Samakal:
2025-04-18@18:37:35 GMT

অবাধে চলছে অবৈধ যান

Published: 8th, April 2025 GMT

অবাধে চলছে অবৈধ যান

মহাসড়ক দখল করে আছে ২৫-৩০টি অবৈধ স্ট্যান্ড। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিকশা, হ্যালোবাইক, নছিমন-করিমনের মতো শত শত অবৈধ যান। হাইওয়ে পুলিশের সামনেই অবাধে চলছে এসব। এতে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। 
মানিকগঞ্জের শিবালয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের চিত্র এটি। এ মহাসড়কে অবৈধ যানবাহনের ছড়াছড়ি হলেও প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা বলছেন, পুলিশকে ম্যানেজ করেই অবৈধ যানগুলো চলাচল করছে। কেননা আইনে নিষিদ্ধ হলেও মহাসড়কে প্রতিদিন বাস-ট্রাক-কোচের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে এসব যান। হাইওয়ে পুলিশ যেন তা দেখেও দেখছে না। ফলে মানিকগঞ্জ থেকে আরিচা পর্যন্ত ৩৬ কিলোমিটার মহাসড়কে ও বরংগাইল-নাগরপুর সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।
বরংগাইল হাইওয়ে থানার ওসি জানান, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত এ মহাসড়কে ৩৬টি দুর্ঘটনা ঘটে। এতে নিহত হন ১৮ জন। আহতের সংখ্যা ৪২।
বরংগাইল হাইওয়ে থানার ওসি জানান, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে কতকগুলো অবৈধ যানবাহন চলাচল করে সেই তথ্য তাদের কাছে নেই। মানিকগঞ্জ হালকা যানবাহন মালিক সমিতির সদস্য সেলিম শেখ বলেন, ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে অটোরিকশা, হ্যালোবাইকসহ প্রায় ৪০০ অবৈধ যানবাহন চলাচল করে।
অটোরিকশার চালক ছালাম শেখ ও হ্যালোবাইকের চালক জালাল উদ্দিন বলেন, বরংগাইলে হাইওয়ে থানার কিছু অসাধু পুলিশ সদস্যকে ম্যানেজ করে মহাসড়কে তাদের এসব অবৈধ যানবাহন চালাতে হয়।
ট্রাকচালক আফজাল হোসেন, বিল্লাল শেখ ও আতিয়ার হোসেন বলেন, গাড়ির কাগজপত্র দেখার নামে পুলিশ তাদের রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখে হয়রানি করে। পুলিশের কথা অনুযায়ী তাদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ না করলে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মামলা করে। মহাসড়কে চলাচল নিষিদ্ধ যানবাহনের ছড়াছড়ি থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে পুলিশ না দেখার ভান করছে।
দিগন্ত বাসের চালক ময়নাল শেখ বলেন, মহাসড়কে অটোরিকশা, হ্যালোবাইক চলাচল নিষিদ্ধ হলেও এগুলোর চালক দ্রুতগামী বাসকে সাইড দিতে চায় না। মহাসড়ক দখল করেই অবাধে চলাচল করছে অবৈধ যানবাহন। এ কারণে প্রায়ই বড় গাড়ির সঙ্গে এসব অবৈধ যানবাহনের সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটছে। হাইওয়ে থানার পুলিশ কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় মহাসড়কে অবৈধ যানবাহনের চলাচল দিন দিন বাড়ছে। 
স্থানীয়রা জানান, অবৈধ যানবাহনের চালকরা অবৈধভাবেই মহাসড়কে স্ট্যান্ড বানিয়ে দখল করে রেখেছেন। এখান থেকেই যাত্রী তুলে অবাধে চলাচল করছেন। তবু দেখার কেউ নেই। 
আরিচা, উথলী, বরংগাইল এলাকায় সিরিয়ালের নামে ২০ টাকা থেকে শুরু করে ৫০ টাকা করে অটোরিকশা, হ্যালোবাইক থেকে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন এসব যানের চালকরা। 
বরংগাইল-নাগরপুর সড়কে চলাচলরত অটোরিকশা থেকে চাঁদা উত্তোলনকারী সেলিম শেখ বলেন, গত ৫ আগস্টের পর থেকে কোনো সংগঠনের নামে চাঁদা নেওয়া হয় না। তবে সিরিয়ালের নামে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।
বরংগাইল হাইওয়ে থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, তাদের কেউ ম্যানেজ করে মহাসড়কে অবৈধ যান চালান না। তারা অভিযান চালিয়ে ২০২৪ সালের নভেম্বর মাস থেকে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারির ১৭ তারিখ পর্যন্ত সাড়ে তিন মাসে ৮৭৬টি যানবাহনের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছেন। তারা কোনো যানবাহনের চালককে হয়রানি করেন না বলে দাবি করেন তিনি।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নজট অব ধ য ন দ র ঘটন হ ইওয়

এছাড়াও পড়ুন:

সেতুর অভাবে দুর্ভোগ তিন উপজেলাবাসীর

টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মাহমুদনগর ইউনিয়নে ধলেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতুর অভাবে দুর্ভোগে রয়েছেন তিন উপজেলার মানুষ। দীর্ঘ ৫৩ বছর ধরে একটি সেতুর জন্য প্রহর গুনছে মাহমুদপুরবাসী। দুই যুগ ধরে এই সেতুর নির্মাণ প্রক্রিয়া চলছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। সংসদ ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার জন্য অনেকেই প্রতিশ্রুতি দিয়ে জনপ্রতিনিধি হয়েছেন। কিন্তু নির্বাচনের পর বেমালুম ভুলে যান সেতু নির্মাণের সেই প্রতিশ্রুতি।
টাঙ্গাইল শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার পশ্চিমে প্রায় ২৪টি গ্রাম নিয়ে ৩০ হাজার জনসাধারণের বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মাহমুদনগর ইউনিয়ন। ধলেশ্বরীতে সেতু না হওয়ায় তিনটি উপজেলা নাগরপুর, সিরাজগঞ্জের চৌহালী ও টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযাগ বিচ্ছিন্ন। টাঙ্গাইল সদর থেকে নাগরপুর হয়ে চৌহালী যেতে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ঘুরতে হয়। একটি সেতু নির্মাণ হলেই টাঙ্গাইল সদর থেকে মাহমুদপুর হয়ে চৌহালী যেতে অন্তত ৩০ কিলোমিটার রাস্তা সাশ্রয় হবে। এতে খরচ ও সময়ের সাশ্রয় হবে। তিনটি উপজেলার সংযোগস্থল হবে এই সেতু। মাহমুদনগর ইউনিয়নে মেজর মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয় ও বালিয়াপড়া উচ্চ বিদ্যালয় নামে ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, একটি পূর্ণাঙ্গ স্বতন্ত্র কারিগরি স্কুল, ১০টি প্রাইমারি স্কুল, একটি ফাজিল ও একাধিক হাফিজিয়া মাদ্রাসা রয়েছে। রয়েছে ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র। মাহমুদনগর ও তার আশপাশে রয়েছে অনেকগুলো হাট। যার মধ্যে শাহ্‌জানী, করিমগঞ্জ, বালিয়াপাড়া, চাঁনবয়রা, কাতুলি হাট অন্যতম। এই অঞ্চলের শিক্ষার হার ৭৫ শতাংশ। প্রধান পেশা কৃষি। কৃষিপণ্য শহরে নিয়ে বিক্রি করতে হয়। কৃষকের উৎপাদিত ফসল বর্ষাকালে শহরের হাটে বিক্রি করা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।
একটি সেতুর জন্য মাহমুদনগর ইউনিয়নের চরবাসীকে দীর্ঘকাল অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ভরা বন্যার সময় ঝুঁকি নিয়ে খেয়া পারাপার হতে গিয়ে অনেকের জীবন প্রদীপ নিভে গেছে। অনেক জরুরি রোগীকে সদর হাসপাতালে নেওয়ার পথেই মৃত্যু হয়েছে। ধলেশ্বরী সেতু না থাকায় শুকনো মৌসুমে প্রায় এক কিলোমিটার পথ তপ্ত বালুর পথ হেঁটে পার হতে হয়। তিনটি উপজেলার হাজারো মানুষের চলাচলের একমাত্র রাস্তা এটি। খেয়াঘাট পার হতে অনেক সময় ব্যয় হয়।
মেজর মাহমুদুল হাসান উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী কামরুন্নাহার লতা আক্তার বলে, ‘বর্ষাকালে নৌকায় ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হতে হয়। এখানে নদীর ওপর সেতু হলে আমাদের খুবই উপকার হবে।’
স্থানীয় কৃষক দানেজ আলী জানান, কৃষিপণ্য বিক্রির জন্য বাজারে নিতে পারেন না তারা। অনেক খরচ পড়ে। সময়ও লাগে বেশি। সেতুটি হলে তাদের অনেক উপকার হবে।
খেয়াঘাটের ইজারাদার সোবহান মিয়ার ভাষ্য, ২৬ বছর ধরে ইজারা নিয়ে ঘাট চালান তিনি। এখন প্রতি বছর দেড় লাখ টাকা দিতে হয়। তিনটি উপজেলার লোকজন অনেক কষ্ট করে খেয়া পারাপার হয়। বর্ষাকালে তো ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয়। তাঁরও দাবি ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতু হলে কষ্ট কমে যাবে।
জনতা ব্যাংকের টাঙ্গাইল কর্পোরেট শাখার এজিএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ধলেশ্বরী নদীর ওপর সেতু না থাকায় আমাদের সমস্যার অন্ত নাই। আমাদের এখানকার কৃষকের সব পণ্য শহরে বিক্রি হয়। সীমাহীন কষ্ট ও অধিক ব্যয়ে ঘোড়ার গাড়িতে করে শহরে পণ্য পরিবহন করা হয়। এই পথ দিয়ে তিনটি উপজেলার মানুষ যাতায়াত করে। অনেক জনপ্রতিনিধি সেতুটি নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ভোটের পর ভোট গেছে, কিন্তু প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি।’
কথা হয় মাহমুদনগর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসলাম হোসেন শিকদারের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, এখানে সেতু না থাকায় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন হাজারো মানুষ। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি ধলেশ্বরী নদীর ওপর একটি সেতু নির্মাণের। এখানে সেতু হলে তিন উপজেলাবাসীর ব্যবসা বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হবে এই পশ্চিমাঞ্চল চরবাসীর।
টাঙ্গাইলের স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কামরুজ্জামান বলেন, জনগুরুত্ব বিবেচনা করে ইতোমধ্যে সেতুটির পরিমাপ করা হয়েছে। প্রাক্কলন ব্যয় শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। অতিদ্রুতই প্রস্তাবনাটি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ