চট্টগ্রামের শীর্ষ সন্ত্রাসী সাজ্জাদ আলী খানের বিরুদ্ধে ১৩ বছর আগে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হিসেবে রেড নোটিশ জারি করেছিল আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোল। তবে দফায় দফায় চিঠি চালাচালি করেও এই সন্ত্রাসীকে ফেরাতে পারেনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তার অবস্থান এখন কোথায়, তাও জানে না চট্টগ্রামের পুলিশ। সাজ্জাদ আলী বিদেশে বসে দিব্যি নিয়ন্ত্রণ করছেন চট্টগ্রামের অপরাধ জগৎ। তার অনুসারীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। তাকে চাঁদা দেওয়া ছাড়া একটি ইটও সরানো যায় না। চাঁদা দিতে না চাইলে পেট্রোল বোমায় পুড়িয়ে দেওয়া হয় কারখানা। গুলিতে ঝাঁজরা করা হয় ঘরবাড়ি। অনুসারীর পেছনে লাগলে খুনের শিকার হয় প্রতিপক্ষ। 

সাজ্জাদকে ফেরানো দূরের কথা, তার অনুসারী সন্ত্রাসীদের নাগাল পেতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ। তার আস্থাভাজন ছোট সাজ্জাদকে গ্রেপ্তার করলেও অধিকাংশ অনুসারী এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার হাসিব আজিজ সমকালকে বলেন, ‘বিদেশে পলাতক সাজ্জাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে ছোট সাজ্জাদ চাঁদাবাজি, হত্যাসহ নানা অপরাধ কার্যক্রম চালাচ্ছিল। তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সাজ্জাদকে ফেরাতে ইন্টারপোলে বার্তা পাঠানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো দেশ থেকে তার অবস্থান শনাক্ত করে ফিরতি বার্তা আসেনি।’

সাজ্জাদের সর্বশেষ অবস্থান ছিল ভারত
সাজ্জাদের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজিসহ এক ডজন মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। ২০১২ সালের ১৪ এপ্রিল তাকে গ্রেপ্তারের জন্য ইন্টারপোলে বার্তা পাঠায় বাংলাদেশ পুলিশ। তাকে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ হিসেবে রেড নোটিশ জারি করে ইন্টারপোল। ওই বছরের ৭ নভেম্বর ভারতের পাঞ্জাবের অমৃতসর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে সাজ্জাদকে ফেরাতে দফায় দফায় চেষ্টা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ২০১৭ সালে তার বিরুদ্ধে থাকা মামলার নথিও পাঠানো হয় ভারতে। তবে তাকে ফেরাতে ব্যর্থ হয় সরকার। 
এর মধ্যে কয়েক বছর জেল খেটে দিল্লির তিহার কারাগার থেকে জামিনে বেরিয়ে এখন তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন বলে জানিয়েছে একাধিক সূত্র। ভারতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে আবদুল্লাহ পরিচয়ে পাঞ্জাবের এক নারীকে বিয়েও করেছেন তিনি। এই পরিচয়ে তার পাসপোর্টও রয়েছে। পুলিশের গোয়েন্দা সূত্রের দাবি, ভারতে বসেই সাজ্জাদ চট্টগ্রামের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ করছেন। বিভিন্ন সময় চাঁদা চেয়ে যেসব ফোন করা হয়, সেগুলোর অবস্থান ভারত ছিল বলে নিশ্চিত হয় পুলিশ।

অনুসারীর বদল হলেও চাঁদা নেওয়ার পদ্ধতি একই
নগরের বায়েজিদ, পাঁচলাইশ, চান্দগাঁও ও হাটহাজারী এলাকায় কেউ নতুন বাড়ি নির্মাণ, ব্যবসা-বাণিজ্য ও জমি বেচাকেনা করলেই ফোন আসে সাজ্জাদের। চাঁদা নেন তার অনুসারীরা। সেই টাকার একটি অংশ তার কাছে পৌঁছে দেন তারা। দুই দশকের বেশি সময় ধরে এভাবেই অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ রেখেছেন সাজ্জাদ। একসময় তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী ছিলেন নুরুন্নবী ম্যাক্সন ও সারোয়ার হোসেন বাবলা। এর মধ্যে নুরুন্নবী ভারতে পালিয়ে থাকা অবস্থায় মারা যান। বাবলা গ্রুপ ছেড়ে নিজেই বাহিনী গড়ে তুলেছেন। পরে আরেক সন্ত্রাসী ঢাকাইয়া আকবরকে চাঁদাবাজিতে নামান সাজ্জাদ। একাধিকবার গ্রেপ্তারের পর দলছুট হন তিনিও। পরে ছোট সাজ্জাদকে শিষ্য হিসেবে গড়ে তোলা হয়। তার আশ্রয়-প্রশ্রয়ে চট্টগ্রাম নগরের ত্রাস হয়ে ওঠে ছোট সাজ্জাদ। গত ১৫ মার্চ তাকে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

যেভাবে সাজ্জাদের উত্থান
নগরের বায়েজিদ বোস্তামীর জান আলী নগর চালিতাতলী এলাকার আব্দুল গনি কন্ট্রাক্টরের ছেলে সাজ্জাদ আলী খান। ১৯৯৯ সালের ২ জুন পাঁচলাইশ ওয়ার্ড কাউন্সিলর লিয়াকত আলী খানকে বাড়ির সামনে খুন করে সন্ত্রাসী হিসেবে আবির্ভূত হন সাজ্জাদ। ২০০০ সালের ১২ জুলাই নগরের বহদ্দারহাটে দিনদুপুরে মাইক্রোবাস থামিয়ে ছাত্রলীগের ছয় নেতাকর্মীসহ আটজনকে ব্রাশফায়ারে খুন করা হয়। সেখানে সাজ্জাদ নেতৃত্ব দেন বলে অভিযোগ ওঠে। সর্বশেষ ২০০০ সালের ১ অক্টোবর একে-৪৭ রাইফেলসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন। ২০০৪ সালে জামিনে বেরিয়ে বিদেশে পালিয়ে যান। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর অবস থ ন অন স র নগর র অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

বর্ষবরণের শোভাযাত্রার প্রস্তুতি

ছবি: সৌরভ দাশ

সম্পর্কিত নিবন্ধ