বাংলাদেশকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেবে এনডিবি
Published: 9th, April 2025 GMT
চলতি বছর বাংলাদেশের উন্নয়ন প্রকল্পে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বিশ্বের উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোর জোট ব্রিকস প্রতিষ্ঠিত নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এনডিবি)। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাৎকালে এনডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির কাজবেকভ এ কথা জানান।
কাজবেকভ বলেন, ‘এক্সপান্ডেড ঢাকা সিটি ওয়াটার সাপ্লাই রেজিলিয়েন্ট প্রকল্প’ বাস্তবায়নের জন্য ৩২ কোটি ডলার অনুমোদন করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশের উন্নয়ন চাহিদার কথা মাথায় রেখে এ বছর তাঁরা এই অর্থায়নের পরিমাণ তিন গুণের বেশি করতে চান।
এ সময় নতুন এই বহুপক্ষীয় ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের ভূমিকাকে সাধুবাদ জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এটি বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে।
এনডিবির ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, বাংলাদেশের গ্যাস খাতের অবকাঠামোগত উন্নয়নে বড় ধরনের সহায়তা দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও রয়েছে এনডিবির। তিনি আরও বলেন, দেশের বেসরকারি খাতে সক্ষমতা বাড়াতে ব্যাংকটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ঋণ দিতে আগ্রহী।
আবাসনসহ সামাজিক অবকাঠামোতে ঋণ দেওয়ার ওপর জোর দেন প্রধান উপদেষ্টা, বিশেষ করে দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মরত হাজার হাজার শ্রমিকের জন্য। এ সময় কাজবেকভ বলেন, এনডিবি এখন একাধিক মুদ্রায় ঋণ কার্যক্রম চালু করেছে, যা বাংলাদেশের জন্য উপকারী হবে।
প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে পিটার হাসের সাক্ষাৎএ ছাড়া গতকাল প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি প্রতিষ্ঠান এক্সিলারেট এনার্জির স্ট্র্যাটেজিক উপদেষ্টা ও বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত পিটার হাস। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ কথা জানিয়েছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: এনড ব
এছাড়াও পড়ুন:
বন্ধ হউক সংস্কৃতির উপর খবরদারি
প্রতি বৎসরের ন্যায় এইবারও রাজধানীতে বাংলা বর্ষবরণের অন্যতম অনুষঙ্গ শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হইতে যাইতেছে। উপরন্তু, অন্তর্বর্তী সরকার রাজধানীতে এইবারের শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করিয়া এক ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক’ আয়োজনের প্রস্তুতি লইতেছে। বিশেষত ইহাতে বাঙালির পাশাপাশি পাহাড় ও সমতলের আদিবাসীদের বিশেষ উপস্থিতি ঘটাইবার চেষ্টা চলিতেছে। স্বাভাবিকভাবেই সর্বমহল উক্ত সরকারি প্রয়াসের প্রশংসা করিতেছে। তবে দুঃখজনকভাবে, এইবারের বাংলা বর্ষবরণও যেন বিতর্ক এড়াইতে পারিতেছে না। বিতর্কের সূত্রপাত ঘটিয়াছে পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় আয়োজিত শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন ঘিরিয়া। শনিবার প্রকাশিত সমকালের সংবাদ অনুযায়ী, শুক্রবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রদত্ত অনুষদের ডিনের ঘোষণা অনুসারে মঙ্গল শোভাযাত্রার নূতন নাম হইতেছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম হইতে পাড়া-মহল্লার চায়ের দোকান– সর্বত্র ইহা লইয়া চলিতেছে আলোচনা-সমালোচনা। শুধু উহা নহে, প্রতিবেদন অনুসারে শোভাযাত্রার প্রস্তুতি হিসাবে নানা আকারের মুখোশ, মাটির সরায় রঙের আঁচড় বসাইতে চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থী বরাবরের ন্যায় ব্যস্ত থাকিলেও বিগত বৎসরসমূহের তুলনায় এইবারের শোভাযাত্রার প্রস্তুতির রং যেন কিছুটা মলিন; কারণ চারুকলা প্রাঙ্গণে নাই সেই চিরচেনা জমজমাট কর্মযজ্ঞ ও প্রাণের উচ্ছ্বাস। একই চিত্র যদি বর্ষবরণের শোভাযাত্রায়ও দেখা যায়, তাহা হইলে ইহা হইবে অতীব হতাশাজনক।
আমরা জানি, মঙ্গল শোভাযাত্রা প্রথম শুরু হয় ১৯৮৫ সালের পহেলা বৈশাখে যশোরে। তৎকালীন সামরিক স্বৈরশাসনবিরোধী সংগ্রামের অংশ হিসাবে অশুভের বিরুদ্ধে শুভশক্তির জয় কামনাই ছিল উক্ত আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। উহাতে লোকজ সংস্কৃতির নানা মোটিফ ব্যবহৃত হয় মানুষের মধ্যে মাতৃভূমির প্রতি প্রেম জাগাইবার জন্য। একই উদ্দেশ্যে ১৯৮৯ সালে বাংলা বর্ষবরণের অংশ হিসাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ হইতে অনুরূপ শোভাযাত্রা বাহির হয়, যদিও তখন ইহার নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। ১৯৯০ সালে গণঅভ্যুত্থানে দেশ স্বৈরশাসকমুক্ত হইলে নূতন প্রেক্ষাপটে এবং শোভাযাত্রার মূল লক্ষ্যের সহিত সংগতি বিধানে ইহার নাম হইয়া যায় মঙ্গল শোভাযাত্রা। তখনও দেশে দৃশ্যমান অশুভ শক্তি ছিল, যাহারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী তো বটেই, ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়াইয়া জনগণকে বিভাজিত করিবার চেষ্টায় লিপ্ত ছিল। সরকার বা কোনো করপোরেট সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতা ব্যতিরেকে সাধারণ মানুষের দান-অনুদানে এবং অনুষ্ঠান উপলক্ষে প্রস্তুতকৃত নানা মোটিফ, বাঁশি, ঢোল ইত্যাদি সরঞ্জাম বিক্রয়লব্ধ অর্থের উপর ভিত্তি করিয়া চারুকলার শিক্ষক-শিক্ষার্থীই এতদিন ইহার সকল কাজ সম্পন্ন করিয়া আসিয়াছেন। অর্থাৎ সম্পূর্ণ জনসাধারণনির্ভর এই আয়োজন স্বতঃস্ফূর্ত উৎসবের অনন্য এক নিদর্শন হইয়া দাঁড়ায়। এই কারণে উক্ত শোভাযাত্রা লইয়া বিশেষত সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতি সক্রিয়তাকে নাগরিক মহল একটা সম্পূর্ণ নাগরিক উদ্যোগে সরকারি হস্তক্ষেপ হিসাবে দেখিতেছে। শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করিলেও ইহার অবতারণা কিন্তু সংস্কৃত মন্ত্রণালয় করিয়াছে, যাহা তাহাদের এখতিয়ারবহির্ভূত। ‘মঙ্গল’ শব্দটি লইয়া আপত্তির ভিত্তিও খুব দুর্বল। আর মঙ্গলের স্থলে আনন্দ শব্দটি কোন আলাদা ব্যঞ্জনা সৃষ্টি করে? উভয়েই তো সংস্কৃতজাত এবং বাঙালির জীবনে নিবিড়ভাবে জড়িত, কোনো অজুহাতেই ইহাদের বর্জনের সুযোগ নাই। হ্যাঁ, মঙ্গল শব্দটি বলিলে অমঙ্গলেরও একটা ধারণা শ্রোতার মনে জাগে। আর মঙ্গল শোভাযাত্রায় অমঙ্গলের প্রতীক বলিয়া কোন অপশক্তিকে চিহ্নিত করা হইত, তাহার কথা তো পূর্বেই বলা হইয়াছে। সম্ভবত শব্দটির ব্যাপারে আপত্তি সেই কারণে।
অন্ধ হইলে যদ্রূপ প্রলয় বন্ধ হয় না, তদ্রূপ মঙ্গল শব্দটি নিষিদ্ধ করিলেও সমাজ হইতে অমঙ্গলের শক্তি উধাও হইয়া যাইবে না। স্মরণে রাখিতে হইবে, বর্তমানে মঙ্গল শোভাযাত্রা সমগ্র দেশে তো বটেই, দেশের বাহিরেও পহেলা বৈশাখের অন্যতম প্রধান সাংস্কৃতিক আয়োজনে পরিণত হইয়াছে– যাহা আক্ষরিক অর্থেই বাঙালির সর্বজনীন উৎসব। এই কারণে ইউনেস্কো ২০১৬ সালে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করিয়াছে। সংস্কৃতির উপর খবরদারি কোনো দিন কাহারও জন্যই ভালো কিছু বহিয়া আনে নাই। সংশ্লিষ্ট সকলে বিষয়টি দ্রুত অনুধাবন করিবেন, ইহাই প্রত্যাশা আমাদের।