে  জামাল উদ্দীনকে পদায়ন করা হয়।  

কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মির্জা মো.

নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, মো. জামাল উদ্দীন কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত অবস্থায় ২০২৩ সালের ১২ এপ্রিল মৃত্যুবরণ করেন।

এ বিষয়ে অবন্তিকার মা তাহমিনা শবনম সমকালকে বলেন, তালিকা প্রকাশের পরই প্রজ্ঞাপনটি আমার হাতে আসে। অবনন্তিকার বাবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র ছিলেন। শিক্ষকতা ছাড়াও অন্য ৭টি সংস্থায় চাকরির সুযোগ পেয়েও তিনি শিক্ষকতাকে বেছে নেন। জীবনে তোষামোদি-তদবির করতেন না বলেই অধ্যক্ষ পদে তাকে পদায়ন করা হয়নি। এটা তার জন্য দুর্ভাগ্যজনক বিষয়।

তিনি আরও বলেন, তিনি (জামাল উদ্দীন) মারা যাওয়ার প্রায় ২ মাস পর একটি গোয়েন্দা সংস্থা থেকে পদোন্নতির বিষয়ে কিছু তথ্য জানতে চাওয়া হয়। তখন আমি বলেছিলাম যার পদোন্নতির জন্য তথ্য জানতে চাওয়া হচ্ছে, তিনি মারা গেছেন। কিন্তু এরপরও হয়তো ভুলে আমার মৃত স্বামীকে অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।

আক্ষেপ করে তাহমিনা বলেন, আমার স্বামী তার প্রাপ্য সুসংবাদ দেখে যেতে পারেননি। মেয়েও তার শিক্ষা জীবনের সুখবরটি জানতে পারেনি। গত বছরের ১৯ মে অবন্তিকার স্নাতকের (এলএলবি অনার্স) চূড়ান্ত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। এতে সিজিপিএ ৩ দশমিক ৬৫ পেয়ে আইন বিভাগে তৃতীয় স্থান অধিকার অর্জন করেছিল।

গত বছরের ১৫ মার্চ রাতে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে কুমিল্লা নগরীর বাগিচাগাঁও এলাকার বাসায় আত্মহত্যা করেন অবন্তিকা।ফেসবুক পোস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের তার সহপাঠী আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর (সাময়িক বরখাস্ত) দ্বীন ইসলামের বিরুদ্ধে হয়রানি ও উৎপীড়নের নানা অভিযোগ করেন। এতে আত্মহত্যার প্ররোচনার প্রাথমিক সংশ্লিষ্টতা পেয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। বর্তমানে উভয় জামিনে মুক্ত। তবে এরই মধ্যে জবি প্রশাসনের গঠিত তদন্ত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের সুপারিশ অনুসারে জড়িতদের বিরুদ্ধে জবির বিধি অনুসারে শাস্তি কার্যকরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলে জবি সূত্রে জানা গেছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অবন ত ক র ম কল জ র

এছাড়াও পড়ুন:

মেয়েকে ব্যবসায় আনতে শেয়ার উপহার দিচ্ছেন মা-বাবা

দুই ছেলের পর এবার মেয়েকেও উত্তরাধিকার হিসেবে পারিবারিক ব্যবসায় আনছেন পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) সভাপতি।

আনোয়ার উল আলম চৌধুরী ও তাঁর স্ত্রী শবনম শেহনাজ চৌধুরী মিলে তাঁদের একমাত্র মেয়ে সানজানা শেহনাজ চৌধুরীকে দুটি পারিবারিক কোম্পানির প্রায় ৬২ লাখ শেয়ার উপহার দিচ্ছেন, যার বাজারমূল্য প্রায় ৮ কোটি টাকা। কোম্পানিগুলো হচ্ছে আরগন ডেনিমস ও ইভিন্স টেক্সটাইল। দুটিই বস্ত্র খাতের কোম্পানি।

কোম্পানি দুটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ায় উদ্যোক্তাদের শেয়ার উপহার দেওয়ার তথ্য প্রকাশের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সে অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) ওয়েবসাইটে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়। তাতে বলা হয়েছে, আরগন ডেনিমসের চেয়ারম্যান শবনম শেহনাজ চৌধুরী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আনোয়ার উল আলম চৌধুরী তাঁদের কন্যা সানজানা শেহনাজ চৌধুরীকে কোম্পানিটির প্রায় সোয়া ২৫ লাখ শেয়ার উপহার দিচ্ছেন। গতকাল বৃহস্পতিবারের বাজারমূল্য অনুযায়ী এসব শেয়ারের দাম ৪ কোটি ১৪ লাখ টাকার বেশি। আনোয়ার উল আলম ও শবনম শেহনাজ দম্পতি ইভেন্স টেক্সটাইলের প্রায় পৌনে ৩৭ লাখ শেয়ার মেয়েকে উপহার দিচ্ছেন। গতকালের বাজারমূল্য অনুযায়ী এই শেয়ারের দাম প্রায় ৪ কোটি টাকা।

কোম্পানি–সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মেয়েকে কোম্পানি দুটির পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত করতেই মূলত বাবা–মা এই শেয়ার উপহার দিচ্ছেন। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) বিধান অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির ন্যূনতম ২ শতাংশ শেয়ার না থাকলে কেউ পরিচালক হতে পারেন না। ন্যূনতম শেয়ারধারণের এই শর্ত পূরণ করে মেয়েকে পরিচালক পদে বসাতেই মেয়েকে এসব শেয়ার উপহার দেওয়া হচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আনোয়ার উল আলম চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র থেকে ব্যবসা বিষয়ে পড়ালেখা শেষ করে সদ্য দেশে ফিরেছে আমাদের একমাত্র মেয়ে। নতুন প্রজন্মের প্রতিনিধি হিসেবে তার এই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে কোম্পানির ব্যবসা এগিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। সে জন্য তাকে দুই কোম্পানির পর্ষদে যুক্ত করার জন্য বিএসইসির শর্ত অনুযায়ী ন্যূনতম শেয়ার উপহার দেওয়া হচ্ছে, যাতে পর্ষদে যুক্ত হতে তার কোনো বাধা না থাকে।’

আনোয়ার উল আলম চৌধুরী আরও জানান, তাঁর তিন সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে আগেই পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। এখন উত্তরাধিকার হিসেবে মেয়েকে যুক্ত করা হচ্ছে।

এদিকে পারিবারিক ব্যবসায় যুক্ত হয়ে এরই মধ্যে ব্যবসা সম্প্রসারণ করেছেন আনোয়ার উল আলম চৌধুরীর দুই ছেলে শাহ আদিব চৌধুরী ও শাহ রায়ীদ চৌধুরী। আরগন ডেনিমস ও ইভিন্স টেক্সটাইলের ব্যবসার পাশাপাশি দুই ভাই মিলে পোশাকের স্থানীয় ব্র্যান্ড ‘নোয়ার’ গড়ে তুলেছেন। এরই মধ্যে নোয়ার স্থানীয় পোশাকের ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। এ ছাড়া জাপানি ব্র্যান্ড মিনিসোকে বাংলাদেশে এনেছেন এই দুই ভাই। তাঁরাই এখন বাংলাদেশে মিনিসো ব্যবসা পরিচালনা করছেন।

আনোয়ার উল আলম চৌধুরী বলেন, পারিবারিক ব্যবসার বাইরে দুই ছেলে মিলে একটি দেশীয় ও একটি বৈশ্বিক ব্র্যান্ডের ব্যবসা পরিচালনা করছে। এখন পারিবারিক ব্যবসায় মেয়েও যুক্ত হচ্ছে। তিন সন্তান উত্তরাধিকার হিসেবে পারিবারিক ব্যবসার হাল ধরবে। নতুন প্রজন্মই ব্যবসার নতুন নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করে ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যাবে।

এদিকে আরগন ডেনিমস ২০১৩ সালে ও ইভিন্স টেক্সটাইল ২০১৬ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর মধ্যে আরগন ডেনিমস ‘এ’ ও ইভিন্স টেক্সটাইল ‘বি’ শ্রেণিভুক্ত। ঢাকার বাজারে গতকাল দুই কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে। আরগন ডেনিমসের প্রতিটি শেয়ারের দাম ৪০ পয়সা বা আড়াই শতাংশ বেড়ে ১৬ টাকা ৪০ পয়সায় ও ইভিন্স টেক্সটাইলের শেয়ারের দাম ৫০ পয়সা বা প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ বেড়ে ৯ টাকা ৮০ পয়সায় ওঠে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মেয়েকে ব্যবসায় আনতে শেয়ার উপহার দিচ্ছেন মা-বাবা