টানা তিন মাস কমার পর কিছুটা বাড়ল মূল্যস্ফীতি। গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে সার্বিক মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত বছরের ডিসেম্বর, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ধারাবাহিকভাবে কমে আসে। মার্চে এসে তা ফের বাড়ল। তবে ইতিবাচক দিক হচ্ছে, গত মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি আরও খানিকটা কমে এসেছে। বেড়েছে শুধু খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে। 

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ প্রতিবেদনটি গতকাল মঙ্গলবার প্রকাশ করেছে বিবিএস। এতে দেখা যায়, গত মার্চ মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে খাদ্য মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৮ দশমিক ৯৩ শতাংশ। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৯ দশমিক ২৪ শতাংশ। এর আগে জানুয়ারিতেও খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমেছিল। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যে মার্চে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭০ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ। 
প্রতি মাসে মাঠ পর্যায় থেকে বিভিন্ন পণ্য ও সেবার দামের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করে থাকে বিবিএস। প্রাপ্ত তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে ভোক্তা মূল্যসূচক (সিপিআই) প্রণয়ন করা হয়। এ সূচক আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কতটা বাড়ল তার শতকরা হারই পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি।
এটির ১২ মাসের চলন্ত গড় হিসাব হচ্ছে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি।
বিবিএসের হিসাবমতে, পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মার্চ মাসে গ্রামে মূল্যস্ফীতি কমেছে। তবে বেড়েছে শহর এলাকায়। গত মাসে গ্রামে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৪১ শতাংশ, যা ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৫১ শতাংশ। মার্চে শহর পর্যায়ে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ, যা আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে ছিল ৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। এদিকে ১২ মাসের চলন্ত গড় হিসাবে মার্চে গড় মূল্যস্ফীতি ১০ দশমিক ২৬ শতাংশ।  

উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছর থেকে দেশে উচ্চ মূল্যস্ফীতি চলছে। ওই অর্থবছর বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি হয় ৯ শতাংশের কিছু বেশি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা বেড়ে হয় ৯ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এরপর চলতি অর্থবছরের এ পর্যন্ত ৯ শতাংশের ওপরেই রয়েছে মূল্যস্ফীতি। 
গত বছর ৮ আগস্ট দায়িত্ব নেওয়ার পর অন্তর্বর্তী সরকারের নেওয়া কিছু পদক্ষেপে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছিল। আগস্টে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতি হয় ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ হয়, যা জুলাইয়ে ছিল ১১ দশমিক ৬৬ শতাংশ। সেপ্টেম্বরে আরও কিছুটা কমে হয় ৯ দশমিক ৯২ শতাংশ। 
অক্টোবর ও নভেম্বরে তা ফের বেড়ে যায়। কমতে দেখা যায় ডিসেম্বর থেকে। যদিও ওই তিন মাসই দুই অঙ্কের ঘরে ছিল মূল্যস্ফীতি। ২০২৪ সালে সব মিলিয়ে পাঁচ মাস মূল্যস্ফীতি ছিল দুই অঙ্কের ঘরে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসে। ফেব্রুয়ারিতে তা আরও কিছুটা কমে। 
গত কয়েক অর্থবছর ধরে মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার মধ্যে রাখা যাচ্ছে না। চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় মূল্যস্ফীতি ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে রাখার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। তবে বাস্তবতার আলোকে সে লক্ষ্যমাত্রায় সংশোধন আনা হয়েছে। গড় মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৭ শতাংশের নিচে রাখতে চাইছে সরকার।  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ছ ল ৯ দশম ক ব ব এস বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমানো নিয়ে দরকষাকষি

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণ কর্মসূচির শর্ত অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের শেষ তিন মাসে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) দুই লাখ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আহরণ করতে হবে। একই সঙ্গে আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সংস্থাটির অতিরিক্ত আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে ৫৭ হাজার কোটি টাকা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ দুই লক্ষ্যমাত্রার কোনোটিই অর্জন সম্ভব নয়। তাই এ বিষয়ে যুক্তি তুলে ধরে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা কমানোর অনুরোধ জানিয়েছেন এনবিআরের কর্মকর্তারা। 

গতকাল বুধবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর ভবনে সংস্থাটির চেয়ারম্যানসহ কাস্টমস, আয়কর ও ভ্যাট অনুবিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন সফররত আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। এসব বৈঠকে কর্মকর্তারা জানান, আইএমএফের শর্তের কথা মাথায় রেখে কিছু ক্ষেত্রে করহার বাড়ানো, কর অব্যাহতি তুলে দেওয়াসহ নীতিতে পরিবর্তন নিয়ে আসা হচ্ছে। এতে আশা করা হচ্ছে, রাজস্ব আহরণ বেশ বাড়বে। তবে যে লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে তা সার্বিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাস্তবসম্মত নয়। তাই এ লক্ষ্যমাত্রা যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার অনুরোধ করেন তারা। এ বিষয়ে আইএমএফ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা বেশ ইতিবাচক বলেও বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। 

বৈঠকের বিষয়ে এনবিআরের কর্মকর্তারা সমকালকে বলেন, গত জুন শেষে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এটি চলতি অর্থবছর শেষে বাড়িয়ে ৭ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত করার শর্ত দিয়েছিল আইএমএফ। এর জন্য রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকা। তবে চলতি অর্থবছরের মার্চ মাস পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের পরবর্তী তিন মাসে লক্ষ্যমাত্রার বাকি রাজস্ব আদায় করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। তারা আরও বলেন, লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাড়তি ৫৭ হাজার কোটি টাকা আদায় করতে হবে। এসব বাড়তি রাজস্ব কীভাবে আদায় হবে তা জানতে চেয়েছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। এনবিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি অসম্ভব। তাই লক্ষ্যমাত্রা কমানোর অনুরোধ করা হয়েছে।

কর্মকর্তারা আরও বলেন, দেশের রাজস্ব খাত সংস্কারে উদ্যোগী মনোভাবের কথাও তাদের জানানো হয়েছে। আইএমএফ প্রতিনিধি দল বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে। সামনে আরও বৈঠক হবে। আশা করা হচ্ছে, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনবে আইএমএফ।

আইএমএফের ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে বাংলাদেশ কতটা শর্ত পূরণ করেছে, তা পর্যালোচনায় ঢাকা সফর করছে প্রতিনিধি দলটি। এ দুই কিস্তির জন্য গত ডিসেম্বর পর্যন্ত কর রাজস্বের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল, তার চেয়ে প্রায় ৫২ হাজার কোটি টাকা পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। আইএমএফ গবেষণা বিভাগের ডেভেলপমেন্ট ম্যাক্রোইকোনমিকসের প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি গত রোববার থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। মিশনটি আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আমদানি-রপ্তানি কমলেও রাজস্ব বেড়েছে ৩৬৬ কোটি টাকা
  • বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে বাংলাদেশ পিছিয়ে কেন
  • গ্যাস–সংকটে সিইউএফএলে সার উৎপাদন বন্ধ
  • সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি পেল ১৩৩ প্রতিষ্ঠান, মানতে হবে ৯ শর্ত
  • প্রবৃদ্ধি কমে দাঁড়াবে ৩.৯% থাকবে উচ্চ মূল্যস্ফীতি
  • রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা কমানো নিয়ে দরকষাকষি