Samakal:
2025-04-12@20:33:51 GMT

চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাকুক

Published: 8th, April 2025 GMT

চিকিৎসাসেবা অব্যাহত থাকুক

শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ বৈশ্বিকভাবে যেই উদাহরণ তৈয়ার করিয়াছিল, উহা এখন ঝুঁকিতে পড়িয়াছে। সোমবার প্রকাশিত সমকালের শীর্ষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, অর্থ সংকটে ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রের সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দিয়াছে। ১০ মাস ধরিয়া অনেক কেন্দ্রে বিনামূল্যের ঔষধ মিলিতেছে না। এমনকি সন্তান প্রসব-পূর্বকালে জরুরি পরীক্ষা-নিরীক্ষা কার্যক্রমও বন্ধ। মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাসের লক্ষ্যেই ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে প্রতিষ্ঠা করা হইয়াছিল। নিম্ন আয়ের অধিকাংশ নাগরিক এই সকল কেন্দ্র হইতে সেবা গ্রহণ করিয়া আসিতেছিল। বর্তমানে যেইভাবে কেন্দ্রগুলিতে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হইতেছে, উহাতে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধির স্পষ্ট ঝুঁকি তৈয়ার হইয়াছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের প্রতিবেদনে ২০২৩ সালে যেইখানে দেখা যাইতেছে দেশে শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার বৃদ্ধি পাইয়াছে, গত ১০ মাসের চিকিৎসাসেবার অপ্রতুলতায় পরিস্থিতির অবনতি হইবে বলিয়াই আমাদিগের আশঙ্কা। বস্তুত ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই সেবামূলক কার্যক্রম চলিয়াছিল স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি কর্মসূচি-এইচপিএনএসপির মাধ্যমে। গত বৎসরের জুন মাসে ইহার চতুর্থ কর্মসূচির মেয়াদ সমাপ্ত হইলেও পুনরায় উহা সূচিত হয় নাই। সমকালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বৎসরের জুলাইয়ে নূতন করিয়া ১ লক্ষ কোটি টাকার পঞ্চম এইচপিএনএসপি সূচিত হইবার কথা ছিল। বিবিধ জটিলতায় ১০ মাসেও এই কর্মসূচির অনুমোদন মেলে নাই। এমনকি পরে দেড় বৎসরের জন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হইলেও উহাতে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলির নিকট হইতে সাড়া পাওয়া যায় নাই। 

এতদিন ধরিয়া এহেন গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যসেবা বন্ধ হইবার পরও উহা পুনরায় চালু না করিবার দায় সরকার এড়াইতে পারে না। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র তৃণমূল পর্যায়ের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করিয়া থাকে। এই সকল কেন্দ্রের বদৌলতে স্বাস্থ্যসেবার যেই সাফল্য দেখা যাইতেছে, উহা ধরিয়া রাখিতে হইলে সেইখানে ঔষধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী থাকা জরুরি। অস্বীকার করা যাইবে না, এই ক্ষেত্রে বিগত সরকারের ব্যর্থতাও স্পষ্ট। যেইখানে গত বৎসরের জুনেই ঐ প্রকল্পের মেয়াদ সমাপ্ত হইয়াছিল, সেইখানে জুলাই হইতেই নূতন করিয়া প্রকল্পটি চালু করা উচিত ছিল। আগস্টের প্রথম সপ্তাহে বিগত সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করিবার পরও বিষয়টি বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারে থাকা জরুরি ছিল। 
স্মরণে রাখিতে হইবে, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা-এসডিজি অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি সহস্রে ৭০ জনের নিম্নে এবং নবজাতক মৃত্যুর হার প্রতি সহস্রে ১২ জনের নিম্নে আনিতে হইবে। বলিবার অপেক্ষা রাখে না, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে পূর্বের ন্যায় জন্মনিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশুস্বাস্থ্য, বয়ঃসন্ধিকালীন সেবাসহ ঔষধ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত হইলে এই দুইটি লক্ষ্যে উপনীত হওয়া কঠিন হইবে। 
স্বস্তির বিষয় এই, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সমকালকে বলিয়াছেন, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্রে সেবা নিশ্চিত করিতে আগামী মাসের মধ্যেই সরকারিভাবে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হইবে। যদিও স্বাস্থ্য বিভাগের উচিত ছিল দাতা সংস্থার তহবিল না পাইলেও পূর্বেই সরকারের তরফে এই অর্থ বরাদ্দ দেওয়া। আমরা প্রত্যাশা করি, যত দ্রুত সম্ভব তৃণমূলের এই সকল সেবা চালু করিতে হইবে। কোনো রোগী যাহাতে ঔষধ ও সেবা না লইয়া শূন্য হস্তে ফিরিয়া যায়– উহা নিশ্চিত করিতেই হইবে। এতদ্ব্যতীত, কেবল অস্থায়ীভাবে নহে বরং শিশু ও মাতৃমৃত্যুহার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে না যাওয়া পর্যন্ত এই সকল সেবা অব্যাহত রাখিবার বিষয়ও ভাবিতে হইবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: বৎসর র জ সরক র র

এছাড়াও পড়ুন:

শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করুন

দেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ কিছুতেই বন্ধ হইতেছে না। শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মঙ্গল ও বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে অন্তত পাঁচটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়াছে। যাহার মধ্যে তিনটিই ঘটিয়াছে এক দিনে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নরসিংদীর রায়পুরায় দুই স্কুলছাত্রী ঘুরিতে গিয়া আটজন দ্বারা দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হইয়াছে। একই দিন মধ্যাহ্নে নরসিংদীরই শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের কুন্দারপাড়া গ্রামে এবং রাত্রিকালে নেত্রকোনার আটপাড়ায় ১২ বৎসর বয়সী দুই মাদ্রাসা শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়। বুধবার সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের ভৈরবে চকলেটের প্রলোভন দেখাইয়া ৫ বৎসরের এক শিশুকে ধর্ষণ করা হইয়াছে বলিয়া অভিযোগ। একই দিনে পিরোজপুরের নাজিরপুরে পুত্রবধূকে ঘুমের ঔষধ খাওয়াইয়া ধর্ষণের অভিযোগে শ্বশুরের বিরুদ্ধে মামলা হইয়াছে। শুধু ধর্ষণ নহে; পাবনার ঈশ্বরদী পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাতিলাখালী এলাকায় বুধবার ১১ বৎসরের শিশুকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে আইয়ুব আলী নামে একজনকে গণপিটুনির পর পুলিশে সোপর্দ করিয়াছেন এলাকাবাসী। একই দিন সকালে মানিকগঞ্জ পৌর এলাকায় বান্দুটিয়া গ্রামে এক মুয়াজ্জিনের বিরুদ্ধে ৭ বৎসরের শিশুকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠিয়াছে। আমরা কিছুদিন পূর্বে আছিয়া নামে এক শিশুকে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াইতে গিয়া ধর্ষণের শিকার ও মৃত্যুবরণ করিতে দেখিয়াছি। একই সময়ে পটুয়াখালী, নোয়াখালীসহ আরও কয়েক স্থানে নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটিয়াছে।

আছিয়ার ঘটনায় রাজধানীসহ সমগ্র দেশে আমরা এহেন পাশবিক নির্যাতন বন্ধের দাবিতে জনগণের বিভিন্ন অংশকে ফুঁসিয়া উঠিতে দেখিয়াছি। যাহার পরিপ্রেক্ষিতে সরকারও অতি তৎপরতার সহিত সংশ্লিষ্ট অভিযুক্ত ও তাহার সহযোগীকে গ্রেপ্তার করিয়াছে। কিন্তু দুঃখজনক, উক্ত প্রতিবাদ থামিয়া যাইবার পরপর যেন সকল কিছুই পূর্ববৎ চলিতেছে। যাহার প্রতিফলস্বরূপ আলোচ্য ধর্ষণের ঘটনাগুলি ঘটিয়াছে। শুধু উহাই নহে; নরসিংদীর দুই স্কুলছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্তরা প্রভাবশালী বিধায় যথারীতি ভুক্তভোগী দরিদ্র পরিবার দুইটি আইনের আশ্রয় গ্রহণের পরিবর্তে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হয়। তদুপরি ঘটনা প্রকাশ হইবার পর স্থানীয় জেলা প্রশাসকের উদ্যোগে ভুক্তভোগীদের পরিবারগুলি মামলা করিলেও অদ্যাবধি কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয় নাই। এই ঘটনায় প্রমাণ হয়– আছিয়ার মৃত্যু জনগণকে বিক্ষোভে শামিল হইতে তাড়িত করিলেও অন্তত পুলিশের চৈতন্যোদয় ঘটাইতে পারে নাই। এই বিষয়ে সরকারও যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে অপরাধীদের মনে ভীতি সঞ্চার এবং ভুক্তভোগীদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে আইনের দ্বারস্থ হইতে উদ্বুদ্ধ করিতে সক্ষম হয় নাই। প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, অতীতের বহু ঘটনার ন্যায় এই ঘটনায়ও ভুক্তভোগী পরিবারদ্বয় সামাজিক কলঙ্ক হইতে কন্যাসন্তানদের ভবিষ্যৎ রক্ষাকল্পে ধর্ষণের ঘটনা চাপিয়া যাইবার চেষ্টা করিয়াছে। ইহাতে স্পষ্ট, যেই কোনো নারী নির্যাতনের ঘটনায় ভুক্তভোগীকে দোষারোপের যেই অপসংস্কৃতি সমাজে শিকড় গাড়িয়াছে, উহার বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারাভিযানও উচ্চকণ্ঠে শুরু করা যায় নাই।

অনস্বীকার্য, ধর্ষণের ন্যায় জঘন্য অপরাধ দেশে দীর্ঘকালব্যাপী চলমান। এই ক্ষেত্রে পূর্বের সরকারসমূহের অসংবেদনশীলতা এবং অপরাধীদের প্রশ্রয়দানের মানসিকতা ইন্ধন জোগাইয়াছে। সুতরাং সমাজকে রজনীকালেই এহেন অপরাধ হইতে মুক্ত করা অসম্ভব। কিন্তু রায়পুরার ঘটনায় অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করিতে তো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদিচ্ছাই যথেষ্ট। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ যেই সকল প্রভাবশালী মামলা না করিবার জন্য ভুক্তভোগীদের পিতার উপর চাপ প্রয়োগ করিয়াছিলেন, তাহাদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণও জটিল কিছু নহে। প্রতিবেদনমতে, আসামিরা দুই কন্যার পরিবারকে মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিতেছে। ফলে পরিবার দুইটি এখন নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করিতেছে। আসামি ও উক্ত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করিলে আলোচ্য পরিবার দুইটি অন্তত বল-ভরসা পাইত। ইহা অন্যদেরও ভবিষ্যতে একই রকম প্রতিকূলতা মোকাবিলা করিতে সাহস জোগাইত। আমাদের প্রত্যাশা, ধর্ষণের ন্যায় গুরুতর অপরাধের বিরুদ্ধে সরকার প্রকৃতই শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করিবে। অপরাধী মাত্রকেই দ্রুত আইনের আওতায় আনিবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • শূন্য সহিষ্ণুতা প্রদর্শন করুন