থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিমসটেক সম্মেলনের সাইডলাইনে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে শুক্রবার দ্বিপক্ষীয় যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো, তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। গত জুলাই অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ঠিক আগের মতো নেই। আমরা দেখছি, এখন কিছু স্তরে সম্পর্ক চলমান, আবার কিছু স্তরে বিশেষ করে রাজনৈতিক পর্যায়ে এ সম্পর্ক এক ধরনের জড়তার মধ্যে পড়েছে। এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে আমি মনে করি, সেই জড়তা কাটানো গেল। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা ড.

ইউনূস ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এ বৈঠকের মাধ্যমে আলাপ-আলোচনার সুযোগ পেলেন। দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের এই যোগাযোগের মাধ্যমে পারস্পরিক প্রত্যাশা ও সম্পর্ক আরও সামনে এগিয়ে নেওয়ার পথ তৈরি হলো। এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে একটি বিষয় সামনে এসেছে– সম্পর্কে মতপার্থক্য থাকলেও আলোচনা দরকার। তারা সে উপলব্ধি থেকেই কথা বলেছেন। সেখান থেকে দুই দেশের অবস্থানের বদল হয়েছে বলে মনে হয়নি। তবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক পর্যায়ে দুই সরকারপ্রধানের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে যে সিদ্ধান্ত আসবে, সম্পর্ক সেভাবে এগিয়ে নিতে হবে। 

অস্বীকার করা যাবে না, নিকটতম প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ-ভারত পরস্পরের ওপর নানাভাবে নির্ভরশীল। তবে বিগত সময়ে দুই দেশের মধ্যে যে ধরনের সম্পর্ক ছিল, সেখান থেকে প্রতিবেশী হিসেবে সম্মানজনক ও সমতার সম্পর্কে উত্তরণ গুরুত্বপূর্ণ। এ ক্ষেত্রে এক ধরনের প্রত্যাশাও তৈরি হয়েছে বটে, কিন্তু নীতিগতভাবে বিষয়টি সেই প্রত্যাশাকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য কাজ করতে হবে। এ জন্য একটি ভিশন তৈরি করতে হবে, সে আলোকে একটি কাঠামো তৈরি করতে হবে এবং সেখানে সমন্বয় থাকতে হবে। পাশাপাশি এর সপক্ষে জনমর্থনও গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমাদের প্রত্যাশা আছে। 
প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস নিজেও বলেছেন, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে। একে আমরা জনপ্রত্যাশার প্রতিফলন হিসেবেই দেখছি। কিন্তু এটি বাস্তবায়নের জন্য আমাদের অভ্যন্তরীণ কাজ করতে হবে। যেমন আমি ভিশনের কথা বলেছি। এই ভিশন হতে হবে ‘কনসিস্ট্যান্ট’। 

ভারতের সঙ্গে আমাদের বহুমাত্রিক সম্পর্ক; যেখানে বাণিজ্য, সীমান্ত, নিরাপত্তা, অভিন্ন নদী আছে। এই বিষয়গুলোর ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে আমরা সমন্বয় করতে পারছি কিনা, তা গুরুত্বপূর্ণ। চব্বিশের জুলাই অভ্যুত্থানের পর আমাদের জনগণের মধ্যে ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে যেই জনপ্রত্যাশা তৈরি হয়েছে, অর্থাৎ সমতা ও ন্যায্যতার নীতি কাজে লাগাতে সৃজনশীল, টেকসই ও দক্ষ উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে এই বৈঠকের আগে আমরা দেখেছি, প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস চীন সফর করেছেন। বাংলাদেশের বাস্তবতার কারণেই আমাদের সবার সঙ্গে কাজ করতে হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে যেমন ভারতের সম্পর্ক; তেমনি চীন, যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গেও সম্পর্ক বিদ্যমান। আমাদের দ্বিপক্ষীয়, বহুপক্ষীয় যেসব অংশীদার আছে, সবার সঙ্গেই আমাদের স্বার্থে কাজ করতে হবে। চীনের সঙ্গে ভারতের এক ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে। সেটা তাদের সম্পর্কের বিষয়। তাদের মতপার্থক্য আমাদের দেখার কিছু নেই। আগে আমরা দেখেছি, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক অনেকটা একপক্ষীয় ছিল; সেই অর্থে স্বাভাবিক সম্পর্ক ছিল না। এখন বাংলাদেশের বাস্তবতায় বলা চলে, সম্পর্ক স্বাভাবিক দিকে যাচ্ছে। কাজেই স্বাভাবিক হিসেবে দেশের স্বার্থে সবার সঙ্গে আমরা সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে পারি।

রোহিঙ্গা সংকট আমাদের বড় সমস্যা। রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় চীনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলেই দীর্ঘদিন ধরে বিষয়টি নিয়ে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের এক ধরনের ত্রিপক্ষীয় যোগাযোগ আছে। প্রধান উপদেষ্টার বেইজিং সফরের সময়েও চীন রোহিঙ্গা বিষয়ে সহযোগিতা করবে– এ রকম একটি ইঙ্গিত দিয়েছে। তারা বলেছে, আমরাও যেন রোহিঙ্গা বিষয়ে মিয়ানমারের সঙ্গে কাজ করি। রোহিঙ্গা সংকট একটি জটিল সমস্যা। মিয়ানমারে সাত-আট বছরে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গারা যখন নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আসে তখন সেখানে এক ধরনের গণতান্ত্রিক শাসন ছিল; অং সান সু চির দল ছিল ক্ষমতায়। এর পর ২০২১ সালে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হওয়ার পর বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী বিদ্রোহ করে। তারই অংশ হিসেবে আমরা দেখেছি, সম্প্রতি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইনের বড় অংশ দখল করেছে সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এ কারণেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন আরও বেশি জটিল হয়েছে। এ বিষয়ে অগ্রসর হতে গেলে আমাদের কৌশলী হতে হবে এবং মানবিকতার বিষয়ও দেখতে হবে।
মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়েছে বিমসটেক সম্মেলনকে কেন্দ্র করে। ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিমসটেক আঞ্চলিক সহযোগিতার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে; যেখানে ভারতও এর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। আগামী দুই বছরের জন্য বঙ্গোপসাগরীয় দেশগুলোর এ আঞ্চলিক সহযোগিতা জোটের চেয়ারের দায়িত্ব পেয়েছে বাংলাদেশ। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী পেতংতার্ন সিনাওয়াত্রা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশের নেতৃত্বে বিমসটেকের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য কতটা সফলভাবে সামনে এগিয়ে যাবে, তা দেখার বিষয়। আমরা যদি আঞ্চলিক দেশগুলোর সহায়তায় বিমসটেকে ভালো কিছু করতে পারি, তাও নিঃসন্দেহে মানুষ স্মরণ করবে। 

যা হোক, ইউনূস-মোদি বৈঠক প্রসঙ্গে আসি। সেখানে অনেক কথাই হয়েছে। ভারতের দিক থেকে স্থিতিশীলতা, উদার নীতি, অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজের প্রত্যাশা প্রকাশ পেয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রত্যাশাও গুরুত্বপূর্ণ। গত দেড় দশকে এর অনুপস্থিতিতেই স্বৈরতন্ত্রের উদ্ভব। চব্বিশের পরিবর্তনের পর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে বর্তমান সরকারও কাজ করে যাচ্ছে। টেকসই একটি সমাজ আমরা গড়তে চাই। আমাদের অন্য অংশীদারদেরও প্রত্যাশা, সবাইকে নিয়ে, প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে টেকসই শাসন কাঠামো তৈরি। যাদের জনগণ ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে, তারা যেন জনগণের প্রতি দায়বদ্ধ থাকেন। সেটাই এখনকার অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। সেভাবে আমাদের কাজ করতে হবে। আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ যতটা বলিষ্ঠভাবে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে দায়িত্বশীল সরকার তৈরি করতে পারবে এবং সমাজ কাঠামোতে যতই শান্তিপূর্ণ ব্যবস্থা কায়েম হবে ততই আমরা ভারতসহ সবার সঙ্গে সম্মান ও সমতার ভিত্তিতে সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব। 

এম হুমায়ুন কবির: যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এক ধরন র ও সমত র ক জ করত সহয গ ত ব মসট ক আম দ র ক জ কর র পর ব ন র পর

এছাড়াও পড়ুন:

সামাজিক মাধ্যমকেন্দ্রিক গণতন্ত্রচর্চার ঝুঁকি

আমাদের গণতন্ত্র কতটুকু শক্তিশালী এবং এর ভিত্তি কতটা গভীরে, তা একটি প্রশ্ন। গণতন্ত্র যে এ দেশে বারবার হোঁচট খেয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে কেন এই দশা, তার কারণ নিয়ে আলোচনার সুযোগ যেমন আছে, তেমনি তা দরকারও বটে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে গণতন্ত্র নানাভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে, আবার গণপ্রতিরোধের মধ্য দিয়ে জনগণ নতুন শাসন ব্যবস্থার ওপর বিশ্বাস স্থাপন করতে চেয়েছে। তবে সেই বিশ্বাস উবে যেতে বেশি সময় নেয়নি। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই জনগণের আস্থা অনাস্থায় রূপান্তরিত হয় শাসকগোষ্ঠীর কাণ্ডজ্ঞানের অভাবে। 

যদিও গণতন্ত্র আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রে চর্চার বিষয় হয়ে উঠতে পারেনি; হয়নি সংস্কৃতির অংশও। গণতন্ত্রচর্চার সুযোগের অভাবে মানুষের মধ্যে ক্ষোভের পারদ ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। পাশাপাশি জনগণ ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে প্রতিবাদের উপায় খুঁজতে থাকে। গত কয়েক বছরে আমরা তার প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি ডিজিটাল মাধ্যমে, বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে। নিঃসন্দেহে ডিজিটাল সামাজিক মাধ্যম জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার আওতা বাড়িয়েছে এবং বেশির ভাগ জনগণ একে একটি গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবেই দেখে। তবে সামাজিক মাধ্যম জনমত প্রকাশের টুল হিসেবে কতটা গণতান্ত্রিক, অংশগ্রহণমূলক ও ঝুঁকিমুক্ত?  

প্রায়ই দেখি সামাজিক মাধ্যম জনতুষ্টিবাদ সংস্কৃতির একটি মাধ্যম হয়ে উঠছে। এখানে সবকিছুকে একটা নির্দিষ্ট লেন্সের মাধ্যমে দেখার জন্য সামাজিক চাপ তৈরি করা হয়। আবার জনতুষ্টিবাদ দিয়ে বিরোধী পক্ষকে দমনের প্রবণতা আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে যেন স্বাভাবিক ঘটনা। যাকে এক বাক্যে আধিপত্যবাদী ও গণতন্ত্রবিরোধী বলা যায়। অন্যদিকে আজকে জনমতকে প্রভাবিত করার জন্য সামাজিক মাধ্যমে অপতথ্য ও ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি দেখা যায়, যার বেশির ভাগ রাজনৈতিক প্রপাগান্ডা ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে হয়ে থাকে। এর মূল উদ্দেশ্য সত্যের অপলাপ এবং জনগণের মতকে প্রভাবিত করা। আজকাল তো এই প্রপাগান্ডা মেকানিজমের জন্য মানুষের দরকার নেই; অ্যালগরিদম ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে একটি অপতথ্য সহজেই ছড়িয়ে দেওয়া যায়। খুব সহজেই মিথ্যা ও অপতথ্যের ভিত্তিতে জনমতকে প্রভাবিত করা যায়। সহিংসতা উস্কে দেওয়া যায়; যার দৃষ্টান্ত আমরা সময় সময় দেখি। 

ইদানীং দেখা যায়, ফেসবুকে কোনো কিছু ভাইরাল না হলে তার আর কোনো প্রতিকার পাওয়া যায় না। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়, ফেসবুকই হচ্ছে রাষ্ট্রীয় প্রতিকার পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম। এই ব্যবস্থাই রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তিমূলের কাঠামোগত দুর্বলতাকে নির্দেশ করে। পাশাপাশি আইনের শাসনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। এর মানে, আইনের শাসনকে সামাজিক মাধ্যম এবং এর অ্যালগরিদমের ইচ্ছাধীন করা। যার ফল হচ্ছে, দেশের জনগণের একটি বড় অংশ আইনের শাসনের বাইরে থেকে যাচ্ছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এ মুহূর্তে সামাজিক মাধ্যম কি সমাজের গণতান্ত্রিক চর্চার চেতনার সহায়ক, নাকি আইনের শাসন ও গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণবিরোধী চর্চার একটি উপায়? এটি সারা পৃথিবীতেই একটি বিতর্কের বিষয়। দেখা যাচ্ছে, ফেসবুক গণতন্ত্রের নামে আমরা শুধু ভাইরাল কালচারে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। অন্যদিকে শুধু ফেসবুককেন্দ্রিক গণতন্ত্রচর্চার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে, প্রতিদিন শত শত ঘটনা ভাইরালের আড়ালে থেকে যাচ্ছে; কোনো ধরনের প্রতিকারবিহীন। 
ফেসবুককেন্দ্রিক গণতন্ত্রচর্চা সুষ্ঠু রাজনৈতিক পরিবেশের অভাবে একটি সাময়িক উপায় হতে পারে। কিন্তু এটিই যদি একমাত্র হয়ে ওঠে, তাহলে তার সুবিধার চেয়ে বিপদের হার অনেক বেশি। আমাদের জাতীয় বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে ইতোমধ্যে এই বিপদ টের পেয়েছি এবং বিপদ আরও বাড়বে বৈ কমবে না।
সামাজিক মাধ্যমের অ্যালগরিদম আমাদের গণতান্ত্রিক চর্চাকে এমন একটা দিকে ধাবিত করবে, যেখানে শুধু পপুলিস্ট বা জনতুষ্টিবাদের অস্তিত্ব থাকবে এবং সামাজিক বৈচিত্র্য ও ভিন্নমত পড়বে ধ্বংসের মুখে। 

মুক্ত গণতন্ত্রচর্চার ক্ষেত্রে আমাদের দেশের বড় সমস্যা শাসন ব্যবস্থার অতিকেন্দ্রিকতা, আমলানির্ভরতা ও অগণতান্ত্রিক সংস্কৃতি। শুধু সেখানেই শেষ না। শাসন কাঠামো ও সমাজ ব্যবস্থার প্রতিটি পর্যায়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে না পারাও বড় সংকট। তাই আমাদের পরিপ্রেক্ষিতে গণতান্ত্রিকতার অর্থ হচ্ছে বিকেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা এবং জনগণের কাছে জবাবদিহি নিশ্চিত করা। গণতন্ত্রকে প্রান্তিক পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার জন্য প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে সেই প্রযুক্তি হতে হবে সবার জন্য সহজলভ্য। গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট্য শুধু জনগণের মত শোনা না; তাদের মতের প্রতিফলন ঘটনা। আমাদের বাস্তবতায় অনেক সময় পপুলিস্ট পদক্ষেপকে গণতন্ত্র হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়, যেটাকে টোকেনেস্টিক বা সিলেক্টিভও বলা যায়। এ ধরনের দায়সারা পদক্ষেপ গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি তৈরিতে কোনো ভূমিকা রাখে না। যার একটি উদাহরণ হতে পারে এই সময়ে সংঘটিত নারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের সহিংসতা ও ধর্ষণের বিরুদ্ধে জনমতের প্রতিফলনে রাষ্ট্রের ব্যবস্থা। এ ধরনের ব্যবস্থা যতটা না সামগ্রিক পরিবর্তনের জায়গা থেকে, তার চেয়ে অধিক পপুলিস্ট বা দায়সারা গোছের। কারণ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সব গোষ্ঠীর জবাবদিহি নিশ্চিত করার কথা বলে।  
এটিই গণতন্ত্র শক্তিশালী করার উপায়। এখন ক্ষমতাসীনরা এটা করতে চায় কিনা, তা একটি বড় প্রশ্ন। ক্ষমতায় যারা থাকে, তারা এই দরজাগুলো উন্মুক্ত করতে ভয় পায়। জবাবদিহির সংস্কৃতি তৈরি করতে চায় না। ফলে তারা এমন একটি চক্রে পড়ে, যা শাসকশ্রেণিকে স্বৈরাচার বানিয়ে সাধারণ মানুষদেরই ভুক্তভোগী করে তোলে। সেটিই সামাজিক মাধ্যমকেন্দ্রিক গণতন্ত্রচর্চার মূল ঝুঁকি।

নাজমুল আহসান: উন্নয়নকর্মী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মডেল মেঘনার পূর্ব পরিচিত ব্যবসায়ী সমির রিমান্ডে
  • জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে জাতীয় পার্টির ৩ নেতার পদত্যাগ
  • জাতীয় পার্টি ছাড়লেন খুলনার সাবেক এমপিসহ ৩ নেতা
  • অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ দাবি জনগণের: আলী রীয়াজ
  • দুই ছাত্রীকে ধর্ষণে জড়িতদের গ্রেপ্তারে আলটিমেটাম
  • সামাজিক মাধ্যমকেন্দ্রিক গণতন্ত্রচর্চার ঝুঁকি
  • ফ্যাসিস্টরা নানাভাবে অভ্যুত্থানকে ধ্বংসের চেষ্টা করছে: জোনায়েদ সাকি
  • কিছু উপদেষ্টার পাঁচ বছর ক্ষমতায় থাকার খায়েশ জন্মেছে: রিপন 
  • ট্রাম্পের বিরুদ্ধে শেয়ারবাজারে কারসাজির অভিযোগ, তদন্তের আহ্বান সিনেটরদের
  • হাসিনার পতনে গ্রামেগঞ্জে প্রভাব ও আওয়ামী কর্মীদের ভাবনা কী