অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বাংলাদেশি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি ৩৭ শতাংশ শুল্কের বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও বাণিজ্য উপদেষ্টা ট্রাম্প প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন। সরকার এ সমস্যা সমাধানে ইতিবাচক কিছু প্রত্যাশা করছে। সহযোগিতার মাধ্যমে উভয় পক্ষের জন্য লাভজনক হয় এমন ব্যবস্থা হবে বলে আশা করেন তিনি।
গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সালেহউদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন। এ সময় বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনও উপস্থিত ছিলেন।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র করে ফেলল, আমরা সমন্বয় করব, বিষয় সেটা নয়। আমরা আমাদের ইস্যুটা তুলে ধরব। আমরাও সহযোগিতা করব, তারাও সহযোগিতা করবে। যেটা হতে একটা উইন উইন অবস্থা। আমার বিশ্বাস, বিষয়টির সমাধান হবে। ইতিবাচক কিছু হবে। ইতিবাচক বলতে তাদেরও লাভ হবে, বাংলাদেশেরও লাভ হবে।’
এ সময় শুল্ক সম্পর্কিত সমস্যা সমাধানে যুক্তরাষ্ট্রকে চিঠি দেওয়ার পর সেখান থেকে কোনো সাড়া পাওয়া গেছে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, ‘না, আমরা এখনও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।’ তিনি বলেন, সরকারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনা। এ জন্য আরও ১০০ পণ্যকে শুল্কমুক্ত তালিকায় যুক্ত করার লক্ষ্যের কথা জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ নিয়ে সরকার কাজ করছে।
সামগ্রিকভাবে বিষয়টি সামাল দিতে কী কৌশল কী নেওয়া হচ্ছে– এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, বিভিন্ন রকমের বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। আসলে বিষয়টা অতি পরিবর্তনশীল একটা বিষয়। তিনি বলেন, সোমবার আমেরিকান প্রশাসন বলেছে, চীনের ট্যারিফ ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্র নতুন করে আরও ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করতে পারে। এ ধরনের পরিবর্তনশীল অবস্থায় যে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া জটিল।

ক্রয় কমিটিতে বিভিন্ন প্রস্তাব অনুমোদন
অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ জানান, সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির বৈঠকে মসুর ডাল, চাল ও এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। পণ্যগুলোর দামও আগের তুলনায় কম। আগে গুটিকয় সরবরাহকারী পণ্য দিতেন, উন্মুক্ত করার কারণে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। ফলে কম দামে পণ্য পাওয়া যাচ্ছে। এতে অনেক সাশ্রয় হচ্ছে।
জানা গেছে, আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরভিত্তিক এগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল প্রাইভেট লিমিটেড থেকে ৫০ হাজার টন নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন হয়েছে। প্রতি টন ৪১৬ দশমিক ৪৪ ডলার দামে এ চাল কিনতে ব্যয় হবে ২৫৪ কোটি টাকার বেশি। প্রতি কেজি চালের দাম পড়ছে ৫০ টাকা ৮১ পয়সা। এর আগে গত ২৭ মার্চ ভারতের বগাদিয়া ব্রাদার্স থেকে প্রতি টন ৪২৪ দশমিক ৭৭ ডলার দরে ৫০ হাজার টন একই চাল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন হয়। 
স্পট মার্কেট বা খোলাবাজার থেকে দুই কার্গো এলএনজি আমদানির প্রস্তাবও বৈঠকে অনুমোদন করা হয়। এ দুই কার্গো এলএনজি আসবে সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান থেকে। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ২০১ কোটি টাকা। এর মধ্যে এক কার্গো কেনা হবে সিঙ্গাপুরভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ভিটল এশিয়া থেকে। প্রতি ইউনিট (এমএমবিটিইউ) ১২ দশমিক ৩৮ ডলার দরে এই এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে প্রায় ৫৯৩ কোটি টাকা।

এ ছাড়া যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রতিষ্ঠান টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার থেকে কেনা হবে আরেক কার্গো এলএনজি। প্রতি ইউনিট ১২ দশমিক ৬৭ ডলার হিসেবে ব্যয় হবে ৬০৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর আগে গত ২৭ মার্চ সিঙ্গাপুরের গানভর সিঙ্গাপুর এবং যুক্তরাজ্যের টোটাল এনার্জিস গ্যাস অ্যান্ড পাওয়ার থেকে যথাক্রমে প্রতি ইউনিট ১৪ দশমিক শূন্য ৮ এবং ১৪ দশমিক ৫৭ ডলারে দুই কার্গো এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
বৈঠকে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ফ্যামিলি কার্ডধারীদের মধ্যে ভর্তুকি মূল্যে পণ্য বিক্রির জন্য পৃথক দুটি দরপত্রের মাধ্যমে ১০ হাজার টন মসুর ডাল ও ১ কোটি ২০ লাখ লিটার ভোজ্যতেল ক্রয়ের প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়। এতে মোট ব্যয় হবে ২৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে শেখ এগ্রো ফুড ইন্ডাস্ট্রি থেকে ১০ হাজার টন মসুর ডাল কেনা হবে। প্রতি কেজি ৯২ টাকা ৭৫ পয়সা দরে এ ডাল কিনতে ব্যয় হবে ৯২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
আরেক প্রস্তাবে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১ কোটি ২০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ক্রয়ের একটি প্রস্তাবে অনুমোদন করেছে কমিটি। প্রতি লিটার ১ দশমিক ২৮ ডলার অর্থাৎ স্থানীয় মুদ্রায় ১৫৬ টাকা ১৬ পয়সা দরে থাইল্যান্ডের লাইফ অ্যান্ড হেলথ (থাইল্যান্ড) থেকে এ তেল কেনা হবে। এতে ব্যয় হবে ১৮৭ কোটি টাকা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র প রস ত ব হ জ র টন দরপত র আমদ ন সরক র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

রোগা গরু সরবরাহ, তোপের মুখে বিতরণ স্থগিত

দরপত্র অনুযায়ী উপযুক্ত গরু সরবরাহ না করায় জনগণের তোপের মুখে বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি হাসপাতাল আয়োজিত আদিবাসীদের মধ্যে গরু বিতরণ অনুষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। 
সমতল ভূমিতে বসবাসরত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর উন্নয়নের লক্ষ্যে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৭০ জন সুফলভোগীর জন্য ৭০টি গরু বরাদ্দ করা হয়। গরু সরবরাহের দায়িত্ব পায় জেনটেক ইন্টারন্যাশনাল। দরপত্র অনুযায়ী উপকারভোগীদের মধ্যে ১০০ কেজি ওজনের হেলান, সুস্থ ও ন্যূনতম দেড় বছর বয়সি গরু সরবরাহ করার কথা। সেখানে ৬৫ থেকে ৭০ কেজি ওজনের গরু সরবরাহ করা হয়েছে। 
গতকাল প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় হাসপাতাল চত্বরে গরু বিতরণের উদ্দেশ্যে শামিয়ানা টানানো হয়। সরবরাহ করা গরুর আকৃতি দেখে সুফলভোগীদের সন্দেহ হয়। তারা দরপত্র অনুযায়ী গরু সরবরাহ করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্ন করেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে গুঞ্জন শুরু হলে জনসমক্ষে গরুগুলো স্কেলে ওজন করা হয়। তাতে করে গড়ে প্রতিটি গরুর ওজন ৬৫-৭০ কেজি পর্যন্ত পাওয়া যায়। পড়ে তোপের মুখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসাহাক আলী বিতরণ কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করেন।
সুফলভোগীদের অভিযোগ, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. সারোয়ার হোসেনের দায়িত্বে অবহেলার কারণে এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। তিনি দরপত্র দেখে ঠিকাদারের কাছ থেকে গরু বুঝে নেননি। 
ঠিকাদারের প্রতিনিধি ওমর ফারুক বলেন, ‘কোম্পানি এসব গরু কিনেছে। আমরা সেগুলো প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে বুঝিয়ে দিতে এসেছি। এর বেশি কিছু জানি না।’
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. আব্দুর রহিম বলেন, ঠিকাদারের সরবরাহ করা গরু যাচাই করা হয়েছে। দরপত্র অনুযায়ী গরু সরবরাহ না করায় বিরতণ সম্ভব হয়নি। ঠিকাদারের কাছ থেকে বুঝে নেওয়ার সময় কেন যাচাই করা হয়নি জানতে চাইলে এ কর্মকর্তা বলেন, এক দিন আগে গরু আনলে খাবারের ব্যবস্থা করতে হয়। সে আয়োজন না থাকায় আগে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য: ভারতীয় নাগরিক ও তাঁর চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
  • রোগা গরু সরবরাহ, তোপের মুখে বিতরণ স্থগিত