অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার নেতৃত্বে কুমিল্লার মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীরা। 

মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব মোল্লা মজিবুল হক।

তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়বিষয়ক এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও তার চাচাতো ভাই ওবায়েদ উল্লাহর সহযোগিতায় মুরাদনগরে আওয়ামী লীগের পলাতক নেতাকর্মীদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। এসব নেতাকর্মী মুরাদনগরে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করছেন। আর এসব কর্মকাণ্ডে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বাধা দেওয়ায় তাদের গ্রেপ্তার ও বিভিন্ন মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। 

মজিবুল হক বলেন, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার নির্দেশে পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার ও থানায় নিয়ে নির্যাতন করছে। তারা নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে প্রধান উপদেষ্টা ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সহযোগিতা চেয়েছেন তারা।

তিনি বলেন, পুলিশের ফ্যাসিবাদী আচরণ থেকে আমাদের রক্ষা করুন। কুমিল্লার এসপি এবং মুরাদনগর ও বাঙ্গরা থানার ওসির গায়েবি মামলা থেকে মুক্ত হয়ে এলাকায় থাকতে চাই। অন্যথায় মুরাদনগরের জনতা আরেকবার যুদ্ধে নামতে বাধ্য হবে।

মজিবুল হক অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগের লোকজন এনসিপিতে যোগ দিয়েছে। আর উপদেষ্টা আসিফের সঙ্গে মিশে পুলিশের সহযোগিতায় বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর আগের মতো জুলুম-নির্যাতন শুরু করেছে।

তার দাবি, আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ইউসুফ আব্দুল্লাহ হারুনের নির্দেশে মুরাদনগর আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এখন এনসিপি রূপে আমাদের নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ ও বিএনপির বিরুদ্ধে ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।

সংবাদ সম্মেলনে সৌমিতা বেগম নামে এক নারী দাবি করেন, বিএনপি করার কারণে তার ছেলে জুয়েলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এখনও সে কারাগারে আছে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন ত কর ম র উপদ ষ ট ম র দনগর ব এনপ র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা

মুরাদনগরে বৈশাখী মেলা ঘিরে কর্মব্যস্ত হয়ে পড়েছেন মৃৎশিল্পীরা। সারা বছর এই কাজের কদর না থাকলেও বৈশাখ রাঙাতে এই সময়টাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তারা।
আধুনিকতার ছোঁয়ায় আগের মতো চাহিদা নেই মৃৎশিল্পের। এই পেশায় নেই সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা। তাই প্রায় সারাবছরই অধিকাংশ নারী মৃৎশিল্পীকে অবসর সময় কাটাতে হয়। পুরুষ মৃৎশিল্পীদের অধিকাংশ চলে গেছেন অন্য পেশায়। তবে নববর্ষের আগে সব কাজ ফেলে তারা ছুটে আসেন পুরোনো এই পেশায়। মৃৎশিল্প থেকে সারা বছর কারিগররা আয়ের মুখ না দেখলেও বৈশাখী মেলা ঘিরে থাকে বাড়তি উপার্জনের সম্ভাবনা। এবারও মাসজুড়ে প্রতিটি কুমারপাড়ায় ছিল ব্যস্ততা।

কামাল্লা ও রামচন্দ্রপুর গ্রামের পালপাড়ায় দেখা গেছে, প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। জরাজীর্ণ আবাসগুলোতে কেউ মাটি ঘুটছেন, কেউ সেই মাটি ছাঁচে দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করছেন। কেউবা খেলনা শুকানোর পর রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। বিশেষ করে শিশুদের চাহিদা মাথায় রেখে তৈরি করা হচ্ছে ছোট ছোট মাটির হাঁড়িপাতিল, মাটির চুলা, শিলপাটা, কড়াই, কলস, কুলা, পুতুল, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, টিয়া, সিংহ, দোয়েল, কচ্ছপ, মাছ, হাঁসসহ নানা রকম ফল, ফুল আর বাহারি মাটির ব্যাংক, প্লেট, মগ, গ্লাস, চায়ের কাপ। এ ছাড়া রয়েছে মাটির তৈরি গৃহস্থালি জিনিসপত্র।

কামাল্লা গ্রামের সন্ধ্যা রানী পাল ও শিখা রানী পাল জানান, এখন মাটির জিনিসের তেমন কদর না থাকায় সারাবছর টানাপোড়েনের মধ্যে চলে তাদের সংসার। পূর্বপুরুষের পেশা হওয়ায় ইচ্ছা হলেও ছাড়তে পারছেন না। সারাবছর অবসর সময় পার করলেও বৈশাখী মেলায় মাটির তৈরি খেলনা ও জিনিসপত্রের চাহিদা থাকায় এই সময়ে ব্যস্ততা থাকে তাদের।
কথা হয় মৃৎশিল্পী হরি ভূষণ পালের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, বছরের এই একটি উৎসব ঘিরে তাদের অনেক আশা থাকে। বৈশাখ মাস এলে মেলায় মাটির খেলনা সামগ্রীর চাহিদা বাড়ে। তাই এ সময় কিছু আয় হয়। তিনি হতাশার সুরে বলেন, ‘সরকার যদি আমাদের সহযোগিতা করত, তাহলে ব্যবসাটা ভালোভাবে করতে পারতাম।’
মৃৎশিল্পী কানন বালা জানান, পহেলা বৈশাখে বিভিন্ন জায়গায় মেলা বসে। এই মেলা থেকে শখের বসে অনেকে মাটির সামগ্রী, বিশেষ করে মাটির খেলনা কেনেন। তাই এই সময়ে কর্মব্যস্ততা বাড়ে তাদের।
রামচন্দ্রপুর গ্রামের খুশি পাল বলেন, ‘আমার বয়স ৫০ ছুঁই ছুঁই। বিয়ের পর থেকেই এই পেশার সঙ্গে জড়িত। আগে মাটির সামগ্রীর প্রচুর চাহিদা থাকলেও এখন আর তেমন নেই। এই শিল্পের সঙ্গে আমাদের জীবনজীবিকা নির্ভরশীল।’
মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবদুর রহমানের ভাষ্য, আধুনিকতার ছোঁয়ায় মৃৎশিল্প যে হারিয়ে গেছে, বিষয়টি তা নয়। বরং আধুনিকতার ছোঁয়ায় শিল্পকারখানার মাধ্যমে তৈরি হওয়া মাটির তৈজসপত্রর চাহিদা এখন প্রচুর। মুরাদনগরে যদি বেসরকারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এসব মৃৎশিল্পীকে কাজে লাগানো যায়, তাহলে অবশ্যই এই শিল্প থেকে ভালো সুফল পাওয়া সম্ভব। পাশাপাশি মৃৎশিল্প বাঁচিয়ে রাখতে বিআরডিবি ও সমবায় কার্যালয় থেকে যেন সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়। যেহেতু মুরাদনগরে কোনো মৃৎশিল্পের বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নেই, তাই মৃৎশিল্পীদের এই পেশাকে বাঁচিয়ে রাখতে সহজে সরকারি সহায়তা দিতে উপজেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মৃৎশিল্পীদের ব্যস্ততা
  • মুরাদনগর থানায় হামলার মামলায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার, বাস চলাচল বন্ধ করে বিক্ষোভ